না যাচ্ছেনা
কিছুতেই।ঘুম নেই
রাতটাও যেন ভোর হতে
চাইছেনা
সুনন্দার।তীব্র
গন্ধটাও নাকে লেগে আছে
সাপটে। রোজ রাতে ঘুমনোর
আগে চিরাচরিত থ্রী
স্টেপ ক্লিনিং টোনিং
ময়শ্চারাইজিং আজ আর চলা
হয়নি।বোশেখ পোড়ানো
রোদে স্যারকে দেখছিল
সুনন্দা।স্কুলফাইনাল
পাস করার পর আজ এই
বেয়াল্লিশে
ট্যাক্সিতে যাওয়ার
সময়। স্যারকে দেখতে
পেয়ে চিনতে পেরেই গাড়ি
থেকে নেমে প্রনাম করে
কুশল জিজ্ঞাসা করলো।
জানতে পারলো দীর্ঘ দশ
বছর হয়ে গেছে এখনও
স্যারের পেনশন চালু
হয়নি।কালিঘাটে
বাপেরবাড়ী যাবার
কথা।না গিয়ে স্যারের
সঙ্গে গেল ডি. আই.অফিস।
পাঁচতলায় সব
কর্তাব্যাক্তিরা
বসেন।স্যার সুনন্দাকে
একটা বেঞ্চে বসিয়ে
প্রায় পঁয়তাল্লিশ
মিনিট পেরিয়ে গেছে
ফিরছিলেন না।চিন্তায়
পড়ে গিয়েছিল ও। বলে তো
গিয়েছিলেন বাথরুমে
যাবেন।কী হল মানুষটার?
খোঁজখবর আরম্ভ করবে বলে
সবে উঠতে যাবে এমন সময়
আস্তে আস্তে শরীরটাকে
যেন টানতে টানতে সিঁড়ি
বেয়ে উঠে আসছেন স্যার
পাঁচতলার উপর। সুনন্দা
ব্যস্ত হয়ে উঠে স্যারকে
ধরে আনতে গিয়ে বুঝলো
মানুষটা পায়খানা করে
ফেলেছিলেন বাথরুম যেতে
যেতে। আন্ডারওয়্যার
ফেলে দিয়েছেন। কোনরকমে
ধোয়া আধভেজা ধুতিটায়
এখনো লেগে আছে গুয়ের
হলদে ছোপ। গন্ধ ছড়াচ্ছে
চারদিকে। অফিসের লোকজন
দেখছিলো তাকিয়ে তাকিয়ে
ডি. আই.সাহেব এসেছেন কি
না একজনের কাছে স্যার
জানতে চাইলে বললো :
- আজ কখন আসবেন ঠিক
নেই।আপনি বাড়ী চলে
যান।
সুনন্দাকে স্যার
জিজ্ঞেস করলেন :
- হ্যাঁরে মা,খুব গন্ধ
বেরচ্ছে?
- আমি আপনাকে পৌঁছে
দিচ্ছি স্যার, বাড়ী
চলুন।
সেই থেকে গন্ধটা নাকে
লেগে আছে।এমন
মানুষগুলোর শেষ বয়েসে
কেন এতো কষ্ট? এই তীব্র
গন্ধটা যেন শুধু
স্যারের শরীরের
বর্জ্যপদার্থের গন্ধ
নয়।কত হাজার হাজার
ছাত্রছাত্রীর মিলিত
নির্গুণ, যা স্যার নিজে
গ্রহন করে
ছাত্রছাত্রীদের এক
একটি সুন্দর ফুলের মতো
প্রস্ফুটিত করে বর্ণময়
সগুন সমাজ গড়তে
চেয়েছেন।
কোনরকমে রাতটা
কাটিয়ে পরের দিন
স্যারের বাড়ী গেল
সুনন্দা।গিয়ে শুনলো
স্নায়ুরোগে আক্রান্ত
হয়ে স্যার গতরাতেই
ভর্তি হয়েছেন পি. জি.তে।
স্যারের বড়ছেলে শোভন
হাসপাতাল থেকে ফিরে
সুনন্দাকে দেখে
জিজ্ঞেস করেই ফেললো :
- আপনাকে তো ঠিক চিনলাম
না।কী ব্যাপার,বাবা কী
আপনার থেকেও ধারবাকি
করেছেন না কি?
