বনবীথি ধরে হাঁটতে
হাঁটতে স্বপ্না বলছিল ---
এই যে বললেন ভালোপাহাড়
আপনাদের স্বপ্নের
পাহাড়, এর মানে কি ?
স্বপ্নেরা তো অলীক হয়।
ঘুমের বাইরে সে সবের
অস্তিত্ব থাকে না।
আমি --- না গো। লৌকিক
বিষয় ও বস্তুর কল্পনা
থেকে যে স্বপ্নের উদয়
হয় তা কর্মের ইশারা করে,
পথ খুলে দেয়। এখানেই
পৃথিবীর সমস্ত কিছু
আবিষ্কার হয়। স্বপ্ন
থেকেই আমাদের যাত্রা
শুরু হয়েছিল। লজ্জা
ঘৃণা ভয় ত্যাগ করে
নিঃস্বার্থ ও সততার
সঙ্গে কাজে নামতে হয়।
একদিন জয় হবেই। ছোট
পিঁপড়েরাও হাঁটতে
হাঁটতে মাউন্ট
ফুজিয়ামায় চড়ে যায়,
ফেটে যাবার দুশ্চিন্তা
না করেই। উইপোকারা
সাধ্যমতো বল্মীক ঢিবি
তৈরি করে ফ্যালে
বৃষ্টির কথা না ভেবে।
আর আমরা মানুষরা পারব
না ? আমরাও স্বপ্ন
দেখেছিলাম, সেই
কোনকালে, যখন বেকার
জীবন, যে একদিন আমরা সব
কবিরা মিলেমিশে একটা
কমিউন করে থাকব একসাথে
--- এরকম একটা নতুন
পৃথিবী গড়ে তুলব ---
ভালোপাহাড়ের মতো। আজ তা
হয়েছে।
স্বপ্না বলল --- আমার
খুব ভাল লাগছে, জানেন,
ইচ্ছে করছে এখানে
স্থায়ীভাবে থেকে যাই।
কী পরিষ্কার জল বাতাস
নিঃশ্বাস পরিবেশ, কোন
দূষণ নেই মনে হচ্ছে।
আমি --- থেকে যাও না।
আমার তো এখানে থাকতেই
সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে।
এলে আর ফিরে যেতে মন চায়
না। গর্বে বুক ভরে যায়।
বাইরে থেকে নয়, ভেতর
থেকে ভালোপাহাড়কে দেখি
আর সন্তান-স্নেহ উপচে
পড়ে। আজকের ভালোপাহাড়
তো আর একদিনে হয়নি, এটা
কোন ধনী মানুষের
ব্যক্তিগত রিসর্টও নয়।
যারা এসেছেন,
ভালবেসেছেন, সবাই তাদের
স্বপ্ন দিয়ে গেছেন
এখানে। সেই সব স্বপ্ন
জমে আছে আমাদের
স্বপ্নের ওপর। মানুষের
অনুদানে, মানুষের
পরিশ্রমে তিল তিল করে
গড়ে উঠেছে গত ৪৭ বছর
ধরে।
৪৭ বছর ? একটু বিশদ বলা
যাক। একটা কবিতা লেখার
মতো। কি লিখব জানা নেই।
শুরু করে দিলে পরতে
পরতে গড়ে ওঠে যেমন
খুশি। এই খুশিটাই আসল।
তোমার যা মন চায় করতে
পারো। কেবল পজিটিভ
চিন্তা থাকলেই হল।
এখানে যারা থাকে তাদের
মধ্যে সদস্যদের
খুশিমতো কাজ করার কোন
বাধা নেই। শুরুয়াতটা
ছিল কষ্টের। এখন
গড়গড়িয়ে চলছে। কে জানে
এর শেষ কোথায় !
