গ্যালারী বললেই টং করে
বেজে ওঠে –
অ্যাম্ফিথিয়েটার।
সফোক্লিস এস্কাইলাস
ইউরিপিডিস - প্রাচীন
গ্রীস। খোলা আকাশ তারায়
ভর্তি – কোন এক
সন্ধ্যায় মশালের আলোয়
প্রসেনিয়ামে অয়েদিপাস
নিজের চোখ উপড়ে ফেলতে
চাইছে। ডায়োনিশাস –
আঙুর ওয়াইন আর
আনুষ্ঠানিক মোচ্ছব এর
দেবতাকে তুষ্টু করার
জায়েগা
অ্যামফিথিয়েটারে।
ওয়ার্ল্ড কাপ তো প্রায়
সেই ডায়োনিশাসের পুজো –
রেভেলরি,
ক্যাপ্টিভেটিং
ইনটক্সিকেশান, হুল্লোড়,
পরমানন্দের অভিভাব, হোক
না সে সব এই ফুটবলের দেড়
ব্যাটারির দেশের
মানুষের, এক একটা মুভ আর
কয়েক কোটি শিহরন, যার
ঠ্যালায় দু চারটে মিনি
অ্যাকসিডেন্ট পরের দিন
সকাল সকাল ঘটবে এদিক
সেদিক। ঘুম চোখে
স্কুটার সাইকেল টাইকেল
একটু টাল মাটাল তো
হবেই। ছোট খাট ব্যাভার
গুলো ফুটবলের দেবতাকে
উচ্ছজ্ঞ করার সামিল।
পাড়ার হরির চায়ের দোকান
বা বাবলুর আলুর দোকান
সব জায়েগাতেই এই একটা
সময় আঁতেল আর নাঁতেল রা
একই ভাষায় একটা বিষয়
নিয়েই মেতে থাকবে।
উন্মাতাল গ্যালারী
মানেই মাচায় বসে
সেরিমনিয়াল
সেলিব্রেসান। দর্শক আর
মনোরঞ্জনের ক্লাস্টার
বোমা। তবে বাংলা
সিরিয়াল মনোরঞ্জনের
সেলিব্রেশান কে যেখানে
ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেছে,
সেই সেরিব্রাল
তুলকালামের তুলনায়
ফুটবল নিয়ে তুলকালাম
শিশুদের ব্যাভার। কি সব
পারফরম্যান্স, আর কি সব
স্ক্রিপ্ট প্যালা কে
তারে বাঁধছে। কি
টাইমিং, অর্থাৎ সময়ানুগ
ঘটমানতা, ভয়ঙ্কর
প্রিসিজন অর্থাৎ
নিপুনতা, আর
সিন্থেসাইজারের রিদম
অর্থাৎ ছন্দবদ্ধতা।
আফটার অল সৃষ্টিশীল
শিল্প কিনা, কি নেই? জী
মাইনরের এজিটেটেড রিদম
আছে, বি মেজর এর
লিরিক্যাল মেলোডি আছে,
ফ্র্যাগমেন্টেশানের
টোন্যাল
ইন্সটেবিলিটির থেকে
কাম রিপোজ এর অসাধারন
ব্লেন্ডিং রয়েছে,
স্ক্রিপ্ট এর কথা বলছি,
যা নেই তা শুধু হল
ক্লোজিং ফলে অপেরা
চলতেই থাকে – দুশো
সাইত্রিশ বা তিনশ
বাহাত্তর হপ্তা। তবে এই
সিজিনে টি আর পী ভাগ হয়ে
গেছে, সিজিন টা তো
সারাক্ষন গ্যালারীতে
চেপে থাকার।
সেটা কোন সাল ছিল
জিজ্ঞেস করলে এক্ষুনি
এক সাথে তিন কোটি তেইশ
লক্ষ তেত্রিশ হাজার
তিনশ তেত্রিশ খানা সঠিক
উত্তর নেটে হিট করবে
৩জি স্পীড কে শামুকের
গতি বানিয়ে যদি প্রশ্ন
করি তার কোন খেলায় একজন
ঈশ্বর তার হাত
দেখিয়েছিল।
কি প্রিসিজন,
মুভমেন্টের হারমনি যার
সিন্থেসিস এমন ছিল যে
একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে
গোল বাঁচাতে চাওয়া
প্রতিপক্ষের
গোলকিপারও বুঝতে পারে
নি বা দেখতে পায় নি সেই
হাত! সত্যি ভাবুন তো
মারাদোনা যদি মুচকি
হেঁসে বলত সবে তো একটা
হাত তুলেছি, অন্যটা তো
এখনও – তাহলে বিশ্ব
ফুটবলের কি অবস্থা হত!
আমাদের একশ পঁচিশ কোটি
মাথার দেশে ইলেকশান একই
সাথে সেরিমনি আবার
সেলিব্রেশান। তবে এতে
শুধুই টাইমিং অর্থাৎ
একটা সময়ানুগ ঘটমানতা
রয়েছে। বাদ বাকি সব টাই
গ্যালারী শো যেখানে
সবাই স্বপ্ন কারিগর হতে
চেয়ে শেষতক মাইক হাতে
আরসা মেজরে একে অন্যকে
ভেংচিয়ে যায়। কি অদ্ভুত
তাই না, স্বপ্ন বেচার
ঝুড়ি নিয়ে এই কারিগরেরা
তাদের ফ্লপ শো
নির্বিবাদে চালিয়ে
যায়। এত বড় গ্যালারী আর
এত অতিসরল দর্শক থুরি
পুঁজি –আসলে স্বপ্ন
দেখানোর আর স্বপ্ন
দেখার গল্পটা যেন একটা
প্রবল জ্বরের কাঁপুনি।
পরিচিত অক্ষমতা আর
অবিশ্বাসের অসাধারন
একটা সিম্ফনির জেরে
এবারের গ্যালারী অব কি
বার মোদী সরকার গড়ল।
বারাক ওবামা ইলেকশান
জেতার পরের ভাষনে
বলেছিল আমেরিকা জানে কি
ভাবে বদলে যেতে হয়। এই
মুহুর্তে মোদীও তাই
বলছেন প্রতি মুহুর্তে।
কিন্তু পাঁচ বছর পরে এই
স্বপ্নের শব্দটার অর্থ
সোজা থাকবে তো।
গ্যালারী কিন্তু
দায়বদ্ধতা খুঁজছে!
