(শয়তানের গুপ্ত র‍্যাপসডি "হেভি মেটাল" ও তার অভ্যুত্থান)

ঋষি সৌরক



গান বা সঙ্গীত এমন একটি মাধ্যম যার আলাদা কোনও ভাষা হয় না। মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য একদিন আওয়াজ করতে শিখেছে, তার থেকে উৎপন্ন হয়েছে ধ্বনি, ধ্বনি থেকে অক্ষর, অক্ষর থেকে শব্দ, শব্দ থেকে ভাষা। এই মানুষই কখনো প্রচণ্ড আবেগে বিহ্বল বা উচ্ছসিত হয়ে পড়েছে, অথবা অনন্ত বিস্ময়ে হয়েছে কৌতূহলী আবার কখনো অকস্মাৎ অপ্রত্যাশঠত ঘটনায় হয়েছে নিদারুণ হতাশ, তখন তার বহিপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন সুরের মাধ্যমে। সেই সুরগুলির নিজস্ব কিছু ফ্লেভার আছে। অর্থাৎ মনে করুন আপনি স্প্যানিশ জানেন না, কিন্তু একটি স্প্যানিশ গান শুনে তার চড়াই উতরাই মূর্ছনা বা তাল লয় রাগ আপনার মনে কিছু অনন্য ইম্প্রেশাঠ¨ বা ছাপ ফেলতে বাধ্য। অথচ আপনি জানেন না গানটি আদৌ আনন্দের না দু:খের, জোছনার না অমাবস্যার, মিলনের না বিচ্ছেদের - একটি গান তার সুরবৈচিত্র ‍ আপনার মধ্যে স্বকীয় এক প্রভাব ফেলে - তার তীব্রতা ও তীক্ষ্ণতা সংবেদনশীল মানুষ অনুভব করে অতিসহজেই - একারণেই à¦¸à¦™à§à¦—à§€à¦¤à¦ªà§à¦°à ‡à¦®à§€à¦¦à§‡à¦° কাছে গান নিজেই একটি ভাষা, ভাব প্রকাশের আদর্শ মাধ্যম।
সময়টা ১৯৬০ এর শেষদিকে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় তখন রমরমিয়ে চলছে ব্লুজ- পপ-জ্যাজের জনার। হিন্দীতে আশা-কিশোর-ল ¦¤à¦¾-রফি এইসব সেসময় মানুষের মুখে মুখে। পাশ্চাত্যৠর à¦¸à¦™à§à¦—à§€à¦¤à¦ªà§à¦°à ‡à¦®à§€à¦°à¦¾ কোথাও যেন একঘেয়েমি অনুভব করছিলেন দীর্ঘদিন একইরকম গান শুনতে শুনতে। শুধু à¦¸à¦‚à¦—à§€à¦¤à¦ªà§à¦°à§‡à ¦®à§€à¦°à¦¾à¦‡ নন, কিছু কিছু à¦¸à¦‚à¦—à§€à¦¤à¦¶à¦¿à¦²à§à ªà§€à¦°à¦“ নতুন কিছু করার প্রচেষ্টাৠরত ছিলেন। এদেরই মধ্যে অন্যতম হলেন ইংল্যাণ্ডৠ‡à¦° বিরমিংহাম এর ওজি অসবর্ন এবং তার বন্ধু বাটলার। "আর্থ" নামক একটি ব্যাণ্ডে সহশিল্পী থাকার সময় এইদুজন বন্ধু লক্ষ্য করলেন তাদের গান গুলো ঠিক সেই ভাব প্রকাশ করতে পারছে না, যা ওরা দুজন চাইছে। একদিন নিজেদের জ্যামিং রুমে রিহার্সাল করার সময় তারা দেখলেন রাস্তার বিপরীত দিকের থিয়েটারে একটি ভৌতিক ছায়াছবি চলছে। আর সেই ছায়াছবি দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল চলচ্চিত্রট ির নাম "ব্ল্যাক সাবাথ" বা বাংলায় যার অর্থ হতে পারে দূষিত সংস্কৃতি... তৎকালীন একটি জনপ্রিয় ভয়ের ছবি, যার পরিচালক ছিলেন বিখ্যাত মারিও বাভা।
জনতাদের এই ভিড় ওজি এবং বাটলারকে কেবলমাত্র চমৎকৃতই করলো না, বিচলিতও করলো। মানুষ তার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারকে, অজানা আশঙ্কাকে দাম দিয়ে দেখতে চাইছে। অর্থাৎ মানুষ যুক্তির আলোয় নিজের ছায়া দেখতে দেখতে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে, তার চাই এমন এক গন্তব্য যা নিশুতি অন্ধকার হবে, বিপদসংকুল হবে...
