সেই এক ঘরের কপাট এঁটে
বসে থাকে মহুয়া, আর
তীব্র বাতাসে খাবি খেতো
ঝরাপাতাদল। ভেতরের
গ্যাংগ্রীন গলে গলে
ঠেলে উঠলে, নাকে এসে
ধাক্কা লাগায় উগলে ওঠা
বিষগন্ধগরলেরা।
বুকের ভেতর সেই কবে
থেকে গেঁথে আছে এক ভাঙা
ফলা, ছুঁড়ে দেবার আগে
সুচারু তীরন্দাজ যাকে
মুড়িয়ে দিয়েছিল নন্দন
চুমুতে। যেমন তরুণী হয়ে
ওঠার সময় স্বপ্নে ভাসতো
জুলিয়া ও গ্রেগ এর সেই
গ্রীবা ছুঁয়ে চলে যাওয়া
সিংহল বাতাস। হায় রে
হায় নিশ্চিন্তকরন বিষ,
হায়রে প্রাঞ্জল খুনী!
তবুও সেই নির্দয়ের পথেই
বিছানো পত্রপল্লব
ন্যায় আঁখিযুগল,
ফিঙ্গের লেজের মতো ছটফট
করে মরে। অথচ এতো
প্রতীক্ষার পর এ দেশ- সে
দেশ ঘুরে, সর্বোচ্চ
জনবহুল প্রান্তরে এক
ফিচেল হাসির রেশ ছড়িয়ে,
ভূমধ্যসাগর এর
মাঝবরাবর দুলতে থাকা
ডিঙ্গি থেকে যখন এক
অদ্ভুত বসরাই গোলাপের
সুগন্ধ মাখা চিঠি বয়ে
আসে যখন সফেদ
কুজ্ঝটিকা, মহুয়া তখন
বিদীর্ণ, শীর্ণ আঙুলের
সঞ্চালন স্তব্দ হয়েছে
তার কিছু আগেই মাত্র।
শূণ্যকাল এবং তবুও
অপেক্ষা ----------------------------------
পরাবাস্তব ওই ঘরে, কেমন
অহেতুক কিছু ঘোরেরা
মত্ত হয়ে থাকে। তাদের
দিকে তাকিয়ে থেকেই গত
হলো চন্দ্রের কাল,
একঠায় বসে থেকে থেকে
শিরদাঁড়া গুড়িয়ে যায়,
বয়ে যায় কলকল জলরন্ধ্র
থেকে বাসনাবিহীন
জলদাগ।
তবুও ঘুনে ধরা এই
পাটাতন যেন হেলান দেয়া
নদী, কেমন ঝুরঝুরে শব্দ
তোলে, ছলাৎ করে ওঠে
ক্ষনকাল পরপর। মাথার
ওপর যে ছায়া ছিলো তা যেন
সূর্য এক, বেলা বাড়ার
মতো ক্রমেই সরে যায়, তা
দেখেই তাঁর নিজেকে কেমন
ওহীনাযিলগ্রস্ত
পাগলপ্রায় দৈবকায়া মনে
হয়, আর ডান তর্জনীটাকে
লাগে অব্যার্থ কোনো
চন্দ্রভেদী ছড়ি। এই যে
আঙুল হেলাতেই সরে গেল
বর্ষসঙ্গী অশরীরী
প্রতিরূপ!
শেষ অধ্যায় ও মুক্তি
নামাবলী -------------------------------------
শতাব্দী পুর্বে কোন
একদিন প্রিয়তম কন্ঠে
ডেকেছিল নাদ, নিখুঁত
বজ্রের মতো; আর তার এক
নহলা তামাটে সেতার-
বেজেছিল তুমুল। যেন
প্রাচীনতম নিথর
নিঃস্পন্দ মরা নদীতে
বিদ্যুৎপৃষ্ট মাছের
তোলপাড়ে ক্ষয়ে যাওয়া
ক্ষণ আর সময় ধেয়ে আসে
অন্ধকারে দ্রাঘিমা
ছেয়ে বিলুপ্ত বিপুল
দ্রাবিড়ের মতো। তারপর
কেটে গেছে বহুদিন, নিভে
যাওয়া পুরাতন আগুনের
মতোই। গেলবছর সেই ঘরের
জানালার পাশে এক
প্রজাপতির মৃতদেহ লক্ষ
কোটি ভাগ হয়ে চলে গেছে
পিঁপড়ের সারিতে, এবারে
একটা পাখি, তার মলিকিউল
পর্যন্ত সুষম বন্টন
করেছে সেই কালো
সৈন্যদল।
আর ঠিক তখন, ঠিক ওই
সময়েই- মেঝে ফুঁড়ে ওঠে
এক অপরূপ আগুনরঙা পরী;
জোছনার মতো মৃত্যু ঢেলে
দ্যায় ওই শুকনো কোটরে।
মুক্তি হয় বহুবর্ষের
মানবীগড়ণে ধিকপ্রাপ্ত
স্বর্গলোক বহিষ্কৃত এই
প্রেতসাধিকার, মর্ত্যে
নির্বাসনকালীন তিন
যুগে যে ভালোবেসেছিল এক
ক্ষণিক নাদীয় পুকার, এক
পার্থিব বসবাসরত ঘর,
জানালায় এসে বসা
প্রজাপতি, একটি বাবুই,
আর তার বাঁশের দোলনা
খানি।
যার পাটাতনেই অজস্র
ঘুনেপোকার ডাক নদীর
ছলাৎ আর হেলানে এক
পরিপূর্ণ নদী ভেবে
কাটিয়ে দিলো
মৃত্যুপরবর্তী আরো
তেত্রিশ বছর;
সদ্যমুক্তির আগে।
ফিরে আসার কথকতা
---------------------------
উচাটন মন নিয়ে
রুহমোকাররম আরশের
ছায়ায় উড়ে যাবার সময় সে
ভভেবেছিল আবার ফিরে
আসআসবে এই ধরায়, সমস্ত
দর্শন ও যুক্তি
অগ্রাহ্য করে ইহুদী
যাদুকরীর মতোই। সেই
ফেরার পর আর অসম্ভব একা
লাগার মধ্যবর্তী সময়ে
ভীষণ তেজী রোদ ওঠে,
পুড়িয়ে দেয় মুখ, বুক আর
অবয়ব। তখন মনে পড়ে এক
সুবিশাল বটবৃক্ষের কথা,
ওই যে অজস্র ডালপালা
জুড়ে স্থানীয় ও
পরিযায়ী পাখীর আবাস, ঝড়
আর রোদ্দুরে বাজে
যুদ্ধের দামামা। কোটরে
কোটরে ওৎ পেতে থাকা সাপ
ও নেউলে। ভাবি
রূপকথামালা, ওই যে
রাজকুমারী ঘুমোয় আর তার
শিয়রে পুড়ে যায়
সলতেসমগ্র; তেমাথা ও
ষোলটি চক্ষুসমেত
শূলযাদুকর
সার্বিকদৃষ্টিসমেত!
এইখানে, যে পুরাতন
পথটির ধারে স্বর্ণলতার
ঝাড় আর মালতীর বন;
ধ্রুপদী সুর আর
দ্রাক্ষাকেয়ারীর পাশ
ঘেষে এগিয়ে যাওয়া কোমল
পদছাপের তরুণী- যার মন
বিগত জন্মে শুধু
চেয়েছিল তারে; সেই তার
অন্তর্বর্তীকালীন
চাওয়া একটাই আজো, “তারে
চাই- তারে চাই” বলেই
ফিরে আসা পার্থিব জ্ঞান
আর ধূলিময় অসুখ
পৃথিবীতে।