ঋতুবদল পেরুনো
গন্তব্যের দিকে
বর্ষা আসে। বসন্ত যায়।
শীতকাল পুরোটাই শুকনো
জমিনে স্মৃতিপাতা
ঝরার।
তারপর তীব্র দহন দুপুরে
সেঁটে থাকে নিজের ছায়া
এক নিরেট দেয়ালে।
কোথা থেকে ভেসে আসে তখন
বুনোফুল মাতাল সৌরভ!
সোনালী আভার শরীর জুড়ে
সাত সাতটা অশ্ব তুমুল
দাপায়, সূর্যের
ক্যানভাসে। এই রোদ ওই
মেঘে ম্রো আর মারমা
মেয়েদের দুর্গম পথ বেয়ে
উঠে যাওয়া তরতর। বাঁক
থেকে পাক খেয়ে ইমেজারি
ফুটস্টেপে বাজে ছন্দ।
আর আচমকা তখন তীব্র
ঝাঁকুনি, শ্বাসরোধী
হুঙ্কার। পা থেমে যায়
হঠাৎ খাদের কিনারে।
অমসৃণ অজানা পথ
পিচ্ছিল পাথুরে
কাসকেড
প্রবল ধ্বস
ছায়ারা প্রখর তখন রুদ্র
ভয়ঙ্করে। বুকের
ধুকপুকুনিতে অদৃশ্য
ঈশ্বর এঁকে ভ্রমণসঙ্গী
সমতলে ফিরে গেছে কবে।
ভ্রমণ একাকী তাই।
ভাঙন পেরোতে, প্রকৃতির
প্যানারোমিক ভিউ ধরে
জীবনের ছবি।
আহা জীবন.. সেও মহোৎসব
যদি তবে কেন তাতে অত
ধূসর শেড!
পাসিংপাড়ায় ছ’য়
তাজিংডং এ কুড়ি
ধূসর রঙ থেকে খুলে যায়
অভ্যাসের সুতো।
মাঝপথে মনে পড়ে সইপাতা
চিরল আলো মেখে চলা হলো
বহুদিন, মাথা নু’য়ে
কেটে গেল কতগুলো রাত! আহ
অন্ধকার!
তবে কেন অটল ওই উচ্চতা
ভাবতেই বেগুনি সাদা
লেসের বর্ডারে কমলার
আভা জমে চলকে ওঠে খুশি!
হাওয়ায় ঠাসা জলকণার
সাথে প্রিজমিক রোদ পড়ে
ধূসরতা মিলিয়ে ফেস্টিভ
রঙগুলো কী করে একে একে
ফুটে ওঠে ওই এক উচ্চতার
কাছে?
রোদ ভাসে
রোদ হাসে
ডুবে যায় রোদ টুপ ওই
খাদের আড়ালে
কে যেন বলেছিল, বেরিয়ে
পড়! সব্বার জন্য
ট্রেকিং আদর্শ নাও হতে
পারে। নাই বা হলো। কেউ
কেউ তো তাজিংডং ভাবতে
ভাবতে সমতলে কাটিয়ে যায়
কুড়ি কুড়ি বছর। মেঘের
কুলফি খেতে খেতে কেউ
পাসিংপাড়াতে তার ছবি
আঁকে ধরো আরও পাঁচ বছর।
কুড়ি আর পাঁচে মোট
পঁচিশ, এবার তুমি পঁচিশ
না পাঁচ, পাঁচ না কুড়ি
নেবে ভাবো!
মন্দ কী মন! চলো একবার,
আমরাও পাখি ওড়াই!
পিক সিক্সটি নাইনের
গায়ে মাথা তোলে মদক
তোয়াং
পিক সিক্সটি নাইন আর
তার ভেতর দিয়ে ঠিক যেন
পিং পং বল এক - পাড়ি দেয়
পথ। এবার সে পৌঁছে
যাবেই যাবে। মেঘবাড়ির
জানলা খুলছে তখন এক
ঝাঁক মেঘ। বাঁক থেকে
বাঁক, জমাট মেঘের ভাঁজ।
যাকে পথ বলে মনে হয় সে
কেবল হাতছানি পতনের!