১৯৬৮ সালে জামশেদপুরে
এক বর্ষায় আমরা ৫ জন
একত্র হয়েছিলাম আড্ডা,
কবিতা, গল্প, নাটক,
পাঠচক্র, গান, ভ্রমণ,
প্রেম, পত্রিকা,
বিখ্যাত সাহিত্যিকদের
নিয়ে অনুষ্ঠান ইত্যাদি
করার জন্য। সবাই তখন
বেকার। আমি, কমল
চক্রবর্তী, সুভাষ
ভট্টাচার্য, অরুণ আইন,
শক্তিপদ হালদার আমাদের
এই পাঁচজনকে বলা হত
পঞ্চপান্ডব। কমলের
লেখা একটা নাটক করতে
গিয়ে দলের নাম দেবার
কথা উঠলে কমলই নাম দিলো
পঞ্চপান্ডবের উল্টো,
কৌরব। দেবজ্যোতি দত্ত
জয়েন করল। বাংলার
পুরুলিয়া থেকে বনগাঁ,
ডায়মন্ডহারবার থেকে
দার্জিলিং চষে বেড়াতাম
কবিসঙ্গ করতে, প্রকৃতির
কোলে গড়াগড়ি খেতে।
শান্তিনিকেতন আর
পান্নালাল দাশগুপ্তর
টেগোর সোসাইটি আমাদের
মন কেড়েছিল। ১৯৭১-এ
কৌরব পত্রিকা বেরলো,
সেই থেকে আজও চলছে।
পাহাড় জঙ্গল
সমুদ্রতীরে গিয়ে
কৌরবের কবিতার
ক্যাম্পে সবাই
দু-তিনদিন সংসার পরিবার
থেকে বিচ্ছিন্ন, কেবল
কবিরা মিলে একসাথে
সহযাপন করতাম। ক্রমে
বহিরাগত কবিরাও যোগ
দিতো ক্যাম্পে। সে থেকে
একটু একটু করে জমা হতে
থাকল স্বপ্নেরা আর সেই
স্বপ্নপূরণের
ইচ্ছেরা। জমে জমে তা
পাহাড় হয়ে গেছে। ভাবতাম
পরিবেশ, জলবায়ু,
অর্থনীতি, রাজনীতি
প্রভৃতির দূষণমুক্ত
কোন অমল স্বর্গে আমরা
থাকব। অনেক জায়গা চষে
বেড়ালাম তার খোঁজে।
ধীরে ধীরে হৃদয়ঙ্গম হল
যে আমাদের চারপাশের
পৃথিবীতে দূষণমুক্ত
জায়গা পাওয়া অসম্ভব।
ফলে স্থির করা হল একটা
নতুন জায়গা তৈরি করে
নিতে হবে, নতুন পৃথিবী।
যা আগে কেউ দ্যাখেনি,
ভাবেনি। যেমন আমরা কৌরব
পত্রিকা করেছিলাম যার
কোন উদাহরণ ছিল না, আজও
নেই। জামশেদপুরে কোন
পত্রিকাই ছিল না। আমরা
শুরু করেছিলাম
স্ক্র্যাচ থেকে, করে
তুলেছিলাম বাংলার
শ্রেষ্ঠ। তেমনি আবার
আমরা শুরু করব শূন্য
থেকে। সেজন্য আমাদের
চাই টাঁড় জমি, একলপ্তে
অনেকটা, যেখানে গাছ
দূরের কথা, এক চিলতে
ঘাসও চাই না, গরু ছাগল
চরে না, সাপ খোপ নেই,
পাখি নেই। সব আমরাই গড়ে
তুলব। অবশেষে আমাদের
স্বপ্নের পাহাড় একদিন
প্রাণ পেলো। নতুন
স্বপ্নের জন্ম হল।
একটাই স্বপ্ন এতজন
দ্যাখে কী করে, পোষে কী
করে জানি না। তবে একদিন
তা অবয়ব পেতে শুরু
করল।
শচীন দত্ত, আমাদের
পরিচিত এক গ্রামীন কবি,
গাড়িগ্রামের,
জামশেদপুর থেকে ৬০ কিমি
দূরে বান্দোয়ানের কাছে
তার ৪০ বিঘা অনাবাদী
জমি বিক্রি করতে চায়।
আমরা খুঁজছি শুনে খবর
দিলো। এসে দেখি
ডাঙরজুরি গ্রামের কাছে
বড় রাস্তার ধারে এই
ঢালু জমি, নিচে একটা
তিরতিরে নদী অপেক্ষা
করছে আমাদের জন্য,
যেখানে গাছ নেই, ঘাস নেই,
জল নেই, যেন কোনকালে চাষ
হয়নি। কমলকে বললাম, কোন
কথা হবে না, আগে কিনে
ফ্যাল। আমার বাড়িতে
