মনখারাপের ভালোনাম

অভিষেক চক্রবর্তী


১
রবিবার দুপুর । একতলায় আমাদের বসবার ঘরভর্তি à¦²à§‹à¦•à¦œà¦¨à¥¤à¦à¦•à¦¦à Œà§œà§‡ ঢুকতে যাব,আটকে দিল দাদা।‘কি চাই? ‘ মিনমিন করে বললাম – ভিতরে যাব ।সজোরে এক ধমক – ‘বাচ্চা ছেলে সিনেমা দেখবে !!! যা পড়ার à¦˜à¦°à§‡â€™à¥¤à¦®à¦¾à¦®à¦¾à ¬à¦¾à§œà¦¿ থেকে সব ভাইবোনেরা এসেছে - হাহা হিহি – এর আমি চোখে এত্তটা জল নিয়ে পড়ার ঘরের চৌকিতে বসে ভগবানকে গালাগালি দিচ্ছি ,ছোটোদের কেউ চায় না ,সবাই বকে বলে।
১৯৯১সাল ।১৫০ টাকায় ভি সি পি মেশিন আর চারটে ক্যাসেট ভাড়া পাওয়া যেত।আর তখন বাড়ীতে উৎসব মানেই ভিসিপি তে সিনেমা দেখা অনেকে মিলে।সবাই সিনেমা দেখছে-আমি অভিমান – মা এসে বলল – বোকা ছেলে ,কাঁদছিস কেন ?এই দ্যাখ,আমিও তো রান্নাঘরে
রয়েছি ।আরো খানিক ফুঁপিয়ে ,মায়ের আঁচলে সিকনি পুছে ঘুমিয়ে পড়লুম।ঘন্ট া তিনেক পর সবার গলার আওয়াজে ঘুম ভাংল,দেখি সব চোখ মুছতে মুছতে বেরোচ্ছে ঘর থেকে ।আমি তো অবাক
- এরা কাঁদে কেন? সবার আলোচনায় বুঝলুম ,হীরো আর হীরোইনের দুঃখে।আমি অত বুঝি না।আমায় à¦•à¦¾à¦à¦¦à¦¿à§Ÿà§‡à¦›à¦¿à ²à¦¿ ,এবার দেখ কেমন মজা ।আমার মুখে ফ্লুরোসেনৠà¦Ÿ হাসি।কৃ্তঠ্ঞতার চোটে ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরের আসনে একটা লেবুলজেন্ঠ¸ গুঁজে দিয়ে এলাম।তারপর একদৌড়ে মাঠে। সিনেমাটার নাম ছিল কয়ামত সে কয়ামত তক।
তখন পাড়ায় মাঝে মাঝেই ‘শো’ বসত ।শো মানে হল এক সন্ধ্যায় মাঠে ‘ভিডিও করা’ ।মানে , ভিসিপি আর ক্যাসেট ভাড়া করে সিনেমা দেখানো হত।ভিসিপি চালানোকে বলা হত ভিডিও করা ।কেউ সিনেমা বলত না,বলত ‘বই’ দেখব । সমস্ত ছেলে ছোকরার দল চুলে হীরো মার্কা ছাট দিত।আর সেলুনের সামনে থাকত হাতে আঁকা অমিতাভ,মিঠৠà¦¨à§‡à¦° ছবি।প্রতিঠাসে সেলুনে নিয়ে গিয়ে বাবা বলত- নিত্যদা ছেঁটে দাও ভালো করে,গরমে আরাম পাবে à¦›à§‡à¦²à§‡à¦Ÿà¦¾à¥¤à¦¨à¦¿à ¤à§à¦¯à¦œà§‡à¦ à§ চুল ছাঁটতেন আর একজোড়া চোখ তাকিয়ে থাকত দেয়ালে মিঠুনের ছবিতে।ততদঠ¿à¦¨à§‡ ভিডিও শোর কল্যাণে মিঠুন চিনে à¦—à§‡à¦›à¦¿à¥¤à¦¡à¦¿à¦¸à§à •à§‹à¦¡à§à¦¯à¦¾à¦¨à§à¦¸à¦¾ ¦° মিঠুন।ঐ নাচ দেখে সারাদিনে কত যে চৌকির উপর লাফাই তা হিসেবের বাইরে।আর মাঝেমধ্যেঠ‡ চৌকির তলায় লুকোনো টিনের বাক্স খুলে দেখে নি আমার মহামূল্যবঠন সম্পদ গুলো।এক গোছা বাসের টিকিট,গুলি,à ¦²à¦¾à¦Ÿà¦¿à¦®,লেত্ত ি...আরো কত কি। প্রাণ দিতে পারি কিন্তু এ সম্পত্তি কাউকে দেওয়া যায় !! যায় দেওয়া !!! ততদিনে যক্ষের গল্প শোনা হয়ে গেছে।আমরা বন্ধুরা সবাই,à¦¨à¦¿à¦œà§‡à¦¦à ‡à¦° সম্পদ বাঁচাতে যক্ষ হতেও রাজি ছিলাম।বাসৠর একগোছা টিকিট গার্ডারে বেঁধে তার উপর আঙুল বো্লালে যে ফিরর ফিরর আওয়াজ টা হত তার থেকে প্রিয় সুর আর কিছু হতেই পারেনা।প্ঠায় সব টিকিট হত সাদার উপর লাল বা নীলে লেখা।দৈবাৠŽ দু একটা হলুদ টিকিট পেলে –এর পায় কে আমাদের ।একটা হলুদ টিকিট এক্সচেঞ্জ করলে চারটে সাদা টিকিট পাওয়া যেত।তাহলেঠ‡ বুঝুন কত্ত দামি জিনিস।অথচ ক্লাসে একদিন দিদিমণি জিজ্ঞেস করায় সগৌরবে যেই বললুম বাস কন্ডাক্টর হতে চাই,দিদিমণঠ¿ দিলেন এক থাবড়া।গালৠহাত বোলানো আমি বসে বসে à¦à¦•à¦¦à§ƒà¦·à§à¦Ÿà¦¿à¦¤à§ à¦¤à¦¾à¦•à¦¿à§Ÿà§‡à¦›à¦¿à¦²à ¾à¦® ঝাপসা দেখানো শতরঞ্চিটার দিকে।মনে মনে বলছিলাম – বড়রা আসলেই কিছু বোঝেনা। কিন্তু অভিমান করে লাভ কি ?বুঝবে কেউ থোড়াই...স্কু ল থেকে ফিরে কোনোমতে নাকে মুখে দুটো গুঁজেই দৌড়,গুলি খেলা শুরু হয়ে যাবে যে।যে জিতবে তার গুলির সংখ্যা বাড়ল,আর যে হারল গেল তার সাধের গুলি।ততদিঠে গ্রহ,à¦¨à¦•à§à¦·à¦¤à à¦° পড়া হয়ে গেছে à¦•à§à¦²à¦¾à¦¸à§‡à¥¤à¦—à§à ²à¦¿ গুলো আমাদের কাছে ছিল গ্রহ ,এর দিনের শেষে যার কাছে সব থেকে বেশি গুলি থাকবে সে আমাদের â€˜à¦¸à§‚à¦¯à¦¯à§‹à¥¤à¦à¦•à ¦¦à¦¿à¦¨ খেলা শেষে গজার চিৎকার – আমি মহাসূযযো।ঠ†à¦®à¦°à¦¾ তো অবাক, মহা সূযযো টা আবার কি !!! গজা বলল –গুণে দ্যাখ ,আমার কাছে ৩৭টা গোহ ,হলাম কিনা মহাসূযযো !!! আর ,সে কি হিংসে আমাদের...

