সাল ১৯৩০। অস্ট্রেলিয়া
এসেছে ইংল্যান্ড
ট্যুরে। ব্রাডম্যান
ক্রিজে মানেই
অপ্রতিরোধ্য পাঁচিল।
যা অনতিক্রম্য।
অস্ট্রেলিয়া ৫ম্যাচের
সিরিজ জিতলো ২-১এ। আর
ব্র্যাডম্যানের রান
গোটা সিরিজে ৯৭৪।
এভারেজ ১৩৯। যা
সর্বকালীন রেকর্ড।
ভাবনা শুরু তখন থেকেই
এই যুব প্রতিভাকে আউট
না করতে পারলে
ইংল্যান্ড কে এসেজ নয়
ছাই নিয়ে ফিরতে হবে।
পার্সি ফেন্ডার লক্ষ্য
করেছিল ব্র্যাডমানের
অস্বস্তি হঠাত লাফিয়ে
ওঠা বলে। আর
ব্র্যাডম্যান কে দমাতে
না পারলে তো হবে না।
শুরু হল পরিকল্পনা
ডগলাস জার্ডিনের সাথে।
জার্ডিন আর ফেন্ডার
একসাথে বসে দেখলো ওভাল
টেস্টের ফুটেজ। আর
ভাবামাত্র কাজ শুরু।
১৯৩২-৩৩ এ আবার
অস্ট্রেলিয়া এলো
ইংল্যান্ড সফরে। এবার
ক্যাপ্টেন জার্ডিন।
পিকাডিলি হোটেলে
জার্ডিন বসল
নর্টিংহ্যামশায়ারের
ক্যাপ্টেন আর্থার কার
আর তার দুই ফাস্ট বোলার
হ্যারল্ড লারউড আর বিল
ভোকের সাথে। জার্ডিন
জেনে নিলেন দুই বোলারের
কাছে লেফট স্টাম্প
লক্ষ্য
করে,ব্যাটসম্যানের
শরীর লক্ষ্য করে করা
হবে শর্টপিচ বল,তারা কি
পারবেন? বোলাররা সম্মতি
দিতেই ঘটে গেল ঘটনাটা।
লেগ সাইডে একাধিক
ফিল্ডার রেখে শুরু হল
বোলিং। এরপরের ঘটনা কম
বেশী সবার জানা,শুরুটা
এভাবেই,খেলে না জিততে
পারো,আঘাত কর,ভয় দেখাও।
এখানে কিন্তু খেলা
কিন্তু আর খেলা থাকছে
না। কখন অজান্তেই তা
আরও বেশী
কিছু...ব্যক্তিমানুষের
জয় পরাজয়,ইচ্ছে,অনিচ্ছে
পরবর্তীতে জীবনের
সাথেই মিশতে শুরু করেছে
খেলা... যেভাবে আমি আর
আমার ছায়া...গাছ আর
পাতা...আলো আর
প্রতিফলন...ব্যাট কখন
মানুষের মতই হাঁটতে
হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে
জীবনের মাঠে...একটু
তাকিয়ে নাও আশপাশ,চোখ
রাখো বলের দিকে,বল আসার
আগে পা কে নিয়ে আসো সঠিক
স্থানে,ব্যাট সরি তোমার
পেছনে আসুক তোমার শরীর
দেখো পেরে যাচ্ছো,অথবা
লাইনে থেকেই বাউন্স
দেখে কিছুই করলে না
জাস্ট জাজমেন্ট দিলে...