এইসময় আরো একটি ঘটনা ঘটে বাটলার এর সাথে। সে কালোজাদু এবং জাদুটোনা বিষয়ক বিভিন্ন বই পড়তে পছন্দ করতো। তার বাড়ির দেয়ালের রঙ ছিলো ঘন কালো এবং সেখানে অসংখ্য ক্রুশ পোঁতা ছিলো উলটো করে... অর্থাৎ প্রথাগত ভাবে না হলেও সে নিজেকে অন্ধকার জগতের একজন উপাসক হিসেবে মনে করত। এইসময় ওজি অসবর্ন তাকে ডাইনিবিদ্ঠার এক বই দেয়, যাতে ডাইনিপ্রথঠর বিবিধ নিয়মাবলী নথিভুক্ত ছিল। এই বই নিজের à¦²à¦¾à¦‡à¦¬à§à¦°à§‡à¦°à§€à ° তাকে রেখে একরাতে ঘুমোতে যায় বাটলার। মধ্যরাতে তার ঘুম ভাঙলে সে দেখে এক দীর্ঘকায় ছায়াশরীর তার খাটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম থেকে জেগে উঠতেই বাটলার দেখে সেই ছায়াশরীর অদৃশ্য হয়ে গেল। পরদিন সকালে ডাইনিবিদ্ঠার সেই বই আর পাওয়া যায় না...
সমসাময়িক এই দুইঘটনা বাটলার এবং ওজিকে প্রভূতভাবৠরোমাঞ্চিত করে। এরপর থেকে তারা নিজদের রিহার্সালৠএমন গান লিখতে ও গাইতে শুরু করে যার মধ্যে "ব্ল্যাক সাবাথ" সিনেমাটির মত এক অজানা শিহরণ থাকে। ক্রমশ একদুটি গান তারা বিভিন্ন স্টেজ পারফর্ম্যা ন্সেও পরিবেশন করে এবং সেই সমস্ত গানগুলি খুব অল্পসময়ের মধ্যেই শ্রোতাদের ভেতর অভাবনীয় সাড়া ফেলে দেয়। ওজি এবং বাটলার বুঝতে পারে মানুষ অচেনা অজানা আশঙ্কাজনক একটা কম্পাংক চাইছে...যা এর আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও সম্মিলিত ভাবে বা একান্ত প্রচেষ্টা জুগিয়ে কেও করেনি। প্রথমত নিজেদের ব্যাণ্ড এর নাম বদলে তারা রাখে "ব্ল্যাক সাবাথ" এবং নিজদের গানে কালোজগতের বিবিধ প্রথা, যন্ত্রণা, আনন্দ, বিহ্বলতা ইত্যাদি নিয়ে বলতে শুরু করে।
শুধু তাই না, যেহেতু গানগুলি অন্ধকার জগত নিয়ে, শয়তানকে নিয়ে, পাপের অনুষঙ্গ নিয়ে তাই গানগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বৈচিত্র পরিলক্ষ্যঠত হয়। তা ভোকালিস্টৠ‡à¦° কণ্ঠস্বরেঠ° বৈচিত্রই হোক বা গিটারিস্টৠর হার্মোনিই হোক কিমবা ড্রামারের রিদমের বৈচিত্রেই হোক অথবা ব্যাসিস্টৠর পাম মিউটিং এর ঐন্দ্রজালি ক ব্যবহারেই হোক... আর এভাবেই ১৯৬৮ এর কাছাকাছি ওজিরা শুধুমাত্র ইওরোপীয় বা পাশ্চাত্য সংগীত জগতেই না সমগ্র বিশ্বের দরবারে একদম নতুন এক জনারের উপস্থাপনা করেন, যার নাম দেওয়া হয় "হেভি মেটাল" অর্থাৎ এর তীব্রতা তীক্ষ্ণতাঠ° মাত্রা এতখানিই চরম এবং ভারী যা সহজেই এর ভাষাকে অন্যান্য সংগীত ঘরানার থেকে আলাদা করে তোলে।
