এমনিতে তো উৎসব এর
ব্যাপারটা বাঙ্গালীর
ফুলবাবু এবং ইন্টেল
চুলকুনি সত্ত্বার ভেতর
পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি
অ্যাঙ্গেলে ঘাপটি মেরে
থাকা ওঁচাটে সিনথেটিক
বিলাস। ঘুমিয়ে আছে
ফেস্টি-পিতা সব
বাঙ্গালীর কুঁচকিতে।
বাঙ্গালী নাচে (পুরোটা
পারেনা। কোমরে ফ্যাট
বগলে খুশকি),গায় (অদ্ভুত
প্রতিভা ! মাইকেল
জ্যাকশন থেকে তালাত
মাহমুদ অবধি সবার গলা
খাপে খাপ), কবিতা লেখার
জন্য ট্রামলাইনে
ঘোরাফেরা করে তারপর
বাড়ি ফিরে বউ-এর
ফেসিয়াল করা গালে
নোয়াপাতি ঠেকিয়ে জনসন
অ্যান্ড জনসনের অ্যাড
(নরম ও তুলতুলে)- এর কথা
ভাবতে ভাবতে সাঁইত্রিশ
মিনিট ধরে নাক ডাকে।
ঘটনা হল,জাপানের
হিরোসিমা থেকে পাশের
পাড়ার সন্তোষী মা অবধি
সবেতেই প্রবল উৎসাহে
গোল্লা পাকানোর এই
আলট্রা আমুদে জাতির বাঁ
হাতের তালুতে ছ্যাৎলা
পড়ে যাওয়া ব্রাজুকা-টা
তুলে দিয়েছে ফিফা।
বিশ্বকাপ ফুটবল আর কি!
কোটা সিস্টেমে! এ জিনিস
ফিফায় নতুন। যেখানে
সবাইকেই অন্তত একবার
করে সুযোগ দিতে হবে।
যার ফলে,গৃহযুদ্ধে
বিপর্যস্ত
সোমালিয়া,যৌনরোগে
বিপর্যস্ত ইথিওপিয়া
কিংবা সবকিছুতেই
বিপর্যস্ত ভারত খেলছে
বিশ্বকাপের মূল
পর্বে।
তা ভারত খেলেছে এবং
(কিভাবে তা বড় কথা নয়)
ফাইনালে পৌঁছেছে। এই
একটা ঝিনচ্যাক ইনফোর
চোটে টপস্পিন-সম দশা
হয়েছে বাগুইআটি থেকে
চিংড়িপোতার। ফাইনালটা
হবে যুবভারতীতে।
সংস্কারের ঠেলায় যার
আসন সংখ্যা এক লাখ কুড়ি
হাজার থেকে পঁচিশ হাজার
তিনশোতে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রসঙ্গত এ রাজ্যে আরও
দুটি নতুন স্টেডিয়াম
হয়েছে বিশ্বকাপের
জন্য। একটা হল যুব আরতী
(অল্প বয়সের আরতী
মুখার্জীর কথা মাথায়
রেখে)। আরেকটার নাম
প্রথমে যুবনাশ্ব রাখা
হয়েছিল। কিন্তু
ব্যাপারটা আঁতলা-আঙ্কল
টাইপ হয়ে যাবে বলে
ওটাকে যুব ‘শঙ্কু’ করে
দেওয়া হয়েছে।
পাবলিকের পকেটে যার ফলে
জায়ান্ট সাইজের
স্পাইসি
এনজয়মেন্ট-ড্যালা।
গোড়ালির ফোঁড়া থেকে
পাকা চুলের গোড়া অবধি
যার বিস্তার। সমস্ত
ব্যাপারেই তকতকে
বনিবনার ছাপ। সবাই একশো
মিটার ‘সেন্টিমেন্ট’
এর হিটে নেমেছে। সবাই
ফার্স্ট। অটোওয়ালারা
খুচরো নিয়ে কোনও
ঝামেলায় যাচ্ছে না।
ছ-টাকা ভাড়ার জন্য
পাঁচশো টাকার নোট
বাড়িয়ে দিলেও কুছ পরোয়া
নেহি। এই তো দিচ্ছি
মাসিমা চারশো
চুরানব্বই টাকা।
কাউন্ট করতে যা টাইম
লাগবে। ততক্ষন একটু
ঠান্ডা জল খান আর
শ্যামা সঙ্গীত শুনুন।
আমার গাড়ীতেই আছে
পান্নালাল। দেবো?
সব জায়গাতেই বিরাজিছে
মাখো মাখো শান্তি।
টোটাল হ্যাপিনেস। মাখন
রঙা ত্বক থেকে ৪-৩-৩ ছক
অবধি সবাই আকাশে। কোথাও
কোন ও ধর্ষণ নেই।
ঘাপলার খবর নেই। সুব্রত
সেন সিনেমা বানাচ্ছেন
না। ফেসবুকেও কেউ কবিতা
লিখছে না। ধর্মতলার
মেট্রো চ্যানেলে এর
মধ্যেই নাকি কোন এক
বুদ্ধিজীবি
দু’বোতল ওআরএস নিয়ে
অনশনে বসেছিল সুনীল
গাঙ্গুলীকে প্রায়
পঞ্চাশ বছর ধরে
কৃতিত্বের সঙ্গে লেখা
লিখির পরেও কেন একটা
‘নোবেল’ দেওয়া গেল না
এই মর্মে। তাকে দূর দূর
করে ভাগিয়ে দিয়ে আড়াই
বছর পর আসতে বলে দেওয়া
হয়েছে। ক্রীড়া মন্ত্রক
থেকে ঘোষণা করা হয়েছে,
ফাইনালের স্কোয়াডে
যারা থাকবে তাদেরই
বিভুষিত করা হবে। শুধু
ভারতের প্লেয়ারদেরই নয়
প্রতিপক্ষের সবাইকেও।
এই ঘোষণা শুনে সবাই
ধাঁ। এমনকি জার্মানি
(যারা ‘সিনিয়র
সিটিজেন’কোটায় খেলছে
)-টিমের প্লেয়াররা
প্রথম একাদশে থাকার
জন্য ও নাকি মারামারি
শুরু করে দিয়েছে।
স্বাভাবিক। ওদেশে তো
বিশ্বকাপ জিতলেও পরের
দিন গিয়ে দাঁড়াতে হয়
রুটির লাইনে,পাবলিকের
সঙ্গে। বিশ্বকাপের
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে
নামবেন সানি লিওন। সেই
কারণে রণে-বনে-নন্দনে
পোস্টার ফেলে দিয়েছে I F
A।
জগতে আনন্দ যজ্ঞে,
কোমর দোলাবে সানি।
আজ এট্টু ঘুমোও
কাল ভারত জার্মানী!
আর এই প্রবল মহাজাগতিক
হুড়ুমতাল এবং
কেচ্ছাকৃত্যের মধ্যেই
হঠাৎ বোকা বনে গেছে এক
প্রবল আর্জেন্টিনা
ভক্ত। ছিমছাম মেয়েটিকে
প্রোপোজ করার সময়
‘একবার বলো মেসি’
–আর্জি রেখে তুমুল মুখ
ঝামটা খেয়ে ‘আমি
ইন্ডিয়ান স্ট্রাইকার
প্রদীপ মন্ডলের ফ্যান’
– শোনার পরে
এনটারটেনমেন্ট ঠাসা
সাদার্ন
অ্যাভিনিউতে-যে স্রেফ
পজ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে ।
মাথার ওপর আলো দিয়ে
যাচ্ছে সসেমিরার
ঝুলধরা বিলবোর্ড।