গুমোট আঁধার ঘনিয়ে আসছে
যেন কোথায়। আগুনলাগা
সর্ষে ধাঁধা লেগে যায়
চঞ্চুর বেতফল চোখে।
বেনোজলের বন্যায়
কতটুকু পাড় ভাঙবে সে
খবর আছে কজন সন্তুর মনে?
বৃন্দাবনে গেলে তো সবাই
জলকেই নাবে। কী করে পার
হতে হয় থকথকে
এঁটেলমাটির হাঁটুভেজা
নদী? রৌদ্রের নৈঃশব্দ্য
জলরং এঁকে দেয়
বৃষ্টিস্নাত
গুল্মবনে। চোখের পাতায়
তৃষ্ণার ঘোর। অবাক করে
খুলে নিয়ে যায় কবেকার
পুরাতন বিষণ্ণ
ল্যাবিরিন্থ স্বপ্নের
অন্তর্বাস। মরুহৃদয়
বৃষ্টিদিনের অপেক্ষায়
থেকে থেকে বানের তোরে
ভেসে যায় কখন বুঝতে
পারে না । সিঁথির লালরঙ
চিরুনির আঁচড়ে মুছে
যাওয়ার পরই সহসা বুঝতে
পারে ২২ গজরে জীবন থেকে
সে আউট হয়ে গেছে
চিরকালের মতো।
দূরের বাতিঘরটি যেন
বালিয়াড়ির
চোরাবালিতেই আঁটকে আছে
। হাওয়ায় উড্ডীন আলোর
আঁচল। পা টেনে-হিঁচড়েও
কিছুতেই সেখানে
পৌঁছানো হয় না আর।
চোখের পাতায় বনভান্তের
মতো চেপে বসে
দিকভ্রান্তি। যোজন
যোজন দূরে হারিয়ে যায়
চেনা মুখ, চেনা শহর। কার
মাঝে ঘুমের শহর থাকে তা
কি কখনো জানা যায়? কে
কাকে কীভাবে সেখানে
টেনে নিয়ে যায় কে জানে?
কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী
অন্ধকার রাত্রির
মায়াজালে কখনো কখনো
নকশীকাঁথা জীবনে
সুঁচের ফোঁড়ের বদলে
ক্ষুরের ফোঁড় পড়ে যায়।
তাই দেখেই ক্লিন সেভড
ঈশ্বর হাসেন ঘুড্ডিতে
মাঞ্জা দিতে দিতে ।
আন্তষ্ক্ষরী
সুখদুঃখের সুর মেলাতে
মেলাতে একজীবন কেটে
যেতে চায়। সানাইয়ের
বাঁশির যে মাতোয়ারা সুর
সেতো সংসারের উঠোনেই
মাথাকুটে মরে পড়ে থাকে।
ভিতরে প্রবেশের সুযোগ
তাঁর কোথায়? অতৃপ্তি,
অপমান, অবহেলা, অবসাদ
এতদিনের চেনা তানপুরার
সুর একটানে ছিঁড়ে ফেলে।
শুভদৃষ্টিতে মিশে থাকে
শুভঙ্করের ফাঁকি।
একঘেয়েমিতে ভরে থাকা
জীবনের বাইরে থেকে যে
মোহন সুরেলা বাঁশি
শুনতে পাই তাতে তো উতলা
মন কেমন কেমন করে
চিরকালই। মনকে ধ্যানের
বাঁধনে বেঁধে রাখা যে
বড় কঠিন। তাকেও তো
মেলাতে চাই চেনা
সুখদুঃখের সঙ্গে। তাঁর
গভীরতা অতল মনে হয় আর
উজ্জ্বলতা মন কেড়ে নেয়।
তবু কি চেনা হাসির
সঙ্গে তা মেলে সবসময়?
সবটুকু পাওয়ার নেশার
লোভ সংবরণ করতে আর মনের
মিলের খরচাপাতি পোষাতে
না পেরেই রান আউট নাকি
অবশ্যম্ভাবী ক্যাচ,
সেটা বোঝার বোধ জাগে
ক’জনের! এতোটা সাধনা
সত্যি খুব কঠিন। এতো
মিহিমায়ার টান
চারপাশে। চোখের
বৃষ্টিভেজা পাতায়
জোনাক অরণ্য থেকে থেকে
হাতছানি দিয়ে যায়।
মেঘের শীতল নরম বিছানায়
গা এলিয়ে দিতে দিতেও যে
জেগে থাকার
তীব্রজ্বালা সইতে পারে,
সেই শুধু টিকে থাকে।
জীবনের আগুন ফুরিয়ে
গেলেও ঘরময় ছড়িয়ে থাকা
জীবাশ্মের ছাইভস্মের
মাঝেও। এই
সন্ন্যাসটুকু টিকিয়ে
রাখতে না পারলে যে
পাওয়া যায় না জ্বালে
জ্বালে ঘন হওয়া
জীবনসরের মসৃণ স্বাদ।