আমি জানি না ভাষার
বাইরে কী আছে। আমি জানি
না ভাষার বাইরে কী নেই।
তবু, বাংলা ভাষা। তবু
বাংলাভাষা।
সমস্যাটা কখন হয় বলুন
তো? যখন বলি, চোখ থেকে
অশ্রু নয়, থকথকে ফ্যাদা
ঝরে পড়ছে। তখন সমস্যাটা
ঘোর হয়। পাঠক ভাবতে
থাকেন, এটা কি বাংলা
ভাষা? কবিতা লেখার
সমস্যাটা, আমার ধারণায়,
এখানেই শুরু হয়, ও
বরাদ্দ থাকে।
কোনো কবিই সামাজিক
ভাষাকে কনফর্ম করেন না।
করলে সেটা কবিতা হয় না।
কোনো কবিতাই বাংলা
কবিতা নয়, ইংরেজি
কবিতাও নয়। কবিতা তার
ভাষার নামকরণ নিজের নাম
অনুসারেই করে থাকে।
একটা কবিতা একমাত্র
সাংস্কৃতিকভাবে বাংলা
হতে পারে, অবিশ্যি কোনো
সংস্কৃতি কর্মীর
সাধ্যি নেই একটি কবিতা
রচনার। কবি
সংস্কৃতিকর্মী নন।
মঞ্চ তাঁর থুতু ফেলার
জায়গা।
একটা ভাষা কী? একটা ভাষা
আসলে একটা প্রদেশ। সে
যখন রাষ্ট্র হয়ে যায়,
তখন সে প্রতাপান্বিত
হয়, সে একটা বিশেষ
প্রতিষ্ঠানের হয়ে উঠতে
(বা পড়তে) বাধ্য হয়।
যেমন, আমাদের এখানে,
তথাকথিত কলকাতার ভাষা।
আমি দেখেছি, এমনকি
বাংলাদেশের কবিও আমার
সঙ্গে কলকাতার ভাষায়
কবিতার কথা বলেছেন।
যেন, সেটা না হলে তিনি
পিছিয়ে পড়বেন। কই, আমি
তো তাঁর সঙ্গে রাজশাহীর
ভাষায় কথা বলার পথ ভাবি
না!
এই যে গদ্যটা লিখছি, এটা
বাংলিশ, এবং এর ডিকশন
কলকাতার ভাবা হবে।
অথচ, কলকাতার কোনো
আলাদা বাংলা ভাষা নেই।
উত্তর কলকাতার জিভ মধ্য
কলকাতা পেরিয়ে এলেও
দক্ষিণ কলকাতায় গিয়ে
জিভছোলা হারিয়ে ফেলে,
উপহসিত হয়, ঠিক যেমন
একজন পুরুলিয়া,
কোচবিহার, বা
মেদিনীপুরের মানুষ হন।
একটা রাষ্ট্র অন্য একটা
রাষ্ট্রকে কিছুতেই
সহজভাবে নিতে পারে না,
এটা প্রাকৃতিক সত্য।
জার্মান ভাষা শুনলে
আমাদের অনেকেই হেসে
ফেলবেন, ঠিক যেমন
চ্যাপলিন হাসিয়েছিলেন
হিটলারকে নকল করে, এবং
চটিয়েওছিলেন
অনেককেই।
কবিতার কাজই হল ভাষার
রাষ্ট্রীয় রূপটায় আঘাত
হানা। সেটা দক্ষতার
দ্বারা সম্ভব নয়। সেটার
জন্য তান্ডব চাই। যে
কোনো কবিকেই সতীর দেহ
কাঁধে শিব হতে হয়, নাহলে
তিনি সংস্কৃতিকর্মী
ছাড়া কিছুই নন। যে কবি
ভাষা রাষ্ট্রে
পাসপোর্ট নিয়ে প্রবেশ
করবেন, তার চেয়ে তিনি
রক্তদান শিবির এবং
দাতব্য চিকিৎসালয় করলে
মানুষের ঢের মঙ্গল হবে
এই আমি মনে করি।
কবির কাজ মঙ্গল করা নয়।
পৃথিবী করা।
ভাষাপৃথিবী। আর, সমাজ
তাকে ছিন্নভিন্ন করে
বাহান্ন পীঠ গড়ে দেবে
ভুবনময়।
আর হাহা হোহো হিহি...
আমার ভাষা পড়ে অনেকেই
হাসতে পারেন, তাঁদের
উপরে রাগ করলে আমার
কবিতা লেখা ছেড়ে দেওয়াই
সঙ্গত, আমি নিজেকে,
এতদিনে, এমনটাই বোঝাতে
পেরেছি।