১
--- হ্যালো, কে ন’বৌদি?
হ্যাঁ, দু’দিন একটু
ঘুরে এলাম... না না ওখানে
বৃষ্টি পাইনি একদম...
হ্যাঁ... বাচ্চাটা খুব
হইচই আনন্দ করেছে সবাই
আনন্দ করেছে... আমার?
আমারও ভালোই লেগেছে... কি
জানি... মনটা একদম ভালো
লাগে না গো... সবসময়
নানারকম চিন্তা হয়...
ভাবি আমার জন্য সবার
ক্ষতি হয়েছে আমি
সবকিছুর জন্য দায়ী...
কানে নানারকম
উল্টোপাল্টা কথা শুনতে
পাই গো বৌদি... কিছুই
করতে পারিনা... নানারকম
চিন্তা হয়... বসে থাকি তো
বসেই থাকি শুয়ে থাকি তো
শুয়েই থাকি... কিছুই ভালো
লাগেনা... ওষুধ? হ্যাঁ
ওষুধ খাই তো... খেতে ভালো
লাগে না তাও খাই ওষুধ...
ডাক্তারও দেখাই তো মাঝে
মাঝে... কিছুতেই কিছু হয়
না... দুদিন ভালো থাকি
তারপর আবার কানে শুনি
নানারকম... এ এই বলছে ও ওই
বলছে... আমার তো অসুখই
নেই কোনও... শুধু কানে
শোনা অসুখ আর মন
খারাপের অসুখ... কী হবে
ওষুধ খেয়ে... ধুর আর
খাবোনা ওষুধ... সবাই আমার
বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
করছে... আমি ষড়যন্ত্রের
শিকার... ক্যানো ওষুধ
খাবো? কী হয়েছে আমার?
মানুষের কিছু একটা অসুখ
করে জ্বর হয় পেটখারাপ
হয় তবে না লোকে ওষুধ
খায়... আমার কী হয়েছে যে
আমাকে ওষুধ খেতে হবে
সারাজীবন? সবাই রাগ করে
আমার ওপর... দিদিও সেদিন
ফোনে রাগ করছিলো...
বলছিলো, নিশ্চয়ই তুই
আবার ওষুধ বন্ধ করেছিস
তাই এরকম হচ্ছে... আমার
মাথার মধ্যে খালি এক
কথা ঘুরপাক খায় ন’বৌদি...
আমার জন্য বোধহয় সবার
ক্ষতি হয়েছে... আমার কিছু
ভালো লাগে না গো...
বারবার ঘুরেফিরে একই
জিনিস হচ্ছে... কিছুই
করতে পারিনা... মা মারা
যাওয়ার সময় আমায় একটাই
কথা বলে গেছিল ছেলেটাকে
দেখিস... অথচ... ছেলেটাকে
ঠিকমতো দেখতে পারিনি
এখন নাতনিটাকেও ঠিকমতো
দেখতে পারিনা... কাল ওর
মা ছিল না... বাচ্চাটা
নিজে নিজে চান করলো...
নিজে নিজে খেলো... ঠাণ্ডা
জলে চান করেছে একা একা...
জ্বর হোলো রাতে... আমি
কারো কোনও উপকারে
লাগিনা বৌদি... ওষুধ না
খেলে উল্টোপাল্টা কথা
বললে ছেলে রাগ করে...
চিৎকার করে... ওর বাবা
রাগ করে... চিৎকার করে...
বলে, আমি মরে যাওয়ার আগে
পেনশনের কাগজ ছিঁড়ে
কুটিকুটি করে দিয়ে যাব...
আমার কিছু ভালো লাগেনা
বৌদি... আমি কোথাও চলে
যাব সব ছেড়েছুড়ে... গান?
নাহ... ওসব কিচ্ছু মনে
পড়ে না আর... একলাইন গানও
আর গাইতে পারিনা... সবাই
বলে সবাই বোঝায় তোমার
কিসের অভাব কিসের কষ্ট...
সতিই তো... কিসের কষ্ট
আমার? কিন্তু আমি যে
কিছুতেই মনস্থির করে
থাকতে পারিনা বৌদি... আমি
ভালো নেই... বারবার একই
জিনিস হচ্ছে... ভয় লাগে...
সেই বেলগাছিয়ায় মানব দে
মুন্সীর হাসপাতাল... না
না আর কিছুতেই যাব না
আমি... ইঞ্জেকশন নেব না...
বারবার ঘুরেফিরে একই
জিনিস হচ্ছে... কতবছর হয়ে
গ্যালো... তখন ছেলেটার
লেখাপড়ার দিকে কিছু নজর
দিতে পারিনি... ও আর অয়ন
একইসাথে পড়তো... খুব
বন্ধু ছিলো দুজন... সেই...
অয়নের মা অয়নের
লেখাপড়ার দিকে কত নজর
দিত সবকিছুর দিকে কত
নজর দিত... আর আমার
ছেলেটা... আমি কাউকে
দেখতে পারিনি গো বৌদি...
আমার মাথার মধ্যে কীসব
চিন্তা ঘুরপাক খায়
খালি... আমি কোনদিন ভালো
হতে পারবোনা... অথচ আমার
কী অসুখ করেছে সেটাই
কেউ জানেনা... ওরা কি
আমার মাথায় এবার শক
দেবে গো? হ্যালো...
হ্যালো... বৌদি...
হ্যালো...
২
অ্যাসাইলাম থেকে ফিরে
আসার দিন
হলুদ শাড়িতে
মা খুব হেসেছিলো আমাদের
সিঁড়িতে
পরদিন স্কুল গেছিলাম কি
না ঠিক মনে পড়ে না
বালিশ উলটে রেখে
বুদ্বুদের ভেতর দিয়ে এই
সবজান্তা শহর
ছিঁড়েখুঁড়ে
আমরা ধীরে ধীরে
হেমন্তের দিকে
দেখছিলাম
কাঁপা কাঁপা অক্ষর
টপকে
কিভাবে আবেগ থেকে দূরে
চলে যায় জন্মদিন
আর লেখা হয়
ভাষা আসলে একটা স্নায়ুর
নাম
নির্ধারিত কাগজে
বাড়ি ফেরার কথায়
মাথার ভেতর দিয়ে বেঁকে
যাওয়া রেলরেখা
পরের দিন আর আরও পরের
পরের দিন
নাইট্রোসান দশ
মিলিগ্রাম আলুপোস্ত আর
পায়েস তৈরী করে
আর সারাদিন ধরে গান গায়
সালপিট্যাক দুশো
মিলিগ্রাম...