দেয়ালের ছায়া থেকে মা
এসে বসে
গা খুঁটে ফেলে দেয়
রোদের সামান্য আলো
ওটুকুই পড়ে আছে বাকী
পুরোনো কম্বলে রোজ কিছু
সংসার হয়
যানজটে ফাঁকি পড়ে জীবিত
সময়
শিলনোড়া বেজে ওঠে
মাছে আঁশ হয়, মশারিও
পরিপাটি
যেখানে যেখানে ধূলো
ছায়াদের
হাত-পা-মাথা নির্ভুল
যাপনের কালো
এক মনে মা
এ জল ও জল হেঁটে
ছেড়ে দিয়ে যায় তার
একমুঠো রূপোলী চাঁদিম
থর মরুভূমির এক প্রবল
মরুরাজ্য গজনীর।
সীমাহীন বালি ও মরু
পাহাড়ের দেশে রাজপুত
মহারাজ গঙ্গা সিং –এর
অদ্বিতীয় গজনীর
প্রাসাদ। । রুক্ষ
সীমান্তে এই লালপাথরের
বিনোদন কেল্লায় প্রবেশ
করে চোখ জলে ভরে এল।
রোদভাসি আকাশের নীচে
পত্র-পল্লব মেলে
দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন
আমগাছ। আঁচল বিছানো এক
কোমল মায়া। মনে আছে
দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। মা
বলিতে প্রাণ করে
আনচান............। “আপ
বাঙ্গালী লোগ বড়ে ভাবুক
হোতে হ্যাঁয়”---- গলায়
অভিযোগের চেয়ে বেশী
স্নেহের সুর প্রবীণ
ম্যানেজার সাহাবের।
মাতৃত্বের উপর
দেবত্বের আরোপ
ভারতবর্ষে এক উচ্চতম
পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তবে
তা ছিল নেহাতই মায়ের
প্রতি সমাজের
নিস্পৃহতার কিঞ্চিৎ
ক্ষতিপূরণ। অথর্ববেদ
বা উপনিষদে নবদম্পতির
প্রার্থনার শুরুতে আছে
“এস আমরা দুজনে মিলে
পুত্রসন্তান লাভের
জন্য চেষ্টা করি।“ সব
প্রার্থনাগুলিই অবশ্য
কন্যাসন্তানের জন্মে
বাধা দেয়। স্ত্রী এখানে
সম্পূর্ণভাবে
নিশ্চেষ্ট গ্রহীতা,
নীরব সমর্থন ছাড়া তার
কোনও কথাই থাকে না।
শিশুর লালনপালনে মায়ের
আনুষ্ঠানিক ছাড়া আর
কোনও ভূমিকা ছিল না। সে
পূজো করতে পারে, আহূতি
দিতে পারে, সন্তানের
স্বাস্থ্য ও
মঙ্গলকামনায় ব্রতপালন
করতে পারে, অসুস্থ
সন্তানের সেবা করতে
পারে কিন্তু শিক্ষা,
শাসন, তদারক
সম্পূর্ণভাবে পিতার
অধীন। সন্তানকে
কেন্দ্র করে যে কোন
অনুষ্ঠান পিতা
পরিচালনা করে, মাতা
শুধুমাত্র পটভূমিকায়।
তাই গর্ভধারণের কষ্ট,
তীব্র প্রসবযন্ত্রণা,
লালনপালন, উদ্বেগ,
শিশুকে স্তন্যদান,
অসুস্থতা ও আঘাতে সেবা
করার পরও শেষ পর্বে
শিশু মায়ের নয়, তার
পিতার। পিতার কন্ঠে
শিশুর উদ্দেশ্যে শোনা
যায় “আমার থেকে জন্ম,
অঙ্গ থেকে অঙ্গ, তুমি
আমার হৃদয় থেকে জন্মেছ,
