২১ নাকি ২১ নয়, তাতে কিছু
আসে-যায় না ওদের। ওরা
ঝকঝকে। চটপটে। রোজ
যেভাবে বাংলা বলে,
একুশে মোটেও সেভাবে নয়।
এমনিতে বাংলায় ‘নট সো
গুড’। তবে সেদিন একটু
বেশি বাঙালি। স্কুলের
প্রার্থনাসভায় ২১ শে
নিয়ে বড় বড় বক্তিমে,
আগেরদিন রাত জেগে
মায়েরা সেগুলো নেট
ঘেঁটে বের করে রাখেন।
বাবা আপিস থেকে ফিরে
আরও কিছু দরকারি তথ্য
দাগিয়ে দেন। না, এসব
নিয়ে মোটে ছেলেখেলা নয়,
কড়কড়ে দশ দশটা নম্বর
আছে বলে কথা!আগের বার
মাত্র তিন নম্বরের জন্য
প্রথম তিন-এ জায়গা
পায়নি।তাও আবার এই
সৃজনশীল কাজেই পিছিয়ে
পড়েছিল বলে। আর সবচেয়ে
বড় কথা, বুবুল ওর চেয়ে
অঙ্কে খারাপ হয়েও প্রথম
তিন-এ। এসব ক্ষতের কোনও
মলম হয় নাকি? সুতরাং রাত
জাগো, নেট ঘাঁট মা-বাবা।
আর ছেলেমেয়ে, তোমাদের
বাংলার সাক্ষী থাকুক
এবছরের একুশ।
--তুই যা-ই বল শিরিন,
এমকেসি যতই কপচাক,
বাংলাটা জাস্ট শেষ হবে
না দেখিস।
--অ্যাই, ভাষার কি ছিরি
রে! টিচারকে বলছিস
কপচাক!হাউ ইনডিসেন্ট!
-- আরে সরি ইয়ার!ওই হল। সব
কথা কি আর অত
ক্যালকুলেট করে
গাঁতানো যায় নাকি!
-- শিরিন ঠিকই বলেছে
স্যান, তুই বড্ড বাজে
বকিস।সেদিন ক্লাসে
আরএনটি-র লেখা নিয়ে
কিসব বললি!হাউ ফানি!
-- দ্যাখ রায়ান, একদম
বেশি ফুটেজ খাবি না।ওসব
বাংলা-ফাংলা আমার
অ্যান্টেনায় ধরে না।
একটা পুওর
ল্যাঙ্গুয়েজ। যত্তসব
একগাদা ল আর স্পেলিং
কনফিউশন!
--প্লিজ, স্যান, ওটা তোর
ওন ভাষা, ঠিক আছে! কী যেন
বলে মা-ত-রি, মানে ওই
মায়ের ভাষা আরকি।এটা
একটু তো হ্যান্ডেল কর।
-- তো? করছি তো
হ্যান্ডেল। বাংলাতেই
তো কথা বলছি। তোর কি
বুঝতে প্রবলেম হচ্ছে?
না তো! দেন? তাবলে কি
এমএস ডাট বা ওই কি যেন
বলে…হ্যাঁ, বঙ্কিমি
বাংলায় কথা বলতে হবে
নাকি?
--এমএস! শোন উনি ফাটাফাটি
ইংলিশ জানতেন, তবু
কিন্তু ইংলিশ ছেড়ে সেই
বাংলাতে লিখেই এত শাইন
করেছিলেন।
-- সো হোয়াট! সেটা ডাটের
পার্সোনাল ম্যাটার।
আমি তার মতো হব কেন? আরে
জানিস না! আমি আমার মতো!
আর বাংলা নিয়ে এত
ফ্রাসট্রু খাস না তো।
ওটা জয়েন্ট-এর সিলেবাসে
নেই।
--বোকার মতো কথা বলিস না
স্যান, আরএনটি-র লেখা
নিয়ে তুই ক্লাসে সেদিন
স্যারকে যেভাবে ক্রস
করছিলি! জাস্ট
আনবিলিভেবেল! বেফালতু
কেস খেলি।
---আরে ধুর! তোরাও না!
খিল্লিও বুঝিস না!
