নবারুণের প্রেত ও অনুপস্থিতির বিশ্বাসঃ ‘ও হরিনাথ, আছে আছে, সব আছে, সব সত্যি’

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

“A ghost is an emotion bent out of shape condemned to repeat itself time and time again until it rights the wrong that was done.”

---- মামা (২০১৩), স্প্যানিশ-ঠ্যানাডিয়াঠ¨ হরর ফিল্মে নামহীন এক পার্শ্বচরি ত্রের সংলাপ

নবারুণের প্রেতেরা কি পুনরাবৃত্ত ির মধ্য দিয়ে ভুল ঠিক করতে চায়? কি ভুলের ডাকে তারা ফিরে আসে রাত-বিরেতে? আত্ম-à¦¸à¦‚à¦¶à§‹à¦§à ¦¨ নাকি জগত সংশোধন? কোনটা চায় তারা? তারা কি আদৌ ভুল শুধরোতে পারে নাকি শুধরোতে গিয়ে বারবার ভুল করে ফ্যালে? তারা কি সত্যিই অনুভবের দোসর নাকি শরীর থাকে তাদের? ভূতেদের উগরোতে গেলে শরীরে ফিরিয়ে আনতে হয় কি? এই শবসাধনা অলীক অতীত থেকে আসে নাকি অসম্ভব ভবিষ্যৎ থেকে? নাকি অতীত এখানে ভবিষ্যতে আর ভবিষ্যৎ অতীতে প্রেতস্থ হয়? নবারুণের মৃত্যুদিন উপলক্ষে অধুনা প্রেতপ্রাঠ্ত লেখকের প্রেতভাবনঠনিয়ে লিখতে বসে সর্বাগ্রে মনে হচ্ছে রেফারেন্সৠ‡à¦° প্রেত কিম্বা প্রেত-à¦°à§‡à¦«à¦¾à °à§‡à¦¨à§à¦¸à§‡à¦° কথা। অন্য কাহিনীর, অন্য সময়ের, অন্যান্য স্বরের এবং অন্য জীবন-মরণের ছায়া আদল কিভাবে (ইন্টার)-টেক ্সচুয়াল প্রেত হয়ে ওঠে তা নবারুণের থেকে ভালো ক’জন লেখক জানেন?হারবঠ¾à¦°à§à¦Ÿà§‡à¦° প্রত্যেক অধ্যায় শুরু হয় উনিশ শতকের বাংলা কবিতার যেসব পঙতি দিয়ে সেগুলোর আধুনিকতার সাথে উপন্যাসে বিম্বিত অপসৃয়মান পুরনো কলকাতার সম্পর্ক কি প্রেতসম্পঠ্ক নয়? গদ্যের আবডালে এসকল প্রেতকাব্ঠ¯ নবারুণের নিজের ভাষায় বলতে গেলে ‘ইতিহাসের à¦«à¦¾à¦à¦•à¦—à§à¦²à§‹à¦•à §‡ সাজানো।’ অন্যদিকে লুব্ধকের শরীরে যেভাবে সেঁধিয়ে যায় à¦¬à§à¦²à§à¦—à¦¾à¦•à¦­à§‡à ° হার্ট অফ আ ডগ বা চে গেভারার দিনলিপি, তাও কি এক প্রেত-à¦°à§‡à¦«à¦¾à °à§‡à¦¨à§à¦¸ নয়।

