রিপ্লাই দিতে আঙুল গুলো
টাইপ করে যায়। খেয়েছিস?
দাঁত মেজেছিস? আর খানিক
বাদেই দু তিন টে ছবি।
ওয়াশ রুমে, টাওয়েল নিয়ে
আর কম্পুটার টেবিলে।
ফটোগ্রাফি মানে কিন্তু
এঙ্গেল, রিদ্ধির সেই
ডায়লগ। রাতের যাবতীয়
কাজ সারা। এই ভাবে সে
আমি আর কে কে যেন রাত
নামিয়ে আনি অন স্ক্রীন।
বুক র্যাক থেকে মিহি
দুর্বোধ্য স্বর ভেসে
আসে। ও কিছু না।
ফ্রিজের উপর
স্টেবিলাইজার টার
গোঙানি।
বড় সোফা টায় কত দিন শোয়া
হয় না। সোফার ভিতর চাদর
টেনে গোঁত খেতে খেতে
গৌতমের কথা ভাবি। মিকি
মাউস আঁকা টিফিন বক্সের
ভিতর চারটে অরেঞ্জে
ক্রীম বিস্কুট। ক্রীম
বাদ দিলে থাকে গৌতমের
নখ খাওয়া আঙুল। ভারি
চশমা। এই সোফার ভিতর
গৌতম আর ক্রীম। আর এখন
আমি প্রায় তেইশ। নেট
স্লো। তা বলে গৌতম? ইস!
সেই কবেরকার হিস্ট্রি।
বাপ রে। এত কান্না
বাচ্চাবেলায় পেটের
ভিতর থাকে! গৌতমরা
যেবার দিল্লী চলে
গেল,ওর বাবার বদলি তে।
ঠাম্মির ইয়াবড়
ক্যাডবেরি হাতেই রয়ে
গেল। ছবি টা আছে এখন ও।
এত বিষন্ন ছবি, ভিঞ্চির
পর ... কে জানে
উফ, পিঠে এত ব্যথা করে না
অ্যাপ করতে! শোন, সেই
ভিডিও টা না মা আর একটু
হলেই দেখে ফেলছিল
আরকী। টাইপ করেও মুছে
দিলাম। কী হবে বলে?
ভিডিও টা মা দেখলেই বা
কী। মাথার চুল গুলো
কার্লি করে ফেলা যায়।
আর তাতে মুখের যা একটা
সেপ আসবে না! ঝক্কাস।
গৌতম রা দিল্লী চলে
যাবার পর নাকি অনমনস্ক
হয়ে চুলে আগুন ধরিয়ে
ফেলেছিলাম। আর তার পরে
পরেই কার্সিয়াং,
স্কার্ফ টাই আর বোর্ডিং
স্কুল। শীত শীত ভাবলেই
দেখি সেই চা বাগানের
কুলি, পাক খাওয়া মেঘ,
গম্ভীর শুয়োর। না না
তখন শুয়োর বলতে শিখিনি
। রোজ চকলেট পেতাম।
সাদা সাদা মিসেদের
চকলেট-মিস বলে ডাকাডাকি
হত। রাতে কফির গন্ধ আসত
ফাদারের কোয়াটার থেকে,
ওঁর বৌ রোজ রাত করে কফি
খেত। গীর্জার না শব্দে
আর চকলেটের মদে অক্ষর
ডুবে যায়, সোফাও
উপরের ফ্ল্যাটে হেবি
বাওয়াল। রাস্তার
কুকুরেরা কান খাড়া করে
সে সব শোনে, মৃদু
চেল্লায়। একটা টিকটিকি
ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে
চটিতে। পেয়ারা গাছের
সাদা সাদা ফুল গুলোর
ছবি তুলেছে তিথি।
ডায়রীতে সেই ফুল আচারের
