ইলা
“...কি আশ্চর্য ভাগ্য
আমার দেখুন ! কখনো আমি
অপূর্ব সুন্দরী এক নারী
, আবার কখনোবা পুরুষ !
একই অঙ্গে দুই সত্তা
নিয়ে রয়ে গেছি বহুদিন
বহুদিন ... একে কি
সৌভাগ্য বলব ? নাকি
দুর্ভাগ্য ! কখনও আমি
আমার স্বামী বুধের
আমারই রূপমুগ্ধ কামনায়
রসসিক্তা – স্বর্গীয়
সম্ভোগে সাক্ষাৎ
রতিরূপ , কাম তৃপ্ত নারী
। প্রতি দিন ,প্রতি রাত
অসংখ্য মিলনে
পরিপূর্ণতার আগলহীন
উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে
থাকি । আবার একদিন
সকালে হঠাৎ আবিষ্কার
করি আমার শরীর বদলে
গেছে ! ...আমার শরীর জুড়ে
শুধুই পুরুষ , পুরুষ
আমার মনেও ! নারীরূপের
সব ঘটনা সব রমণের
স্মৃতি বিস্মৃত !
...এমনটা বুঝি আর কারও
কখনও হয়নি !
হ্যাঁ এমনি তো ! আমি এক
মাস নারী আবার তার পরের
মাসে আমিই আবার পুরুষে
রূপান্তরিত হই । এই
আমার অদৃষ্ট ... আমার
ভাগ্য । একই শরীরে
বারংবার বদলে যায় আমার
সত্তা ...আমার অঙ্গ ...
আমার অস্তিত্ব ...
কে আমি ? ...আমি ইলা ... আমায়
সুদ্যুম্নাও বলতে
পারেন পুরুষ নামে ।
আমার পিতা শ্রদ্ধাদেব
মনু, , মাতা শ্রদ্ধা ,
আমার ভাই ইক্সভকু
-সূর্যবংশের জনক ,আর
আমার থেকেই উৎপত্তি
চন্দ্রবংশীয়দের । আমার
পুত্র পুরুরাভাস
চন্দ্রবংশের জনক ।
হ্যাঁ , একমাস নারী ও
একমাস পুরুষ থেকেও আমি
আমার স্বামী
চন্দ্রপুত্র বুধের
ঔরসে সন্তান ধারণ করি ,
আমার সেই সন্তানই
পুরুরাভাস ... আমার
শাপমুক্তির আলো ...
কিন্তু এমন তো ছিলাম না ,
তবে হলাম কিভাবে বলি
শুনুন সংক্ষেপে । আমি
আমার পিতা মাতার বহু
আকাঙ্ক্ষিত সন্তান ।
বহুদিন সন্তানহীন
ছিলেন আমার পিতা -মাতা ।
অগস্ত্যমুনির
পরামর্শে নানা আচার
বিচার ,যজ্ঞের মাধ্যমে
আমার মা শেষ পর্যন্ত
সন্তান ধারণ করেন , আমার
পিতা-মাতার ইচ্ছা ছিলো
পুত্র সন্তানের কিন্তু
কিছু ত্রুটি থেকে যায়
আচার-বিচারে আমি জন্মাই
কন্যা সন্তান হয়েই - ইলা,
তারপর তাঁরা অনেক সাধ্য
সাধনা করে ,কৃচ্ছতা
সাধন করে মিত্র ও
বরুণের দ্বারা আমার
লিঙ্গ পরিবর্তন করেন ।
আমি বেড়ে উঠি
সুদ্যুম্না নামে এক
রাজপুত্র হিসেবেই ।
একদিন আমি শিকারে
গিয়েছি , পথভ্রমে আমি
ভুলবশত প্রবেশ করে ফেলি
শিব ও পার্বতীর
ব্যক্তিগত সংরক্ষিত
শরবনে , যেখানে এক
মহাদেব ছাড়া আর কোনো
পুরুষের প্রবেশ
নিষিদ্ধ ! পার্বতী
প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে
আমায় অভিশাপ দেন , আমি
নারীতে রূপান্তরিত হয়ে
যাই পরমুহুর্তে !