ঋত্বিক ঘটক স্মরণে নবারুণ নিজেই স্বীকার করেছেন যে হারবার্টেঠবিনু সুবর্ণরেখঠ¾à¦° বিনুর ছদ্ম-সম্প্ঠ°à¦¸à¦¾à¦°à¦£à¥¤ নবারুণ বলেছেন হারবার্টেঠবিনু বড় হয়ে উঠেছে সুবর্ণরেখঠ¾à¦° শেষ দৃশ্য থেকে যেখানে সে তার মামার সাথে নদী পেরিয়ে ‘নতুন বাড়িতে’ যাবার কথা বলে। সেই নতুন বাড়ি ঋত্বিকের সিনেম্যাটঠক ভবিষ্যতের স্তম্ভ— যেখানে বাগানে প্রজাপতি ওড়ে, চারপাশ ঢেকে থাকে নীল পাহাড়। অথচ সিনেমা কখনোই সেই ‘নতুন বাড়িতে’ পৌছয় না। তা ভবিষ্যতের স্বপ্নে প্রেতপুরী হয়ে থেকে যায় যেন। নবারুণ বলেছেন ছোট্ট বিনু বড় হয়ে সত্তরের নকশাল-বাড়ি আন্দোলনের সময় সেই ‘নতুন বাড়ি’ই বানাতে চেয়েছে। এ যদি নবারুণের লেখায় প্রেতের একটি স্তরায়ন হয় তবে বিক্রমের পীঠে আরেক বেতাল এসে জুড়ে বসে, সিনেমা বা বই থেকে নয়, জীবন নামক বৃহত্তর এক টেক্সট থেকে। সুবর্ণরেখঠ¾à¦° বালক বিনুর ভূমিকায় আমরা যাকে দেখি তিনি নবারুণের ভাই শ্রীমান অশোক ভট্টাচার্য এবং নবারুণ ঋত্বিক সংক্রান্ত ঐ বক্তৃতায় নিজেই জানান যে শ্রীমান অশোক, তার ভাই, পরে জলে ডুবে মারা যায়। এই তথ্যের কুহক থেকে উঠে আসে আরেক প্রেত। পাঠকদের কি চিনতে অসুবিধা হয় হারবার্টেঠখোড়োরবির মধ্যে নবারুণের ভাই অশোককে? কিম্বা বিনুকে? প্রেত তো এমনই এক আত্মস্থ অপরঃ অপর সময়ের অতীত এবং অতীত সময়ের অপরঃ

অথচ শত শত বছর ধরে চাঁদের আলোয় বা শীতের ভোরে কুয়াশায় তার প্রেম নিয়ে খোড়োরবি ঐ মরণজলে ভেসে থাকবে । তাকে ঘিরে মতসকন্যারঠওলটপালট করবে যারা কাঁদলেও তাদের চোখের জল কেউ দেখতে পাবে না।

হারবার্ট জানে জলে ডুবে মরে গেলেও সে ডাকলে তার বন্ধু রবি আসবে। এই বন্ধুবিশ্ব াস, অপরের আগমন নিয়ে এই প্রত্যয় নবারুণের প্রেতভাবনঠর এক গুরুত্বপূঠ°à§à¦£ দিক। প্রেতেরা নবারুণের বন্ধু। সত্তরের মৃত্যু উপত্যকার লাশেরা নবারুণের ৯০এর উপন্যাসগুঠ²à¦¿à¦¤à§‡ ইতিহাসের প্রেত হয়ে ফিরে আসে। প্রেতবন্ধৠর কথা ফরাসী দার্শনিক জাঁক দেরিদাও বলেছেন তাঁর পলিটিক্স অফ ফ্রেন্ডশিঠগ্রন্থে, নীৎশে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েঃ

[em]These friends returned as the phantom of our past - in sum, our memory, the silhouette of the ghost who not only appears to us […] but an invisible past, hence a past that can speak, and speak to us in an icy voice, 'as if we were hearing ourselves'. [...] Not the past friend, but the friend to come. Now what is coming is still spectral, and it must be loved as such. As if there were never anything but spectres, on both sides of all opposition, on both sides of the present, in the past and in the future. All phenomena of friendship, all things and all beings to be loved, belong to spectrality.
[/em]
রাজনৈতিক সক্রিয়তার অতীতের এই প্রেত-সমাবৠ‡à¦¶ নবারুণের লিখন-à¦œà§€à¦¬à¦¨à§‡à ¦° চরাচর জুড়ে, যেখানে যাপন, পঠন ও লিখন কোন এক একক সময়গ্রন্থঠধরে পরস্পরের পাশাপাশি আর ওপর-নীচ এসে বসে রয়েছে। লেখা কি প্ল্যানচেঠনয়? লেখক কি শতসহস্র অযাপিত জীবনমরণ সম্ভাবনার মিডিয়াম নন?

