যেভাবে মন্দিরে খুচরো
ছুঁড়ে দেয়, সেভাবেই
জীবনটাকে ছুঁড়েই
দিয়েছিলাম। মন্দিরে তা
পৌঁছল কই! যেভাবে
সন্ধানী ভিখিরী কুড়িয়ে
নেয় পয়সা, সেভাবেও তো
কেউ তুলে নিলো না আমায়,
আমাদের। শতাব্দী,
রাজধানী অথবা সাউথ
লাইনের লোকাল হয়ে এগোতে
শুরু করেছিলাম। লোক
আসে, লোক যায়, সহযাত্রী
কই? তারপর যেদিন অবরোধ
হল লাইনে, থম মেরে
দাঁড়িয়ে জীবন, হকাররাও
সব ক্লান্তিতে গা
এলিয়েছে হঠাৎ দেখা তার
সাথে। আলাপ ছিল, দেখা
হলে কথা হয়েছিল আবহাওয়া
নিয়ে যেমন হয়। এভাবে এত
প্রেমে অবশ্য এই প্রথম,
নাকি সেও ছিল যেমন থাকে
অস্থি-মজ্জা? ফুটবল।
একটা সবুজ ঘাসের
গালিচায় সে কতদিন ধরেই
তো দৌড়ে চলেছি, চলেছিই...
বলের সাথে অথবা পেছনে,
সামনে। আর কত না ফাউল আর
ফাউল। ফ্রিকিক পাই, না
পাই দৌড়তে তো হবেই।
ফুটবল এক ধর্মের নাম।
বল হল CAUSE, আর তেকাঠি?
লক্ষ্য। ধর্ম আক্রান্ত
হলে যেমন ‘মন্দির,
মসজিদ ঘিরে দাঁড়ায়
সম্প্রদায়’ সেভাবেই
আমি, আমরাও, ফুটবল কে
ঘিরেই। র্যাঙ্কিং ১৫৫
হোক বা ৩ তা নিয়ে ভাববে
প্রাজ্ঞজন। আমরা যা
জানি খেলা চলাকালীন
দাঁড়ানো নিষেধ। আলজিভ
চুম্বনে তাকে সমস্ত
শরীর দিয়ে... ভালবাসায়
যেমনটি হয়। ফুটবল এক
লাল বর্ণ তরল, যাতে বুঁদ
হয়ে আছি আজীবন নইলে মা
কি করে হবে ডিফেন্ডার,
বাবা স্ট্রাইকার! আর
নিশীথ কাকু সুয়ারেজ। কম
কামড় দিয়েছিল বাবাকে,
বাবা সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল শহর ছাড়বে।
কিন্তু রেফারীতো আছেই,
সে বাঁশি বাজাল। রেড
কার্ড। শয্যাশায়ী,
পঙ্গু। বাবা কিন্তু তার
বন্ধুর দুই সন্তানের
দায়িত্ব নিল সানন্দে।
নিশীথ কাকুর স্ত্রীর
চোখে জল। বাবা কিন্তু
ফেয়ার প্লে ট্রফি পায়নি
কখনো।
ফুটবল এক ঈশ্বরের নাম।
নইলে বিড়াল ছানার থেকেও
ভীরু আমরা এত সাহসী
হলাম কী করে! পদ্য লিখছি,
গদ্য লিখছি আর উড়িয়ে
দিচ্ছি স্টেডিয়ামের
বাতাসে, জীবনটাকেও।
চারদিকে এত বারুদ ও
বিপদ তবু অন্ধের মত,
চোখে ঠুলি পড়া অশ্বের
মত দৌড় আর দৌড়... আষাঢ়ের
ঘনঘোর মেঘের দিকে নইলে
হাত বাড়িয়ে বলব কেন—
এসো ফুটবল আমাকে
মুগ্ধতা দাও আমরা
শূন্যতা চিরে বানাই
ময়দান, যেখানে আগামী
প্রজন্ম দৌড়বে বলের
সাথে, পেছনে অথবা
সামনে।
জানেন ফুটবল এক গোপন
পাহাড়ের নাম, যে পাহাড়
আরোহণ আমাদের ঋদ্ধতা
দিয়েছে আজন্মকাল। যার
শিখরে পৌঁছলে,
মধ্যরাতের গীর্জা থেকে
ভেসে আসা মূর্ছনার মত
কি যেন, যা আমাদের স্নান
করায়, আমরা পবিত্র হই।
হ্যাঁ, ফুটবল এক ধর্মের
নাম। এসো ধার্মিক হই।
আর বেরিয়ে পড়ি
পরিব্রাজকের মত। হেঁটে
দেখি আদতে কলম্বাস ঠিক
বলেছিল কি’না? টেবিল হল
টেবিল, আর চেয়ার ও
চেয়ার। সে তো শুনে আসছি
সেই কবে থেকে। এসো
আবিষ্কার করি যে এ
পৃথিবী নাকি আদতে
ফুটবলের মতই গোল। আর
জীবন আসলে এক ফুটবল
গ্রাউন্ড। গ্রাউন্ড
জিরো। যেখান থেকে
উৎক্ষেপণ হবে ‘ঐহিক
ফুটবল সংখ্যা’।
ওই দ্যাখো মাঠে নামছেন
ক্যাপ্টেন কমল
চক্রবর্তী। আর পেছনে এক
এক করে নিষ্ঠাবান সেনার
দল। দ্যাখো ডাগ আউটে
বসে, কোচ সমর রায়চৌধুরী
আকাশের দিকে তাকিয়ে
অস্ফুটে কি যেন বলল। ও
বলা হয়নি এবারের
বিশ্বকাপের
অংশগ্রহণকারী ৩২ দেশের
মধ্য থেকে লড়াকু সেরা
এগারো দেশ কে বেছে,
তাদের সাহিত্য নিয়ে
তৈরী হয়েছে আমাদের
‘বিশ্ব একাদশ’।
বিভাগীয় সম্পাদক অদ্বয়
চৌধুরী। সাথে নিয়মিত
বিভাগ। এক দীর্ঘায়িত
মেলানকলি, আর ছ’ইয়ারির
গল্পে শুভ্রর পর এবার
ব্যাটন বারীন ঘোষালের
হাতে।
টস হয়ে গেছে। ডাগ আউটে
সমর দার পাশে বসে দাঁত
দিয়ে নখ কামড়াচ্ছেন চে
গুয়েভারা, পাশে রং আর
তুলি হাতে
বত্তিচেল্লী। মাঠে এখন
অনেক রোদ। যে সব সাপেরা
এত দিন ছিল শীত ঘুমে এখন
একে একে জেগে উঠছে
তারা। কিক অফ। বল
গড়াচ্ছে। যুদ্ধের
শুরু।