খেলা শেষ হয় না। যা
তোমার অভিজ্ঞান তা
তোমারই সারা জীবনের
সম্পদ,তুমি ভেবো। আদতে
এই মা,মাটি পূর্ণ
ভালোবাসা আদতে তোমার, এ
দুনিয়া আসলে তোমায়
চিনেছে,তোমার
কর্মে,ব্যবহারে আচরণে।
দূর থেকে ভেসে আসছে
প্রবল উৎরোল,কারা যেন
লাফিয়ে উঠলো,তুমি শুনতে
পাচ্ছো? সমুদ্র
গর্জন...ধর তুমি ,তোমার
সক্ষমতা তার কিছুটা
নীচেই পারফর্ম
করছো,যেমনটা হয় আমাদের
এই সব শ্যাওলা পড়া
মধ্যবিত্ততায়,হেরে
যাওয়া,হারতেই থাকা
ক্রমাগত...ধর মাথা নীচু ,
ডাক করে যিনি হেঁটে
চলেছেন প্যাভিল্যনের
পথে আমার বাবা। জীবন
যুদ্ধ যার কাঁধ নামিয়ে
দিয়েছে,ক্রমাগত আপোষ আর
হেরে যাওয়ার
প্রত্যক্ষ,অপ্রত্যক্ষ
া। যিনি মাথা নামিয়ে এক
মনে লক্ষ্মীর পাঁচালি
পাঠ করে চলেছেন আমার
মা। মাঠে তেমন সুবিধে
এরা করতে পারেননি কেউই।
তাই দম্ভ বা ইগো এসব
বিসর্জিত,কেবল
ধুকপুকুনি টুকু তো
বাঁচিয়ে রাখতে হয়,তাই
নিরন্তর বয়ে চলেছে টিম
টিম করেই,সিঙ্গলস আফটার
সিঙ্গলস। মাথার সব চুল
সাদা হয়েছে,পাকেনি।
বয়সের জন্য যত না তার
চেয়ে অনেক
বেশী,অসম্মানে,হেরে
যাওয়ার এক ক্রমাগত
লজ্জ্বা আছেতো। হঠাৎ
লাফিয়ে ওঠা একটা বলে
তারপর আউট!!! আসলেই হয়ত
পারা যায় না। তবু তো
মানুষ,চিবুক উঁচু করেই
তো শুরু হয়েছিল জীবনের
সকাল বেলা,তারপর যে ঠিক
কি,কত কি ঘটে যায়...
ওপেনিং স্পেল এলে,ভোর।
যেভাবে সকাল আর সকালের
দরজায় কড়া নেড়ে শিউলি।
বেলা যত গড়ায়,ফিরে আসে
কাক,শকুন আকাশ
ঢাকছে,কালো হয়ে এলো।
তবু কোথা দিয়ে যেন একটু
আলোর রেখাও...
ততক্ষণে তুমি ক্রিজে
একটু সেট। বল গুলো চোখে
দেখা যাচ্ছে। হাতটা
সেট। যা কিছু যেমন
হিসেব মতই হচ্ছে,ছেলে
বড় হচ্ছে,মেয়েও।
স্বামীর প্রোমোশন।
ব্যস উইকেট পড়ল।
ফার্স্ট ডাউনেই তুমি কি
ঘাবড়ে গেলে? তুমি কি
জানতে এমনটা হবে? জানা
যায়? তুমি তো তেমন
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন
কখনোই নও। খুব কি
প্রয়োজনও তেমন জেনে
ওঠা,না জেনেও তো কত
মানুষ দিব্যি কাটিয়ে
দিলো গোটা একটা
জীবন,কিন্তু সবার তো তা
হয়না। সেটাই সমস্যা।
নড়বড় না করে তুমি আবার
থিতু। হ্যাঁ,মেয়ের তেমন
বিয়ে দিতে চাইলে, হল কই?
চাইলেই কি আর হয়?
ধৈর্য্য ধর,ছেলেটা তো
আছে...বেশ তো চলছে খুচ
খুচ রান,মাঝে মাঝে বল
বুঝে দু একটা চার ছয়।
আবার খানিকটা থিতু
হওয়া। চোয়ালের তলায়
সেকেন্ড চিন! বয়স
বাড়ছে,সাথে থাইরয়েড,বুক
ধড়ফড়। কিছু
অসুবিধে,তবু...ইসস আবার
উইকেট গেল? এবার একটু ভয়
লাগছে? ভয়ের কি। তোমার
হাতে নাই ভুবনের ভার
ওরে ভীরু। যা তুমি
জানোনা,পারোনা
নিয়ন্ত্রণ করতে তা নিয়ে
অযথা টলমল কেন?
তুমি যার নুপুরের
ছন্দ,বেণুকার সুর...