রেফারেন্স যখন ইকোর অনুরণনে টেক্সটের নারসিসাসকৠখুঁজতে থাকে অবিরত, আর নারসিসাস জলে শুধুই নিজের ছায়া দেখে, ইকোর স্বর শুনতে পায় না, তখন সেই অনুরণন প্রেতপ্রাঠ্ত হয়। প্রতীস্ব যেখানে অপরকে দেখতে পায়না, সেখানেও অপরের প্রেত প্রতিধ্বনি রয়ে যায়। নারসিসাসেঠআশেপাশেই রয়ে যায় ইকো। অমন মরণজলেই তো ভেসে উঠেছিলো রবি। স্বপ্নের অদ্রাব্য তরলের বাস্তুভিটা থেকে হারবার্টেঠকাছে ফিরে এসেছিলো। তারপর বিনু। আর তারপর মৃত্যুর স্বপ্নে বিনুর পাঠ করা সেই মন্দ্রাক্ঠরঃ বারাসাতের শহীদ সমীর মিত্রের লেখা কবিতা। সেও তো বিশ্বাসের এক টেক্সট যা প্রেত হয়ে ফিরে এসেছে হারবার্টেঠস্বপ্নে। দেশজ প্রেততত্তৠবের স্বপ্নাদেঠের ঐতিহ্যকে বারবার নবারুণ অবচেতন প্রেতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন হারবার্ট উপন্যাসে। যেমন বিনুর স্বপ্নাদেঠে হারবার্টেঠডায়েরিপ্রঠপ্তি। তাই ঘুমিয়ে পড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবার আশ্বাস মিলেছে। আজ নবারুণের প্রেত যখন যাপনময় ভবিষ্যৎ থেকে নিজের অবিনশ্বরতঠজ্ঞাপন করছে তখন সেই ভবিষ্যতকে ভাবতে আমাদের কোন পরলোক কল্পনায় যেতে হচ্ছে না। নবারুণের প্রেতেরা শেষ হিসেবে ইহলৌকিক। তাদের বিশ্বাস করতে হয় বদলের নিশানের মত কিন্তু এর জন্য কোন অতিন্দ্রীৠŸ ঊর্ধ্বলোকৠ‡ বিশ্বাস করার দরকার হয় না। এই বিশ্বাস রাজনৈতিক, ধর্মীয় নয়। এই রাজনৈতিক প্রত্যয়, নেই জেনেও আছে’র বিশ্বাস; নবারুণের নৈরাজ্যবাদ ী অবস্থানে কিছু হবার নয় জেনেও লড়াইয়ের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস ‘মার্ক্সবঠ¾à¦¦ সত্য কারণ আমি উহা বিশ্বাস করি’ জাতীয় বিশ্বাস নয় যা মার্ক্সকে রাজনীতি ও দর্শনের পরিসর থেকে ধর্মীয় ডগমার দিকে নিয়ে যায়।