গন্ধ হয়ে শব্দ কে উলটে
পালটে ফেলছে। পাহাড়ে
বৃষ্টি, একটা দামী
ব্যামো। টুক করে তুলে
নিয়েছিলাম খাতায়। আর
স্বরচিত কবিতা, এত হাত
তালি! বলতেই ভুলে গেছি
ওগুলো আসলে বাসে বসে
বসে শুনতে থাকা সংলাপ।
বিমল জেঠুদের বড় ঘড়িতে
এগার টা বাজছে। রাস্তায়
নেমে পড়ার ইচ্ছে ছিল
খুব। কিন্তু একদিন
হস্টেল থেকে ফেরত
পাঠিয়ে দেয়। মোজা গুলো
খুব ভিজে ছিল, আমার
তিনটে রঙ পেনসিল খুঁজে
পাওয়া যায় নি। বাবার
হাত টার বড্ড চাপ। সিড়ি
গুলো যেন কলকাতা অব্দি
টানা । গৌতমের কথা
জিজ্ঞাসা করলে বাঁ গালে
একটা চড় জুটেছিল।
ডাইরী তে কার্সিয়াং
নিয়ে ফিরেছিলাম। রোদ
মাখা চাদর। যে চাদরের
মায়ের গন্ধ আছে খুব।
বাগবাজার গার্লসের
হল্লাটাকে পাহাড় অব্দি
ঠেলে তুলেছি কত কতবার।
ধ্যাত! এই শোফা। হলুদ
সাদা কুশন। বার্বি গুলো
দাদাভাই ভালবাসে না আর।
ছেলেদের ওসব মানায় না।
তুই নেই অ্যাপে। গালের
ব্রণ গুলো আয়নায় রেখে
দি? ঘরে এসে জানলা খুলে
চুপ। শ্যাম্পুর গন্ধ কে
ছাপিয়ে আসছে সিগারেট।
রাত শহরের ধূম। মিট মিট
করে দূরের ফ্ল্যাট
জ্বলছে। তোর প্রোফাইল
পিকচারে চড়াতে ইচ্ছে
করে। ওন গড। যে কথা গুলো
আগে বলতিস সে গুলো আর
কেন বলিস না। ঠান্ডা
লাগছে। কী হাওয়া।
সামনের মাসে
হেস্তনেস্ত। নতুন একটা
গান লিখেছি। বাবা বলেছে
সব পুড়িয়ে দেবে। কুরে
কুরে ছোট হয়ে আসছে
পেন্সিল । দু দিক থেকে
তার মুখ। টেবিলে পড়ে
আছে ঘোরাচ্ছি।
ডোরাকাটা সোয়েটার রঙা
পেন্সিল। পোস্টম্যান,
মেঘ নিয়ে ফিরো। এরপরে
আর এগুবেনা কবিতা টা।
এত টা হালকা হলে ঝাঁপ
দেবে সাত তলা?
এত ঘুমাস কেন? আমাকে
ছাড়া ঘুমিয়ে পড়ার জন্য
তোকে ভীষন শাস্তি দেব
ভাবি। ফ্রিজে
আইস্ক্রীম আছে। একা একা
আইস্ক্রীম খাওয়া যায়!
সপ্তা দুই হয়ে গেল। লাল
মাছ টার সাথে কেউ বন্ধু
পাতায়নি। আমি একোরিয়াম
ভালবাসি না। একোরিয়াম
আমাকে ভালবাসে না।
তিরতির জল। বাথরুম টাকে
গানের পাশে রাখি। কোমল
ধৈবত ছুঁয়ে মা নিষাদে
চলে যায়। কাচের ভিতর
দিয়ে আমি দেখি। খুব
ভোরে ট্যাক্সির ভাড়া
মিটিয়ে আমাদের গলিতে
ঢুকল। গলা, বুক জ্বালা
করে ওঠে। এই বাজল। এই
বাজল। নাহ! আমাদের কলিং
বেল দু মাস হল সারানো হয়
না।