আমি অথবা তুমি। তুমি
গান গাও আমি শুনি। তুমি
নিক্কন বাজাও আমি শুনি।
তেমন কিছুই বা কইগো! না
হোলি,না আনহোলি। হোনি
আর আনহোনির মাঝে তুমি
হেঁটে চলেছ অথবা
ব্যাটিং একটা লাল বল
ছুটে আসছে,স্টিয়ার
করতেও পারো অথবা
জাজমেন্ট। আর জাজমেন্ট
দিতে গিয়ে বল টার্ণ করে
সোজা উইকেটে,ধরতেই
পারোনি? গুগলি? দুসরা?
ভুল করে দাঁত বার করা
আমার জাতের অভ্যেস।
দাঁত বার করবে,আগে
টিঁকে থাকো। রাত্রি এসে
যেথায় মেশে দিনের
পারাবারে...ঘোর জমাট
আঁটো সাঁটো অন্ধকার
জমলো মুখে। ভাবছো আর
একটা চান্স যদি পেতে...
বুড়ো বাপ পেয়েছিলো? তার
বাপ? ধর তুমি পেয়েই গেলে
সেকেন্ড ইনিংস,কি করবে?
...বল আসার আগে চোখ বলের
লাইনে। সাথে এগিয়ে আসছে
শরীর,আর তারপর ব্যাট।
আর ব্যটের পেছনে পা।
তবু ভুল...
হয়ে যায় আসলে,কত
সাবধানীকেও তো...হয়ত
আলোটা ওই সময়েই এসে
চোখে ঝিলিক মারলো,
না’কি গ্যালারি থেকে
কেউ আয়না মারছিলো?
বৃষ্টির ফোঁটাটা ঠিক ওই
সময়েই এসে পড়ল গাল্ভসের
ওপর,না’কি চোখের জল... নো
এক্সকিউজ
প্লিজ..প্রিপেয়ার
ইওরসেলফ লাইক আ স্টিল।
নেভার বেন্ড। মেক ইওর
মাইন্ড সেট। ফিক্স ইওর
আইজ অন দা বল,জানো পতৌদি
নাকি এক চোখে দুটো বল
দেখতো,তাই এক চোখেও বল
মিস করত না। ভেবোনা এটা
রোগ। ভাবো এটা অভ্যাসের
ফল আর একাগ্রতা। তুমি
পারো। যেমন শচীন।
প্রতিভা আকাশ থেকে পড়ে
না। সে তৈরী হয় অনুকুল
পরিবেশে। তুমিও তাই। বি
প্রেপেয়ার্ড। ফাইট
এন্ড ফাইট। পেরে যাবেই।
একদিন সমস্ত যোদ্ধা
বিষন্ন হবার মন্ত্র
শিখে যাবে। একদিন সমস্ত
বৃদ্ধ দুঃখহীন বলতে
পারবে যাই। ‘মারার বল
মারো,ধরার বল ধর’।
বলতেন ভুলু স্যর। স্যর
বললেই তা কি আর হুবহু
মেনে চলা যায়? যায় না।
বেচারা জীবন,কত মায়া!
ছড়িয়ে ছিটিয়ে,হাত ধরে
ঝুলে পড়ছে...আটকে
যাচ্ছো,কষ্ট হচ্ছে...আর
তুমি চলে যাচ্ছো...আসলে
জানো যেতেই হয়,আজ নয়ত
কাল। ক্রিকেট ইজ রিয়েলি
আ জেন্টলম্যানস গেম।
নেটিভরা খেলায় আসার পরই
যত কুৎসিত কদর্য কান্ড
শুরু হল বলত আমার
দাদামশাই। সাদা হোক আর
কালো খেলা তো
খেলাই...ক্যানভাস থেকে
কালো দাগ গুলোকে মুছে
দাও। দেখ কখনো তুমি
মাঠে,কখনো মাঠের বাইরে
বসে। আর সে বয়ে চলেছে,
যেমন পথ। শূন্য থেকে
কোন সে অনন্তের পথে....টু
বি অর নট টু বি,খেলা আসলে
চলতেই থাকে,যেমন জীবন।
খেলা যখন...