২
ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠব।ততদিনৠসাইকেলটা আমাদের ল্যাজ হয়ে গেছে।যেখা নেই যাই না কেন,সাইকেল থাকবেই সঙ্গে।আর স্কুল ছুটির সময় সর্বমঙ্গলঠ¾ স্কুলের মেয়েগুলো যেখান দিয়ে ফিরবে সেই জায়গায় এলেইশুরু হত আমাদের সাইকেল নিয়ে নানা ক্যারদানিॠএভাবেই একদিন বীরত্ব ফলাতে গিয়ে ঢুকে গেলাম সাইকেল সমেত ড্রেনে।কি লজ্জা!তারপঠমাস দুয়েক অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতুম।আর বিকেল হলেই বন্ধুরা মিলে একেকদিন একেক দিকে –আগড়পাড়া,ব ¦¿à¦°à¦¾à¦Ÿà¦¿,উত্তঠপাড়া।সন্ধৠয় চন্দন স্যারের কোচিং,আমরা বলতুম ‘কোচিন’ ।প্রথম মেয়েদের সাথে একসঙ্গে্ পড়া । পড়া তো মাথা ছেড়ে চ্যাটাজ্জৠপাড়ার পুকুরের কচুরিপানাৠডুবে বসে আছে।আমি ডুবলাম দুই বিনুনী মেয়েটার চশমার কাঁচে।ততদঠ¿à¦¨à§‡ টুকটাক কথা ,তুই তোকারি চালু à¦¹à§Ÿà§‡à¦›à§‡à¥¤à¦®à§‚à¦²à ¦¤ কথা হত নো্টস নিয়ে।এরকমঠ¿ একদিন মেয়েটা হঠাৎ বলল – দুদিন ক্লাসে যাব না।একটু বাড়ি এসে নোটস টা দিয়ে যাবি ?আমি তো শুনে তিনবার বিষম খেয়ে বললুম – হ্যা ,নিশ্চয় ই ।তারপর - সে এক দিন-কি উত্তেজনা - যে মেয়েটাকে এতদিন স্কুলড্রেঠ¸ এর সালোয়ারে দেখেছি – তাকে দেখব ঘরোয়া পোশাকে...
পরে আরো বার কয়েক গেছিলাম ওর বাড়ি।নোটস দিতে,বিজয়া করতে - কাকিমা খাওয়াতেন ভালো।বড় বড় মিষ্টি ,সিঙ্গাড়া...ঠথচ যেটা বলার জন্য এত যাওয়া সেটা গলা থেকে বার করতে পারিনি কিছুতেই...দৠটো চোখ ওর চশমার কাঁচের বাইরেই ঝুলে রইল - ভিতরে ঢুকতে পারেনি ।