মহাদেবের কাছে আমি আমার
দুর্দশা ব্যাখ্যা করায়
শেষে তাঁর অনুরোধে
পার্বতী কিছুটা শিথিল
করেন তাঁর শাপ ...
চিরনারী জন্ম থেকে
একমাস নারী ও এক মাস
পুরুষের জীবন যাপন করব
আমি- এই ব্যবস্থা হয় ।
বহুদিন পর আমার সন্তান
পুরুরাভাসের জন্মের পর
আমার শাপমুক্তি ঘটে
মহাদেবের কাছে
অশ্বাহুতি দিয়ে ।
এই হলো আমার দ্বৈত
সত্তা-লাভের কাহীনি
...আমি ইলা ...একই অঙ্গে
দ্বৈত যৌনতারও
প্রাচীনতম শ্রুতি । ”
সেইসব ধুসর
অঞ্চল
এ তো গেল পুরাণের কথা ,
ইলার কথা । শেষ পর্যন্ত
ইলা মুক্তি পেয়েছে তার
দ্বন্দ্ব থেকে । কিন্তু
পৃথিবীর বিস্তীর্ণ
অঞ্চল যে রয়ে গেছে ধুসর !
...মনে নারী শরীরে পুরুষ
কিংবা শরীরে নারী মনে
পুরুষরা ! ...সহস্র বছর
ধরে যে তাদের মুক্তি
নেই ... না তারা চিরহরিৎ
বর্ষাবন, সুজলা সুফলা
‘নারী’ অঞ্চল ...না তারা
কঠিন পাথর পেশীর
লালামাটির ঢ়াড় ,
কৃষিবীজ ‘পুরুষ’ অঞ্চল
... তারা মধ্যবর্তী ধুসর
অঞ্চল...স্বীকৃতির
জনবিজন অঞ্চল , তাদের
কোনো রাষ্ট্র নেই
...পুরুষ রাষ্ট্র – নারী
রাষ্ট্র কেউই তাদের
নাগরিক মানে না , তারা
ছড়িয়ে রয়েছে জনবহুল
শহরের গলি তস্য গলি
থেকে গ্রামে ,তাদের
কন্ঠস্বর ক্রমশ স্পষ্ট
হচ্ছে ... তারা কিন্নর
,যাদের সাধারণত লোকে
‘হিজড়া’ বলে জানে ।
কিন্নরকথা
কত নাম তাদের ! হিজড়া ,
খোউজা সিরা , নপুংসকা ,
থিরুনাঙ্গাই ,আরাভানি ...
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে
,বিভিন্ন ভাষায় তাদের
ভিন্ন ভিন্ন নাম ।
হাজার হাজার বছর ধরে
লোকগাথায় ,পুরাণে রয়েছে
তারা । পুরাণে কিন্তু
এঁদের পূর্বসূরি হলেন
অম্বা ।
অম্বা মহাভারতের এক
অভিশপ্ত চরিত্র । ভাই
বিচিত্রবীর্যের সঙ্গে
বিয়ে দেবেন বলে ভীষ্ম
অপহরণ করেন অম্বাকে
তারই স্বয়ংবর সভা থেকে
। পরে শাল্বরাজের প্রতি
অম্বার অনুরাগের কথা
জানতে পেরে ভীষ্ম
মুক্তি দেন অম্বাকে
,এদিকে শাল্বরাজ
অম্বাকে প্রত্যাখ্যান
করেন । প্রত্যাখ্যাত
,অপমানিত অম্বা এই
যাবতীয় ঘটনার জন্য দায়ী
করেন ভীষ্মকে এবং তাঁকে
ধ্বংস করার ব্রতে শুরু
করেন কঠিন তপস্যা । শিব
সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর
দেন পরজন্মে অম্বা
নপুংসক –শিখণ্ডী হয়ে
জন্মাবে এবং ভীষ্মের
বিনাশের কারণ হবে । - এর
অন্য কাহীনিও রয়েছে
মহাভারতে । কথিত -সেই
পৌরাণিক চরিত্র অম্বার
অভিশাপই বয়ে চলেছে তাঁর
উত্তরসূরিরা –আজকের
হিজড়ারা ।
রয়েছে আরও অনেক কাহীনি ,
যেমন বহুছাড়া মাতার