সাতজন একত্র বসে আলোচনা
করে আমাদের ব্যক্তিগত
টাকা জড়ো করে দাদন দেয়া
হল জমির। তখন ১৯৯৬ সাল,
এপ্রিল। কাছের টেগোর
সোসাইটিকে গিয়ে বললাম ---
গাছ লাগাবো, চারা দিন।
তারা ৫০টা চারা দিলেন
আর চারা পিছু পোঁতার
খরচ ৫০ পয়সা। সেই শালের
চারা লাগানো হল মাঠে
লাইন করে, নিচের নদী
থেকে জল টেনে। তখন আমরা
অফিস করি। রবিবার আর
ছুটির দিন আসা যেত।
পরের সপ্তাহে গিয়ে দেখি
অর্ধেক ছাগল খেয়েছে,
অর্ধেক জলাভাবে
শুকিয়ে। এখান থেকে ৫
কিমি দূরে দুয়ারসিনিতে
হেঁটে যেতাম লাঞ্চ
করতে, ডাল আর মুড়ি। তাই
পাওয়া যেত তখন।
পরের বার ৫০০ চারা
সংগ্রহ করলাম। কাছের
গ্রাম থেকে দুজন লোক
রাখা হল গাছ লাগানো আর
রোজ দিনের বেলা জল আর
পাহারা দেবার জন্য।
গরু-ছাগলরা সময় বদলালো।
সন্ধের মুখে তারা আর
রাতের বেলা গাছচোর। মাঠ
পরিষ্কার প্রায়।
বর্ষাকাল আগত। জল
জমাবার জন্য পুকুর
খোঁড়া হল। সেই মাটি
দিয়ে ঘর বানিয়ে ছাউনি
দিয়ে আমাদের লোকেরা
সেখানে দিনরাত। আমরা
গেলে খিচুড়ি রেঁধে
দিতো। গাছ লাগানো আর
তাকে বাঁচিয়ে রাখাও
শেখার ব্যাপার। সেই
প্রথম আমাদের ঘর হল।
এখন সেটি নেই। পুকুরটা
আছে। প্রথম বাগান শিশু,
শাল, সেগুন, মেহগনি,
সোনাঝুরির। ক্রমে
গাছের সংখ্যা বেড়ে হল
প্রায় দু-লক্ষ। জমি ৭০
একর। বাড়ি গাড়ি সব হল।
লেগে থাকলাম সমানে।
ভালোপাহাড়ে সময় দেবার
জন্য চাকরি ছেড়ে দিলাম
আমি, কমল আর দেবজ্যোতি।
২০০০ সাল। স্মৃতি থেকে
বলতে ভাল লাগছে। তুমি
বোর হচ্ছো না তো ?
--- না না বারীনদা। আপনি
বলুন। শুনতে ভাল লাগছে।
আমি সেই সময়টা দেখতে
পাচ্ছি। আপনি বলুন আরো।
গড়ে ওঠার একটা ইতিহাস
শুনছি। শিখছি। আপনি
বলুন।
তার পর ১৯৯৬ সালের ১লা
সেপ্টেম্বর কলকাতায়
সোসাইটিস অ্যাক্ট-এ
আমাদের সোসাইটির
রেজিস্ট্রেশন হল। নাম
রাখা হল। ‘ভালোপাহাড়’।
কেমন মজার, না ? ধারে
কাছে পাহাড়ের কোন চিহ্ন
নেই। স্কাইলাইনে দূরে
দেখা যায় রুয়াম আর
দলমা। এই জঙ্গল থেকে
দ্যাখা যায় না। পুব
দিকে দলমা আর পশ্চিমে
রুয়াম। আসলে এটা আমাদের
স্বপ্নের পাহাড়। আরো কত
উঁচু হবে, এর শেষ কোথায়
জানা নেই। প্রতিদিন
একটু একটু করে বাড়ে, বড়
হয়ে যায়। অতিথিরা আসেন,
তাদের স্বপ্ন রেখে যান
এর ওপর। সদস্য সংখ্যা
বাড়তে বাড়তে ক্রমশ ৫০
ছাড়িয়ে গেল। যেখানে
তোমরা আছো, ওই যে, ওটা এক
মাড়োয়ারির বিড়ি পাতার
গোডাউন ছিল, মাটির
দেয়াল ঘেরা। সেটা কিনে
ফেললাম। সেখানে
ব্যারাক টাইপের ঘর
বানানো হল প্রথমে।
রান্নাঘর। আড্ডাঘরের
গোলপাতার ছাউনি। টিউব
ওয়েল, জেনারেটর, লাইট,
ফ্যান, পাম্পসেট,
ওয়াটার ট্যাঙ্ক, জলের
লাইন, ফুল-ফলের বাগান,
অতিথিশালা, পাকা বাড়ি,