তো এই সব চাওয়া পাওয়ার
গ্যালারী শোয়ের
সেলিব্রেশানের
গ্যাঞ্জামে চায়ের
বেঞ্চিতে এক পন্ডিত আর
একজন বিদগ্ধ – আচ্ছা
আমাদের দেশের
পুঁজিভিত্তিক
ধনতন্ত্র আর ষাঠ বছরের
সমাজতন্ত্রের ফারাক টা
কোথায়? তো বুদ্ধির
গোড়ায় ধোঁয়ার একটা রাম
টান দিয়ে বিদগ্ধ উবাচ -
প্রথমটা হল শোষণ –
মানুষের দ্বারা
মানুষের শোষণ! পণ্ডিত -
তাহলে আমাদের
সমাজতন্ত্র টার স্বরুপ
টা কি? একটু খানিক ভেবে
বিদগ্ধের সমাধান – ঠিক
উল্টোটা। অতঃপর – থাক
সে সব না হয় পাঁচ বছর
পরেই হবে!
শোম্যানশিপ বা রাজা
সাজবার ইন্সটিঙ্কট টা
মানুষের মতই পুরনো, বা
মানুষই কেন বলি
বাঁদরদের থেকেই তো
এসেছে,
উত্তরাধিকারসুত্রে।
ওই মিসিং লিঙ্কটার সময়ে
কিছু অদল বদল হয়েছে
সেইটুকুই যা তফাৎ। এই
গ্যালারী কে লক্ষ করেই
তো আজকের অ্যাড তাদের
সমস্ত তুণীর ঝেড়ে তীর
ছুঁড়ে চলেছে। তবে তাদের
টার্গেট দর্শক স্থির
থাকে। আর সেই টার্গেট
দর্শকের জন্য নো হোল্ডস
বারড সেই লড়াই।
কোন এক বিদ্বৎজন বলেছেন
– লোক টানতে পারার
ক্ষমতার মুলভুত
উদ্দেশ্য ওই সব
প্রদর্শকদের বাজিগরী
বিদ্যার শো কেসিং,
দেয়ার এবিলিটি টু শো
দেয়ার অ্যাসেটস রাদার
দ্যান টু শোকেস দেয়ার
অ্যাসেটস ইটসেলফ!
কিন্তু প্রদর্শকরা
অনেক সময়েই ভুলে যায় যে
কারনের থেকে
প্যালাগানের ধুয়ো টা বড়
হয়ে যাচ্ছে, মানে শো টাই
সর্বশ্য! যেমন আমাদের iifa!
পরাভুত দেবতাদের নিয়ে
উন্মাদ দর্শকদের
পাগলামির জের নিয়ে বলতে
শুরু করলে সেই চুটকি টা
আগেই মনে এসে পড়ে – একজন
স্টেশনের বাইরে একটা
দোকানে গিয়ে বলল
তাড়াতাড়ি একটা বেশ বড়
পলিথিনের ব্যাগ দিন তো,
একটু পরের ট্রেন টা ধরব!
তো দোকানী অম্লান বদনে
বললেন – ট্রেন ধরতে
পারেন এত বড় ব্যাগ তো
নেই দাদা। অবশ্য আমি এই
চুটকির শ্রোতা মাত্র,
দাদা বা দোকানী কেউ নই
তবু, লেখার উন্মাদনার
দরুন ভর্তি হতে থাকা
পাতার আড়ালে সম্পাদকের
রক্তচক্ষু দেখতে
পাচ্ছি তাই ট্রেন টা
পলিথিন ছাড়াই ধরছি,
থুরি শেষ করছি, তবে তার
আগে –
আমাদের পল্টুদা ছুটির
বাজারে কাগজ পড়ছিল
চায়ের অপেক্ষায়, বৌদি
কাপটা নামিয়ে খুব আদুরে
গলায় বলল ছুটির সকালেও
তোমার খেদমত থেকে ছার
নেই, হ্যাগো আমি মরে
গেলে তুমি কি করবে?
পুরাই পাগল হয়ে যাব –
পল্টুদা উবাচ! ধুস তুমি
ঠিক আরেকটা বিয়ে করে
ফেলবে! এটা শুনে
পল্টুদা গম্ভীর গলায়
কাগজ নামিয়ে বলল –
পাগলদের বিশ্বাস নেই,
যা খুশি করে ফেলতেই
পারে!
তো হে সব অনবদ্য
বিখ্যাত ফুটবলার রা
গ্যালারী কে বিশ্বাস
করবেন না, ওরা সব পুরাই
পাগল! ওয়ার্ল্ড কাপ
চলাকালীনই ওরা আপনাকে
ভুলে নতুন কাউকে নিয়ে
মেতে উঠতে পারে। সাধু
সাবধান!