এ্যাপলিটিক্যাল। তাই
নিয়ে তর্কটা বেধেছিল
একজন প্রিয়জনের সঙ্গে।
আরেকজনের সঙ্গে তো
দেখাই হয়েছিল যখন বললেন
“আমার কিছু ই্যসু আছে,
তাই যাচ্ছিনা”।
বৃষ্টির নাম তখন জবরজং
থেকে জবরদস্ত হতে
চলেছে। যখন দেখা, বললেন
“আজকে যাদবপুর বলেই এত
কিছু??? কই এতদিন এত ঘটনা
হয়ে গেল, তখন তো কিছু
দেখা যায়না?? এটা
পলিটিক্যাল কালার নিয়ে
নিয়েছে তাই যাচ্ছিনা”।
না, শুনে কিছু বলিনি।
কারন মিছিলের মতো দেখতে
একটা দিনের মধ্যে আমি
ডুবে গেছিলাম তো। কে
বলেছে বৃষ্টি পড়ছিল বলে
ভিজেছি সেদিন, ওই যে
মিছিলে ডুব দিয়েছিলাম।
হাঁটতে হাঁটতে মাথার
মধ্যে ঘুষি, মাথার
মধ্যে চাবুক অনেক কিছু
টের পেয়েছিলাম।
মিছিলের বাইরের
প্রতিটি মুখকে
প্রশ্নচিহ্ন ভাবলেই
উত্তর তৈরী হয়ে যাচ্ছিল
অজান্তেই। সেই সব
অজান্তেগুলো প্রতিমা
হয়ে গেছিল বাড়ি ফেরার
পর, ফিরেই লিখেছিলাম
গেছিলাম, কেন গেছিলাম??
দুটো থেকে পাঁচটা...
বৃষ্টি ছিল, ছাতা ছিলনা,
ব্যাগ ছিল, মোবাইল ছিল,
একটা রবীন্দ্র সদন ছিল,
একটা মোটকা রাস্তা ছিল,
রাস্তার কোন এনাফ্ ছিল
না, অনেকগুলো হাজার
হওয়া মানুষ ছিল,
স্লোগান ছিল, পুলিশ ছিল,
পুলিশ দেখলে হাততালি
ছিল...
এতগুলো ছিলর মধ্যে আমিও
ছিলাম, আমার গায়ে কাঁটা
ছিল... কেন ছিলাম??
স্ল্যাশ হোককলরব কোন
সেলিব্রিটি নয়,
ইন্টেলেকচুয়াল নয়, আঁভা
গার্দ নয়, রেট্রো নয়...
কারন তাকে গলার গর্জনে
অনায়াসে বসানো যায়,
হোককলরব... কারন তাকে
হাততালিতে দোলানো যায়,
হোককলরব... কারন তাকে
ফিসফিস থেকে চীৎকার
সমস্তকিছু অর্পন করা
যায়, হোককলরব...... কেন
ছিলাম সেখানে? আঁতেল
ভিড়ে সুপার আঁতেল হওয়ার
হাতছানি ছিল বুঝি? না
আড়াই কিলোমিটার হাঁটলে
একটা সার্টিফিকেট
পাওয়া যায় "আপনি
ইতিহাসের মহামান্য
শরিক। আপনাকে
অভিনন্দন।"?? না ছাত্র
যুব ব্র্যাকেটে ফিট করি
কিনা এখনো, ঝালিয়ে
নেওয়ার তাগিদ?? না,
চূড়ান্ত সমসাময়িকে
চূড়ান্তস্য চূড়ান্ত
প্রাসঙ্গিক থাকার
অবদমিত কামনা??? না, অনেক
ও বি ভ্যান আসবে তাই???
বিশ্বাস করুন, এগুলির
একটি হলেও এই তিনঘন্টা
ভিজে এসে ভেজা গায়েই
লিখতে বসতামনা...
গেছিলাম, কারন আমাকে
যেতে হতো... গেছিলাম,
কারন মিছিলের ৪৯,৯৯৯ টি
পা কে ৫০,০০০ পা করার তো
একটা দায়িত্ব ছিল...
হ্যাঁ, দায়িত্ব... আমি
যাদবপুরের ছাত্র নই,
আমি ছাত্রবয়স্ক নই...
কিন্তু সেদিন যারা লাথ
খেয়েছে, থাপ্পড় খেয়েছে,
আমি তো তাদের দাদা তো
নাকি?? হয়তো দাদাগিরির
ক্ষমতা হারিয়ে, "এটা
ঠিক নয়" বলার ক্ষমতা
হারিয়ে, "অন্যায়"
বলার ক্ষমতা হারিয়ে
একদল সহ্যশক্তি জানা
জানোয়ারের মতো বেঁচে
আছি। যাত্রাপালা
শোনালো?? আরো
যাত্রাপালা করি (এটাই
আমার শাস্তি রাবারের
মেরুদণ্ডের), বেঁচে
থাকার ডিউটি করছি!!! আমি
গেছিলাম, কারন দেখার
ছিল এখনো চীৎকার করতে
পারি কিনা... বাস্তব
জীবনে চীৎকার ফন্ট বড়
বা বোল্ড করার মতো অতো
সহজে হয়না... দ্বিধা ছিল,
যাওয়া নিয়ে নয়, চীৎকার
করা নিয়ে যেটুকু
সামাজিক দ্বিধা ছিল
সেটা কাটানোর ছিল, তাই
গেছি... এখন আমি চেঁচাতে
পারি আবার, আবার ছাদ
ফাটিয়ে, চিল্লাতে পারি
"চুপ কর্, শুয়োরের
বাচ্চা!! আমরা তোর পোষা
উল্লুক নয়"... ফন্ট বড়
করা চীৎকার নয়, সত্যি
কান ফাটানো, লোকজমানো
চীৎকার... এখনো কেন
গেছিলাম প্রশ্ন করতে
চান কেউ?? কে চান??? কে???
