একটা কথা বলো...এই যে
অমিত বৃষ্টিসম্ভাবনার
দিকে মেলে দিয়েছ
নিজেকেই বারবার... এই যে
উড়েপুড়ে ছিন্নভিন্ন
হয়ে যেতে পারো জেনেও
অসহ্য স্পর্ধায়
দুহাতের আদর দিয়েছ
শিরায় শিরায়...এমন আড়াল
হয়ে, আশ্রয় হয়ে, এমন নেমে
আসা আঁধারকে গ্রহন করার
মত গভীর হয়ে উঠেছ
কিভাবে বলোতো, ভয় করে না
তোমার? বুক কাঁপে না?
এরকম খাঁ খাঁ নির্লজ্জ
আগুন-ঢেউয়ের দিকে বুড়ো
আঙুল দেখিয়ে এরকম
স্বস্তির স্পর্শ...কোথা
থেকে পাও? কাউকে তাড়া
করোনি, কোন তাড়াও নেই
তোমার। কারো দিকে ধেয়ে
যাওয়া নেই। ছিনিয়ে
নেওয়া নেই। চৌকাঠের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুধু
সমস্ত শরীর দিয়ে লড়াই
করা আছে। অপেক্ষারা
আছে। যেমন, তুমি আছো...এই
বোধটুকু বারবার জানান
দিয়ে উড়িয়ে যাও হাওয়ায়
হাওয়ায়, ঘাসে ঘাসে।
কোনও কোনও জানাটুকু খুব
পরম হয়ে থাকে জীবনে। আর
তখন তাকে একটা আদরের
নাম দেওয়া যায় মনে মনে।
ডাকনাম। একদম নিজের
ভেতর ডুবে তাকে উচ্চারণ
করলে...অসময়ের বৃষ্টিতে
ভিজে যায় তপ্ত ধূলো।
অনাদরের আঁচড় পড়া হাতের
পাতা শিউরে ওঠে।
মাটি থেকে
অনেকটা উঁচু দিয়ে
ভাসছিলো ধাতবপাখি।
হাতের মধ্যে হাত, ভিজে
গেছে, চোখের পাতা
ঝাপসা...বাইরের আকাশও।
----আর একটা সুযোগ আমি
পাবোনা? পাবোই...আর
একবার...! পৃথিবীর
অন্যপ্রান্ত থেকে
খুঁজে এনে দেব
বিশল্যকরণী। ভয় পেওনা,
আমি আছি। শুধু
থাকো...তুমি থাকো।
----কিভাবে রে ছেলে?
কিভাবে?
----তুমি দৌড় শুরু
করো...বাকিটা আমার...।
দেখো, ঠিক আটকাবো।
ভালোবাসা মৃতসঞ্জীবনী,
বলো?
ওদের দৌড়
দেখছো। মাঝে মাঝে
আকাশও। যেটা ওদের দেখার
সময় হয়না অনেকদিন। পায়ে
পা লাগিয়ে মাড়িয়ে
ধাক্কা মেরে কেড়ে লাথি
কষিয়ে দৌড়বাজির সরণীর
ওই বাইরে কি যেন গেয়ে
উঠলে না দু কলি...? তুমি
আসলে চৌকাঠে দাঁড়ানো
সেই মেঘ’টা ...যে
সম্ভাবনা আর সাফল্যের
মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে
দুহাত দিয়ে সমস্ত
সন্দেহ ঠেলে ঠেলে ফেলে
দিচ্ছ অবিশ্রান্ত।
একটা খাদের মুখে
দাঁড়ানো গাছের মত ঝুঁকে
পড়েছ সমস্ত শিকড়বাকড়
নিয়ে অন্ধকারের দিকে আর
গান শোনাচ্ছ
ফটোসিন্থেসিসের।
----এভাবে জীবনটা নষ্ট
করলি কেন দিদি?
----নষ্ট কাকে বলে রে ভাই?
----এই যে একজায়গায়
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার
খেলি সারাজীবন...
----মার তো আটকালামও রে
বাবু। সংসারের
আনাচকানাচগুলোয় ঢুকে
আসা লোণাজল সামাল
দিলাম!
----হ্যাঁ, আর নিজে লবণে
লবণ, বালিতে বালিতে
একাকার...
