১
একদিকে ঢালু উপত্যকা।
অন্যদিকে লেডিজ
বাথরুম।
টেরাসে ছড়িয়ে আছে চেয়ার
টেবিল
মেনুকার্ডে মুঘল-এ-
আজম
হাওয়া হাওয়া হাওয়া
হাওয়ায় হেলান দেওয়া গাছ
ও মারুতি
আমাদের ভেজ লাঞ্চ। রুটি
ফুটো করা। ধোঁওয়া।
২
একটা ময়াল সাপ পেঁচিয়ে
ধরেছে।
ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে
লাগেজ তুললাম।
বড় বড় শ্বাস ফেলে পাইন
গাছেরা।
বড় বড় শ্বাস ফেলে
পার্বত্য এলাকা।
৩
বাতাসের স্বাদ আইস
ক্রিম।
নিভিয়া। নিভিয়া ,
শ্বাসে টান।
চুইং গাম কেনো। খাদ
দেখে
আমরা দুজনেই বেশ ভয়
পেয়ে গেছি।
৪
দুধ চিনি গোলা ঠান্ডা
চা। জলঢালা বিছানা।
ফাঁকফোকর।
গরম হিটারের পাশে
ঠান্ডা হয়ে আছে এক
বালতি জল।
গলাভাঙা কাক।
সুপ্রভাত
৫
ফুর ফুর বরফপাহাড়।
অন্ধকার বেঞ্চিতে
দুজন।
পাইনের ঝুঁকে আসা।
অতীতের মত।
তুমি তো এলেনা সেই
প্রাইমটাইমে! এখন কী
করি।
রোদ উঠবে না কাল? অন্তত
দুবার?
৬
আমি বললাম শুয়ে থাকা।
তুমি দৌড় ।
আমি মেঘ।
তুমি রোদ চশমা আর
ক্যামেরা।
যোগফল হু হু হাওয়া। ঘোর
বৃষ্টি।
বরফপতনের একটু আগেই
কিন্তু হাওয়া থেমে
গিয়েছিল।
৭
রোদ উঠল। যাক্ বাবা।
এবার নিস্তার।
এই তো আসল শিমলা।
হাঁটো। ওঠ। নামো।
একটা জায়গায় এসে
রাস্তাটা দুদিকে চলে
গেল।
পাহাড়
১
আড়াই বছরের জন্য
নির্বাসিত হলে তুমি
পাহাড়ে।
সে পাহাড়, এক বড় ,
স্তম্ভিত মুহূর্তের মত,
অবিকল থেকে যায়। এটাই
তার সবচেয়ে বড় বিষয়।
বদলায় না।
ডাইনামাইট করা দেওয়াল
পাহাড়ের, খাঁজ কেটে
তুলে আনছে রাস্তা।
সে রাস্তায় অবিরল
বাসগুলি যায়, হিমাচল
ট্যুরিজমের, দেবভূমি
হিমাচল লেখা বাস।
বাসের একটা চাকা
রাস্তার বাইরে ঝোলে।
বিপজ্জনক সব হেয়ারপিন
বেন্ডের কাছে এসে তুমি
নত হও।
মাথা ঠুকে যাবে ভেবে
ডাইনামাইট করা রাস্তা
ফোটানো সব নিচু নিচু
নেকেড রকফেসে তুমি ভয়
পাও।
অথচ ওখানে লেখা থাকে,
পবিত্র ধাবা, তাজা
ভোজনের কথা।
তুমি দেখো, ডোন্ট মিক্স
ড্রিংকিং উইথ ড্রাইভিং
লেখা আছে কালো রঙ করে,
সেই নগ্ন গ্রানাইটে।
কতটা ছোট ছোট সব লেখা ,
কতটা বড় বড় সব পাথরে।
আর মারুতিগুলি একেবারে
দ্রুত বেরিয়ে যায়, শোঁ
করে, যেন পোকা। লাল লাল
গুবরে পোকার মত। তারা।
এই ছোট দেশে, এই বিশাল
পাহাড়েরাই বস্। সব করে
তারা।
পাইনের বোনগুলি
হাঁসফাঁস হাওয়া বিতরণ
করে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ
শব্দ করে গাছে কাঁপে।
বসন্ত আসার আগে
নিষ্পত্র গাছগুলি দোলে,
দোলে অপেক্ষায় থাকে।
জোরে টি টি টি টি শব্দ
করে ডাকে যে পাখিরা,
তারা বসন্ত এলেই খুব
দ্রুত বাসা বাঁধবে।
আর কচি লালচে পাতাদের
কুঁড়ি দেখা যাবে।
সবকিছু সেজে উঠবে।
শুধু নীরবতা থাকে, আর
সূর্যালোকে বিস্তীর্ণ
কুয়াশা জেগে ওঠে।
নিজেদের কাছ থেকে
নিজেরা হারিয়ে যাবে রাত
এলে। তখন হাত পা মাথা
কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে
না।
তখন শুধু অন্ধকার আর
কুয়াশা আর অজ্ঞাত শোক,
আর এস টি ডি বুথের দিকে
দু সেলের টর্চ হাতে
যাওয়া।
পাহাড়ে, সব লজিক
চুরচুর।
পাহাড়ের নিজস্ব লজিক ।
মুখে লজেন্স রেখে ওঠা।
মুখে গান নিয়ে নামা।
নামার সময়ে দ্রুততা।
তাই হেঁচকা দিয়ে দিয়ে
ব্রেক কষতে কষতে নামা।
হাঁটুতে জোর লাগবে।
ব্যথা।
ওঠার সময়ে বড্ড হাঁপ
ধরবে। শরীর যেন
বিছানাবালিশ।
অথচ লোকাল মুটেমজুর
গ্যাসের সিলিন্ডার
মাথায় পটি দিয়ে বেঁধে
নিয়ে পিঠে করে যায়।
অনায়াসে ওঠে।
কী অদ্ভুত একটা রজনের
গন্ধ চারিদিকে।
গাছগুলি হুশ হুশ করে।
পাইনের কোন, ঝরে ঝরে
থাকে।
পাহাড়ের গন্ধ আর শব্দ,
সব আলাদা।
আর স্বাদ।
পেট খারাপ হয় যদিও খুব ,
জল ভাল নয়।
তিরতির জল দেখ। ওপর
থেকে দেখ নিচের
উপত্যকায় কে যেন বাড়ির
ছাতে বসে বেগুনি
মাফলারে। কোন মেয়ে ভিজে
উলের কামিজ পরে কাচা
কাপড় আর তোশক লেপ মেলে
দিচ্ছে। সব দেখা যায়।
পাহাড়ের দৃষ্টিপথ
কৌণিক, অনিবার্য ভাঁজে
ভাঁজে খোলে।
আর রাত্রিতে, দূরের
পাহাড়ে তারার মালার মত
আলো জ্বললে বোঝ, শহরের
ওই মহল্লাটি
উল্টোদিকের চুড়োয়।
ওদিকে যেতে ইচ্ছে করতে
করতে করতে লেপের ভেতর
তোমার ঘুম আসবে।
আর কান্না পাবে। আজ গরম
পড়েছে, কাল বৃষ্টি হবে,
ভেবে, তুমি তেতে উঠবে
ধীরে। তারপর কুয়াশায়
ঢেকে যাবে সব। সবুজ , গাঢ়
সবুজ আর গমগমে বাদামি
পাথর রঙ। তুমি ডুবে
যাবে।