খানকির ছেলেকে কে
বলেছিল ছাদে চড়তে!
সম্বিত ফিরতেই এই কথা
কানে এল তার। মাথা গলা
ঘাড় চপ চপে ভিজে। কপালে
হাত দিয়ে চটচটে লাগল।
নাকের কাছে ধরতেই সে
টের পায় রক্তের গন্ধ।
তাহলে কি তার কপাল ফেটে
গেছে? মাথায় আঘাত লেগে
অজ্ঞান! তবু সে তো সবই
মনে করতে পারছে। কিছুই
ভুলে টুলে যায়নি। হ্যাঁ
সরস্বতী পুজোর লাইট
বাঁধতে সে সেলাই কলের
টিনের ছাদ থেকে পাশের
আম গাছটায় গেছিল। বিপদ
টা হল সেখানেই। যখন সে
আম গাছে ঠ্যাং ত্যারছা
করে মন দিয়ে টিউব টাকে
বেঁধে তার গায়ে নীল
এলএডি জড়িয়ে দিতে
যাচ্ছিল তখন রাস্তার
দিকে একবার চোখ যায়
তার। কতকগুলো মেয়ে
ড্যাব ড্যাব করে দেখতে
দেখতে যাচ্ছে। তখনই সে
নার্ভাস ফীল করে
ফুটোটার কথা ভেবে। অথচ
এখন সে আঙুল দিয়ে দেখছে
প্যান্টের সে ফুটো
সামান্যই, কেবল একটা
আঙুল গলে। ফলে তার
নার্ভাস হওয়ার কোন কারণ
ছিল না। অত ছোট ফুটো ওই
নিচে থেকে কেউ দেখতে
পায় নাকি!
নার্ভাস হয়ে পা হড়কে সে
কী বাধাল এটা! এখন তার জল
তৃষ্ণা পাচ্ছে। দেখতে
ইচ্ছে করছে কে তাকে
খানকির ছেলে বলে
আবিষ্কার করল! কিন্তু
আশেপাশের মুখগুলো সবাই
তার চেনা। পাড়ার দাদা
এবং শুভাকাঙ্খী।
শুভাকাঙ্খীরা কি খোঁড়া
কে খোঁড়া, বোবা কে
বোবা...... আর ভাবতে ইচ্ছে
করল না। তাকে তুলে আনা
হয়েছে ক্লাবের ঘরে।
দিলীপ ডাক্তার এসে
ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন
। ঘরে ফিরে ছোট্ট আয়নায়
সাদা ব্যান্ডেজসহ
নিজেকে খানিকক্ষন দেখে
তার ভাল লাগে। অন্য রকম
লাগে নতুন নতুন। কিন্তু
খানকির ছেলে! তার মা
অনেক অনেক দিন আগে
পরপুরুষের সাথে চলে
গেছে বিহার, ইউপি বা
আসামে। জেঠিমা বলে, মা
নাকি যায়নি, জোর করে
নিয়ে গেছে তাকে। ঠিক
জানে না সে। বাপ টা আর
বিয়ে করেনি। কেন যে
করেনি! মাকে ভালবাসত
নাকি? মায়ের একটা ছবি,
খুব পুরনো জেঠিমার ঘরে
আছে। সেখানে তো বেশ
শান্ত আর করুণ দেখায়।
এমন মা কি খানকি হতে
পারে! সিভিক পুলিশের
হলুদ গেঞ্জিটা গায়ে
দিয়ে ডিউটিতে যাবে বলে
বেরিয়ে পড়ে সে। অনেকে
তাকায়। জিজ্ঞাসা করে।
সে ফুটো বাদ দিয়ে বাকি
সব টা বলে। খানকির ছেলে!
মাঝে মাঝে নিজে নিজে সে
আওড়ায়। কল্পনা করে
খানকি যেন খুব দজ্জাল
মহিলা। পানের রসে যার
মুখ ভরে থাকে। ভারী
শরীর। আর চোখে তীব্র
সন্দেহ।
রাত পোহালে ছোট্ট পুকুর
টায় স্নানের ধুম লেগে
যায়। বছরের কটা দিন
মাত্র লোকে এই পুকুরে
আসে। পুণ্য স্নানের
আশায় পুকুর ভরে উঠেছে
সাত সকালে। জটলার ভিতর
মেয়েরাও চান করছে আব্রু
বাঁচিয়ে। চকিত কিছু
দৃশ্য ভিড়ের চোখ এড়িয়ে
যায়। পুষ্পাঞ্জলির আগে
থেকেই পাড়ার মন্ডপে ভিড়
বাড়ে। ভিড় কমে চলেও
যায়। কাছের লীলাবতী
উচ্চ বিদ্যালয়।
মেয়েদের ইস্কুল ছাড়িয়ে
দু কিমি গেলে করিমপুর
বয়েজ স্কুল। সেদিকে ভিড়
কম। মাথার ব্যান্ডেজ আজ
বোঝা মনে হয়। পুরনো নীল
পাঞ্জাবি টা গলিয়ে সে
যখন আয়নায় দেখছিল
নিজেকে মোটেই ভাল
লাগেনি তার। ইস্কুলের
পাট চুকে বুকে গেছে
কবে। তবু সরস্বতী পুজোয়
পুষ্পাঞ্জলি টা
অভ্যাসের মতন। যেন