পেরিয়ে যেতে যেতে আলো
কমে বুকের কাছে উঠে আসে
গোলাকার আবেগ। ছড়ানো
তুলোর মেঘ যেভাবে পৌঁছে
যায় নিভৃতির কাছে, নেমে
আসে সেভাবে রাত। পুবের
পাহাড়ে তখন নির্জন
নক্ষত্র এক চাঁদের চওড়া
আলোয় ট্রাভেলবুকে
লিখতে থাকে পাহাড়ি
ট্রেইলের খাড়াই আর
খরস্রোতা নদীটির নাম।
লেখা শেষে আদিম শরীরে
বুনে দেয় ঢেউ রুপোর
মস্ত চাঁদ। উড়ে যায়
নিষেধের কালোয়াতি
দ্রুতলয় উর্ণা।
মন্দ্রসপ্তকের চাঁদে
প্রণয় স্পর্শশেষে লেখা
হয় প্রাণময়
মুহূর্তকথা।
সমস্ত ছায়াপথ জুড়ে
সেদিন সম্পূর্ণার
আত্মকথন।
মন শিখে নেয় – সৌন্দর্য
আর বিশালতায়
টপোগ্রাফিক ম্যাপে
মাথা উঁচু করে যে তার
নাম কেবল মদক তোয়াং।
স্মৃতির পাতা পুড়ে
মন চলে পুব পাহাড়ে
পুব পাহাড়ের দিকে
ঝুলন্ত ব্রীজ পেরিয়ে
পাহাড়ি পথ।
ঝুপ করে সন্ধ্যা নামার
আগে ঝিরির কাছে নামে
বিকেল, রোদচশমায় ঠিকরে
পড়া আলোয় সর্পিল
ভঙ্গিতে রোদ নেমে যায়
খাদের দিকে। মোমমাজা
শরীরে তখন কার ছায়া, কার?
ও কোন পাহাড়!
ঠিক সে মুহূর্ত আড়াল
করে যদি অসীমের
সময়ট্রিগার মনকে নিয়ে
চলে স্মৃতির কাছে, একটা
ভ্রূণ গর্ভফুলে তখন
ডানা ঝাপটায় খুব।
গর্ভের বাইরে একটা একটা
করে রাত নামে আর
অন্ধকারে কথাদের
স্ফুলিঙ্গ ওড়ে। ছিটকে
ওঠা কান্নায় সেই অদেখা
মাকে ছুঁতে সে গিরিপথ
পেরিয়ে বেরিয়ে আসতে
চায়।
পাহাড়ি মেঘের দেশে
মানুষ মেঘেরা উড়ে যায়
রূপকথার দুঃখহরা সেই
গাছটির খোঁজে।
যেখানে কেবল নিজের সাথে
নিজেকে ভাঙার চড়াই
উৎরাইয়ের ট্রেকিং।
নীলগিরির নীলে
ফ্লুরোসেন্ট সবুজ
বাতাসে আঙুল রেখে তারপর
মুখ আঁকা - মানুষের..
পাহাড়ের।
শান্ত অটল আর নির্ভিক
মুখ অথচ নিঃসঙ্গ কত। আর
ব্যাকুলতা ভরা সৃজনে,
দুর্ভেদ্যতার গভীরে এক
প্রাণশিকড় প্রোথিত হয়
প্রতিবার। থাকে
অনিশ্চিতি। থাকে
অদৃশ্যে কুয়াশা ঘেরা
দুঃসহ ভার। নীলগিরির
চেনা-অচেনায় বয়ে যায়
দেখা না দেখার দিন আর সে
ব্যথার নীলে নিওন পিঙ্ক
আর ফ্লুরোসেন্ট সবুজ
হয়ে ছড়িয়ে যেতে যেতে মন,
ফিরে আসে তার কাছেই
বারবার।
শিখর ছুঁয়ে সাজেকের
উপত্যকায় শেষে
সমকোণে শীর্ষদেশ ছুঁয়ে
হয়ত নামছে তখন কোনো
ট্রেকার। দীর্ঘ শরীরে
তার কেটে কেটে বসা
কুয়াশা থেকে বেরিয়ে
আসছে সোনালী আভার সাত
সাত ঘোড়া। নেমে আসার
পদক্ষেপ আর চড়াইয়ের
গতির সন্ধিক্ষণে ঝরছে
বুনোফুল।
পাখি উড়ছে, এক-দুই-
তিন..অজস্র রঙিন পাখি।
পাহাড়ি প্রশস্ত বুকে,
নির্জনে কোথাও তখনই
নামছে আবার অঝোর
বৃষ্টি। সাজেকের কোনো
জুমঘরে বসে সে
বুনোবৃষ্টি দেখতে
দেখতে মন শিখছে
সমর্পণ।
মন ভাসছে
মন হাসছে
উড়ছে মনপাখি, অনন্তে
আবার