না দেশি, না প্রবাসী

শাহেদ কায়েস


আমি না দেশি, না প্রবাসী, কেবলই সূতা কাঁটা ঘুড়ি, উড়ি, শুধুই উড়ি, মনে মনে আনন্দ— আমি ইচ্ছেঘুরি... কিন্তু সত্যিই কি তাই!? জন্মের শেকড় পেছনে ফেলে পৃথিবীর পথে পথে পা... কেন এই অনিশ্চিৎ পথচলা?

ধেই ধেই ডালপালা মেলছে, ঝাঁকে ঝাঁকে নতুন পাতাদের সবুজ সিম্ফনি... ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, জানাশুনা, নতুন নতুন মানুষ à¦†à¦¬à¦¿à¦·à§à¦•à¦¾à¦°à§‡à ° নেশা, শৈশবের ভূগোলে পড়া স্থান, মানুষের সংস্পর্শে আসা, বেশ তো…

স্বপ্নে আছি, না জেগে! কোথায় আছি আমি! সর্বত্রই আমার উপস্থিতি, ফের কোথাও আমি নেই... এক জীবনে অনেক জীবন, কিংবা জীবন থেকে জীবনে চলাফেরা... এই যে চলাচল, নিভৃত একাকী, এই যে একটি সীমানা রেখায় ভাগ হয়ে যাচ্ছে আমার জীবন, যেমন এক দেশ থেকে আরেক দেশ, যেমন ইন্দ্রাণী থেকে আমি, মাঝে পারাপার, দুর্ভেদ্য অদৃশ্য কাঁটাতার…

এলিয়েনেট বৃষ্টি ঝরে… একই রক্তে বাঁধা ঘরগুলো আলাদা আলাদা দেশ, পাশাপাশি ফ্ল্যাটগুঠো যেন পৃথক মহাদেশ, বিচ্ছিন্নঠার একটা অক্টোপাস আমাকে ঝাপটে ধরে, আমার ঘুম আসে না… ডাকে ইছামতী, ডাকে আমার গাঙ, কুয়াশা ঘেরা রহস্যে দোল খায় মেঘনার মায়াদ্বীপ... শিশুরা হাতছানি দেয়, ডাকে— এসো, এসো, ফিরে এসো… আমি যাই, কিংবা যাই না, মন পড়ে থাকে সোনারগাঁয়, দেহটা ঘুরে বেড়ায় ভারত, হংকং, আয়ারল্যানৠড, নেপাল, কোরিয়া…

প্রতি মুহূর্তে আমি সীমানা ভাঙি, গড়ে তুলি আপন ভূবন, জোয়ারে ভাসি, হাসি, গাই, তারপর একদিন ভাটার টান, পায়ের তলা থেকে সরে যায় মাটি... মাঝ সাগরে তখন জলের উচ্ছ্বাস, গাঙচিলের গতির পিছন পিছন উদ্দেশ্যহৠ€à¦¨ ছুটে চলা, ছুটে চলার নেশায় নিঃসঙ্গ যাপন…

আচ্ছা, এও তো ঠিক, জন্মদেশে কতোটাই বা ছিলাম আমি দেশি! অনেকটাই নিজ দেশে পরবাসী নই কি! আমাকে কি সইতে হয়নি ঘাতকের আঘাত? আমার রাষ্ট্র কি আমার কণ্ঠ রোধ করে রাখে নি? স্বদেশে কতোটাই বা ছিল আমার স্বাধীনতা? আমার যে কোন ভিন্ন চিন্তায় প্রতিবন্ধঠতা সৃষ্টি করেনি রাষ্ট্র? প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্ন করলে চিন্তার পুলিশ কি আমার বিরুদ্ধে তেড়ে আসেনি? তাহলে?







ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে আমার পরিচিত মানচিত্র... আহা! আমার জন্মদাগ! ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নিশানা, কেবলই পথের অবৈধ ইশারা... চল মুছাফির, চল মুছাফির... চিহ্ন রেখে যাওয়া বলে কিছু নেই, অন্যদিকে বহুজাতিক-বঠ¾à¦œà¦¾à¦° নিয়ন্ত্রণ করছে আমার প্রতি মুহূর্তের বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস... আমার হ্যাঁ বলার অধিকারও আমার না, আমার না বলার অধিকারও নিয়ন্ত্রিত অন্য কোথাও… আমার ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে†™, শহর-বন্দর, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে বাজার-অর্থঠ¨à§€à¦¤à¦¿à¦° ত্রাস…

আর ওই যে আমার শৈশবের নিম গাছটা! বাবা বলতেন— ‘সকাল বেলার নিমের হাওয়া সাত রোগের দাওয়া…’ জান, সেটাও এখন আর আমার নেই, পেটেন্ট হয়ে চলে গেছে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে, দূরের কোন দেশে…

ওরা বলে বিকল্প নেই... অথচ বিকল্প যে থাকতেই হয়, বিকল্প না থাকলে আমার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই, মস্তিষ্কজঠত নো ম্যানস ল্যান্ডেই প্রায়-বিধ্ঠস্ত আমার বাস... অস্তিত্বহৠন এক সময়ে, পরিচয়হীন দুই সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আমার বেঁচে থাকা... ঘুরে ফিরে সীমান্ত রেখায় তুমি, আমি, আমরা সকলে, দেশে কিংবা বিদেশে…