দিতেই হয়। চটি দুটোর
দিকে তাকালে তার মায়া
হয়। সকাল বেলায় জুতো
দোকান খুলবে না। নইলে
নতুন একটা কেনে নিলেই
চলত। হাতে এখন পয়সা
থাকে তার। হয়ত পরে এর
চেয়ে বেশিই থাকবে।
টিএমসিকে সে গাল পাড়ে
না। কেন পাড়বে? তার
চাকরি টা তো এ সরকারেরই
দান এক রকম। বয়েস মোটে
বাইশ, মাধ্যমিক পাস
মাথায় মাথায়। তাতেই আজ
সিভিক পুলিশের পোশাক
টা গায়ে দিয়ে যখন সে
হাইরোডে ডিউটিতে যায়
তখন মেয়েরা তাকায়, সে
দেখেছে আড়ে আড়ে। কথা টা
শুনে জগাদা বলেন মেয়েরা
মায়ের জাত। ওদের দিকে
কখনো ভুল নজরে চাইবি
না। জগাদা বেলতলার
মুচি। বড় একা, থাকার
বলতে একটা স্টোভ আর
ছেঁড়া খোঁড়া কটা বই। এ
সংসারে জগাদা তার
বন্ধু।
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর
সারে, কুচযুগশোভিত
মুক্তাহারে। উচ্চারণ
করতে করতে তার মনে পড়ে
যায় জগাদা একদিন
সরস্বতী স্তোত্রের
মানেটা বলেছিল। মনে
পড়তেই চোখ খুলে যায়।
প্রথমে নিজের আশেপাশে
তারপর দেবী প্রতিমার
দিকে চোখ চলে যায়। ভয়
করে তখন। চোখ বুজে
ভিতরে কোথাও মা মা বলে
সে কাকে খোঁজে। খানকির
ছেলে মন্ত্র না বলে কি
বিড় বিড় করছিস! চোখ খুলে
সে আবার খোঁজে। কে তাকে
খানকির ছেলে বলে। পূজার
কটা দিন কেমন কাটতে
থাকে। ফুটবল
টুর্নামেন্ট, মেয়েদের
এই ওই প্রতিযোগিতা।
মাটির একটা মূর্তিকে
নিয়ে এমন ফুর্তির কটা
দিন সে মাথায় ব্যান্ডেজ
নিয়েই কাটায়। মা মাটি
মানুষের কল্যাণে
উৎসবের শেষ নেই,
হোর্ডিংগুলো ঝুলে থাকে
যত্রতত্র।
বিসর্জনের দিন সকালে
ব্যান্ডেজ খুলে দিয়েছে
ডাক্তার। জগাদা
বেলতলায় বসেনি দোকান
নিয়ে। হয়ত গেছে কোথাও।
কুচযুগ শব্দটা তার
মাথার ঘুর ঘুর করে।
মাঝে মাঝে আবোল তাবোল
ভাবে। দেবী মা কি নিজের
মায়ের মতন? মেয়েরাও মা!
গনেশের গল্পটা জেঠিমার
কাছে শোনা। অথচ কুচযুগ
শব্দটা কেমন অস্থির করে
তাকে। সন্ধে থেকে
হিন্দি গান বাজছে।
খিচুড়ি বিলির পর সে চুপ
করে মন্ডপের কাছে শিমূল
গাছটার তলায় বসে থাকে।
ঢাকের তালে তালে মুখে
মিষ্টি গোঁজা মা চলেছে
বিসর্জনে। ঘন্টা খানেক
বাদে খুব হইচই পড়ে যায়।
রানা কে খুঁজে পাওয়া
যাচ্ছে না। এক দল কাদা
মাখা ছেলে পুলে
হন্তদন্ত হয়ে এদিক ওদিক
করছে। কথা টা শুনে সেও
চঞ্চল হয়ে ওঠে। রানা তো
প্রতিমা বিসর্জনে
গেছিল বড় দিঘি তে।
সেখানে অনেক জল। খানকির
ছেলে চল না বে বলে তাকে
কেউ ধরে নিয়ে যায়। বড়
দিঘির অন্ধকার যেন
মশকরা করছে ছেলেদের
সাথে। মদের গন্ধ আসে
ভুরভুর করে ছেলেদের গা
থেকে । ভয় ভয় করে। একটা
সময় জলে নেমে খোঁজা
শুরু হয়। এত প্রতিমা যে
ঠেলে সরানো যায় না।
টর্চের আলো ফেলে কেউ
ডাঙা থেকে। তার হাতে
তখন দেবীর স্তন,মাটির।
খানিকির ছেলে জলে কি
করছিস! আরে রানাদা গলা!
তাহলে জলে ডুবে টুবে
যায়নি ? উঠে আসে সকলেই জল
থেকে। খিস্তি খেউড়ে
মেতে ওঠা ছেলেদের কথা
শুনে মাটি আর খড়ের
পিন্ড ক্রমশ ডুবে যায়।
বিসর্জনের উল্লাসে
মাতে রাত। খানকির ছেলে
তখন মা আর মাটি নিয়ে এক
বুক জলে অন্ধকারে আরও
কিছুক্ষন থেকে যাবে
কিনা ভাবে।