এসময় আমাদের জীবনে এল সিগারেট।সঠ¾à¦‡à¦•à§‡à¦² চালিয়ে আমরা চার বন্ধু দেড় কিলোমিটার দূরে যেতাম সিগারেট খেতে।যাতে কেউ বুঝতে না পারে ।আর গন্ধ কাটানোর কত কি টোটকা – মুগডাল /পেয়ারাপাতঠ¾ চেবানো,à¦•à§à¦²à §‹à¦°à¦®à¦¿à¦¨à§à¦Ÿ,পুদ িনহরা দাঁতে ফাটানো।একঠ¸à¦®à§Ÿ তো আমাদের ধারণাই জন্মে গেছিল –পুদিনহরা লো্কে কেনে গন্ধ কাটাতে।এদঠ¿à¦•à§‡ চারিদিকে বসন্ত।প্রৠমপ্ত্র এর গ্রিটিংস কার্ডে বাজার ছয়লাপ।এমনঠময় রিলিজ করল ‘মোহব্বতে⠙...কোচিন কামাই মেরে হলে গিয়ে সেই প্রথম সিনেমা দেখা...হাবুড §à¦¬à§ কান্না-আঃ রে শাহরুখ,বাঃ রে শাহরুখ।পাৠার বইয়ের দোকানের দাদাকে করুণ আব্দার-à¦“à¦°à¦•à ¦® গাছের পাতা র মতন গ্রিটিংস কারড চাই।কিন্তৠ নাঃ,পাওয়া গেল না।এমন সময় একদিন ক্লাসে উৎপল প্লাস্টীকৠ‡ করে প্রায় ওরকমি পাতা এনে হীরো ।আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লুম।তখন বলে - ব্যাটা অশ্বথ পাতা নিয়ে à¦‡à¦²à§‡à¦•à§à¦Ÿà§à¦°à¦¿à • ইস্ত্রিতে সেঁকেছে।দ §‡à¦–তে প্রায় আসলের মতই - কিন্তু একটু হাতে নিতেই ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেল...চলল না প্ল্যানটা। ততদিনে অবশ্য নতুন আরো সিনেমা এসে গ্যাছে...দুব েলা সুমন,কুমার শানু বা নচিকেতা হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।ঠাবা,মা,à¦ªà§à¦°à¦¤à ¿à¦¬à§‡à¦¶à¦¿à¦°à¦¾ এমনকি আমার বাথরুম ও আমার উপর বেজায় বিরক্ত (ওটাই রিহারসাল করার জায়গা ছিল কিনা)।এমনি সময়ে একদিন এক বন্ধুর মহান উৎসাহে আমরা কজন চললুম মহা উৎসাহে নিষিদ্ধ ছবি à¦¦à§‡à¦–à¦¤à§‡à¥¤à¦†à¦®à¦°à ¦¾ অবিশ্যি আদর করে পানু বলতুম।ঠান্ ডা পড়েছে তখন অল্প-এই সুযোগে চাদর,হনুমাঠটুপি দিয়ে নিজেকে যতটা লুকোনো সম্ভব সেভাবে গেছি হলের সামনে-à¦Ÿà¦¿à¦•à¦¿à Ÿ কাটব-আচমকা ধীমান দিল দৌড়- ব্যাপার কি !!! কোনো বিপদ !! আমরাও পিছন পিছন দৌড়।তারপর যতই জিজ্ঞেস করি- কি হল ? পালালি ক্যানো? কিছুতেই বলেনা –শেষে জানলুম,আমরঠ¾ ঢুকছি যখন ও দেখে আগের শো শেষে ওর কাকা বেরোচ্ছে...ঠি ঝকমারি !!!
আমরা বড় হচ্ছিলাম

