থ্রি বি.এইচ.কে এর
গেস্টরুম থেকে কায়দা
করে এক চামচে জায়গার
একটা ঘর বার করা গেছে।
এদিকের ব্যালকনিটা
সেজন্যে, আহা, একটু ছোট
হয়ে গেল। দামী বিদেশী
নাজুক ফুল গাছেদের জন্য
ভালোমতো স্পেস, আলো-
রোদ্দুর থাকা দরকার।
নাহলে ওরা কি বাঁচে!
স্পেশাল ট্রিটমেন্ট
চাই ওদের। এটুকুও
বোঝেনা উজবুকেরা!
সিদ্ধার্থ মাঝে মাঝে
বিরক্ত লিওনা কে বোঝায়।
মাঝে মাঝে নিজেও রেগে
যায়।
প্রায়ই ঘর নামের
সেই হাস্যকরটি বাইরে
থেকে বন্ধ থাকে। রাখতেই
হয়। বিশাল হল টা জুড়ে
চলে হৈ চৈ এর
আনন্দসুধা। উদ্ধত
পোষাকের যুগল-নৃত্য।
বিদেশি কাঁচ ঠুং-ঠাং এর
থৈ থৈ বন্যা। কাঁটা
চামচের ঝিন্চ্যাক।
রহস্যময় আকাশি আলোর
স্বপ্নমেদুর। প্রথম
প্রহরের রাতে শুরু
হওয়া, শেষের দাড়ি টানতে
টানতে মধ্যযামের ঘন্টা
বাজিয়ে দেয়। পড়ে থাকে
হল ভরা নিঝুম। তখন মনে
থাকলে সেই একজানালার
‘ঘর’ নামক মস্করাটির
বাইরের চাবিটি খুলে
দেওয়া হয়। না মনে থাকলে
আর কি...
লিওনার ব্যাঙ্গ
হাসি বলে, কি মধ্যবিত্ত
মেন্টালিটি তোমার
মা-বাপের। এত সুন্দর
সুন্দর নাম থাকতে কেউ
ছেলের এরকম বস্তাপচা
নাম রাখে! সিদ্ধার্থ
তাই সিড হয়ে যায় লিওনার
ডাকে। এইসব কথা মাঝে
মাঝে বুকে চাবুক চালায়
সিদ্ধার্থর। যখন নেশায়
থাকে তখন রাইটার্সের
প্রাক্তণ করণিক বাবার
ওপর সেও মনে মনে চাবুক
চালায়। তাঁর অ-চাতুর,
ঘুষ না খাওয়া আদর্শ
বাবাটির অপদার্থতায়
রাগ ঘৃণা লজ্জায় ঝকঝকে
লিওনার কাছে তার ভার
মাথাটি ঝুঁকে হেঁট হয়।
আবার রিল্যাক্সড মুডে
সেই চাবুক লিওনা কে
ফেরত দেয়। তবে, মুখেও নয়
হাতেও নয়। মনে মনে। তার
বেশি এগোতে পারেনা। কেন
যে মেরুদন্ডটি এরকম
ভাঙা আর ব্যাঁকা থাকে
কিছু ছেলের! কেন যে ভুলে
যায় সচ্চরিত্র বাবাটির
জন্য ওদের মফস্বল
শহরটিতে সিদ্ধার্থও কত
ভালোবাসা আর সম্মান
পেয়েছে। তো সেদিন লিওনা
দের ফ্ল্যাটের রাতের
পার্টিটা রাতের
অর্ধেকটাই নিয়ে
নিয়েছে। সেই কায়দা করে
বের করা ঘরটিতে
সিদ্ধার্থর বাবা-মা যে
অনেক্ষণ... সেকথা কি অত
রাতের ক্লান্ত শরীর
যুগলের মনে থাকে! রাতে
দরজায় প্রানপণে কিল
মেরে ডাকতে চেয়েছিলো
সৌগতবাবুর স্ত্রী
সিদ্ধার্থের মা। হলের
হল্লা হৈ চৈ
সাম্রাজ্যে তা
পৌঁছোয়নি। হঠাৎ অসুস্থ
হয়ে পড়া স্বামীকে নিজের
মত করে সামাল দিয়ে
সকালের অপেক্ষায়
কান্না-প্রহর করাতের মত
রক্তযন্ত্রণাময় হয়ে
কাটছিলো তাঁর।
বিভীষিকার প্রহর বড়
লম্বা হয় যে! লিওনা তখনো
বিছনায় হ্যাং ওভারে।
সিদ্ধার্থর মাথাটা
হঠাৎ বাবা-মায়ের ঘরের
দরজার লক খোলা হয়েছে কি
হয়নির সন্দেহে। সেই
নিঝুম দরজায় কান পেতে
মায়ের কান্না শুনতে
পেয়েছিলো সে। বন্ধ
খাঁচার দরজার খোলা হতেই
ভেতর থেকে গরম বাতাসের
ঝলক। এই ঘরে এ.সি. নেইতো!