স্কুল – কত কিছু ধীরে
ধীরে। অ্যারিড ল্যান্ড
তো, শুকনো জমি। বৃষ্টি
ছাড়া এখানে চাষ হয় না।
ডিপ বোরিং করতে হয়েছিল।
এই যে বন দেখছো, প্রথমে
শুধু আমরা, পরের দিকে
আমরা আর পাখিরা মিলে
করেছি। একজন দুজন
ট্যুরিস্ট আসতে শুরু
করল, সাংবাদিকরা, তাদের
কলমে আর মুখে গল্প শুনে
সেভাবেই এখন এত
ট্যুরিস্ট আসেন যে
সিজনে জায়গা দেয়া যায়
না। অগ্রম বুকিং করতে
হয়, যেমন তোমরা করেছো।
তবে সুজন হলে মিলেমিশে
সানন্দে থেকে যান সবাই।
কবিরা খুব পছন্দ করে,
প্রকৃতি প্রেমিকরা,
নির্জনতা যারা উপভোগ
করেন। আমরা তো কবিতার
ক্যাম্প করি প্রতি বছর।
২০/ ২৫ জন কবি তিনদিন।
পলাশ মেলা হয়।
প্রতিষ্ঠা দিবসে
বনসৃজন। স্কুলের
বাচ্চাদের দেখে মন ভরে
যায়।
কিন্তু আপনাদের দূষণ
মুক্তির কি হল ? ---
স্বপ্না জানতে চায়।
--- একটু ওদিক দিয়ে যাই
চলো। আমি বলি --- এই যে
গাছ, এত গাছ, এদের ফুল ফল
আশ্রয় পাখিদের ডেকে
আনলো, ঘর দিলো, খাবার
দিলো, প্রকৃতির খেলা
শুরু হয়ে গেল। মাটির
তলায়, ওপরে, গাছের মাথায়
সম্ভব সব প্রাণী জেগে
উঠল। গাছের অক্সিজেন
প্ল্যান্ট তো, বাতাসও
নির্মল হয়ে গেল। জানো,
আমাদের জল আর্সেনিক
মুক্ত, গন্ধহীন, খিদের
উদ্রেক করে। তুমি বেশি
খেয়ে ফেললেও ভয় নেই। আর,
এখানে ওপেনলি ধর্মপালন,
রাজনীতির চর্চার
প্রশ্রয় দেয়া হয় না।
আমাদের গোপালন দেখেছো।
চাষবাস। দুধে খাবারে
ভেজাল নেই। সোনাঝুরির
জঙ্গলে সোনাঝরা মাটিতে
বসে গান গাইতে ভাল
লাগবে না ? গাইবে নাকি ?
বসবে ? না থাক। কত পাখি
আছে জানো ? শহরে এসব
জানতাম না, ভাবিওনি
কোনদিন। টিয়া, ঘুঘু,
বুলবুল, বসন্তবৌরি,
ইস্টিকুটুম, কোকিল,
শালিক, হাঁড়িচাছা, কাক,
কুবো, চড়াই, টুনটুনি,
মুনিয়া, বক – কত পাখি, কত
সুর, একটা নতুন
জীবনযাত্রা শুরু হয়ে
গেছে। কি শান্তি !
স্বপ্না বলল --- এমা, একী
! ধানগাছের কথা বললেন না
তো ? কাশফুল, রাজহাঁস ?
--- সব কি আর একবারে বলা
যায় ? সবটা ধান নয়
কিন্তু। এপাশে সর্ষেও
আছে। আমাদের সম্বৎসরের
খাবার ওঠে এখানে। দিনে
দুবেলা মিলে অতিথি ছাড়া
৪০ জন, আর স্কুলের
বাচ্চাদের মিড-ডে মিল।
ভাবতে পারো ? ধান উঠে
গেলে সেই জমিতেই অড়হর।
একদিন এখানে কিছুই হতো
না। সবটাই নিজেদের শিখে
নেওয়া। আমাদের আর
আশেপাশের গ্রামের
কৃষকদের শিক্ষার জন্য
আমরা অ্যাডভান্সড
সায়েন্টিফিক
কালটিভেটিং-এর
ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা
করেছিলাম যাতে কম জলে
উন্নত চাষাবাদ করা যায়।
বড় পুকুরটা তো দেখলেই
না, মাছেদের ঘাই কেমন
লাগে। এদিক দিয়ে এসো
ফিরে যাই। তোমার খাবার
সময় হয়ে যাচ্ছে। একটা
বাজে। গরম নেই দেখেছো ?
