আজকাল অফিসে বসে খুব
ঢুলুনি পায়।
সেটা এমন কিছু নতুন
ব্যাপার নয়। দুপুরে
ভরপেট খাওয়া দাওয়ার পর
বাঙালিমাত্রে্রই একটু
চোখ বুজে আসে। কিন্তু
রাত জেগে বিশ্বকাপের
খেলা দেখা শুরু হওয়ার
পর থেকে সেই ঢুলুনি
একটু গভীর হয়েছে, আর তার
সঙ্গে যোগ হয়েছে বিড়বিড়
করা রোগ। একদিন তো এত
জোরে ‘রেফারিটা চোর’
বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলাম,
যে... যাক সে কথা।
তবু ম্যানেজ হয়ে
যাচ্ছিল, কিন্ত গোল
বাধল হোমফ্রন্টেই।
খেলা শেষ হলে ভোর রাতে
চুপচাপ বিছানায় আমার
বরাদ্দ সিকি ভাগে
গুটিশুটি মেরে শুই,
এমনই নিয়ম। বাকি পৌনে
একটা খাট জুড়ে
ধর্মপত্নীর রাজত্ব
চলে। এক সকালে ঘুম
ভাঙ্গল একঝটকা লেগে।
চোখ খুলে দেখি মাটিতে
পড়ে আছি, সর্বাঙ্গে
বেদনা। খাটের ওপর থেকে
চেনা একটা স্বর বলে
চলেছে ‘গোল শোধ, গোল
শোধ!’
নাঃ, এর পর আর পারা যায়
না। পাড়ার
যতীনডাক্তারকে ধরলাম।
সব শুনেটুনে একটা ওষুধ
দিলেন। ব্যাস।
যতীনডাক্তার হলেন
আমাদের ধণ্বন্তরি, তাঁর
ওষুধে কাজ না হয়ে যায়?
অফিসে পৌঁছেই চা
বিস্কুটের সঙ্গে খেয়ে
নিলাম একটা ট্যাবলেট।
যথারীতি, বেশ ঝরঝরে
লাগছিল। ফটাফট ফাইল
টাইল সইও হয়ে গেল। হঠাত
শুনি, খেলা দেখতে
যাওয়ার জন্যে অফিস
হাফছুটি হবে। কিসের
খেলা? সবাই ব্যস্ত, কাকে
জিগ্যেস করি! এদিক ওদিক
খুঁজছি, তখন দেখি
অ্যাকাউন্টসের নতুন
সেই সুন্দরী মহিলা,
শর্মিলা না ঊর্মিলা কি
যেন নাম, আমাকে বলছে,
‘স্যার, যাবেন না? সঙ্গী
পাচ্ছেন না? চলুন আমি
আপনাকে লিফট দিই!’ আহা,
বেঁচে থাক যতীনডাক্তার!
সুন্দরীদের গাড়িতে সময়
খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়
জানি, কিন্তু এত
তাড়াতাড়ি! হঠাত বললেন,
‘নিন, এসে গেছি!’ আমি
তখনো ভ্যাবলার মতো
বোঝার চেষ্টা করছি যে
কোথায় এলাম, তখন সে ই বলে
দিল, ‘ওই তো সামনে
যুবভারতী! আপনি এগোন,
আমি পার্ক করে আসছি।’
হ্যাঁ তাই তো! যুবভারতী
ক্রীড়াঙ্গন! কী সুন্দর
সাজানো, আর কত লোকজন!
আরে, একী! স্বল্পবসনা কত
সুন্দরী ভেঁপু
বাজাচ্ছে, আর ব্রাজিলের
পতাকা ওড়াচ্ছে! এরা
এখানে কেন! পাশ থেকে কে
যেন বলল ‘ভেঁপু নয়,
ওগুলো ভুভুজেলা!’ দেখি
শর্মিলা ফিরে এসেছে কোন
ফাঁকে। ‘চলুন, আমাদের
ওই গেটে ঢুকতে হবে।’
এতক্ষণে হুঁশ হল, বললাম,
‘টিকিট?’