ওদের ঘরে আবার এ.সি. কি!
ব্যবহার করেছে কোনোদিন?
তারপর ঠান্ডা লেগে গেলে
এই লিওনা দোষের ভাগী
হোক আরকি? বড়ই
যুক্তিপূর্ণ কথা
লিওনার। কাজেই... হয়নি। ঐ
না-ঘর খানায় একটা অতিব
মাইক্রোস্কোপিক টয়লেট
রয়েছে। পার্টির সময় যদি
টয়লেট পারপাসে ওনারা
বাইরে বেরোন, তাহলে
লিওনার প্রেস্টিজ
ধুলোয় মাখামাখি হবেনা!
তাই টয়লেট রাখার
মানবিকতা।
দুটি প্রজন্মের
মধ্যবর্তী ভূমিতে বসে
থাকে এই এক বিরাট
নোম্যানস ল্যান্ড।
বাবা-মা যারা যত্নে
স্নেহে ভালোবাসায় দুই
দুই চার হাত দিয়ে,
হৃদয়ের সমস্তটা দিয়ে
তৈরি করেছিলেন যে
সন্তানটিকে, সমস্ত
উজ্জ্বল আশার পালক
গুলিকে পুড়তে দেখে,
আন্তরিকতা কে ভষ্ম হতে
দেখে, আইডেনটিটি সংকটের
মস্ত হাঁ-মুখে তলিয়ে
যান। নিজেকে প্রশ্ন
করেন—আমি তবে কে! কি
আমার পরিচয়!
বুকের গহিনতমতায়
যন্ত্রণার তীব্র ঝালার
ঝনাৎকারে তিনি ভাবতে
থাকেন, জীবনের রাস্তায়
আমি তো আমার বাবাকেই
আদর্শ করে পারাপার
করেছি। তিনি, আমার বাবা
কত সুখী কত খুশি ছিলেন
আজীবন। সেই ছেলে-নির্ভর
সুখী দাদুকে তো আমার এই
ছেলেও দেখেছে। কত
শিখেছে তার কাছে। তবে!
কি করে এরা পরবাসী হয়ে
যায়! অথবা আত্মজনকে
পরবাসী করে দেয়! কি করে
আমরা ওদের কাছে শুধুই
প্যারাসাইট! এত
বিস্ময়চিহ্নের উত্তর
কে দেবে? দেবে যে সে
শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
জানোনা মুর্খ, এসময়ের
বাতাস বহন করে
আত্মকেন্দ্রিক
আমি-সর্বস্বতার
ভাইরাস। আক্রান্ত হয়
প্রজন্ম। ইট’স আ টাইপ
অফ সিভিআর ভাইরাল
এ্যাটাক, যাকে ধরে তাকে
আজীবন ছাড়েনা। শ্রদ্ধা
কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা এসব
বোধের অঙ্গ হানী করে
তার নিস্ক্রমণ। ‘সময়’
আর ‘বাতাস’- দি’জ টু আর
দ্য কালপ্রীট্স।
আমি দেখেছি এক দম্পতিকে
(কেন যে দেখি!), তাঁরা
তেমন কিছু লোলচর্ম
বৃদ্ধ নন।
আঁত্মসম্মানের পোকাটি
যাঁদের দুজনের মধ্যে
সক্রিয় আছে। যা নেই তা
হ’ল রেস্তর প্রাচুর্য।
‘টাকা নাম হি কেবলম’ এর
যুগে এঁরা মানুষ হিসেবে
স্বভাবতই ব্রাত্য।
মানুষই যদি না হন, তবে আর
পাঁচটা মর্চেধরা কৌটো
বাটা আসবাবের মত এঁরা
অযত্নে অসম্মানে,
অবহেলায় ডাস্টবিনে
নিক্ষিপ্ত হবেন না কেন!
ইঞ্জিনীয়ারিং এর ছাত্র
তাঁর ছেলেটি হোস্টেলের
বন্ধু বান্ধবীদের কাছে
বাবা বা দাদুকে মুখের
সামনেই বাড়ির পুরোনো
চাকর বলে পরিচয় দেবেনা
কেন! তাঁদের কেন এটুকু
বোধ নেই যে চোস্ত ছেলের
চোস্ত বন্ধুদের কাছে
এরকম সাধারন পোষাকে
দেখা করতে যেতে নেই!