----না রে , অনেকটা মিঠেজলও
তো আছে। তোরা দৌড়ে দৌড়ে
যেরকম মাঠ ছাপিয়ে গেলি,
স্টেডিয়াম ছাপিয়ে
গেলি...আমিও তো এই কাঠের
ফ্রেমের নিচে দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে এর মধ্যে দিয়েই
কখন যেন আকাশ দেখতে
শিখে গেলাম। আর এটা
শিখে গেলে ইচ্ছেমত পাখি
বা
স্পেস্শীপ...যেকোনও’টা
হওয়া যায়।
একটা চলাচল
যখন হঠাৎ এসে পথ হারিয়ে
ফেলছে, একটা দৌড় পায়ে
পায়ে ছুটতে ছুটতে থেমে
যাবার গল্প শোনাচ্ছে...
ঠিক তখনি আবহসঙ্গীতে
সমবেত কনসার্ট বেজে
উঠছে...উল্লাস...হুল্লোড়...
বাহবা। আর আমি দেখছি
সেই পিঠ চাপড়ানির মধ্য
দিয়ে তুমি দুহাত আকাশে
তুলে একলা চোখের জলে
ধুয়ে নিচ্ছ তোমার
রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, গা
ছমছমে লড়াইকথা, প্রাণপণ
ঝাঁপ দিয়ে পড়া
অনির্দেশ্যের দিকে।
তুমি তো জানতে খেলাটা
তোমার হাতে আসবে মাত্র
কয়েক মুহুর্তের
জন্য...আর তক্ষুনি সেটার
মুখ ঘুরিয়ে দিতে হবে।
যদি না পারো...সমবেত
অঙ্গুলিনির্দেশ থেকে
চুঁইয়ে পড়বে ধিক্কার।
তুমিই দায়ী। আর যদি
পেরে যাও...তুমি নও, অন্য
কেউ জয়ের নায়ক। এর চেয়ে
বড়ো অ্যাবসার্ডিটি আর
কি আছে?
---দ্যাখো...এই ই যে
লিম্ফ্যাটিক
গ্ল্যান্ডগুলো আমাদের
শরীরের...সেগুলো আসলে
পাহারাদার।
----কিসের পাহারা?
----এই কোনো একটা সংক্রমণ
যাতে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে
না পারে, সেজন্য এরা
লড়াই করে প্রচন্ড।
---- তাই!!!... কিভাবে?
----এরা নিজেরা সেই
সংক্রমণটাকে ধারন করে।
আক্রান্ত হয়। আর তখনি
আমাদের শরীর সচেতন হয়ে
ওঠে। রোগটা নির্ণয় করা
সম্ভব হয়।
----ওরা নিজেরাই যদি
আক্রান্ত হয় তাহলে ওদের
কি হয়?
---- ওদের বাদ দিয়ে দেওয়া
হয়। বা পুড়িয়ে ফেলা হয়...
অথবা ওষুধপ্রয়োগ। যেটা
দরকার। জেনে রাখো।
জানি। আমি
জানি, কোথাও পুড়ে যাওয়া
থাকে বলেই কোথাও আলো
জ্বলে ওঠা থাকে। ভালো
হয়ে ওঠা থাকে। দ্য
ফার্স্ট ম্যান ইন দ্য
অ্যাটাক্ আন্ড দ্য
লাস্ট ম্যান ইন দ্য
ডিফেন্স...তুমিই তো
মীমাংসা করে দিলে
স্কোরবোর্ডের ধূলোর
আড়ালে খোদাই করা সমবেত
হর্ষ- বিষাদ।
জালের ছিদ্র
দিয়ে ওই গড়িয়ে যাচ্ছে
তোমার একাকী মুহূর্ত
যেগুলো কেউ ধরেই রাখেনি
ক্যামেরায়। হাততালির
বৃত্ত অনুসরণ করতে করতে
আমরা লক্ষ্য করিনি
কড়িকাঠ বয়ে বয়ে কখন
তুমি শরীর থেকে খুলে
ফেলেছ পা, পা থেকে
গোড়ালি, গোড়ালি থেকে
গতি, গতি থেকে দৌড়, দৌড়
থেকে দূরত্ব, দূরত্ব
থেকে সীমানা... থেকে
সতর্কতা... থেকে
স্পর্শ...থেকে
স্ফুলিঙ্গ...
আমাদের
অন্ধত্বর দিকে ভেসে আসা
বেলুনেরা লাল নয়, নীল নয়,
সবুজ হলুদ নয়...কেবলি
বাতাস।