বোরিং ক্লাসে ওটা একটা
ঝিঙ্কু এন্টারটেনমেনট
ছিল। আর তা ছাড়া স্যান
তেমন কিছুই বলেনি।
স্যারই মাঝখান থেকে
ফালতু সেন্টু খেলেন।
আরে আরএনটি বলে কি
ক্রিটিসাইস হবে না
নাকি? এখন যুগটাই
ক্রিটিসাইসের। পেপারে
দেখিস না!বাপ ছেলেকে
ছাড়ে না! আর লুক, সব
নেসান-ই ক্রিটিসিজিমের
ওপর দাঁড়িয়ে।
পলিটিক্যাল দল দ্যাখ।
সেখানেও আত্মসমালোচনা
চলছে। মানুষ নিজেকেই
নিজে ছাড়ছে না আর টেগোর
তো কোন ছাড়!
-- তোর কথার যুক্তি আছে
রাহুল।বাট লুক, আরএনটি,
জেডি এরা কিন্তু অওশাম
লিখতেন। জাস্ট জেম।
এদের নিয়ে টানাটানি
করিস না প্লিজ। জাস্ট
ঝাঁটটা জ্বলে যায়।
--আরে, তুই পার্সোনালি
নিচ্ছিস কেন?মানছি তুই
বেঙ্গলিতে গুড।তা বলে
ম্যাক্স টু মাক্সের
কথাও তোকে মানতে হবে।আর
আরএনটি যাও বা একটু ইজি
কোথাও, জেডি তো আমি
ক্যাচ করতেই পারি
না।হরিবেল!
-- সেটাতোরসমস্যা।
দাশেরনয়।
দাশবোঝেএমনপ্রচুরলোকআ
ছে।
--অবভিয়াসলিআছে।
আমিতোবলিনিনেই।
আমিবলেছিশুধুআমারএটাট
াফলাগে। মিটেগেল।
ব্যাস! এ
নিয়েএতবাওয়ালদেওয়ারকি
আছে?
-- ছাড় না কে দাশ কে টেগোর
এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে
ক্যাচাল করছিস কেন?
-- জাস্ট শাট আপ
রোহিত।কথাটা আমার
সঙ্গে রাহুলের হচ্ছে।
তুই এর মধ্যে
ইন্টারফেয়ার করিস না।
-- ওহ! শিট। কামন
ফ্রেন্ডস! বিহেভ
ইওরসেল্ভস। কি হচ্ছে
কি?
--তুই জানিস না রায়ান।
যেদিন থেকে আমি অনি-কে
হ্যাঁ বলেছি, সেদিন
থেকেই রাহুল আমার সঙ্গে
মিসবিহেভ করছে।
-- যাব্বাবা হচ্ছিল তো
আরএনটি-এমএস এসব। এখানে
অনি আবার কোত্থেকে এল?
-- এল বিকজ রাহুলের
বিহেভ। তুই যেমন জেডি
নিতে পারিস না। আমিও
তেমন তকে। ওকে?
নন্সেন্স।
-- জাস্ট স্টপ ইট শিরিন।
অনি আ ব্লাডি গাই। ও
জানত আমার কেসটা।
তারপরেও জাস্ট বেইমানি
করল।
-- আরে তমার কেস! ঝেড়ে কাশ
তো চাঁদু! কি কেস রে
রাহুল?
‘কেস’ তো প্রবল। তার
চেয়েও প্রবল আলোচনার
গতি-প্রকৃতি। গতিপথও।
বাংলার কোন এক দুখি
ঘরের আলমারির তাক থেকে
ফিচেল হাসিতে উঁকি
মারছে যে বই, তার মলাট
খানিক মলিন হলেও নাম
এখনও স্পষ্ট। “সহ্য কর
বাংলা ভাষা।”
সুব্রত সরকার আপনি কি
শুনছেন?
---মনীষা
মুখোপাধ্যায়
(১। আরএনটি-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২। জেডি- জীবনানন্দ
দাশ
৩। এম এস ডাট- মাইকেল
মধুসূদন দত্ত
৪। সুব্রত সরকার- সাতের
দশকের কবি। বিখ্যাত
গ্রন্থ ‘সহ্য কর
বাংলাভাষা’)