প্রাথমিক ভাবে হেভি মেটালের প্রকাশভঙ্ঠ—ী নিয়ে à¦¸à¦®à¦¾à¦²à§‹à¦šà¦•à§‡à¦°à ¾ যারপরনাই হইচই করলেও দর্শক এবং শ্রোতাদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তাঠএকে আলাদা জায়গা করে দেয়। পরবর্তী কালে বিশ্বব্যাপ ী বহুব্যাণ্ড ই এই ঘরানাকে অনুসরণ করে তার মধ্যে আরোও বৈচিত্র আনে। খুব সাধারণ ভাবে বললে হেভি মেটালের লাইন আপ এ থাকে চার থেকে পাঁচজন মিউজিসিয়াঠ। একজন ড্রামার (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাবল বেস প্যাডাল যেখানে দেখা যায় এবং সম্পূর্ণ রিদমের ভিত্তি এবং বৈচিত্র ড্রামারের মাধ্যমেই লক্ষ্যিত হয়), একজন লিড এবং রিফ গিটারিস্ট (মূলত ইলেকট্রিক গিটারের কম্বিনেশন দেখা যায়, ট্যাপিং, পাম মিউটিং, ডিস্টর্শেঠ, একক লিড, হার্মোনি এইসব হল গিটার বাজানোর নানারকম টেকনিক), একজন বেসিস্ট ( বেস গিটার আসলে যে রিদমের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূঠ°à§à¦£ তা মেটালের বেস গিটার শুনলে বোঝা যায়, অনেকক্ষেত §à¦°à§‡ বেস গিটার এর রিদম কে কেন্দ্র করেই সম্পুর্ণ গান এগিয়ে চলে) এবং ভোকালিস্ট ( গ্রাউলিং অর্থাৎ গর্জন এবং স্ক্রিমিং বা চিৎকার হল অন্যতম বৈশিষ্ট্য, মেটালে ভোকালিস্ট নিজের স্বরযন্ত্র কে স্বয়ংসম্পৠর্ণ এক বাদ্যযন্ত্ র হিসেবে মনে করেন). মেটাল শিল্পীরা নিজেদের বাদ্যযন্ত্ রে যথেষ্ট পারদর্শী না হলে কিন্তু “অনস্পট ভ্যারিয়েশঠ” আনা সম্ভব না, মেটালের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যঠহল এর মূহূর্তে মুহূর্তে ভ্যারিয়েশঠ-চড়াই-উতরাই -ক্রাইসিস ও নাটকীয়তা। এই এনার্জি এবং গতিশীলতাই মেটালকে অন্যান্য ঘরানার থেকে বেশ কিছুটা স্বতন্ত্র করে তুলেছে বিগত কয়েক দশকে।
"ব্ল্যাক সাবাথ" এর পরবর্তী কালে বিভিন্ন মিউজিশিয়াঠএই জনার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে দলগত ভাবে কাজ করেন। “গানস অ্যাণ্ড রোজেস”, “মেগাডেথ”, “মেটালিকা⠝ থেকে শুরু করে ক্রমশ আজকের “ল্যাম্ব অফ গড” বা “বুলেটস ফর মাই ভ্যালেণ্টঠইন” অথবা “ইনফ্লেমস⠝ বা “ডার্ক à¦Ÿà§à¦¯à¦¾à¦‚à¦•à§à¦‡à¦²à ¿à¦Ÿà¦¿â€ যা-ই বলি না কেন এরা সকলেই মেটাল ঘরানাকে নিজের মত করে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রপূঠ্ণ করেছে। ভারতবর্ষে এই ঘরানার হাওয়া লাগে অনেক পরে যদিও “ভয়ানক মৌত” বা “আর্টিলারঠ¿â€ এই ব্যাণ্ডগুঠি যথেষ্ট নিষ্ঠার সাথে হিন্দী এবং ইংরেজি ভাষায় মেটাল ঘরানাকে অহরহ ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে মেটালের সূত্রপাত হয় পশ্চিমবাংঠার আগে। “সার্টানিঠ” বা “অর্থহীন” এর মত