মধ্যবিন্দুর এই
জ্যামিতিক প্রেক্ষাপট
বিহ্বল হরিণের মতো
দাঁড়িয়ে থেকে পৃথিবীর
কাছে তোলে ধ’রে তার
অসহায়ত্ব। এক
পরিত্যক্ত প্রত্ন-বাড়ি
তারও থাকে ক্ষয়ে যাওয়া
অর্ধমৃত ইট, শুধু
এই পরিদৃশ্যমান ভূ-ভাগ,
যে মূলত: বহন করে চলেছে,
নিজেরই অদৃশ্য পিঠে এক
ভয়ানক
নিরবতা।
দিকে দিকে পুঁজ আর
পুঁজির পাহাড়। দিকে
দিকে ক্ষমতার রেসের
ঘোড়া টেনে দিচ্ছে দাগ।
বিখন্ডিত হচ্ছে
মানুষের চেতনা। আমাদের
মাথার উপর উড়ছে বল্লমের
শুকুন চোখ। হয়তো
খাবলে খাবে জীবন্ত
মানুষের মগজ। কিন্তু
মগজবিহীন মানুষই তো
দেখি শত শত। সবই দেখছে
সবাই, অথচ পাশ কেটে
যাচ্ছে। যেন কিছুই ঘটে
নি। যেন এ আমি নই।
করুণার
দূরবীনে চেয়ে দেখি
আমারই পাশে,
র্দুগন্ধযুক্ত
জলপ্রনালীতে ডুবে
যাচ্ছে অমিত সম্ভবনা।
অন্ধচোখে দেখি, পৃথিবী
রক্তাক্ত হচ্ছে
বিভক্তির কাঁটাতারকে
ঘিরে।
অদ্ভূত এই কাঁটাতার,
অদ্ভূত এই অভেদ্য
সীমানাপ্রাচীর।
হ্যাঙ্গারে ঝুলানো
পোষাকের মতো
এখানে ঝুলে থাকে
বুলেটবিদ্ধ মানবশিশু।
নোম্যান্সল্যান্ড বলে
এখন আর কিছু অবশিষ্ট
নেই। আসলে এটা
চাঁদমারি। এখানে গুলি
করে হাত পাকায় রাষ্টের
পালিত প্রহরী।
বসতিহীন, অচাষযোগ্য অথচ
উর্বর এই মাটিতে নাক
ঘষে বন্দুকের নল থেকে
ছিটকে আসা সীসা। এটাকে
খাদ্য ভেবে সীমানা
খুঁটির উপর বসে থাকা
পাখিটি মুখে তুলে নেয়।
ধুলোর স্বজনেরা
বাতাসের কাঁধে চড়ে ঘুরে
যায় একপলক।
বৃষ্টি-পাতার জলেরা অলস
ভঙ্গিতে গড়িয়ে যায় এপার
থেকে ওপার।
আমাদের ধর্ম এখন ডিভাইড
এন রুলস। ফলে, আব্রাহার
হস্তী বাহিনীর মতো
নিজেদের ধ্বংশ নিজেই
ডেকে আনছি। আবাবিল
পাখির পাথর নিক্ষেপে
আমাদের অবস্থা চর্বিত
তৃণের মতো। তবুও মরা
হাতি নিয়ে আমাদের
গর্বের শেষ নেই। টাকা
দিয়ে এর মূল্য নির্ধারণ
করছি। হায়! মরা হাতির
দাম লাখ টাকা।
মনে পড়ে সাইঁজির কালাম
‘গুরুশিষ্য পরম্পরা
বিশ্বগ্রাম পথচলা’।
ভাবছি আর অবাক হচ্ছি!
পুঁজি, রাষ্ট্র অথবা
রাষ্ট্রসংঘ নামক যে
আজদাহা প্রতিষ্ঠান
এসবের বিপক্ষে কী
তীক্ষ্ণ উপাহাস! আমাদের
মূলমন্ত্র তো
বিশ্বগ্রাম। আমাদের
স্বপ্নের পৃথিবী ছোট
ছোট গ্রাম। অথচ আমরা
আরো বড় হতে চাই। ডেকে
আনি যুদ্ধ ও মৃত্যু।
আমাদের চারপাশে
সশস্ত্র ক্ষমতা, তারা
আঙুলে ট্রিগার রেখে
রেঞ্জের আওতায় খুঁজে
শক্রুর ছায়া।
সার্চলাইটের আলোতে
দেখে মাটিবিদ্ধ দুই পা
নিয়ে এক মানুষ-ভার্স্কয
দাঁড়িয়ে আছে।