নবারুণের প্রেত বর্তমানের ক্রিপ্টে উপ্ত অতীত যা একদিন না একদিন ভবিষ্যৎ হয়ে দেখা দেয়। সেই একদিন কোথায় কবে কখন কেউ জানে না। অথচ সেই প্রেত বিস্ফোরণ ঘটবেই আর রাষ্ট্রযন্ ত্রের কাছে এই ঘটনার ধারাপাত অপাঠ্য থেকে যাবে। এই প্রেত হারবার্টেঠখাটে ২০ বছর আগে বিনুর লুকোনো ডায়নামাইট যা কিনা চুল্লীতে তার বিছানা ঢোকাতেই ফেটে পড়ে। গোলকায়িত বহুতলের নীচে লুকিয়ে থাকে যুদ্ধ পরিস্থিতির বন্দুক। তিন দশক ধরে রিভলভারের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা একটিমাত্র গুলি হত্যা ডেকে আনে উদ্বৃত্ত সামাজিক খেলাধুলায়ॠ¤ এরা সবাই সময় তথা ইতিহাসের প্রেত, ইহজগতের প্রেত যারা ইতিহাসের একেকটা সন্ধিক্ষণৠধামাচাপা পড়ে গেলেও ইহজগতেই অন্য সময়ের ভেতর এসে হঠাৎ একদিন আঘাত হানে। তবে নবারুণ সবসময় প্রেতেদের বন্ধু এটা বলা কঠিন। বন্ধু না হলেও তিনি এদের ডকুমেন্ট করতে চান। হারবার্টেঠবিস্ফোরণ বা যুদ্ধ পরিস্থিতির বন্দুকদল অসম্ভব বিপ্লবের ছেনালি নিয়ে আসে, কিন্তু ‘আমার কোন ভয় নেই তো’ গল্পে ৭০ দশকের চাইনিজ রিভলভারের ব্যারেলে ৩০ বছর যাবত আটকে থাকা একটি বুলেট কোন শ্রেণীশত্ঠ°à§à¦•à§‡ অপসারণ করে না, অপসৃত হয় ভীত ত্রস্ত এক কমন ম্যান যে পরিবর্তনশৠল সমাজে ক্রমেই উদ্বৃত্ত হয়ে উঠেছিলো। প্রেত-à¦…à¦¬à¦¶à§‡à ¦· এখানে বিপ্লবকে উদ্বৃত্ত করে দিয়ে রাজনীতির লুম্পেনাইঠœà§‡à¦¶à¦¨à§‡à¦° নিশান হয়ে যায়। ২০১৫র বাংলায় রাজনীতির এই লুম্পেনাইঠœà§‡à¦¶à¦¨ যখন চূড়ান্ত এবং অসীম, তখন নবারুণীয় প্রেতের প্রাসঙ্গিঠ•à¦¤à¦¾à¦“ à¦à¦•à¦‡à¦°à¦•à¦®à¦­à¦¾à¦¬à ‡ à¦—à¦—à¦¨à¦šà§à¦®à§à¦¬à§€à ¤ প্রতীকী পরিসরে নবারুণের প্রেতভাবনঠর ভিত্তিকে তাই কোন সরল অর্থে প্রতিস্পর্ ধী বলা মুশকিল; বরং ভৌতিক প্রত্যাবর্ তনের এই অবশেষ রাজনীতির প্রেতায়নকৠ‡ বিপ্লব এবং প্রতিবিপ্ল ব এই উভয় মেরুর নৈরাজ্য থেকেই দেখতে জানে।

হারবার্ট লেখেঃ “মানুষ যদি ১ হয় তাহলে ০ হল মরা মানুষ। মরা মানুষ = ১+০-১= খোড়োরবি।” এই গাণিতিক সূত্রটির উপাদানগুলঠ¿à¦° অবস্থান খেয়াল করলেও একভাবে বোঝা যায়, যে মৃত্যু মানুষকে মরা মানুষ বানিয়ে প্রেতের দিকে নিয়ে যায়, নবারুণের তাকে রোপণ করতে ধর্মকল্পিঠপরলোক লাগে না। ১ গুণতে গেলে ০ থেকে শুরু করতে হয়। প্রেত খোড়োরবি যদি ০ হয় তবে তার ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দুই অন্তরমেরু হিসেবে তার দুদিকে থাকে দুটি ১। একটি ১ যোগ হয় আর অন্যটি বিয়োগ। যোগ বিয়োগের শেষে আবার আমরা ০ তেই ফিরে আসি। নবারুণের সমীকরণে শূন্যের অবস্থান, দুটি ১ এর বাইরে নয়, বরং ভিতরে । ০ কে দুদিক থেকে বেষ্টন করে রয়েছে দুই ১। আমরাও তো এভাবেই আমাদের ভবিষ্যতের মরদেহকে বয়ে বেড়াই আমাদের জ্যান্ত শরীরে। নবারুণ একটি ইন্টারভিউৠŸà§‡ বলেনঃ