চাকর বা কাজের কাকা
সম্বোধিত বাবাটি কি সেই
সময় আঁত্মহত্যার কথা
ভাবেন! ভাবেন। কিন্তু
পারেন না। কেন? কেননা
তিনি মরে গেলে ছেলের
পড়া যে বন্ধ হয়ে যাবে।
নিজের ছেলের এতবড়
সর্বনাশ কি তিনি করতে
পারেন! অপমানে পুড়তে
পুড়তে তাঁর
পুত্রগর্বোজ্জ্বল
মুখখানি কালো হয়ে ওঠে।
তবুও তাঁর বাৎসল্য
বিশ্বাস করতে পারেনা
যে, যে ছেলে সম্পূর্ণ
বাবা-মুখাপেক্ষী থেকেই
যে ছেলে বাবাকে এমন
অপমান করতে পারে, পাশ
করে চাকরি পাবার পরে
সেই ছেলেটি বা মেয়েটি
ভবিষ্যতে তাঁকে ঝাঁটা
না জুতো, কি দেবে! পারেন
না।
এইখানে প্রজন্মের
কাঁটাতারের তীক্ষ্ণ
বেড়ার ব্যাবধান-জমির
হা-হুতাশ গুলি পড়ে থাকে,
কষ্টকান্না অপমান গুলি
পড়ে থাকে বাক্যহীণ
শ্মশানের
নিস্তব্ধতায়। এই এক
বিরাট হতভাগ্য মনজমি –
নোম্যানস ল্যান্ড।
এখান একপারের অন্তরের
ত্যক্ত তীক্ত জমিতে দোল
খায় অশ্রদ্ধার ঔদ্ধত্য,
কৃতঘ্নতার ছুরি,
অকর্তব্যের অবহেলা,
দ্বায়িত্বহীনতার
সর্বনাশা হা হা হাসি।
অন্যপারের অন্তর্জমি
শুধু বাৎসল্যের অপার
নিয়ে স্তব্ধ মৌনতায়
ক্রমশ ডিপ্রেসনের
থাবার পাঁজরভাঙা শিকার
হয়ে নিঃস্বতার রক্ত
ঝরায়। আত্মপরিচয় বলে
তাদের কিছু থাকেনা।
তাঁরা নিজের কাছে একজন
আন-আইডেন্টিফায়েড
অবজেক্ট। এক সময়ে যাঁরা
এক একজন প্রমত্ত
‘সাবজেক্ট ছিলেন,
আমাদের শিশুবেলার
হিসুবেলার অবোধ বেলার
রাস্তা পার হওয়ার
কান্ডারী।
অসম্মানের কাঁথা ছুঁড়ে
ফেলে বন্ধ ঘরের
নিঃস্বতা ছেড়ে ফুটপাথে
এসে দাঁড়ানো মা-বাবার
সাথে আমার রিপোর্টার
জীবন কথা বলেছিল একদিন।
গিজ্ঞাসা করেছিলাম,
এভাবে রাস্তায় নেমে...!!!
নম্র বৃদ্ধাটি
বলেছিলেন, আমাদের তো
আরকিছু হারাবার ভয় নেই
বাবা। আত্মসম্মানের
থেকে আর বেশি বড় আর কি
আছে, বলো! সেই আত্মঘাতি
জিজ্ঞাসার জবাব দিতে
পারিনি। তো তো করে
বলেছিলাম, আপনাদের দেশ
গাঁয়ে পৈত্রিক বাড়ি বা
জমি টমি...। বৃদ্ধ হেসে
বলেছেন, সেটাও তো ছেলের
উচ্চ-শিক্ষার খাতিরে
বেচে দিয়েছি। তখন তেমন
করে জানতাম না শিক্ষার
আসল সংজ্ঞা। পৃথিবী টা
কেবলই ভুলে ভরা। ছেলে
এখানের কোন আবাসনে
ফ্ল্যাটে থাকে? এখানে
তো থাকেনা ওরা। এটা তো
দক্ষিণ কোলকাতা! ওরা তো
থাকে উত্তরে। তো
এতদূর...! বাঃ সেখানকার
ফুটপাথে বসে থাকলে
ছেলে-বৌ এর অপমান হবেনা!
