১.
যখনই পুরোনো কথা ভাবি,
দেখি একটা জায়গায় গিয়ে
সব স্মৃতি শেষ হয়ে
যাচ্ছে।
আবছা হয়ে যাচ্ছে
ভাবগুলো, অভ্যস্ত হয়ে
পড়ছি অন্ধকারে।
আসলে সেসময় কোনো ভাষা
ছিলোনা আমার -
প্রকৃতিকে আয়ত্ত
করছিলাম হয়ত। শব্দ
নিচ্ছিলাম - ছড়িয়ে
দিচ্ছিলাম কোথাও।
আশ্চর্য দুপুরগুলো,
অফিস থেকে মা
বাবার সেই ফেরা, টিনের
চালের ভাড়াবাড়ি,
জানালার শিক , তারও পরে
নেমে
যাওয়া নদীর ঢাল, ওপারের
ঘরবাড়ি, গাছপালা ছড়ানো
আকাশ। এসব দিয়ে তৈরি
হচ্ছিল আমার ভাষার
অবয়ব। প্রাণ
প্রতিষ্ঠারা , অপেক্ষা
করছিলো - বেজে
উঠছিলো কোথাও।
সেই সন্ধ্যেটা এখনও
ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে -
ছাই রঙা সেই শ্লেট,
খড়িগুলো।
মা আমার হাত ধরে
শ্লেটের ওপর বোলাচ্ছে।
ফুটে উঠছে - 'অ'।
অন্ধকারে একটা সাদা
আভাস। ভাষার চক্ষুদান।
মায়ের হাত ধরে পথ শুরু
হয়ে
গেলো। তখনের সময়টুকু
ছিল শুধু পথকে
ভালোবাসার - গন্তব্য
জন্ম নিচ্ছিল, আর
তার মূল মাটির গভীরে
সম্পর্ক তৈরি করছিল
প্রকৃতির সাথে, উপাদান
খুঁজছিল
বাঁচার।
২.
টানা প্রায় বছর দেড়েক
সকালবেলায় টিউশন পড়তে
যেতাম কলেজ স্ট্রীটে।
সেই
যাওয়া , আমায় ভাবিয়ে
তুলতনা সেরকম। চুপচাপ
পবিত্রতা দেখতাম সবার।
কখনও
গান শুনে শুনে শান্ত
হয়ে যেতাম, শূন্যতা ভরে
থাকত - ভেতর থেকে অনেকে
অনেক
কিছু বলে উঠত যেন।
শেষের দিকের বেঞ্চে,
অঙ্ক করার ফাঁকে ফাঁকে
বলাগুলো
লিখে ফেলতাম আমি। সিঁড়ি
কাঁপিয়ে নেমে আসতাম
রাস্তায়। বন্ধুরা চলে
গেলে
ইউনিভার্সিটির সামনে
চা বিস্কুট খেতাম।
ফেরার পথটুকু নিজের
সাথে কথা বলতে
বলতে চলে আসতাম। এসে
লিখতাম, বৃষ্টির দিনে
ঘুমিয়ে পড়তাম অনেকটা।
আসলে ভাষার পথেই এইসব।
আমাদের লেখাজীবন,
ভালোবাসা, সমস্ত মায়া -
এমনকি
চুপ থাকা অবধি। নরম
দুপুরে ভেসে আসা গান,
নন্দন চত্বরের
নিয়নগুলো, বই
মেলা, দক্ষিণ কলকাতা
জোড়া প্রেম, উত্তর
কলকাতার ঢিমে তালের দিন
- সবই
ভাষার মুখ হয়ে ওঠে
কোথাও।
ভাষার প্রাণ প্রতিষ্ঠা
সেখানেই যখন আমরা
সমৃদ্ধ করছি তাকে -
মৌলিক কিছুর
সৃষ্টিতে। যে ধূপ মা
প্রতিদিন নিবেদন করে
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে।
শান্ত একটা
ঘরে একদিন দেখেছিলাম
তার ধোঁয়া খালি ওপর
দিকে যায় - আকাশের দিকে -
আরো
লীন হয়ে যেতে চায় সে।
আমাদের ভাষাও সেরকম - এক
উপলব্ধির যাত্রা।
চারিদিকের দেখা , বলা ,
ছোঁয়ার সাথে সাথে না
বলা, না দেখাদেরও এক
করে
দেয়।একটা কোলাজ তৈরি
করে অনুভবের - যাকে বৃহৎ
অর্থে বেঁচে থাকা বলি।
[ ওপরের লেখাটির নাম
সন্দীপন
চট্টোপাধ্যায়ের 'শেষ
মেট্রো' শীর্ষক একটি
ছোটো গল্পের শেষ দুটি
পংক্তি ]