ডিভাইসটি ভুল করে বাবা
ফেলে গেছে বাসায়। বাবা
জানেন এটি যেখানে রেখে
গেছেন, সেখানেই থাকবে।
তবু ভীষণ কৌতুহল হয়
অনিমিখের। ডিভাইসটি
কেন ওদের জন্য নিষিদ্ধ
করে রাখা হয়েছে?
ডিভাইসটি পকেটে পুরে
ফেলে সে, বাসার সামনে
মৌসুমী ফুলের বাগান,
অদূরে অর্গানিক শাক
সবজির ক্ষেত। অদূরে বয়ে
চলা ঝিলটাতে পাখিদের
মেলা, শীতের পাখি।
অপূর্ব কিচির মিসির
তাদের। অনিমিখ সাইকেল
নিয়ে ঝিলের পাড়ে যায়
সামান্য সময় বসে এর
বাধাই ঘাটে ভিতরের
অস্থিরতার পারদ ক্রমেই
চড়তে থাকে। অচেনা একটা
বোধ কেমন বুদবুদের মতোই
ভিতরে জন্ম নিয়ে নিয়ে
মিলিয়ে যায়, অথচ
স্বস্তি দেয় না।
বুদবুদগুলো শীতল নয়,
ফুটন্ত পানির মতো
উত্তপ্ত। অথচ সে সনাক্ত
করতে পারে না এই
অস্থিরতার অবয়ব, এর আগে
কোনদিন এমনটি হয়েছে
বলেও মনে পড়ে না তার।
পকেট থেকে রিস্ট ওয়াচ
সাইজ গেজেট টা খুলে
দু’চার বাক্যে টাইপ করে
ফেলে সে মানসিক অবস্থার
ব্যাখ্যাটুকু। গেজেট
সেকেন্ডের মধ্যে
জানিয়ে দেয়, এই বোধটির
নাম “অপরাধবোধ”। যা
বর্তমানে প্রায় বিরল।
অনিমিখ কিছুটা বিমূঢ় হয়
বিস্ময়ে, কিছুক্ষণ
মাত্র, শব্দটাও সে নতুন
শুনলো। বিস্ময়কে
উপেক্ষা করে দ্রুত
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে
সে। বাবার ফেলে যাওয়া
ডিভাইসটি হাতে নেয়, যা
কিনা তার মতো দশ বছরের
বালকের জন্য ব্যবহার
নিষিদ্ধ। সাইকেল
চালিয়ে আরো দ্রুত
পৌঁছে যায় জাদুঘরের
সামনে। দ্রুত ডিভাইসের
সুইচ টিপে নিজেকে
অদৃশ্য করে ঢুকে পড়ে
জাদুঘরের ভিতরে এবং তার
জন্য নিষিদ্ধ এলাকায়,
প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
সংরক্ষিত এলাকায়।
কৌতুহল, যা কিনা তাকে
বাবার ফেলে যাওয়া
ডিভাইসটি হাতে নিতে
প্ররোচিত করেছে,
ডিভাইসটি হাতে নেয়া, যা
কিনা তাকে ’অপরাধ বোধ’
নামে অচেনা একটা বোধের
সাথে পরিচয় ঘটিয়েছে,
সবকিছু নিয়ে অনিমিখ যখন
তার জন্য নিষিদ্ধ
কক্ষটিতে প্রবেশ করে,
সে আন্দাজই করতে পারে
নি কী ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
অপেক্ষা করছে তার জন্য।
......... কতোগুলো বীভ্যস
শিশুর মৃতদেহ,
ধ্বংসস্তুপ ......... ইট ..........
সুড়কি ..........রক্ত
.........শুকিয়ে যাওয়া
মগজ........খাবলা খাবলা
মাংস ..........., অদৃশ্য
অনিমিখের মুখ থেকে তার
অজান্তেই বেরিয়ে আসে
একটি আওয়াজ ও........ অনিমিখ
সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
তার সামনে সারিবাধা
বীভৎসতা আর সামনে
পরিচয়-ব্যাখ্যাসূচক
বোর্ড। কোনটিতে লেখা
‘জাপান- ১৯৪৬’ কোনটিতে
‘আফগানিস্তান- ২০০৫’
‘ইরাক-২০০৩’
‘গাজা-২০১৪’ ‘সিরিয়া-
২০১৫’। হঠাৎ একটি
বোর্ডে চোখে আটকে যায়
অনিমিখের। এটিতে লেখা
১৯৭১ এবং বাংলাদেশ।
অনিমিখ স্তব্ধ দাঁড়িয়ে
যায় বোর্ডটির সামনে।
বর্তমানে সে অখন্ড
বিশ্বের অধিবাসী হলেও
সে জায়গাটিতে বাস করে
সে জায়গাটি একবিংশ শতকে
‘বাংলাদেশ’ নামেই
পরিচিত ছিল। বিদ্ধস্ত
পোড়া জনপদ, মায়ের
মৃতদেহের পাশে
কান্নারত শিশু, মৃতদেহ
নিয়ে শিয়াল-কুকুরে
টানাটানি, উদ্ধাস্ত
মানুষের ¯্রােত.......
উলঙ্গ মৃতদেহ........
পিছমোড়া হাত চোখ বাঁধা
সব অসহায় মৃত মানুষের
স্তুপ....... দাউ দাউ আগুনে
ডবলা মানুষ ভর্তি
বাস.......... ওফ কী ভয়ংকর, কী
বীভৎস........। তখন মানুষ
এতোটা অমানুষ ছিলো?
এভাবেই মানুষ মানুষকে
হত্যা করতো? গাজায়.........?
আফগানিস্থানে.........?
ইরাকে..........?
বাংলাদেশ.........? বাকরুদ্ধ
বিবমিষা নিয়ে ঘর থেকে
দৌড়ে বের হয়ে সে।
অদৃশ্য হয়ে যাবার ফলে
কেউ ওকে দেখতে পায় নি।
অচেনা বোধটা আরো
ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে
তাকে। দুঃখবোধ ছাপিয়ে
তার মনে বাড়তে থাকে সেই
বোধের তাপ-অনুতাপ, কেন
সে তার জন্য ব্যবহার
নিষিদ্ধ ডিভাইসটি
নিজের পকেটে ঢুকানোর
ইচ্ছাতাড়িত হলো সে?
কেনো তার নিষিদ্ধ
এলাকাটা ঘুরে দেখার
কৌতুহল হলো? কেনো সে
ঢুকলো তার জন্য নিষিদ্ধ
জাদুঘরের কক্ষটিতে?
কেনো গেল? কেনো সব
সু-শৃঙ্খল নিয়মের
শৃঙ্খলা ভেঙে ফেললো সে?
কী হবে এখন তার?
সারাজীবন এর দহন নিয়ে
বাঁচতে চায় না সে।
তবে কী এটি সেই
মানুষদের উত্তরাধিকার
বহনের ফল? যে মানুষদের
ইতিহাস শতাব্দীর পর
শতাব্দী কেবলই হিংসার,
উন্মত্ততার, ধ্বংসের
হত্যার? বর্তমান রীতি
অনুযায়ী নিজের কৃত
ভুলের জন্য নিজেকে
শাস্তি দিতে হবে এখন
তার। কিন্তু কি শাস্তি
দেবে সে নিজেকে? কী
শাস্তি দিলে সে বাঁচবে
এই হঠাৎ পরিচিত হওয়া
বোধ “অপরাধবোধ” থেকে
মুক্তি পাবে? কোনভাবেই
যে এর দহন বহন করে জীবন
কাটানো সম্ভব নয়
অনিমিখের।