তীব্র গতিতে বল নিয়ে
ছুটে আসছে মেসি ।
সন্দীপকে কাটালো , দেবা
ডান পাটা এগিয়ে দিয়ে
কাটাতে পারবে না বুঝে
থাইটাকে একটু মুড়ে কোমড়
পেছনে নিয়ে
অ্যাঙ্গেলটা বাড়িয়ে
দিয়ে চেষ্টা করল আটকাতে
। পারবে না , আমি জানি
মেসির ওই তীব্র গতি আর
প্রায় নব্বই ডিগ্রী
অ্যাঙ্গেলে কাটিয়ে
নেবার ক্ষমতা এভাবে
আটকাতে পারবে না দেবা ।
ও নিজেও জানে , তবু
আপ্রাণ চেষ্টা করবে ।
গোড়ালি ঘষে ডান পা আরও
কিছুটা বাড়িয়ে দিল । এই
চেষ্টার জন্যই অভিজিৎ
স্যার ওকে টিমে জায়গা
দিয়েছে । নাহলে যার
বাঁপা প্রায় চলেই না
,গতি কম , এমন কাউকে
তিনকাঠি রক্ষায় রাখে
কেউ ! ঘামে ভেজা হলুদ
জার্সির শুন্যটা সেঁটে
বসে রয়েছে পিঠে । মেসি
দেবাকে ছাড়িয়ে আমার
দিকে ।
সন্দীপ ক্যালাটা কেটে
গিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে
দেখছে । কোমড়ে দুটো হাত
দিয়ে সিনেমা দেখতে
এসেছে যেন ! জার্সির
নম্বর মিলিয়ে পনেরোটা
লাথি কষাতে ইচ্ছে করছে
। গোলে ইন্দ্র একা । আজ
সকাল থেকে অলরেডি
পাঁচবার যাওয়া হয়ে গেছে
। দুটো মেট্রোজিল
পেঁদিয়ে নেমেছে
কোনোরকমে । মালটার এত
নোলা , পইপই করে বললাম
অতগুলো আইসক্রিম খাস না
, একে দশপিস মাংস
ঝেরেছিস , কে শোনে কার
কথা ! ওর দাদু নাকি
পূর্ববঙ্গে আইসক্রিম
বিক্রি করত , ফলত দুধ জল
আর চিনি ওর কোনো ক্ষতি
করবে না । একই পাড়ার লোক
কিনা ! জীবনে এত সবুজ
ঘাসে কখনও খেলি নি । চোখ
ধাঁধিয়ে যাচ্ছে ।
দুমুঠো উপড়িয়ে রসুনছকে
গরম ভাতের সাথে খেয়ে
দেখলে হয় ! নতুন পেঁয়াজ
পাওয়া যাচ্ছে বাজারে ।
আর পেঁয়াজের মত পরতে
পরতে ঝাঁঝালো মেসি আমার
দিকে অগ্রসর । ফাইনাল
চার্জে যাব । বডি
ওয়েটটা বাঁদিকে করে বাঁ
হাত দিয়ে ইন্দ্রকে
সংকেত দিলাম ওই পোস্টটা
দেখার জন্য । আমি ওকে
ডানদিকে আসতে বাধ্য করব
– পাল দেবার কোনো লোক
নেই এই যা সহায় । আর ঠিক
দুপা পিছনে বড় বক্স ।
আমার হাতগুলো একটু বেশি
লম্বা বলে শিখা বরাবরই
একটু দূর দিয়ে হাঁটতো ।
ওর কাঁধে হাত রাখলে
হাতটা কাঁধেই থাকতো ।
শিখার এই অংক অসাধারণ ।
শিখা কি টিভির সামনে
এখন !