কাহীনি , কিন্নর সমাজে
অন্যতম পূজ্য দেবী ইনি
। মহাদেব শিব ও
পার্বতীও এঁদের খুবই
আপনার । বিশেষত
শিব-পার্বতী বা শক্তির
‘অর্ধনারীশ্বর’ রূপ যা
কিনা নারী ও পুরুষের
পরিপূরকতা ও যুগ্ম
অস্তিত্বের প্রতীক ।
হিজড়ারা বহুকাল ধরেই
নিজেদের একটি পৃথক
সম্প্রদায় হিসেবেই গড়ে
তুলেছে । আমাদের
সংস্কৃতিতে হিজড়াদের
বহু ভূমিকা থাকলেও
সমাজ তাদের মুল ধারায়
কখনই সম্পৃক্ত হতে
দেয়নি । চির অবহেলিত
সমাজের এই তৃতীয় সত্তার
গড়ে উঠেছে নিজস্ব
অস্তিত্ব , নিজস্ব
সংস্কৃতি । রয়েছে তাদের
নিজস্ব গোপন ভাষা –
হিজড়া ফার্সি বা
‘কোটি’ । সাধারণত
আঞ্চলিক ভাষায়
কথাবার্তা বললেও উত্তর
ভারত ও পাকিস্তানের বহু
হিজড়া সম্প্রদায়ের
মানুষই এই সাংকেতিক
গোপন ভাষা ব্যাবহার করে
থাকে । এই ভাষা মূলত
উর্দু ও হিন্দি নির্ভর
হলেও এটি একটি মৌলিক
কথ্য ভাষা যা তাঁরা
নিজেদের মধ্যে
ব্যাবহার করে থাকেন ।
সম সম্প্রদায়ের হলেও
কিছু ক্ষেত্রে
হিজড়াদের মধ্যেও
বিভিন্নতা রয়েছে ,রয়েছে
শ্রেণীবিন্যাস । যেমন
কিছু হিজড়ার জীবনে
অন্যতম অনুষ্ঠান হলো
পুংযৌনাঙ্গছেদন(Emasculation)।
শরীরে বিদ্যমান পুরুষ
যৌনাঙ্গ
অস্ত্রোপচারের
মাধ্যমে বাদ দিয়ে এই
আচারের মাধ্যমে তার
পুনর্জন্ম হয় , একজন
অক্ষম পুরুষ থেকে সে
হয়ে ওঠে একজন সক্ষম
হিজড়া । এই আচারের নাম
‘নির্বাণ’ । তাদের
বিশ্বাসে তারা যুক্ত হয়
একই সঙ্গে মহাদেব শিব ও
আরাধ্যা দেবীর সঙ্গে ।
একমাত্র এর পরেই তারা
বিশেষ ক্ষমতালাভ করে
এবং নবজাতকের জন্ম ও
বিবাহের মতো অনুষ্ঠানে
বিশেষ ভূমিকা পালন করতে
স্বীকৃত হয় ।
অস্ত্রোপচারের পর ৪০
দিন তাকে একান্তে রাখা
হয় এবং বিশেষ খাদ্য
দেওয়া হয়ে থাকে । ৪০দিন
পর তাকে নতুন বধুবেশে
সাজিয়ে শোভাযাত্রা বের
করা হয় , এই সমগ্র
অনুষ্ঠান উর্বরতার
প্রতীকীবাদ নির্ভর যা
কিনা বিবাহ ও শিশুর
জন্মের সঙ্গে
সুত্রযুক্ত ।
হিজড়া তথা কিন্নরদের
পুরাণের কথা জানলাম।
এখন দেখা যাক বিজ্ঞান
কি বলছে । বিজ্ঞান বলছে
হিজড়ে সাধারণত তিনরকম:
প্রকৃতহিজড়ে(True Hermaphrodite),
অপ্রকৃত পুরুষ হিজড়ে
(Male Pseudo Hermaphrodite), এবং অপ্রকৃত
নারী হিজড়ে (Female Pseudo
Hermaphrodite)।
মোটামুটি ভাবে যা জানা
যাচ্ছে তা হলো -এই
‘হিজড়া’ জন্মের মুলে
রয়েছে মানব শরীরের
‘ক্রোমোজোম’এর ভূমিকা
। মানব শরীরের
স্বাভাবিক ২৩ জোড়া
ক্রোমোজোম অর্থাৎ ৪৬ টি
ক্রোমোজোমের সংখ্যাগত
ত্রুটি থাকলে এরকম ঘটনা