আমি যতই যুক্তি দিয়ে বুঝি মৃত্যু কি সে সম্বন্ধে জানা আমার শেষ হয়নি। হয়তো যে মোমেন্টে আমি মরব আমি জানতে পারব বা পারব না কিন্তু ওই মুহূর্তটাঠেও আমায় ধরতে হবে, জানতে হবে। এই ইন্টারনাল problems যা মানুষ ফেস করে আমরা শ্মশানে গেলে ফেস করি। কোন প্রিয়জনকে যখন শেষবারের মতো চলে যেতে দেখি--- এগুলোর ব্যাখ্যা আমরা জানি না।

নবারুণের লেখায় প্রেত তার নিজস্ব ধারা ও প্রতর্ক নিয়ে আসে। চিলছাদ থেকে হারবার্ট খুঁজে পায় দুটি বই যা তার ‘মৃতের সহিত কথোপকথনে’ পাথেয় হয়ঃ শ্রী মৃণালকান্ঠি ঘোষ ভক্তিভূষণৠ‡à¦° পরলোকের কথা ও কালীবর বেদান্তবাঠীশের পরলোক রহস্য। উপন্যাসে এই বইগুলির কাট আপ কোলাজও ব্যবহার করেন লেখক। ‘ভূতের জলসায় গোপাল ভাঁড়’ এবং ‘সার্কাসে ভূতের উপদ্রব’এর মত সাহিত্যিক রেফারেন্সঠ“ থাকে এই প্রেতপাঠেॠ¤ উপন্যাসের পঞ্চম অধ্যায়ে নবারুণ যখন হারবার্টেঠপ্র্যাকটিঠকে দেশজ ও পাশ্চাত্য প্রেততত্তৠবের পরিসরে স্থাপন করেন তখন বারবার হারবার্টেঠদেশজ প্রেতালাপৠর সাথে ইউরোপের প্যারাসাইঠোলজির দূরত্ব দর্শিত হয়; কিন্তু দূরত্বও তো সম্পর্ক থেকেই তৈরি হয়। হারবার্ট সরকারের প্রেত উনিশ শতকের ঔপনিবেশিক বাংলার প্রেত-à¦…à¦¬à¦¶à§‡à ¦·, যার বলে হারু হারবার্ট হয় বা হারবার্ট হারু। তার বাবার বাবুয়ানি থেকে তার শরীরে উঠে আসা এই প্রেতনাম ‘হারবার্ট†™ তাকে মার্ক করতে ছাড়ে না। আর নিজেরই অজান্তে নকশালি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেই সাহেবি নামকেই শেষপর্যন্ঠআন-মার্ক করে হারু। ঔপনিবেশিক জ্ঞানের লেনদেনে ভারতীয় প্রেততত্তৠবে সাংস্কৃতিঠ• সংকরায়নের হাওয়া লেগে উনিশ শতকের কলকাতায় প্ল্যানচেঠব্যপারটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। হারবার্ট উপন্যাস জুড়ে পরলোকের কথা ও পরলোক রহস্য -এর উদ্ধৃতি ব্যবহার করে নবারুণ প্রেততত্তৠবের এই ঔপনিবেশিক এবং ঐতিহাসিক সংকরায়নকে বারবার ডকুমেন্ট করে যান। ভারতীয় লোকবিশ্বাঠ¸ ও পাশ্চাত্য প্যারাসাইঠোলজির এই সংকর-à¦ªà§à¦°à¦¤à¦°à à¦• মূলধারার পাশ্চাত্য যুক্তিবাদৠকাঠামোর চিন্তানির্ যাসকে কটাক্ষ করে যায়। স্বপ্নলোকৠ‡à¦° অবচেতন থেকে উঠে আসা এইসব সশরীরী অশরীরীরা স্বপ্নের অপরজগতকে ইহজাগতিক (materialist) করে তোলে।

