" দীর্ঘ তাকিয়ে আছি
"। এভাবে একটা কবিতা
শুরু হয়। নিজের দেখাকেই
দেখতে চাওয়া। তাই
দীর্ঘ। অনুভব এবং
স্বাদ। তাকিয়ে থাকা
উঠতে থাকে। তার দম
বেদম। রুকস্যাকের
পাশেই বসে পড়া শ্রান্ত
পা। দেখতে পাওয়া যায়।
ছোটবেলায় পেনসিল হাতে
পড়লেই সূর্য আর পাহাড়।
হাজার হাজার। পিউবারটি
কালে কলম। তখন সংলগ্ন
কিছু সবুজও। তখন মেঘ,
বহমান। সারা শরীরের
গাছ, সেই চিরহরিৎ টের
পেতে পেতে টিন শেষ।
কুঁড়ির চন্দ্রবিন্দু
শেষ। তখন উল্টো
ত্রিভুজের দিন। তখন
উল্টো টিলা বেয়ে ওঠা।
পায়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি
বাড়ি ঘোরা ঠিকে
মাস্টার। সাইকেল নেই।
শুধু একটা কথা মাঝে
মাঝেই মাথার ভিতরে,
ঘুরে ফিরে। একদিন ঠিক
পাহাড়ের কাছে চলে যাব।
শুনলে লোকে কি বলত,
ডাক্তার কি বলত এবং
বাড়ির বড় ছোটরা। জানা
হল না। পাথরের হাতে
থ্যাঁতলানো পা, বরফের
দাঁতে বিধ্বস্ত আঙুল,
খরস্রোতার সরু সাঁকোর
মাথায় বশহারা নিজের
মাথা। দেখানো হল না।
জানা হল না
প্রতিক্রিয়াগুলোও।
একদিন ঠিক পাহাড়ের কাছে
চলে যাব। কাঁচা যৌবন
তুমি আচমকা চলে গেলে।
সেদিন বরফ পড়ল প্রচুর।
তাঁবুর মাথা নেমে আসছে
বারবার। সব বর্ম,
স্লিপিং ব্যাগ মিথ্যে
হয়ে কেবলই এক ট্রেমেলো
। তার নোটস জানি না।
গভীর রাতে শান্ত সাদা
খাতা। ডাবল ফুলস্ক্যাপ
। হু হু এক আলোয় আঁকা
সোজা ত্রিভুজ। লাল ডিউজ
বল হাতে রান আপ শুরু
করতে চাওয়া প্রিলিউড।
ছাত্র বাড়ির তিন তলার
জানলা দিয়ে সূর্য আসে
সূর্য যায়। রানিং
বিটুইন দ্য উইকেটস।
অণুকনা হয়ে ছড়িয়ে যায়
বল বেল আম্পায়ারের
আঙুল। দীর্ঘ তাকিয়ে
আছি।
কোপগুলো একের পর এক
নামতে থাকে। রক্ত ছিটকে
পড়ছে চারধারে। সব গাছ
ছাড়িয়ে এক পায়ে
দাঁড়াবার মুক্তি কে
দেখতে পেয়েছিলো ? গাছের
মাঝেই সেই অনির্দেশ পথ।
ইস্তাহারগুলো,
মোমশিখারা , তাদেরও তো
বাড়ি ফেরা থাকে ! বেলা
বাড়বে। জীপের সময় কমে
আসবে ক্রমশ। মানুষ ছবি
তোলে। কোপের দৃঢ়তা ,
রক্তের বহতা। তুলে যায়
যতক্ষণ আছে। তারপর
দৃশ্যে বেলা হয়ে যায়।
ধপধপে সাদা দিকভোলানো
অবাস্তব, পেট্রল
ডিজেলের গন্ধ শোঁকে।
কিছু একটা পড়ে ছিল, কিছু
একটা পড়েই থাকে। ইমান,
বেইমান, নেট, সনেট,
ব্রেকিং নিউজ। শূন্যে
সবুজ হাতপাখা নড়ে। সেই
হাওয়ায় শান্তির সাদা
কোরাস। প্রতিধ্বনির
জন্ম হয় রকটার্নে ,
চড়াইএ, পড়ে থাকা
চামড়ায়। যার ডাবিং হয়
না।
প্রতি মোড়ে অবিশ্বাস্য
বদলে যায় বলে তাকে
চলমান মনে হয়। আমি চলি
তো সেও চলে। তো
ভালবাসা। আপনাপনের
পন-টিকে গুণ ভাবলে
নতুনকে আর সময় দিয়ে
বাঁধতে হয় না।
প্রাসঙ্গিকতা দিয়েও
না। সুদূর এক ক্ষীণরেখা
ধীরে নদী হয়ে যায়।
ঘরছাড়া তার চিরকালীন
পা। একদিন তার উৎসারের
সঙ্গী হতে পারা। একদিন
জীবনের। চুড়া খাদ
উপত্যকা তরুবাহার এসবই
স্থানিক মায়ার পৌষ
ফাগুন। দাঁড়িয়ে পড়া হল
না। রক্ত তীব্র হতে
থাকে। পায়ের তলার মাটি
আর তারও তলার
পাটাতনগুলি প্রবল
বিচ্যুতিময় হয় ওঠে। আর
আকাশে আন্দোলন আঁকা হয়।
মানুষে। তার জাগা, ঘুম,
ওই আকাশে হেলান দিয়েই।
সোনার তরী থেকে কিরণ
তরী শূন্যের ঢেউ বেয়ে
বেয়ে নতুন দেশ । নতুন
মানচিত্র। হারিয়ে যায়
একদা। নির্মাণ
বিনির্মাণ আবারও
নির্মাণ। সোজা ত্রিভুজ
আর উল্টো ত্রিভুজের
জোড়থাংএ এক নরম রুমাল।
তার এক কোণায় সুতো দিয়ে
লেখা র। সেকি রঞ্জন?
গ্লেসিয়ার ক্রিভাস
ব্লিজারড আর রারাং
গ্রামের মন কেমন করা
চবুতরায় সে কি রঞ্জন ! যে
লিখেছিল, সে কোন কবিতার
পঙক্তি হয়ে অবাস্তব হয়ে
গেছে। নাহ, কোন এপ্রিল
কোন নভেম্বরের প্রথম
অন্ধকারে প্রথম আলোয় সে
আর জ্যামিতি নয় ।
ওপাশে ফোন বেজে যাচ্ছে।
অপেক্ষা করি। ৭০০
কিলোমিটার দূরে ফোন
বেজে যাচ্ছে। মনে পড়ে
তার দুই গালে সূর্যোদয়
আর সূর্যাস্ত। শিহরণ
হয়। হ্যালো। পাইন পাতার
মর্মর শুনি। সাড়া দিই
না। এক দুই তিন চারবার।
শুধু এই ধ্বনিটুকুর
অপেক্ষায় দীর্ঘ তাকিয়ে
থাকে রুকস্যাক । দূরে
ফোন থেমে যায়। নেমে যায়
ঢাল পাকদন্ডী কিম্বা
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে।
* শুরুর উদ্ধৃতিটি শ্রী
বারীন ঘোষাল -এর একটি
কবিতা থেকে নেওয়া *