ঘটে । এমনকি ক্রোমোজোম
সংখ্যা স্বাভাবিক
থাকলেও গোনাডের
ত্রুটিতেও যৌন
বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম
হতে পারে । রয়েছে আরও
বহু শারীরবৃত্তিও কারণ
, যার বিবরণ একটি বিশদ
গবেষণা ও পৃথক নিবন্ধ
দাবী করে ।
এই পরিচিতি আধুনিক
পাশ্চাত্য লিঙ্গ
পরিচিতি বা যৌনতার
ধারনার থেকে পৃথক । এমন
অনেকেই আছেন এই হিজড়া
সম্প্রদায়ে যাঁরা
নিজেদের
নির্দিষ্টভাবে কোনো
লিঙ্গ পরিচয়ে চিহ্নিত
করতে চান না । এমন ধারণা
যে হিজড়াদের ‘বিশেষ
অলৌকিক ক্ষমতা’ রয়েছে
যা এসেছে তাদের এই
অনির্দিষ্ট লিঙ্গ
পরিচিতি থেকেই – কিন্তু
বাস্তবিক ক্ষেত্রে এই
ধারণা দ্বন্দ্বে পড়ে
যায় যখন বেশ বড় সংখ্যায়
হিজড়া সম্প্রদায়ের
মানুষদের যৌন-বৃত্তিতে
দেখা যায় । যেসব “
মেয়েলি পুরুষ ” হিজড়া
রয়েছেন এই পেশায় তাঁরা
পুরুষ যৌন-সঙ্গীর সঙ্গে
যৌন ক্রীয়াকালে
গ্রহনক্ষম (Receptive) সঙ্গীর
ভূমিকা পালন করে থাকে ।
এঁদের বলা হয় ‘কোঠি’ ।
সাধারণ হিজড়াদের সঙ্গে
এঁদের কিছু পার্থক্য
থাকে । এঁরা সাধারণত
মহিলাদের বেশেই থাকেন
,এবং মহিলা-সুলভ আচরণ
করে থাকেন । তাঁদের
এইসব পুরুষ যৌন-সঙ্গীরা
বা খদ্দেররা সাধারণত
বিবাহিতই হয়ে থাকে । এই
ধরনের যৌন সম্পর্কের
কথা সাধারণত বৃহত্তর
হিজড়া সমাজে গোপন রাখা
হয় । কেউ কেউ সম্পর্কে
জড়িয়ে পড়েন এমনকি বিয়েও
করেন ,যদিও এই বিয়ে সমাজ
ও আইন বৈধতা দেয় না । এই
ধরনের সম্পর্কের কিছু
নাম রয়েছে ,যেমন
বাংলাদেশে বলা হয়
“পন্থি”,দিল্লিতে
“গিরিয়া” , কোচিনে
“শ্রীধর” ।
যাবতীয় যৌন সম্পর্ক ,
যৌন ভোগ এমনকি কিছু
ক্ষেত্রে মানসিক
বন্ধনের পরও এঁরা
স্বীকৃতি পান না সমাজে ,
এমনকি যৌন সঙ্গীর কাছ
থেকেও । এঁরা শুধু
শারীরিক ভোগের
স্বার্থে যৌন যন্ত্র
হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে
থাকেন ।
সামাজিকভাবে বঞ্চিত
হিজড়াদের বেশীরভাগই
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে
দুর্বল হয়ে থাকে। কোন
শিক্ষাক্ষেত্রে ,
সাধারণ কর্মক্ষেত্রে
এঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
হওয়ায় এঁদের পেশা বলতে
থেকে যায় জোর করে ,নানা
অসুবিধা সৃষ্টি,
হুজ্জতি করে অর্থ
উপার্জন (Extortion) , বিভিন্ন
সামাজিক অনুষ্ঠানে
অর্থের বিনিময় নাচ-গান
ইত্যাদি করা (টোলি)
ভিক্ষাবৃত্তি (ধিঙ্গনা)
এবং যৌন বৃত্তি – যা বহু
প্রাচীন কাল থেকেই
তাদেরকে দিয়ে করানো হয়
। বর্তমানে রাষ্ট্র তথা
