খুব অধোমুখী মানুষ আমি
। সবকিছুতেই ভয়,একলা
আমি । দুপুরবেলা যখন
ধুলো ওড়ে পাতলা যাদু
পর্দার মতো,ক্রমাগত
হাঁচি দেই । খুব কষ্ট ।
হাঁপানি আছে আমার ।
বিকেলে সবাই যখন হেসে
হেসে শপিং করতে
যায়,পাশের বাসার নবনীতা
সেজেগুজে বের হয়,আমি
জানালার ধারে বসে থাকি
। বের হতে ভয় পাই । এতো
ভয় মহুয়া মদের মতো
চারপাশে ।
নবনীতার ভাই আমার দুই
বছরের বড় । আমাকে প্রায়
বলে তুই খাওয়া দাওয়া
করিস না কেন ? আমি খুব
শুকনো । প্যান্ট পরলে
ঢলঢল করলে । ক্লাসে
ছেলেরা বলে,আমার
প্যান্ট নাকি জাতীয়
পতাকা,সারাদিন বাতাসে
পতপত করে ওড়ে । খানিকটা
হ্যান্ডসাম দেখার জন্য
কতো কি যে করি । গরমের
মাঝেও জামার নিচে মোটা
মোটা ২টা টি-সার্ট পরি ।
ওয়ালেটে দুনিয়ার
ভিজিটিং কার্ড ।
ভিজিটিং কার্ড জমানো
আমার হবি । প্যান্টের
পেছনের পকেটে ওয়ালেট
রাখলে খুব
স্বাস্থ্যবান লাগে
নিজেকে ।
প্রতিদিন সকালবেলা
পড়ার টেবিলের পাশে
ঝোলানো আয়নার কাছে
উদ্দীপনামূলক লেখাটা
পড়ি । তালিকাটা এরকম:
ক. তোমার কন্ঠস্বর
সুন্দর
খ. তোমার হাতের লেখা
সুন্দর
গ. তোমার স্মরণশক্তি
অসাধারণ
ঘ. তুমি সৎ
তালিকটা পড়ে মনটা ভালো
হয়ে যায় । মনের ভেতর তবু
সিল্কের জামার মতো দুলে
যায়;আমি দেখতে ভালো
না,শত মানুষের ভিতরে
আমাকে ছেড়ে দিলে মিশে
যাব । আজ পর্যন্ত কোনো
মেয়ে আমার দিকে মিষ্টি
হেসে তাকায়নি । অথচ
তালগাছের মতো আমি
একপায়ে কতোদিন দাঁড়িয়ে
ছিলাম;কেউ আমার বেদনা
বুঝুক ।
অথচ আমি কতো বন্ধুদের
ফোনে প্রক্সি
দিয়েছি,ওপ্রান্ত থেকে
মেয়েরা আমার কন্ঠ শুনে
বলেছে
: এ কোন কিন্নর দরাজ কন্ঠ
তুমি ..এসো দেখা হোক
আমাদের ।
দপ্তরহীন মন্ত্রীদের
মতো বাক্যনবাব হয়ে
একাকী কেঁদে ফিরেছি ।
রাত বাড়লে জ্যোৎস্না
নামলে মনে হয় হেঁটে
যাচ্ছি ভেসে যাচ্ছি জল
তরঙ্গে ।
টের পাই আমার ক্রোধ
নেই,অনুরাগ নেই,প্রণয়
নেই । পৃথিবীর কেউ আমার
জন্যে আঙ্গুল টিপেটিপে
টেক্সট পাঠায় না । আমার
ই-মেইলে শুধু জাংক মেইল
। নবনীতাকে সাহস করে
একবার চিঠি
লিখেছিলাম,ভেবেছিলাম,ক
িতাসু চরণ আর হাতের
লেখা দিয়ে ইমপ্রেস করবো
। চিঠিটা শুরু করেছিলাম
দিলওয়ারের কবিতা দিয়ে;
আমি তোমার সঙ্গে বাগানে
যাবো,তোমার অঙ্গে সুরভী
হবো
আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম
তুমি আমার সমকালের
নেফারতিতি..
নবনীতা পরদিন আমাকে
ডেকে বলল;
: এই কুরুশকাঠি আজকাল
কেউ চিঠি লেখে ? বুদ্ধু ।
তবে তুমি সুন্দর লিখতে
পারো,তোমার হাতের লেখা
খুব সুন্দর ..
এটুকুই । আর কিছু না ।
শরতের শিউলিফুলের মতো
এটুকুই স্মৃতি । নবনীতা
আরো লাবণ্যময়ী হয়েছে ।
সারাদিন হেসে হেসে কার
সাথে যেন কথা বলে । ওর
হাসি ঝরণার মতো ভেঙ্গে
ভেঙ্গে পড়ে ।
আমি আরো একাকী হয়ে পড়ি ।
সেদিন একটা সাক্ষাতকার
পড়েছিলাম
আখতারুজ্জামান
ইলিয়াসের,কথা
সাহিত্যিক
শাহাদুজ্জমান নিয়েছিল
। নি:সঙ্গ মানুষ
স্বমেহন করে খুব ।
হাহাকার ধ্বনিতে রাত
নামে আমার ধূসর
বিছানায়..অক্ষম আমি
কল্পলোকে নবনীতাকে
দলাই মলাই করি..আহা ঘেমে
উঠি কুরুশকাঠি পৌরুষে ।
সপ্তাহের প্রতিদিন
আমার চোখে বিপ্লবের
অলীক সমাজ নেচে যায় ।
স্বপ্নে আমি নোবেল
প্রাইজ প্রত্যাখ্যান
করি । আয়নায় তাকালে মনে
হয় আমি সবচেয়ে সুখী ।
সুখ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
আমার করায়ত্ত । আমি
মসলিন পরে হেঁটে যাই
আমার সামন্তে ।
নবনীতাকে
প্রত্যাখ্যান করি ।
সমস্ত মানুষ করতালি
দেয়;
ও সুদর্শন পুরুষ ।
বাংলাদেশ যখন শেষ ওভারে
নিউজিল্যান্ডের ছয় ফিট
বোলারকে উড়িয়ে ছক্কা
মারে,সমস্ত স্টেডিয়াম
বাঘের গর্জনে
প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ।
আমাদের স্পিনারের
ঘূর্ণিজালে যখন ওদের
টপাটপ উইকেট পড়তে
থাকে,ইথারে ইথারে গর্জন
ছড়িয়ে আসে আমার আট ফিট
বাই আট ফিট আটচালায়;
কে যেন আর মন খারাপ করে
না ।
অস্পষ্ট ছায়ার মতো
নবনীতা ভেসে যায়
স্বাস্থ্যবতী কম্পনে ।
এই কুরুশকাঠি তোমার
অশ্রু তো মুক্তোর দানা
।
কী আশ্চর্য এই স্পিন
যাদু রঙ্গীন সত্যাগ্রহ
ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র
বাংলাদেশে..