তুমি আমারই স্বরূপ।“
এখানে ভ্রুণের বৃদ্ধি
বা শিশুর মানসিক
বৃদ্ধির বিষয়ে মায়ের
অবদানটুকুও অবজ্ঞা করা
হয়েছে।
প্রাচীন ভারতে
মাতৃত্বের ট্র্যাজেডি
ছিল বিকল্পহীন। সুখী
পরিবারের প্রতীক
শিব-পার্বতী। পরিবারের
শুরু কার্তিকেয়ের জন্ম
দিয়ে। কুমার
কার্তিকেয়ের
সেনাপতিত্বে তারকাসুর
বধ হবে। তাই কিছু দৈব
ষড়যন্ত্রের পর মহাদেব ও
পার্বতীর মিলন হল। অথচ
পুরাণের ব্যাখ্যায়
শিবের বীজ অগ্নিতে
পড়েছিল। তিনি তা ধারণ
করতে অসমর্থ হয়ে গঙ্গায়
নিক্ষেপ করেন এবং
গঙ্গাও অসহ্য তেজ সহ্য
করতে না পেরে কুশের
মধ্যে নিক্ষেপ করেন এবং
কৃত্তিকা ভগ্নীরা তা
লালন করেন। বীজের উৎস
শিবের থেকে হলেও তা কোন
নারীর গর্ভে
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় নি।
এতে অস্বীকার করা হয়েছে
পার্বতীর মাতৃত্ব।
অন্ধকার থেকে গড়িয়ে পড়ল
দেবশিশু
টেবিলে পা উঠিয়ে সমতলে
বেলুন ভরে দিই
মনোভোমরা মনোভোমরা
একটা ডাক কি করে গোটা
দুপুর হয়ে উঠল
ভারী জলে ভ্রুণ শিশুটি
পুষ্ট হয়
সব লাল ধুয়ে গেলে
চকোলেট ও রাংতায় বাবা
লেখা থাকে
খুব উঁচু একটা পাহাড়
দেখেছিলাম
দেখেছিলাম
উচ্চতায়, রুষ্ট বুদ্ধও
অনুরূপ হাসেন
এদিকে ভাবগত মাতৃত্বকে
উজ্জ্বল করার জন্য
সমাজে মাথাব্যথার অন্ত
নেই। সৃষ্টি হল দেবী
মাতৃকার, যার মাধ্যমে
সামাজিক মায়ের
বিড়ম্বনার কিছুটা
ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।
এই মাতৃকারা
সর্বশক্তিময়ী বররূপা ও
অশুভ শক্তিকে খর্ব
করেন। তাঁদের স্তুতি
বন্দনা করা হয়। কোন
ব্যথা ছাড়াই দৈব আনন্দে
মাতৃকা তাঁর কাজ করেন।
কিন্তু মর্ত্য মাতার
মাতৃত্ব শুরু ও শেষ
ব্যথার মধ্যে। আর
মাতৃত্বের মুক্তি? সে
যে বড় ক্ষণস্থায়ী।
সন্তান স্বনির্ভর
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ
হয়ে যায় এই সংক্ষিপ্ত
মুক্তির কাল।
সারি সারি ঘোলাটে সবুজ
দেয়ালে শ্রান্ত কিছু
চোখ। চোখের আলোও একদিন
শূন্য হয়ে যায়। মুক্তির
ভার দীর্ঘায়ত হয়।
বিবর্ণ সন্ধ্যা এগোয়
রাত ধরে। ফ্যাকাশে কোল
জুড়ে বসেছে রাতের
চন্দ্র-তারা। আলো ঝরায়
তারা মায়ের ঘুমোনো
কোলে। ফিরেও দেখে না
কেউ। অনন্ত
বৃদ্ধাশ্রমে ঘুমিয়ে
পড়েছে মা। শীঘ্র
বড়োবেশি শীঘ্র ফিকে হতে
হতে মিলিয়ে গিয়েছে
মাতৃত্বের উজ্জ্বলতা।