আইন তাদের কিছু অধিকার
দিয়েছে ঠিকই কিন্তু
বাস্তবে তার
প্রতিচ্ছবি সমাজে এখনও
দেখা যায় নি ।
হিজড়ারা সুপ্রাচীন কাল
থেকেই নানা সামাজিক
অনুষ্ঠানে , জন্মে
,বিবাহে এবং যৌন তাড়নার
স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে
চলেছে কিন্তু অপর দিকে
তারা চরম বঞ্চিত
স্বাস্থ্য পরিসেবা,
শিক্ষা , আবাসন , আইন
,কর্মসংস্থানের মত
বুনিয়াদি প্রয়োজন ও
অধিকার থেকে । ‘নারী’
কিংবা ‘ পুরুষ’ কোনো
একটি বিভাগে ফেলতে না
পেরে আমলাতন্ত্রও
তাদের প্রতি
বৈষম্যমুলক আচরণ করে
থাকে । সামাজিক
পরিবেশেও তাঁদের প্রতি
হিংসা ,বিদ্রূপ নিত্য
ঘটনা । বিশেষ করে যৌন
পেশায় থাকা হিজড়া
সম্প্রদায়ের মানুষদের
প্রতি । এঁরা সাধারণ
জনাকীর্ণ স্থানে, পুলিশ
থানায় এমনকি
সংশোধনাগারেও
নিষ্ঠুরভাবে
নির্যাতিত হন।
আমাদের আশেপাশে থাকা
একটু অন্য ধরনের
প্রকৃতির মানুষগুলি
শুধুই আমাদের কৌতূহলের
, আমাদের বিদ্রূপের ,
আমাদের নবজাতক
সন্তানদের দীর্ঘায়ু
নিশ্চিত করা কিংবা
আমাদের বিকৃত যৌন খিদে
নিবারণের জন্যই ! তারা
অপর ...তারা ভিন্ন ...তারা
আমাদের মানব প্রজাতির
ধুসর অঞ্চল – তাই তাদের
প্রতি আমাদের কোনো
সহানুভূতি থাকতে পারে
না ,থাকতে পারে না কোনো
দায়ও !
ধুসরাঞ্চলে ক্ষীণ
কিরণ
মানব প্রজাতির এই
মধ্যবর্তীরা রয়েছেন
৪০০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে
এবং বহু লক্ষ সংখ্যায় এ
দেশে ,এই সমাজের আনাচে
কানাচে । প্রথমবার
জনসুমারিতে এঁদের কে
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
এইবারে , তাতে ৪৯০০০০
সংখ্যা পাওয়া গেছে ,
যদিও মনে করা হচ্ছে
প্রকৃত সংখ্যা এর ৬-৭
গুন । সুবৃহৎ বঞ্চনা ,
নির্যাতনের ইতিহাস
পেরিয়ে বহু লড়াই বহু
প্রয়াসের পর ছবি
কিঞ্চিৎ হলেও বদলাচ্ছে
। এই বদলে তাঁদের শরিক
বিভিন্ন মানবতাবাদী
সমাজসেবী সংগঠন ,
আন্তর্জাতিক আর্থিক
সহায়তা ,কিছু বিরল
ব্যক্তি ।
যদিও আই পি সি ৩৭৭ ধারায়
“প্রকৃতিবিরুদ্ধ
যৌনাচার ” ( নারী ও
পুরুষের সন্তানের
জন্মের লক্ষ্যে করা
যৌনক্রীয়া নয় এমন ) এর
অভিযোগে পুলিশ
গ্রেফতার করতেই পারে ,
কিন্তু আজকে সমাজসেবী
সংগঠন তাকে আইনি সহায়তা
দেবে ।
বিহার সরকার ২০০৬ সাল
থেকে ‘হিজড়া’
সম্প্রদায়কে ট্যাক্স
আদায়ের কাজে লাগাচ্ছে
এবং দেখা যাচ্ছে
ট্যাক্স আদায়ের
এযাবতকালে ব্যবহৃত
পদ্ধতির মধ্যে এটি
সবথেকে কার্যকরী ।
রাষ্ট্রও এখন স্বীকার
করছে এঁদের অস্তিত্ব ।
