বারান্দায় ঝোলানো
খাঁচায় দাঁড়ে বসে একটা
ময়না। সারাদিন ধরে
অনর্গল আউড়ে যায়
রাম-রাম, হরে-কৃষ্ণ, কে
এলো, গুড মর্নিং - এইসব।
বাজারের সেরা ফল আসে
তার জন্য। পরিস্কার
ঝকঝকে বাটিতে জল। খাঁচা
পরিস্কার হয় নিয়মিত।
শীতকালে তাকে
খাঁচাসমেত রোদে রাখা
হয়, গরমের দিনে
দক্ষিণের ঢাকা
বারান্দায়।
কঙ্কনা যখন বউ হয়ে এ
বাড়িতে এল, একদিন,
ধারেকাছে কেউ কোথাও নেই
দেখে, দিল খাঁচার
দরজাটা খুলে। বলল – যাঃ,
পালা! পাখিটা বেরিয়েও
এলো খাঁচার বাইরে,
দু-একবার ডানা ঝাপটালো,
বারান্দার রেলিং-এ বসে
তাকিয়ে দেখল দূর আকাশের
দিকে। তারপর গুটি-গুটি
আবার এসে ঢুকল খাঁচায়।
তার ডানায় আর ওড়ার জোর
নেই। শেখানো বুলি
কপচাতে কপচাতে সে
ভুলেছে নিজের ভাষা।
কঙ্কনা খুব অবাক হল। সে
জানত প্রানীমাত্রেই
স্বাধীনতাকামী...
এরপর কেটে গেল
অনেকগুলো বছর। এর মধ্যে
কঙ্কনা নিপুন হাতে
বুনেছে তার খাঁচা,
দেওয়ালে এঁকেছে
সূক্ষ্ম কারুকাজ।
একদিন, হঠাৎ কঙ্কনার
মনে হল, বিকেলের আলোটার
রঙ যেন অন্যরকম। সে
তাকিয়ে দেখল কি সুন্দর
নীল রঙের মেঘ জমেছে
আকাশে। ধীরে ধীরে ছেয়ে
যাচ্ছে সারা আকাশ। ঝলসে
উঠছে বিদ্যুৎ। মুগ্ধ হল
কঙ্কনা। আহা, সেও যদি ওই
মেঘের বুকে অমন একটা
বিদ্যুৎ হতে পারতো!
তারপর ধেয়ে এল প্রবল
ঝড়। কঙ্কনার খাঁচার
দেওয়াল ঝনঝনিয়ে উঠলো।
হাওয়ার ঝাপট দরজা ধরে
মারল টান। উদোম দিল
খুলে। উথালপাথাল হয়ে
উঠলো তার সাধের
খাঁচাখানি।
কঙ্কনা ভয় পেল। সিঁটিয়ে
রইলো খাঁচার এক কোণে।
দু হাতে চোখ ঢেকে বলল,
পারবো না! ফিরে যাও!
আস্তে আস্তে হাওয়ার বেগ
কমে গেল। খাঁচার দরজাটা
বন্ধ হয়ে গেল আবার।
সেই থেকে কঙ্কনা
আকাশের দিকে তাকায় না
আর কখনো।