ফেলানির
বেহেস্ত
ফেলানি সেদিন কোথায়
যাচ্ছিল? অত রাতে মই
বেয়ে বেয়ে কাঁটাতার
থেকে কতটা উপরে পৌঁছাতে
চেয়েছিল সে? তা জানার
জন্য ফেলানির বাড়ি
যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৯৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক
সীমান্ত থেকে দুহাজার
কিলোমিটার দূরের
ঠাণ্ডা এসি ঘরে বসেই
বলে দেওয়া যায় যে,
ফেলানি তার বেহেস্তে
যেতে চেয়েছিল।
হাজারে হাজারে নো
ম্যানস ল্যান্ড ঘিরে
আছে চারদিক থেকে। যার
এক পারে
গ্র্যাজ্যুয়েশান তো
অন্য পারে স্থায়ী
চাকরি, এক পারে এম. এ. পাশ
তো অন্য পারে এন. আর. আই
গৃহকোণ। আর যাই হোক না
কেন, নো ম্যানস্
ল্যান্ডের ওই পারটাই
বেহেস্ত, ওই পারটাই
স্বর্গ। ফেলানির মতই আর
সবার কাছেও।
অথচ ওই পার অবধি সবার
পৌঁছোন হয়না। বুকে গুলি
বিঁধে কারো কারো লাশ
কাঁটাতার থেকে ঝুলতে
থাকে মাঝেখানে কোথাও...
অন্ধকারে। তারা তখন নো
ম্যান হয়ে ওঠে, তারা
সবাই ফেলানি।
বাকী সময়টা সমস্ত
সম্ভাব্য ফেলানি খাতুন
পৃথিবীর রাস্তা দিয়ে
হেঁটে যায়।
লাইন অফ
কন্ট্রোল
সে অবধি পৌঁছানো হয়নি
কারোর। আসলে সে’ই কাউকে
আসতে দেয়নি। মা পড়ার
টেবিল অবধি এসে
হরলিক্সের গ্লাস রেখে
চলে গেছেন। বাবা
ফ্রিজের ওপরে রেখে দিয়ে
গেছেন টিউশান ফিজ। তার
ভিতরের ফিউশান জোনের
চারপাশে সে টেনে রেখেছে
কাঁটাতার, লিখে রেখেছে,
keep distance.
সে ভ্রূ কুঁচকে রাস্তা
দিয়ে হেঁটে যেত,
কুঞ্চিত ভ্রূ উদ্দত
কালাশনিকভ, যেন তার
নিজস্ব কাঁটাতারের
পাহারায় নিয়োজিত তারা।
তবু মাঝে মাঝে অনধিকার
প্রবেশ ঘটে যেত তার
একার সেই দ্বীপে।
কুঞ্চিত ভ্রূদের
সাময়িক ছুটি মিলত। Invading
শেষে প্রেমিকারা রেখে
যেত নিজের নিজের গন্ধ,
একা রাতে উত্তেজিত করার
ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু
বুলি। কিছুদিন বাদে
আবার তাকে ভুরু কুঁচকে
হেঁটে যেতে দেখা যেত
রাস্তা দিয়ে। একা একা,
নিজের চারপাশে আস্ত
একটা নো ম্যানস্
ল্যান্ড বয়ে নিয়ে।
অনেক দিন তার সাথে, তার
কুঁচকানো ভ্রূদের সাথে
দেখা হয়নি আমার। শোনা
কথায় জেনেছি, তার মধ্যে
ভিতর ভিতর এক
ডিক্টেটরশিপ শুরু হয়ে
গিয়েছে। এখন শুধু একটা
বিস্ফোরনের অপেক্ষায়
আছি।
ও-ম্যানস্
ল্যান্ড
রঘুবীর আমাদের পাড়ার
মাংস বিক্রেতা। তার
দোকানে সকাল সন্ধ্যে
মুরগির চিৎকার চাপা
দেওয়ার জন্য রেডিও চলে।
খুন করতে করতে যখন
একসময় পাখিগুলোর
আর্তনাদ তার একঘেয়ে
লাগে, ভাঙা ভাঙা হিন্দি
জানা রঘু রেডিওর ভলিউম
বাড়িয়ে দেয়। নাইটি পরে
মেয়েটা বাড়ি থেকে ঠিক
রঘুর দোকান অবধিই যেতে
পারে, রঘুর দোকানই তার
নাইটি পরার লাইন অফ
কন্ট্রোল। দোকানে এসে
সে মাঝে মাঝে রঘুকে বলে,
“ভাইয়া, আধা কিলো চিকেন
দেনা, উইদাইট স্কিন”,
রঘু কাজ শুরু করলে আমি
দেখি মেয়েটা নিজের গলায়
হাত রেখে আবার বলে উঠছে,
“ভাইয়া, গলা মত দেনা”,
আরো কিছুক্ষণ পর সে
আবার নিজের থাইতে হাত
রেখে বলে, “ভাইয়া, ইয়াহা
সে দেনা”, আরো কিছু সময়
পর আমি দেখি সে নিজের
বুকে হাত রেখে বলে উঠছে,
“ভাইয়া, ইয়াহা সে ভি
দেনা”, রঘুর চোখ
কন্নাড়া না জানা
মেয়েটার ‘ইয়াহা’ থেকে
‘ওয়াহা’ অবধি পিছলে
পিছলে যায়।
কালো প্লাস্টিকে নিজের
খন্ডগুলো দোলাতে
দোলাতে মেয়েটা ঘরে ফিরে
আসে, আজ তার পিজিতে
ফিস্ট। মহিলা পিজি।
সেখানে পুরুষ প্রবেশ
নিষিদ্ধ।
পুনশ্চঃ
মা বাবা দাদা দিদি সবাই
হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বুলি
ফোঁটা শিশুর সামনে,
“বলোতো, তোমার নামের
মানে কি?”
“অলোক মানে, যেখানে লোক
থাকেনা, আর পর্ণা মানে
পাতা”
বড়োরা সম্মিলিত
হাততালি দিয়ে উঠলেন।