গেটের কাছে এসে ভেতরে
ঢোকার মুখে একটা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের
ব্যানার দেখে স্বপ্না
জানতে চায় --- আচ্ছা,
এখানে সুলভ চিকিৎসার
ব্যবস্থাও আছে। কেমন,
কেমন সেটা?
--- একটা ডিস্পেনসারি
আছে, একজন ডাক্তার।
গ্রামের মানুষদের
সামান্য মূল্যে
চিকিৎসা আর ওষুধের
ব্যবস্থা আছে। মাঝে
মাঝে কলকাতা থেকে, আর
শ্রমজীবি
স্বাস্থ্যকেন্দ্র
থেকে বিশেষ চিকিৎসা আর
অপারেশনের ব্যবস্থাও
করা হয়। নিজেরা ভাল
থাকব আর আশেপাশে
গ্রামের মানুষরা কষ্টে
থাকবে সেটা তো হতে পারে
না। এইসব মিলেই তো
আমাদের ভালোপাহাড়।
শুধু স্বপ্না নয়,
গোলছাউনিতে তখন অনেক
অতিথি খেতে বসে, সবাই
হাঁ হয়ে কান্ড দেখছে।
কমল পরিবেশন করছিল। আমি
বলি --- কমল, দ্যাখ, শোন,
বাড়াবাড়ি করিস কেন ?
আপনারা কমলকে বলুন। ওই
বাজার সরকার কাম
প্ল্যানার কাম
ড্রিমার। খাও খাও। খেতে
শুরু করুন তো আপনারা।
দেখবেন কখন ফুরিয়ে
গেছে। লোকে বায়ু
পরিবর্তন করে, এটা
আপনাদের জলবদলের ফল।
হজম হয়ে যাবে। আপনারা
খান।
আমি বলি --- আমাদের
ওয়েবসাইটটা দেখেছেন ? ও,
দুজন মাত্র দেখেছেন।
বাকিরা খাবার পরে চলুন,
দেখাবো আমাদের স্কুলের
বাচ্চাদের জন্য
কম্পুটার সেন্টার।
সেখানে ওয়েবসাইটটা
দেখাবো। অফিসের আলাদা
কম্পুটার আছে। এসবই
কোম্পানির ডোনেশনে। এই
যে সোলার লাইট, গাড়ি,
স্কুলের বাস, সব।
পুকুরটাও। জানেন,
আমাদের মাসিক খরচ এখন
দু’লক্ষ টাকা।
ডেভেলপমেন্ট বাদ দিয়ে।
অনেক বিনিদ্র দিন কাটে
আমাদের ভরসা, ভাল কাজ
ভাল মানুষকে টানে, জল
যেমন জলকে টানে। মানুষ
নিজে পেরে ওঠে না নানা
কারণে, তবে এরকম কাজের
সঙ্গে দূর থেকে জড়িয়ে
থাকতে চায়। এখানে এসে
তারা খুঁজে পায়
দানপাত্র। তাদের
অনুদানে ভালোপাহাড়
এগিয়ে যাবে চিরকাল।
বলেছিলাম না আমাদের
স্বপ্নের পাহাড়টা একটু
একটু করে বেড়ে উঠছে
অতিথিদের
স্বপ্নদানেও। সেটা এই।
না, কোন সরকারি অনুদান
নেই। এমনকি স্কুলের
বাচ্চাদের মিড-ডে মিলও
আমরাই দিই। এই যে
আপনারা এতজন আছেন। কে
জানে কার হৃদয় বলছে
জুড়ে যাবার কথা। এই যে
কমলকে দেখছেন। সংসার
নেই, পরিবার নেই, সারা
দিনরাত বছরের পর বছর
এখানে থাকছে শুধু যা
খুশি করবে বলে। কেউ
বিশ্বাস করবেন ও বঙ্কিম
পুরস্কার পেয়েছে ?
দেখুন ওকে, কেমন ভাবে
দাড়িতে আঙুল চলছে আর
স্বপ্নের ঘোরে কথা বলে
চলেছে , মাঝে মাঝে বলছে ---
জয় বৃক্ষনাথ, জয়
বৃক্ষনাথ ... জয়