এখানে বেশ কেউ চিনতে
টিনতে পারবে না।
উত্তর আর দক্ষিণের
মধ্যেকার এই নোম্যানস
ল্যান্ডের
চেহারা-চরিত্র থির থির
বুকের কাঁপনে ভীতির
নাগরদোলায় শ্বাসবন্ধ
করা দোলায় দুলিয়ে দেয়।
আপনি দোলেন। আমি দুলি।
ওপারে ফেলে আসা আমার
ঠিকানায় কোন পিওন আর
আমার প্রেমিকের চিঠি
নিয়ে যায় কিনা আমি
জানিনা। সে দেশের
কাঁটাতার বলে আমি নাকি
বিদেশী। আমি জানিনা,
বুঝতে পারিনা আমি আদৌ
কোনো দেশের নাগরিক
কিনা। যে দেশে
বায়োলজিক্যালি
জন্মেছি, না যে দেশ দুই
পারের রক্ষীদের কাছে
ধর্ষিত আমাকে রাস্তা
থেকে কুড়িয়ে এনে বুকে
তুলে নিয়েছে।
বেড়ারওপার বলে আমি বি
দেশী। আর এ দেশের
কাঁটাতার বলে শালি
রিফিউজি, আমাদের অন্ন
ধ্বংস করতে পিল পিল করে
এখানে এসে জুটছে। কেউ
সেই শালিদের চাকরি
দেওয়ারটোপ ফেলে
ব্যাবসা করছে।পাচারের
ব্যাবসা। রেডলাইটের
ব্যাবসা। এই শালিরা
শিকড় বিহীন নন এনটিটি।
অস্তিত্বহীন অমানুষ।
পরিচয়বিহীনতার
ট্র্যাজেডি বয়ে
বেড়ানোর অন্তহীন
শূন্যতা। খেপে গিয়ে
কোনো দেশ বলে অমুক
সালের পর যারা ওপার
থেকে বেড়া টপকে এ দেশে
ঢুকেছে তাদের এখানে
স্থান নেই। তারা
ট্রেসপাসার্স।
অ্যান্ড ট্রেসপাসার্স
মাস্ট বি প্রসিকিউটেড।
অতএব চোখ বন্ধ রেখে যখন
তখন মার খাও, যখন তখন
ধর্ষিত হও। এটা আমার
কোন পাপের শাস্তি আমি
জানিনা। যে কোনো দেশেরই
পুরুষ পুংগব দের ঐ একটি
বৃহৎ ও মহৎ মোক্ষম
অস্ত্র সব সময় তাদের
সঙ্গেই থাকে কিনা! তো
তার সদ্ব্যাবহার করা তো
ধর্মশাস্ত্রেরই
বিধান। এই শিবলিঙ্গটি
একদিকে পুজ্য হয়,
একদিকে তার জন্মদাত্রী
মা কে রক্তাক্ত করে।
এই দুই পৃথক লিংগের
অসমঝোতার মধ্যে বসে
থাকে এক বিরাট নোম্যানস
ল্যান্ড।
পরিবারের পুরুষটি অনেক
সময়েই ভেবে বসেন যে,
মেয়েটাকে বিয়ে করে তিনি
তাকে এবং তার বাপ-মা কে
উদ্ধার করেছেন। দয়া করে
তাঁর বিছানায় শুতে
দিয়েছেন। তাই তিনি
বিছানায় যেমন খুশি তাকে
ব্যবহার করবার অধিকার
রাখেন। তিনি যখন
চাইবেন, যেমন চাইবেন,
তখনই তেমনভাবেই তাঁর
যৌন তেষ্টা মেটাতে
মেয়েটা বাধ্য। সে
মেয়েটা হবে না-কথাবলা
পুতুল। আমি যা খুশি বীজ
দিতে পারি, তোমাকে
কিন্তু ছেলেসন্তান’ই
দিতে হবে। একাধারে তুমি
আমার ছেলেদের গভর্নেস,
রান্নার মেয়ে আর
সংসারের চাকায়
সাড়ে-বাহান্ন
হুজ্জুতির তেল মাখানোর
কেনা বাঁদী ( অ্যান্ড
ভাইসি ভার্সা)। আমি যখন
চাইবো সাথে শুতে হবে।
যখন চাইবো লাথি খেতে
হবে। লাথিটা হয়তো সবসময়
সত্যি পায়ের আয়েষ বা
ব্যায়াম নয়, বাক্যের
লাথি বলেও তো উহ্য
(নিপাতনে সিদ্ধ) একটা
কথা আছে!
