১
যদি কখনো হুদেয়ার সাথে
তোমাদের দেখা হয়, তাকে
জিজ্ঞেস কোরো, বড় হয়ে সে
কি হতে চায়। সে হয়তো
বলবে বাশপাতি। বাশপাতি
কি? বাশপাতি হল এক সবুজ
রঙের পাখি যার মাথাটা
কমলা। ডানার নীচের
দিকটাও কমলাই, তবে সেটা
সব সময় দেখা যায় না। যখন
বাশপাতি ডানা মেলে উড়ে
যাওয়ার জন্য পাখনা
মেলে, শুধু তখনই তার
সবুজ নরম পালকের ফাঁক
দিয়ে কমলা রঙ জ্বলে ওঠে,
যেন আকাশে অল্প অল্প
করে আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে
পাখিটা। আর একটা অদ্ভুত
জিনিস, এই পাখিটার
লেজের মাঝখান দিয়ে আরো
একটা সরু লেজ যেন নেমে
গেছে। যদি কোনোদিন
গুগলে green honey bee eater বলে
সার্চ করো, তাহলে যে
পাখিটার ছবি দেখতে
পাবে, সেই হল আমাদের
বাশপাতি, আবার হুদেয়াও
হতে পারে, হয়তো সে
ততদিনে সত্যি সত্যি
পাখি হয়ে গিয়েছে! তার
ফটো যদি কেউ তুলতে যাও
তখন, সে হয়তো মাথার উপরে
দুটো হাত তুলে ধরবে, আর
তোমরা দেখবে সেই হাতের
নীচে কমলা রঙের আগুন
আগুন পালক সাজানো। ভারি
মিষ্টি হুদেয়া
ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে
বলবে “চিজ!”
২
ওমরান ফুটবল খেলতে
ভালোবাসে। সে একটা টিম
আর তার দাদা আরেকটা
টিম। দরজার এদিক থেকে
ওদিক হল খেলার মাঠ।
ওমরান বল গড়িয়ে দিলে
দাদা গোল আটকানোর
চেষ্টা করে। দাদা বল
গড়িয়ে দিলে ওমরান গোল
আটকানোর চেষ্টা করে।
ওমরান খুব চেষ্টা করে
বল আটকানোর, সে চায় সে বড়
হয়ে অলভার কানের মত
গোলকিপার হবে। অলিভার
কান ইউরোপের জার্মানি
নামে যে দেশটা আছে, সেই
দেশের ফুটবল টিমের গোল
কিপার, গুগলে গিয়ে Oliver Kahn
লিখে সার্চ করলেই তার
ছবি বা খেলার ভিডিও
দেখতে পাবে। কিন্তু
ওমরান পারেনা সব সময় বল
আটকাতে। পারবে কি করে,
ওমরান তো এখনও ছোট! তাই
দাদা গোল দিয়ে দেয়।
কিন্তু ওমরানের মন
খারাপ হয় না, ওমরান
কাঁদে না, এমনকি ছোটখাট
চোট লাগলেও সে কাঁদে না,
চুপ করে অপেক্ষা করে
কখন কেউ এসে তাঁর চোট
লাগা হাতে পায়ে ওষুধ
লাগিয়ে দেবে। কারণ
ওমরান জানে, খেলতে গেলে
একটু আধটু চোট তো
লাগবেই! নাহলে সে Oliver Kahn
হবে কি করে? তোমরাও যদি
কেউ বড় হয়ে আরো বড় যারা
তাদের মত হতে চাও, তাহলে
তোমাদেরও ওমরানের মত
হতে হবে। অল্পতেই
কাঁদলে চলবে না, বুঝলে?
৩
আমাদের ছোট্ট ভাই
আয়লান, বালির প্রাসাদ
বানাতে ভালোবাসে। ওই
সমুদ্রের পারে খেলনা
বেলচা, খেলনা কোদাল আর
খেলনা বালতি ভরা জল
দিয়ে যেমন ভাবে প্রাসাদ
বানাতে হয় তেমনই। তো
আয়লান একদিন খুব মন
দিয়ে একটা প্রাসাদ
বানাচ্ছিল একটা খুব
সুন্দর সমুদ্রের পারে
বসে। সেই প্রাসাদের কত
ঘর, কত দরজা, কত জানালা,
একেক দরজায় একেক রকম
ডিজাইন। একেকটা জানালা
খুললে একেক রকমের ঘর
দেখা যায়। অনেকটা ডিজনি
ল্যান্ডের মত। তোমরা
নিশ্চয়ই জানো
ডিজনিল্যান্ড কি, তাও
যারা জানোনা তাদের জন্য
বলি, ডিজনি ল্যান্ড হল
এক সব পেয়েছির দেশ,
যেখানে আমাদের মিকি
মাউস, নিমি মাউস, প্লুটো,
ডোনান্ড ডাক, ডেইসি ডাক,
গুফি ওরা সব্বাই থাকে।
এছাড়াও ডিজনি
প্রিন্সেস সহ আরো
অনেকের বাড়ি আছে এই
ডিজনিল্যান্ডে।
ওয়াল্ট ডিজনি নামে একজন
মানুষ যে কি না মিকি-
মিনিদের বন্ধু ছিলেন,
তিনি ১৯৫৫ সালে
অ্যামেরিকার
ক্যালিফোর্নিয়ায়
প্রথম ডিজনিল্যান্ডটা
বানিয়েছিলেন, আর তারপর
থেকে মিকি মিনিদের আর
কে পায়! ওরাও আস্তে
আস্তে পৃথিবীর আরো কিছু
শহরে আরো ডিজনিল্যান্ড
তৈরি করে ফেলেছে এরপর।
এখন গোটা পৃথিবীতে
ক্যালিফোর্নিয়া,
ফ্লোরিডা ছাড়াও টোকিও,
প্যারিস আর হংকং শহরে
ডিজনিল্যান্ড আছে।
সেখানে অনেক অনেক মজার
রাইড, খেলার জায়গা আর
সবচেয়ে বড় কথা মিকি আর
মিনি মাউসরা আছে, তারা
তোমায় দেখে এগিয়ে আসবে
হাত মেলাতে, হেসে বলবে,
“হ্যালো!” ওরা নাচবে,
গাইবে, খেলবে তোমার
সাথে।
এই দেখ, এত কথার মধ্যে
আমাদের ছোট্ট ভাই আয়লান
কখন ঘুমিয়েই পড়েছে
বালির মধ্যে, লাল জামা
আর নীল প্যান্ট পরে। আর
প্রাসাদটাও দেখ ঢেউ এসে
ভেঙে দিয়ে গেছে। কিন্তু
মন খারাপ কোরো না, ঢেউও
তো কত সুন্দর, না? বড় বড়
সাদা ঢেউ, নীল সমুদ্রের
বুকে? দেখতেও কত ভালো
লাগে বলো! আমি ভাবছি
এখানে বসে কিছুক্ষণ ঢেউ
দেখি, পরে আবার তোমাদের
সাথে কথা হবে, তোমরা
সবাই ভালো থেকো, আর
বাশপাতি, অলিভার কান আর
ডিজনিল্যান্ডের কথা
ভুলে যেওনা কিন্তু!
একইভাবে হুদেয়া, ওমরান
আর আয়লানদেরও মনে রেখো।
টা টা!