৩

এরপর যা আছে তাতে কোনো গল্প নেই।ওটা দৌড়নো।আমরঠ¾ দৌড়োতে শুরু à¦•à¦°à§‡à¦›à¦¿à¦²à¦¾à¦®à¥¤à ¬à¦¨à§à¦§à§,আড্ডা সব ছিটকে গেল,চেনে বাঁধা সাইকেল ইদানিং জং মাখে ।
পরশু ঘর গোছাতে গিয়ে চৌকির একদম পিছন থেকে বেরোলো একটা পুরো্নো কালো টীনের বাক্স।খুলৠ‡ দেখি - ভিতরে একরাশ হলদে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া বাসের টিকিট,কিছু ঝাপসা হয়ে যাওয়া গুলি,লাটিম,à §à§‚à¦¸à¦° গ্রিটীংস কারড আর না দেওয়া প্রেমপত্র নিয়ে গোটা à¦›à§‹à¦Ÿà§‹à¦¬à§‡à¦²à¦¾à¦Ÿà ¦¾ তাকিতে আছে আমার দিকে।অবাক হয়ে দেখছে আমায়।ভাবছৠ‡ হয়ত- “আসলেই বড়রা কিছু বোঝে না” ...

পুনশ্চ
আজকাল বাসে টিকিট কাটার পর জানলা দিয়ে ফেলে দি টিকিট-যদি কোনো হাফপ্যান্ট কুড়িয়ে নেয়।মা সেদিন পুরোনো ভাঙ্গা জিনিস বেচে দিচ্ছিলভাঠ্গা জিনিস কেনা লো্কটার কাছে।দেখি কালো কি একটা জিনিস বাক্সমতন।ঠগিয়ে গিয়ে দেখি পুরনো একটা ভিসিপির à¦•à§à¦¯à¦¾à¦¸à§‡à¦Ÿà¥¤à¦‰à ªà¦°à§‡ লাল হয়ে যাওয়া কাগজে প্রায় মুছে যাওয়া হরফে লেখা- ‘কয়ামৎ সে কয়ামৎ তক’।নিয়ে এসে ড্রয়ারে রেখে দিলাম।কিছৠ কিছু মনখারাপ যত্নে রাখা উচিৎ...