সদ্য কলেজে ওঠা একটি ছেলে যাবার সময় হারবার্টকৠবলে, সে যা বলছে, সবই ‘ভেগ’, ‘কংক্রিট’ কিছু সে বলতে পারছে না। এই ‘ভেগনেস’ তথা অস্পষ্টতা অপাঠ্যতার দিকে হেলে থাকে; যুক্তির রৈখিক পাঠকে সমস্যায়িত করে তোলে। এই অস্পষ্টতা নবারুণীয় প্রেতের স্বাক্ষর। এই প্রেতেরা বিমূর্ত হলেও সংক্রামক। যুক্তিবাদৠসমিতির সাথে হারবার্টেঠকথোপকথনে ‘ইংরিজি মারানো’ যুক্তিবাদৠর উল্টোদিকে হারবার্ট সরকারের ‘বাংলা খিস্তির’ ‘দোবেড়ের চ্যাং’ বিশ্বাস, দ্বান্দ্বি কতার প্রতর্ক তৈরি করে। আর শেষে মৃত্যু-পরবঠ্তী বিস্ফোরণেঠ° মধ্য দিয়ে নবারুণের প্রেতযান পরলোক থেকে ইহলোকে ফিরে আসে। ভোগী তাই শ্রেণীবিভঠ•à§à¦¤ সমাজের অবক্ষয় আর অপঘাতে মরতে থাকা প্রেতেদের দুনিয়াকে আলাদা করে দেখে নাঃ

ঘরে ঘরে দেখ পোয়াতি মেয়ে ফলিডল খেয়ে মরতেচে, ধস্সন হচ্ছেন, আর ঐ গুয়োর ব্যাটা মদ্দগুলো মদ-গ্যাঁজা ছেড়ে এখন সব ট্যাবলেট খাচ্ছে। অপঘাতে মরতেচে বলে অশরীলীর সংখ্যা কত বেড়ে গেছে হদিশ করা যায় না--ও আমরা বুঝতি পারি-- হল্লাভূত, যক, কন্ধকাটা, জলাবুড়ি, একনিড়ে, গুমো, পেঁচো, গলায় দড়ে--ও সে যে কী কান্ড কী বলব আপনারে—


নবারুণের বিশ্বাস গল্পের প্রেতবিশ্ঠাস, অন্ধবিশ্বঠস বা ধর্মীয় ডগমা নয়। তাই ‘এক টুকরো নাইলনের দড়ি’ গল্পের জগদীশ পাল যতই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতীদৠ‡à¦° মরণদড়ি সংগ্রহ করে নিজের ভাগ্য ফেরাতে চান আর দড়ির বলে ফাঁড়া কেটে যাবে ভেবে নিশ্চিত হয়ে যান, দড়ি কিন্তু শেষে কোন কাজই দেয় না। হাসপাতালেঠচৌহদ্দিতে তিনি যখন এই তান্ত্রিক বিশ্বাসের গল্প করেন কাহিনীর কথককে, তখন তার ছেলে ফুটবল মাঠে চোট পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসারতॠযতই তিনি দড়ি আগলে ভাবেন ছেলের কিছু হবে না, গল্পের শেষ বাক্য নির্দ্বিধা য় ঘোষণা করে পরদিন সকালেই হাসপাতালে ছেলেটির মৃত্যুর কথা। এ হল নবারুণীয় প্রেতভাবনঠর আরেক পীঠ যেখানে অতিযৌক্তিঠ• আর যুক্তিহীন বিশ্বাসের মধ্যে এক ভেদরেখা চোখে পড়ে। বিশ্বাস নিজের চারপাশে যে গল্প রচনা করে তা সবসময় বাস্তবতায় মেশে না, অনেকসময় নিছকই নিজের মধ্যে আটক হয়ে থেকে যায়। কিন্তু তাও তো সাধারণ মানুষ এমন সব ওপিয়াম নিয়েই বাঁচে আর কমন ম্যানের এই বেঁচে থাকাকে অ্যাজ ইট ইজ ডকুমেন্ট করতে নবারুণ কখনো পিছপা হন না।

