ঘরের দেওয়ালে লেগে
ছিলেন তিনি, টিকটিকির
মতই। বোশেখ মাসে দেওয়াল
বেয়ে নেমে আসতেন, কাজ
ফুরোলে ফুলমালা গলায়
আবার উঠে যেতেন
দেওয়ালে।
প্রতিটা দ্বিধা-
কনফেশানে চুপচাপ তাঁর
দিকে তাকিয়ে থেকেছি,
সময়বিশেষে কখন তিনি
“ঠিক- ঠিক” বলে উঠবেন, আর
একেকটা ভুল জন্মাবে। ওই
লোকটার ওপর ডি ডি
গেঞ্জি ভরসা করে একের
পর এক ভুলের পাহাড় গড়ে
তুলেছি। এর পরেও, এর
পরেও যখন আকাশ থেকে পড়ে
পড়ে যাই, পড়ে পড়ে যাবো,
যাবো তাঁর কাছেই।
যাওয়ার তো আর জায়গা নেই
কোনো... ‘যে পথ সকল দেশ
পারায়ে উদাস হয়ে যায়
হারায়ে’, সেই রাস্তার
শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত
বিছিয়ে আছেন তিনি, পলাশ
ফুল হয়ে ঝরে আছেন।
প্রতিটা ভুল পা ফেলায়,
প্রতিটা ভুল বাঁকে মশাল
হাতে দাঁড়িয়ে আছেন
তিনি,- রবীন্দ্রনাথ।
ভুল করার আগে, ভুল করার
পর, যে ‘আমি’র সামনে
দাঁড়াই, সেই আমি মিশে
গিয়েছে, মিলে গিয়েছে,
ডুবে গিয়েছে
রবীন্দ্রনাথে। নিজের
মধ্যে গড়ে তোলা নিজস্ব
রবিঠাকুরকে নকুলদানা
দিয়ে এসেছি, আর এক সময়
নিজের সাথে কথা বলতে
বলতে, নিজেকে ডাকতে
ডাকতে, সাড়া দিয়েছেন
তিনি।
আমাদের সবার ভিতরে একটা
দ্বীপ, সেই দ্বীপের নাম
রবীন্দ্রনাথ।
শুধুমাত্র তাঁর জন্যই
এক বাঙ্গালিজীবন
কাটানো যায়।
তারপরেও, তাঁর পরেও
কিছু পড়ে থাকে।
যেভাবে বারন্দায় এসে
দাঁড়িয়েছি, একটা আঙুল
ছুঁয়ে আছে ঠাণ্ডা
গ্রিল, তাতে হাল্কা
হলুদ রঙ আরো হালকা ভাবে
লাগা। যেভাবে কাকটা উড়ে
চলে গেল হঠাৎই, যেন
নারকেল পাতায় ওর বসে
থাকার কথা ছিল
আজন্মকাল।
তবু ডানা ঝাপটানো, সে
আওয়াজ, স্তব্ধতার মধ্যে
দিয়ে এক বার,
একেক বার
ডানা ঝাপটানো।
যেভাবে চোখ খুলছি, পাশ
ফিরে দেখছি শুয়ে আছো,
ঘুমিয়ে আছো। স্বপ্ন
লেগে তোমার মুখে শান্তি
লেপ্টে আছে। আমি শান্ত
হচ্ছি তোমার ঘুমের মুখ
দেখে। ছোটো ঘরে ছেয়ে
আছে ঠান্ডা শান্ত ঘুম-
পালক পালক কম্বল।
সময় ঝরে যাচ্ছে, গলে
যাচ্ছে আঙুলের ফাঁক
দিয়ে।
তোমার চলে যাওয়াদের
দেখছি,
চলে যেতে দেখছি...
একা একা পাহাড়ি রাস্তা।
অটোর ফাঁকফোকর দিয়ে
ঢুকে আসছে ফ্যাকফ্যাকে
হাওয়া। তিন বন্ধু। কেউ
কিছু বলছে না। শুধুই
ভাবছে।
অটো দাঁড়াচ্ছে খাদের
ধারে। কেউ কিছু বলছে না
তখনও। হেঁটে আসছে খাদের
ধারে, উঁকি দিয়ে মেপে
নিচ্ছে গভীরতা।
নিজেদের দেখছে, কি ভীষণ
ছোটো, কি ক্ষুদ্র!
অকারণ মন খারাপ। তবু,
“কেমন আছো?”তে, -
“ভালোই”।
ছোট্ট একটা ‘ই’, একরাশ
দীর্ঘশ্বাস কাঁধে করে
জন্ম নিল।
অথবা বৃষ্টি পড়ছে, একটা
একটা ফোঁটা, দল বেঁধে
পড়ছে, তবু দূরে দূরে,
আলাদা আলাদা। জল জমছে
রাস্তার খানা খন্দে।
এসব দেখতে দেখতে সিঁড়ি
দিয়ে ছাদের দিকে উঠছো,
ছাদে যাওয়ার নেই, কারণ
বৃষ্টি।
সিঁড়ি ভরে আছে বৃষ্টির
গন্ধে। সেই গন্ধও ঢুকে
পড়ছে ভেতরে।
এসমস্ত ইলিউশন অনুবাদ
হয়ে বসে আছে, কখন পড়া
হবে, কখন পড়ে নেবো। পুরো
পৃথিবী লেখা হয়ে আছে।
বাংলায়,
শুধু পড়ে নেওয়া বাকী,
পড়ে ফেলার অপেক্ষা।
বাংলাতে।