-‘আমি কেটে এনেছি। এখন
চলুন তো চটপট!’
যুবভারতীতে ব্রাজিলের
খেলা নাকি! আরও বিশদ
জানতে লজ্জা হল। কিন্তু
এও কি সম্ভব! লাইন দিয়ে
ঢুকে দেখি ভিতরে প্রায়
মেলা বসেছে। পাড়ার
হরেনদা কে দেখতে পেলাম।
সর্বনাশ, শর্মিলাকে
টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে,
নির্ঘাত বাড়িতে
রিপোর্ট যাবে। মরুক গে!
ওই তো, যতীনডাক্তারও
এসেছে দেখছি! হাত
নাড়লাম, উনিও হাত
নাড়লেন হেসে।
বসা হল পাশাপাশি। আহা,
যেন স্বর্গ! গ্যালারিতে
ফুল ফুটেছে নানান
সুন্দরীদের, কতো
সাজপোষাক! এদিক ওদিক
দেখছি, হঠাত শুনি ঘোষণা
হচ্ছে টিম মাঠে নামছে!
দেখলাম জ্বলজ্বলে হলুদ
গেঞ্জি পরে ব্রাজিল দল,
আর সেই সঙ্গে... একি...
হ্যাঁ, সত্যিই তো...
লাল-সোনালী, সবুজ-মেরুণ
পরে ওরা কারা নামছে!
‘ছিঃ, স্পনসরদের খুশী
করতে গিয়ে টিম
ইন্ডিয়াকে না খেলিয়ে
ডার্বি ইলেভেন কে
খেলাচ্ছে!’
এটা কার গলা! দেখি পাশে
স্বয়ং পি কে ব্যানার্জী
বসে! আজ কী সৌভাগ্য আমার!
উনি বলেই চললেন,
‘বিশ্বকাপে খেলার
যোগ্যতা আমাদের আগেও
ছিল, এখনো আছে। শুধু
নোংরা রাজনীতি করে এই
অবস্থা। দেখুন, ডায়মন্ড
ফর্মেশনে খেললেই
ব্রাজিলকে আটকে দেওয়া
যাবে। ওদের ডিফেন্স খুব
নড়বড়ে। ভোক্যাল টনিক
চাই। আণ্ডারফুট
কন্ডিশনটা কাজে লাগাতে
হবে। তিকিতাকা নয়,
লম্বা পাস দিয়ে খেলতে
হবে। ওই দেখুন, উইং
একেবারে ফাঁকা
যাচ্ছে!’
নাঃ, অফিস ফেরত সুন্দরী
কলিগের সঙ্গে বসে
যুবভারতীতে
বিশ্বকাপের খেলা দেখছি
ব্রাজিল বনাম বাঙালি
একাদশ, তাও পি কে
ব্যানার্জীর
অ্যানালিসিস শুনতে
শুনতে, এবার একটু
বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না
কি? কথাটা মনে আসতেই কে
যেন আবার বলল, ‘একটু
বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না
কি?’
তাকালাম। আমার টেবিলের
সামনে আমার বস দাঁড়িয়ে।
‘এত ঘুম পেলে ছুটি নিয়ে
বাড়ি গিয়ে ঘুমোন। অফিসে
এভাবে সীন ক্রিয়েট
করছেন কেন?’
ইসসসস, কী লজ্জার
ব্যাপার! আমতা আমতা করে
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম,
উনি কিছু না শুনেই চলে
গেলেন। ছুটির সময় হয়ে
গেছিল। ফেরার পথে
ভাবলাম যতীন ডাক্তারকে
একবার বলে যাই, কী ছাই
ওষুধ দিয়েছে!
রাস্তাতেই দেখা হয়ে
গেল। আমাকে দেখেই হাত
নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ
দাদা, ওষুধটা বৌদিকে
আজই দেবেন কিন্তু মনে
করে! দেখবেন, উনি জমিয়ে
সারারাত ঘুমোবেন, আর
আপনার অনেক রাতে খেলা
দেখতে বা তারপর নড়াচড়া
করতেও অসুবিধা হবে না।
তাহলে আসি?’
বোঝো!!!