- না। আমি স্যারের
প্রাক্তন
ছাত্রি।গতকাল
ডি.আই.অফিসে আমিই সঙ্গে
গিয়েছিলাম।
- ও, আমি ভাবলাম...
- স্যারের পেনশনের
ব্যাপারটা এতদিনেও
সুরাহা হলনা?
- কী করবো একা আমি বলতে
পারেন? সমস্ত সংসারের
জোয়াল আমার কাঁধে।কী
ভাগ্যি মাস্টারি টা
পেয়েছিলাম।নয়তো বাটি
হাতে রাস্তায় নামতে
হত।দুদিন পর পরই
হাসপাতাল আর পিছু ছাড়ে
না।এক একসময় মনে হয় মরে
গেলেই ভাল।তিনি সুস্থ
থাকলে তবে তো তাকে নিয়ে
কাগজপত্র জোগাড় করতে
যেতে পারতাম।
স্যারের বাড়ী থেকে
বেরিয়ে সুনন্দা ছুটল
ডি.আই. অফিস।অফিসারকে
অনেক অনুনয় বিনয় করে
বলল:
- মরে যাচ্ছেন মানুষটা।
পরে আর পেনশন কোন কাজে
লাগবে?কিছু একটা করুন।
- কাগজপত্র ছাড়া আমরা
কিছু করতে পারিনা।ওনার
সার্ভিসবুক রেডি নেই।
যে যে স্কুলে
পড়িয়েছেন,সব কাগজপত্র
লাগবে।উনি এখনও সব জমা
করে উঠতে পারেননি।
আমাদের হাত পা বাঁধা।
বাড়ী ফিরে এলো সুনন্দা।
অস্থিরভাবে পায়চারি
করছে। ICU তে ভর্তি আছেন
স্যার। সামনে যাবার
উপায় নেই। তিনদিন পর
মুখ থেকে অক্সিজেন
মাস্ক সরানো হয়েছে। কথা
বলছেন আস্তে আস্তে। আরও
দুদিন পর জেনারেল বেডে
এলেন স্যার। ভিজিটিং
আওয়ারে সুনন্দার সাথে
দেখা হতেই উচ্ছসিত হয়ে
শিশুর মতো গড়গড় করে
বলতে লাগলেন :
- জানিস মা,ডি.আই. অফিস
থেকে খোদ ডি.আই.সাহেব
ফোন করেছিলেন। ওরা খুব
শীঘ্রই
আমার পেনশনের
ব্যাপারটা
দেখবেন।আমাকে সুস্থ
হয়ে উঠতে অনুরোধ
জানিয়েছেন।
- এ তো দারুন খবর স্যার!
আপনি কখন জানতে পারলেন?
ICU এর ভিতরে তো ফোনে কথা
বলা নিষেধ।
- এই তো শনিবার আটটার
সময়। আমার রাতের
খাবারের পর ওষুধ দিলো
যে নার্স, সে বলল ‘ দাদু
আমি সনেট খেতে পারবোনা
সন্দেশ খাবো। তুমি
পেনশন পাবে এবার।
তাড়াতাড়ি সুস্থ হও।
ডি.আই. সাহেব ফোন
করেছিলেন।’ এখন কী
শনিবারও কাজ হয়? জানিস?
সুনন্দার চোখ ভরে উঠলো।
নিজেই নিজের মাথায় আলতো
চাঁটি মেরে বিড়বিড় করলো
:
- ইস...শনিবার ছিল না কি?
খেয়াল ছিল না...