একটা সংখ্যা মাত্র

গাজী তানজিয়া



রিক্সাভ্যঠনটা এসে নীরবে দাঁড়াল ছোট্ট গলিটার মাথায়।
ওঘরে ঢোকার মুখে দরজায় দাঁড়িয়ে কেউ একজন বলল, ’ভ্যান এসে গেছে । এখন বইগুলো ভালোয় ভালোয় লাইর্রেরিঠŸà¦¾à¦¤à§‡ পৌছে দিতে পারলেই এক ঝামেলা যায়। বইগুলো যে এতো সহজে বিদায় করা গেছে সে-ই রক্ষা!’
শয়লার বুকের ভেতর দিয়ে এক টুকরো বরফ খণ্ড গড়িয়ে গেল যেন। সে সেলফ থেকে নামিয়ে রাখা বইগুলো একটা নরম পরিস্কার কাপড়ে বুলিয়ে নিচ্ছিল শেষবারের মতো, যেন একটুও ধুলো জমে না থাকে। পরিস্কার করা উপলক্ষ মাত্র, এ যেন বিদায়ের আগে প্রিয়জনের হাতটা আলতো ছুয়ে দেখা।
ওঘরে যাবার বেলায় যা কিছু না নিলেই নয়, সেসব জিনিসপত্র গোছগাছ করতে করতে খালা চাপা ক্ষোভের সুরে বলছিল, ‘আহা লোকটা এতো বই না কিনে এই টাকায় যদি মেয়ে-বউয়ের জন্য সোনা গহনা কিনত বা নিদেন পক্ষে কোথাও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই, তাইলে তো আজকে আর এই দিন দেখতে হইতো না! মেয়েটার লেখা-পড়া হয়ত শিকায় উঠবে! শায়লার চাকরিটাও তো এই আকালে চলে গেল।’
আজ এই কথাটা শুনতে শায়লার একটুও ভালো লাগছে না। অথচ এক সময় সে তার স্বামী সফিকের এই বই কেনা নিয়ে কি কম অভিযোগ করেছে! এমনও দিন গেছে মাস শেষ, সংসার খরচের শেষ টাকাটা দিয়ে তার স্বামী একটা বই কিনে এনেছে।
শায়লা মুখ ঝামটা দিত। ‘বেতন পাওয়ার তো এখনো বাকি, কবে পাবা ঠিক নাই, কালকে মেয়েটার দুধ কেনার পয়সাটা পাবা কই!’
সফিক অপরাধীর মতো বলত, ‘বাদিয়ুর এই বইটা পুরানো বইয়ের দোকানে হঠাৎই পেয়ে গেলাম। জীবিত ফিলসফারদেঠবই তো এতো সহসা পুরানো বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় না! তুমি চিন্তা করো না, বেতন হয়ে যাবে।’
শায়লা জানে, সংবাদপত্রৠর চাকরিতে তার স্বামীর বেতন অনিশ্চিত। আরে, দেশে গণতন্ত্র থাকলে, সত্য বলার সুযোগ থাকলে না সংবাদপত্রৠর কাটতি হয়। সাজানো-গোছ ¦¾à¦¨à§‹ খবর কে পড়ে আর দেখে! তাতে আবার à¦¸à¦¾à¦‚à¦¬à¦¾à¦¦à¦¿à¦•à§‡à ° বেতন!
সফিক তখন শায়লার তমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি রাগ করতেছো কেন? বই কিনে কি শুধু আমার শান্তি হয়, আমার মেয়ের ভবিষ্যতে লাগবে না! এসব বই পড়ে আমার মেয়ে একদিন বড় পণ্ডিত হবে। সে একটা নিশ্চিত পেশা বেছে নেবে। সে তার বাবাটার মতো বই পড়ে পড়ে বোকা হবে না।
একই সাথে স্বপ্ন দেখানো ও ভেঙ্গে দেয়ার জন্য এই লোকটা একাই যথেষ্ট সে কথাটা শায়লা সেদিন বুঝতে পারে নাই। আজ বুঝতে পারছে। তার মেয়ের বাবাটা আসলেই বোকা! বোকা না হলে, চারিদিক থেকে এতো সতর্ক করার পরও সবকিছু জেনে বুুুুঝেও নিউজ কভার করতে গিয়ে এমন জ্বর-কাশি বাধালো!
আর না গিয়েও তো উপায় নাই। পত্রিকাগুঠ²à§‡à¦¾ চলে না। শত শত সংবাদ কর্মী চাকরি হারাচ্ছে প্রতিদিন। অফিস বেতন বন্ধ করে রেখেছে। টাকা ফুরিয়ে এসেছে, খাবার ফুরিয়ে এসেছে, একই সাথে মানুষটার দমও ফুরিয়ে এসেছে।
কিছুক্ষণ পর পর তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। শায়লা পাগলের মতো ছুটছে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে। প্রাইভেট হসপিটালগুঠো বন্ধ করে রেখেছে মালিকরা। তারা বাণিজ্য চায় সংক্রমণ নয়। আইসিইউগুল §‹ সোনার হরিণ, কোথায় গেলে একটু নিশ্বাস নেয়া যাবে, কোথায়? কেউ জানে না। এমনকি সময় মতো টেস্টও হলো না, চিকিৎসা হলো না, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টॠএকটু নিশ্বাস নেয়ার জন্য কি প্রবল আকুতি মানুষটার। মৃত্যুর ভয়াবহতায় বিশ্ব তখন টালমাটাল। ওদিকে স্লাভোয় জিজেক সমাজতন্ত্র ের পুনরুত্থান ের সম্ভাবনার কথা বলছেন। আর এদেশের লুটেরারা সেই সময়ে আরো কিভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠা যায় সেই হিসাব কষছে। অন্যদিকে মহামারিতে মৃত্যুগুলৠকে এড়িয়ে যাওয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা কর্তাদের। কেউ কেউ বলতে লাগল সর্দিকাশিॠমূলত তখন মিডিয়ার সৃৃষ্টি করা শব্দ ছিলো এটা, সর্দিকাশিॠঅথচ সেই সময়ে এই সামান্য সর্দি-কাশিঠ¤à§‡à¦‡ মরে যেতে লাগল কত মানুষ! এমন দমবন্ধ হওয়া সময় শায়লার জীবনে আর কখনো আসে নাই। একটা ছোটো ফ্ল্যাটের দেয়াল, আসবাবপত্র বই সব যেন চেপে বসে আছে তার বুকের ওপরে। মুহূর্তে বদলে যাওয়া একটা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নাভিশ্বাস অবস্থা। শায়লা ভাবতে চাইতো একুশ শতকের মহামারি হয়ত একশো-দুশো বছর আগের মহামারীর মতো ভয়াবহ হবে না। কিন্তু তার সব হিসাব গড়মিল করে দিয়ে মৃত্যু এসে তার দুয়ারেই কড়া নাড়লো। বিশ্বজোড়া লাখো লাখো শবের মিছিলে একটা সংখ্যামাতৠà¦° হয়ে শামিল হলো বই পাগল বোকা মানুষটাও।