হেলিকপ্টারের মত
হাতগুলো তুলে নিলাম ।
নাহলে ব্যাটা বলটা হাতে
মেরে পেনাল্টি চাইবে ।
হাত নাড়িয়ে ওকে
ডিসট্রাক্ট করব । শালা
ছাড়বো নাকি তোমায় পাঁচ
ফুট দু ইঞ্চি ! আসুক ,
আসুক , আরও ভেতরে আসুক ।
গোষ্ঠ পালের হাফ
প্যান্ট বাড়িতে রাখা
আছে । কাদার ছিটেগুলো
এখনও দগদগে । দুলাখ
টাকা অফার করেছিল
দালালটা , বাবা দেয় নি ।
এত সহজে তোমার কাছে
হেরে যাব স্পেন কলোনি !
হালকা একটা ভাঁজ দিল ,
গতি বাড়িয়ে ঢুকছে বক্সে
। আমার লম্বা ডান হাত
তুলে ওর দৃষ্টি আলগা
করতে চেষ্টা করছি ।
শালা নাচাচ্ছে আমায় ! ওর
সাপোর্টে মারাদোনার
জামাই বক্সে ঢুকে আসবে
যখন তখন । তার আগে
কর্নারের দিকে যতটা
সম্ভব সরিয়ে নিয়ে যেতে
হবে । দেবা সামলে উঠে
ঠিক সেন্টার পোজিশনটা
দেখে নেবে । আপাতত ওকে
ছৌ নাচ দেখিয়ে কর্নারের
দিকে নিয়ে যাওয়া আশু
লক্ষ্য ।
স্যারের কটকটে সবুজ
ট্র্যাকসুট দেখতে
পাচ্ছি । উত্তেজনায়
সাইড লাইনে চলে এসেছেন
। শিখা বলে
পশ্চিমবঙ্গের সব গাছের
পাতা থেঁতো করলেও ও রং
পাবে না । স্যারের
বাগানে নাকি ঈর্ষায়
কোনো গাছ হয়ে না । উনি
তারে ট্র্যাকসুট মেলে
দেন আর টাটকা অক্সিজেন
আসে ঘরে । স্যার কি
বলছেন দেখার সময় নেই ,
আমি শুধু ছৌ নাচ দেখিয়ে
মেসিকে নিয়ে যাচ্ছি
কর্নারের দিকে । আবার
একটা ভাঁজ দিল । তারিফ
করতে ইচ্ছে হলেও নিজে
ফেটে যাওয়ার লজ্জা আরও
বেশি প্রবল । সামলে
নিয়ে আবার চিটে গেছি ।
নিজের ঘাম থেকে আঁখের
গুড়ের গন্ধ পাচ্ছি ।
জিভ নোনতা , ছাড়বো না
কিছুতেই । এই মুভটা
আটকে দিলেই হাফ টাইম ।
সারা পৃথিবী জেনে যাবে
এই পঁয়তাল্লিশ মিনিটের
গল্প । আমাদের অচেনা
শহর রাতারাতি ইন্দ্রর
দাদুর আইসক্রিম গাড়ির
মত লোভনীয় হয়ে উঠবে । গত
পনেরো বছর রগড়ে রগড়ে আজ
এই দিন ।
বলটা পায়ের চেটোতে
নিয়েছে , ঠোকরাচ্ছে
আস্তে আস্তে । বাছা , আমি
অনেক কাঠঠোকরা দেখেছি ,
তোমার হলুদ ঠোঁটের ধার
শরীরটাকে পিছিয়ে
পিছিয়ে নিয়ে সামলাবো ।
তারপর শরীর একদম সামনে
দিয়ে চীনের দেওয়াল ।
আপাতত আমি আর মেসি ছোট
বক্সের একদম কোণায় ।
ইন্দ্র পিছন থেকে
পরিত্রাহী চিৎকারে অভয়
দিচ্ছে । আউট স্টেপে
মেসি শট নিলে ও আটকে
দেবে । কিন্তু আমি জানি
মেসি শট নিতে পারবে না ।
ওর সাথে চোখাচোখি হয়েছে
দুবার , আমি সম্ভ্রমের
গন্ধ পাচ্ছি ...