হারবার্ট কিম্বা ভোগী--এইসব চরিত্রেরা কি আদৌ কোন প্রেতাবেশ জানে? এরা কি স্রেফ বুজরুকি করে নাকি যুক্তিজালৠর বাইরে কোন এক সমান্তরাল অথচ ইহজাগতিক অপর পৃথিবীর ইন্ধন যুগিয়ে যায়? নবারুণ এই প্রশ্নটা তোলেন কিন্তু এর নিষ্পত্তি ঘটান না। তাঁর নৈরাজ্যে, অতি-à¦¯à§Œà¦•à§à¦¤à¦¿à •, উদ্বৃত্ত এই সাধারণ লোকেরা গোলকায়িত নাগরিকতার চলনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে না নিতে পেরে একে একে অন্তর্হিত হয়। হারবার্ট আত্মহত্যা করে আর ভোগীকে মরতে হয় কাতানের কোপে। এই আত্মঘাতীদৠ‡à¦° ভূত নামানো বা ভবিষ্যত বলতে পারাটা সত্যি না মিথ্যে সেই প্রশ্নটা গৌণ। নবারুণের কাছে এদের গুরুত্ব হল এদের ট্র্যাজিক ভ্যালু। এদের প্র্যাকটিঠপুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির করায়ত্ত হবার আগেই লেখক নবারুণ এদের প্লট থেকে তথা পৃথিবী থেকেও সরিয়ে নেন। ডায়নামাইট তাও ফাটে। ভোগীকে নিয়ে সিনেমা তাও থেকে যায়। মৃত্যু-পরবঠ্তী এইসব প্রেত-à¦…à¦¬à¦¶à§‡à ¦·à§‡à¦° মধ্যে দিয়েই নবারুণের পরলোক ইহলোকে ফিরে আসে। ফিরে আসে দ্বান্দ্বি ক এক বাস্তবতায়। ধর্ম ও à¦•à§à¦¸à¦‚à¦¸à§à¦•à¦¾à¦°à ‡à¦° ট্রোপগুলিঠ•à§‡ ব্যবহার করলেও নবারুণ শেষপর্যন্ঠএদের স্যাবোটাজ করতে ছাড়েন না। তিনি প্রেততত্তৠব ও পরলোকতত্তৠà¦¬à§‡à¦° সংকরায়িত সাংস্কৃতিঠ• প্রতর্কগুঠ²à¦¿à¦° মধ্যে দিয়ে নিজের গদ্যের রসায়নকে চালিত করে শেষে তাদের অপরত্বকে কোন অতীন্দ্রিৠŸ ঊর্দ্ধজগতৠস্থান না দিয়ে মাটিতে নামিয়ে আনেন। নবারুণের প্রেতেরা যুক্তির রৈখিক চালচিত্রেঠবাইরে, বদলের প্রত্যয়কে হেরে গিয়েও বিশ্বাস করতে শেখায়। ভোগীর ত্যাগ, যাকে নবারুণ অব্যর্থভাঠে ‘acquisitive society’ বলেছেন, তার বিপরীত স্রোতে পরাজয়ের প্রটেস্ট হয়ে থেকে যায়।

এই বিশ্বাস আর কিছু না হলেও গল্পের বিশ্বাস। যেকোনো গল্প পড়তে গেলে, শুনতে গেলে, দেখতে গেলে যেমন তার অনুপস্থিত জগতকে, অনুপস্থিত চরিত্রগুলৠকে আর না ঘটা à¦˜à¦Ÿà¦¨à¦¾à¦—à§à¦²à§‹à¦•à ‡ বিশ্বাস করতে হয়। আমরা নবারুণের উপন্যাসগুঠ²à§‹ পড়ার সময় জানি অমন কোন অন্ধ বেড়াল নেই, অমন কোন হারবার্ট নেই, নেই লুব্ধকের ছায়া কুকুরেরা, আমরা জানি নেই তবু পড়তে গেলে আছে বলে বিশ্বাস করতে হয়। নবারুণীয় প্রেতের বিশ্বাসবোঠঅলৌকিককে অতিলৌকিক দিয়ে ঘিরে রাখে। বিস্ফোরণ না হলেও ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বাস রাখতে হয় প্রেতেদের বিস্ফোরণেॠ¤



à¦—à§à¦°à¦¨à§à¦¥à¦¸à§‚à ¦¤à§à¦°à¦ƒ

নবারুণ ভট্টাচার্য , উপন্যাস সমগ্র।
জাঁক দেরিদা, পলিটিক্স অফ ফ্রেন্ডশিঠ।