তাই বিছানা একই থাকে,
মাঝখানে জন্ম নেয় ও
বেড়ে উঠতে থাকে একটি
ডিভাইডারের
দেওয়াল।মনের অন্দরে
যার কন্দমূল বিস্তৃত
হতে হতে জেগে ওঠে
দুপারে দুটি নোম্যানস
ল্যান্ড। ফাটলের
অবশ্যম্ভাবী নিয়ে
।
তো, দিন যায়, ইতিহাস
ফিরে এসে দরোজার কড়া
নাড়ে। দিন গুলোর এই
একটা মস্ত দোষ।
হুড়মুড়িয়ে ছোটে। দিন আর
শিশু। এই টলে টলে
হাঁটছে, মূহুর্তে দেখো,
টলা পায়ে দৌড় এসে
দুদ্দাড়। কিডzee, কে.জি.।
কদিন! দেখ দেখ করতেই সে
দিব্যি মস্ত বস্তা
পিঠে, ঝুঁকে পুলকার এ
স্কুলের রাস্তায় শন শন।
তোর ছেলের কোন ক্লাস
হলো রে? এ বছর সিবিএসসি।
ক্রুশীয়াল সময়।
সিদ্ধার্ত্থর সেই
পুচকে ছেলেটা, মাকে
লুকিয়ে যে দাদু-ঠাম্মির
কাছে রূপকথা শুনে
শিহরিত হতো, সে এবার
জয়েন্ট-এনট্রান্সে
চান্স পেয়ে গেলো। সময়ের
দৌড় দেখো! এবার তো চার
বছরের হোস্টেল-বন্দি
জীবন। বন্দি না ছাই।
মায়ের অকারণ
শাসন-হুজ্জুতি থেকে চার
বছরের মুক্ত জীবন। চার
বছর শেষ হবার আগেই পাকা
চাকরির হাত বাড়ানো।
ছেলের জন্য দুর্দান্ত
সাজানো একটা হাত-পা
ছড়ানো ঘর। নির্জন পড়ে
থাকে।শূন্য। নাতির
পাশের আনন্দে পুলকিত
দাদু ঠাম্মির বাতাসহীন
৯ বাই ৯ এর সংসারে
আনন্দাশ্রু।
বছর না ঘুরতেই
ছেলের কাছে বিদেশ
যাত্রার চিঠি ধরিয়ে দেয়
কোম্পানি। সেকি? এই এত
খরচ করে পড়ালুম ছেলেকে,
লন্ডনে গেলে কি আমাদের
আর মনে রাখবে! এত
ইনভেস্টমেন্ট সব জলে।
-আরে ওসব দেশে অনেক
পয়সা। ছেড়ে দিয়ে কি
এখানে বসে থাকবে! দেখো
তখন, হাই ফিগারের চেক
প্রত্যেক মাসে তোমার
নামে। স্বস্তির শ্বাস
ফেলে টিটোর মাম্মা।
বাব্বাঃ, চার বছর ধরে যে
পরিমান টাকার শ্রাদ্ধ
হলো ছেলের জন্য! তারপর
ফালতু ফালতু টিটোর ঘর
সাজানো জন্য তো!
সিদ্ধার্থ একবার কি
ভাবে তার বাবার কথা! কত
কষ্টে বাবা তাকে। ধুর
এসব বাজে সেন্টিমেন্ট!
বাবা হয়েছো কর্তব্য
করবেনা? মুখ খুললেই
লিওনার তর্জনী ও তর্জন
বেজে উঠবে, চুপ। একদম
চুপ। এর থেকে আর কি বেশি
আশা করে তোমার গেঁয়ো
বাপ-মা। ফ্ল্যাটে
রেখেছি, এই অনেক ভাগ্য
ওদের।
কাজে-ব্যাস্ত
ছেলের ফোন আসে সপ্তায়
একবার। মাসে একবার। ছ
মাসে একবার। পাউন্ড
সিলিং রা কোনোদিনই
আসেনা। কেন! না, ওখানের
স্ট্যান্ডার্ড অফ
লিভিং কত হাই জানো? এক
একটা পার্টিতেই কত
খরচ!
এদেশে প্রতিদিন সকালে
চোখ খুলেই লিওনা’রা
দেখতে পায় আদরের ছেলে
আর তাদের মনের ভেতরকার
এক নির্জনতার ভূখন্ড।
বিশাল থেকে বিশালতর।
যেখানে স্নেহ মমতা
কৃতজ্ঞতারা কোনদিন বাস
করেনা। সেই তীব্র
ধারালো এক নোম্যানস
ল্যান্ড। বাড়ছে,
ক্রমশঃ। এক বুকচেরা
কান্নার লবনহৃদ যুক্ত
হচ্ছে তাদের অহঙ্কারী
সংসারের মানচিত্রে...