২০০০ সালে ‘শবনম মৌসি’
প্রথম সাধারণ
নির্বাচনে অংশ নিয়ে
লোকসভায় যান , তখন থেকে
আজ পর্যন্ত অনেকেই
তাঁকে অনুসরণ করে জাতীয়
রাজনীতিতে যোগদান
করেছেন । প্রতিনিধিত্ব
বাড়তে থাকা হিজড়া
সম্প্রদায়ের মানুষরা
এবার সরকারি নীতি
নির্ধারণকেও প্রভাবিত
করতে থাকে ।
তামিলনাড়ুতে হিজড়াদের
অনুমতি দেওয়া হয় ,যদি
তাঁরা মনে করেন রেশন
কার্ডের আবেদনপত্রে ‘
F ’ বা ‘M’
এর বদলে ‘ T ’
লিখতে পারে । এবং এই
ব্যবস্থা আগামী দিনে
পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং
লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও
করা হবে ।এই ‘ T’
নির্দিষ্ট করছে
ট্রান্সজেন্ডার (TRANSGENDER)
কে, যাদের সরকার ‘তৃতীয়
লিঙ্গ’ বলে স্বীকৃতি
দিচ্ছে সাম্প্রতিক
কালে । হিজড়ারা
ট্রান্সজেন্ডার নয় –
এনিয়ে বিতর্ক রয়েছে ,
তবে সার্বিক দিক দিয়ে
বৈষম্য ও নির্যাতনের
নিরিখে , বৃহত্তর
ক্ষেত্রে এই শব্দটি
ব্যাবহার হচ্ছে ।
বদলাচ্ছে , খুব ধীরে এবং
ক্ষীণ হলেও আলোর কিরণ
এসে পড়ছে সমাজের এই
ধুসর অঞ্চলে । আলোকিত
হচ্ছে তারা, জাহির করছে
–‘আমরা রয়েছি ,প্রবল
ভাবেই রয়েছি ’। আমরা আর
উদাসীন থাকতে পারছিনা
,অস্বীকার করতে পারছিনা
তাদের অস্তিত্ব । এবার
একটু শুধু নিজেদেরও
বদলাতে হবে ,এই সমাজের
বৃহত্তর অংশের , যাঁরা
মানব প্রজাতির
মানচিত্রে ‘নারী’
কিংবা ‘পুরুষ’ ,তাদের
একটু উন্মুক্ত করতে হবে
চেতনা – ‘হিজড়া’ ,
‘কিন্নর’ বা
‘ট্রান্সজেন্ডার’ যে
নামেই ডাকা হোক না কেন ,
তাদের জুড়ে নিতে হবে
সীমান্তরেখার পতিত ‘নো
ম্যান্স ল্যান্ড’ থেকে
প্রকৃত মানব মানচিত্রে
।
তথ্যসুত্র -
https://en.wikipedia.org/wiki/Ila_%28Hinduism%29
http://www.quora.com/Indian-mythology-Are-there-any-instance
s-when-a-male-turned-female
http://kinnarsamaj.blogspot.in/2015/08/blog-post_51.html
http://www.everyculture.com/South-Asia/Hijra-Religion-and-Ex
pressive-Culture.html
http://www.datehookup.com/singles-content-hermaphrodite-info
rmation-and-resources.htm
http://www.newstatesman.com/world-affairs/2008/05/hijras-ind
ian-changing-rights
http://timesofindia.indiatimes.com/city/patna/Transgender-vs
-Hijra-debate-hots-up/articleshow/46169219.cms
http://www.glaad.org/blog/indias-census-counts-transgender-p
opulation-first-time
**এবং আরও অনেক ।