ব্যাণ্ডগুঠি র দ্বারা তীব্রভাবে অনুপ্রাণিঠহয় অনেক পশ্চিমবংগৠ€à§Ÿ ব্যাণ্ড। এপার বাংলায় রক ও মেটালের ঘরানা শুরু করে“ফসিলস⠝, “পৃথিবী”, “প্রাচীর” এবং এদেরই অনুপ্রেরণঠ¾à§Ÿ ক্রমশ তৈরী হয় “আত্মহত্যঠ¾â€,”কৃপা”, “ভিপালাসা†, “ক্রনিক ক্সর্ন” এইসব ব্যাণ্ড। দিন যত যাচ্ছে মেটাল শুধুমাত্র একটি নিজস্ব ভাষাই হয়ে উঠছে না à¦¸à¦™à§à¦—à§€à¦¤à¦ªà§à¦°à ‡à¦®à§€à¦¦à§‡à¦° কাছে, বরঙ মেটাল পরিবেশন করার জন্য বিভিন্ন প্রথাগত ও প্রযুক্তিঠত শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে দিল্লী-à¦•à¦²à¦•à ¦¾à¦¤à¦¾-আসাম সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায়।
যদিও প্রথমেই আমি বলেছি গান নিজেই একটি ভাষা নিজেই একটি ধর্ম, তাই সুইডিশ ব্যাণ্ড “এলুভিটি”ঠ° মেলোডিক মেটাল গান শুনে আমাকে তার লিরিক খুজতে হয় না, কারণ হার্মোনিকঠ¾,ব্যাগপাইপ ¦¾à¦°,গিটার ও সিন্থেসাইঠœà¦¾à¦° এর সাথে ভোকালিস্ট এর অসামান্য গ্রাউল আমাকে যেমন অন্যজগতে প্রেরিত করে... আবার “সাটার্নিঠ” বা “আত্মহত্যঠ¾â€-র গান শুনে মুগ্ধ হয়ে ওঠেন আমার ইতালীয় বন্ধু অ্যাণ্টনীৠŸà¥¤
মেটাল এমন এক ঘরানা যার মধ্যে প্রোথিত আছে অনন্ত যৌবনের বীজমন্ত্রॠএর প্রকাশভঙ্ঠ—ী নিয়ে নিন্দুকদেঠ° সহস্র অভিযোগ থাকলেও এর সমর্থক রা জানে উন্মাদনা কাকে বলে... সর্বোপরি সংগীত যখন নিজেই একটা ভাষা, একটা ধর্ম তা কখনোই স্থিতীশীল থাকতে পারে না, কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক, কোনটা টেকসই আর কোনটাই বা ভঙ্গুর তা তো সময় বলবে, একজন শিল্পী একজন মুগ্ধ শিশুর মতই নিজেকে প্রকাশ করে যাবেন কোনও ব্যারিকেড এর তোয়াক্কা না করেই- এই স্বাধীনতা তার শিল্পীজন্ঠদ্বারা লাইসেন্সপৠà¦°à¦¾à¦ªà§à¦¤à¥¤ একজন à¦¸à¦‚à¦—à§€à¦¤à¦¶à¦¿à¦²à§à ªà§€à¦° প্রকাশভঙ্ঠ—ীর সবচে চরম পর্যায় হল মেটাল মিউজিক... যা কিনা সমালোচক এবং নিন্দুকদেঠ° তোয়াক্কা না করেই নিজের খাত নিজে বানিয়ে নিয়েছে, আর সেখানে তীর্থযাত্ঠীর মত গা ভেজাতে আসছে অসংখ্য উন্মাদ তরুণ-তরুণী, যারা আজোও বিশ্বাস করে অন্ধকারের অস্তিত্বে, যারা আজো বিশ্বাস করে যন্ত্রণার নিজস্ব মেলোডি ও রিদমে, যারা আজো নিশ্চিত চিৎকারের মধ্যেও এক গহীন নীরবতা আছে বা তার উলটো সত্যে... যেভাবে ওজি আর বাটলার সেই অজ্ঞাত সত্যের ক্ষণজন্মা সাক্ষ্মী হয়েও খুঁজে পেয়েছিল এক চিরন্তন সত্যের ভাষা। জরুরী নয় সত্য সর্বদা সুন্দর হবে... কদর্যের মাঝেও সৌন্দর্য খুঁজে পাবার এই খেলাই তো "হেভি মেটাল" এর একান্ত আদিম মন্ত্র