উৎসর্গ – কালু সিং
(দাদু)
আচ্ছা দাদু – আমরা তো
ক্ষত্রিয় , রাজপুত । মার
তরফ সূর্য বংশীয় , বাবার
তরফ চন্দ্র বংশীয় ।
বাবা , কাকা , মামা সবার
অত ভালো চেহারা ছিল ,
বয়সের ফলে তখনও
পুরোপুরি ভেঙে যায় নি ,
তোমার সত্তর বছর বয়সে
এই চেহারা , আর আমার
অবস্থা দেখ , হ্যাংলা ,
পাতলা । তুমি এখনও
খেলাতে নামো নি সানু
সব্বাই নামবে এক এক করে ,
তোমার ক্ষত্রিয়ত্ব
তোমার কানে বাজবে ,
তোমার নিজের দাদু ভালো
ফুটবল খেলতেন (প্রবোধ
সিং রায় ) , ময়দানেও ,
জীবনেও । কর্মকে প্রধান
মনে করে ইংরেজদের অধীনে
, কারও অধীনে কাজ করতে
গিয়ে টিঁকতে পারে নি ,
একের পর এক বিরোধিতার
শেষে তাকে পালিয়ে
বেড়াতে হয়েছে বারবার ।
খেলা চলছিল , কিন্তু
কিছুক্ষণের জন্য তা
ছেড়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে
ভাবতে হয়েছে । গড়তে
হয়েছে রণনীতি । তারপর
ননী ভট্টাচার্য্য আর
দুজন মিলে বাগান
অঞ্চলগুলোতে খাটলেন
বিরোধীতার মধ্যেই ।
এভাবেই গতি দিলেন , গতি
পেলেন । ক্ষত্রিয় সব
সময় অন্যের জন্য যেমন
ভালোবাসায় তেমন
যুদ্ধে।নিজের ছায়ার
মত।ক্ষত্রিয়রা
ব্যবহৃত হয়ছে
বারবার,হবেও।গাছ যেমন
মানুষ কে প্রাণ দেয়,আর
মানুষ? তাকে কাটে,ক্ষত
বিক্ষত করে।গাছের জন্য
ভাবেই না।তা বলে তুমি
ক্ষত্রিয় হবে না?লোক না
পোক।এইসব অনৃত মানুষের
চোখে চোখ রেখো।দেখো সে
মাথা নীচু করবেই। তুমি
না রাজপুত।
নদী শুকিয়ে যায়
কিন্তু তার রেখা বলে
দেয় , সে ছিল নদী । ভেতরে
রাজপুত হও , বীর্য্যবান
হও । আমাদের পূর্বজ
যারা রাজস্থানে ছিলেন ,
তাঁদের মাথায় ছিল
বিশ্বাস , মনে শপথ , মানে
চেষ্টা । আর ভালোবাসা ?
এগুলো নিয়েই তো
ভালোবাসা , ভালোবাসা তো
সমস্তটাই । যাক গিয়ে , তা
তোমার মধ্যেও এসব আছে ,
আমাদের সবার মধ্যেই আছে
, এমনকি প্রত্যেক
মানুষের মধ্যেই আছে ,
শুধু নিজে মালী হয়ে
তাকে ফোটাতে হবে ।
তুমিই তো শিখিয়েছিলে
লোকের পেছনে দৌড়লেও দৌড়
টা শেখা হয়ে যায়।জীবন
কে তো সদর্থে দেখতে
হবে।
উপঢৌকন তো তার কাছেই
আসে যাকে আটকানো যায়
না।ভেবোনা,এসব উড়ে যাবে
বেলা বাড়লে। তুমি , জানি
না , কেন শুরুতে পৈতে
নিলে না , শুধু
খামখেয়ালীপনা ! এখন
একেবারে উঠেপড়ে লেগেছো
, বুঝবে প্রায়শ্চিত্ত
করতে হবে , আগে নিলে তখনই
তোমায় বলে দিতাম কিছু ...
এখন বল না ? শোনো চুপচাপ
দাঁড়িয়ে থাকলে বাঘের
কাছে তুমি পুতুল ছাড়া
কিছু নও । যদিও জেনে যাও
যে তুমি হারবে , তবু
রণভূমি পুরোপুরি
ব্যবহার কর । বাঘকে suffer
করাও । তেজ অহংকারে নয় ,
উপযুক্ত সময়ে সংহারে
ব্যবহার কর । মীরার
বিশ্বাস আর ভালোবাসা
লালন কর । হায় কেউ ওকে তো
প্রথমে বুঝতেই পারল না
।
সাজ ঘরে যাবার আগে
শপথ নাও।আজ ঐ বড় শপথ ।
রাণাপ্রতাপ ,
লক্ষ্মীমাতা , এরা
কিন্তু প্রকৃত মানুষ
হয়ে ওঠার পথে
ক্ষত্রিয়কে কিন্তু
শুধু মাধ্যম হিসেবে
ব্যবহার করেছিল ।
রামকৃষ্ণকে গোবিন্দ
রায় নামের একজন
ক্ষত্রিয়ই কিন্তু
মুসলিম ধর্মে দীক্ষা
দিয়েছিলেন উনি বড়
জ্ঞানী এবং মুক্ত ছিলেন
বলেই এই উদাহরণ ।
তুমি সেদিন গাইছিলে
না – তোমারই তো লেখা ......
“ হে ঈশ্বর হাওয়া এসে
পাতাকে কি বলে যায় ...” ।
এটা এক ধরনের রাজ তবে বড়
সুন্দর । উত্তরে না
যেতে পারলে এত সুন্দর
রাজই বহন কর , করাও । আর
কিছুর দরকার নেই ।
ওই দ্যাখো সূর্যের আলো
যেন অনেক কোটি লোক হয়ে
তোমায় ডাকছে।সাজঘর
থেকে বেরনোর মুহুর্ত
আসন্ন।তুমি সামনে
থাকো।দ্যাখো তোমার
পেছন একে একে আমরাও
সাজঘর থেকে...