ফিরে আসার পরবর্তী
ঘটনাক্রমে নানান
প্রশ্নের মুখোমুখি...
কেন যাদবপুর? তুমি কে
যাদবপুরের? না আমি কেউ
না, আমার মারাত্মক
যাদবপুর পেয়েছিল, খুব
জোর। এটা একটা
পলিটিক্যাল কালার
নিচ্ছে, “দেওয়া হচ্ছে”
টা খুব চলছিল। তারপর
“ওদেরও দোষ আছে,
হাতিঘোড়া টিভি
চ্যানেলে দেখিয়েছে, ওরা
কেমন নেশা করে পুলিশকে
মারছিল, তারপর পুলিশ
সামলাতে পারেনি”। “আমি
এটাকে সমর্থন করিনা,
ওটা পড়াশুনোর জায়গা,
বেয়াড়াপনা করার জায়গা
নয়”। “আমি সমর্থন করিনা
বলে কি আমি খারাপ হয়ে
গেলাম নাকি???”। এবার
দুড়ুম ঘটলো মাথায়।
এ্যাপলিটিক্যাল?? কিসের
এ্যাপলিটিক্যাল???
পৃথিবীতে কোন ঘটনা
এ্যাপলিটিক্যাল?????
দেখেছিলাম
এ্যাপলিটিক্যাল জাগরণ,
সুশীল সমাজ নামে।
হ্যাঁ, সেই সময় রাগের
মধ্যে আমিও ছিলাম। আমিও
হেঁটেছিলাম
মহামিছিলে। কিন্তু
নিজেকে
এ্যাপলিটিক্যাল ভাবার
তামাশা করিনি কোনদিন।
এ্যাপলিটিক্যাল একটি
কুটোও নড়েনা পৃথিবীতে,
নড়ানো যায়না...
এ্যাপলিটিক্যাল মানে
আমার কাছে পলিটিক্যাল
চরিত্রহীনতা।
পলিটিক্স যে পার্টি নয়,
এই কথাটা আর কবে বুঝবে
মানুষ। পলিটিক্স একটা
ব্যবস্থার যার মধ্যে
আমি আছি। পলিটিক্স আমার
সিগারেটের দাম বাড়ার
মধ্যে আছে, পলিটিক্স
আছে রেপ করে বডি
জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা
পড়ে যে দমচাপা বোধ আমার
হয়, কিন্তু কিছু করতে
পারিনা, তার মধ্যে।
পলিটিক্স কোন “করা”র
বস্তু নয়। নিতান্ত
মধ্যমেধা থেকে উদ্ভূত
হয় পলিটিক্স “করার”
কনসেপ্ট, আর
যুক্তরাষ্ট্রীয়
শাসনব্যবস্থায়
দলগুলিও এই মধ্যমেধা
উদ্ভূত কনসেপ্টকে লালন
পালন করে, পরবর্তীতে
কাজে লাগানোর জন্য। আর
মধ্যমেধারা লালিত
পালিত হয় কাজে “লাগিত”
হওয়ার জন্য।
এ্যাপলিটিক্যাল সুশীল
সমাজ কি আমরা ভুলে গেছি??
কতজন তাদের মধ্যে
এ্যাপলিটিক্যাল এই
মুহূর্তে??? কবীর সুমনের
মতো মেধাবী মানুষও
এ্যাপলিটিক্যাল সদস্য
হওয়ার স্বপ্ন
দেখেছিলেন
যুক্তরাশট্রীয়
কাঠামোতে। কোথায় গেল
তাঁর স্বপ্ন, সৃজন???
দেখেননি
এ্যাপলিটিক্যাল
রাজনৈতিক দল “আপ” এর
দিল্লীর তখ্ত এ তাউস
দখল ও তংসংক্রান্ত
মহারঙ্গ???!!!!! আমাকে
দৈনিক খরচপাতিতে
সারদার ক্ষতিপূরণ দিতে
হচ্ছে না??
এ্যাপলিটিক্যাল হলো
সুক্তোতেও আছি,
চাটনীতেও আছি নামক এক
কাল্পনিক সুখবিভ্রম, যা
বাস্তবিকে একধরনের
রাজনৈতিক
চরিত্রহীনতা। আপনি
রঙহীন বলুন নিজেকে,
এ্যাপলিটিক্যাল বলবেন
না প্লিজ। তাও রঙহীন
বললে দেখবেন রঙীন টা
আরো রঙ্হীন উপায়ে
উচ্চারণ করছেন মাত্র।
যে স্বার্থপরতা
মানবিকতাকে একটা “বোধ”
নামক উঁচু শেলফে তুলে
ফেলে হাত ঝেড়ে ফেলেছে,
সেই স্বার্থপরতাই
পলিটিক্স এর সাথে “করা”
ঢুকিয়ে নিজস্ব
অন্তর্গত
নিস্ক্রীয়তাকে
দলভুক্ত করে দলভারী
করার চেষ্টা করেছে
মাত্র।
না কোন রাজনৈতিক দলের
কথা বলছি না... আমার
ঠাকুর্দা, আমার বাবা,
কাকা, কাকিমা সকলেই
শিক্ষক। আমাকে পেটে
নিয়ে দৈনিক ৩০ কিমি
দৌড়ঝাঁপ করে আমার মা যে
ডিগ্রীটির জন্য টগবগ
করছিল, সেটি বি এড। সেই
আমি যখন খবর কাগজে
প্রথম পাতায় কি দারুণ
এ্যাকশন সিকোয়েন্স
দেখি, মাজদিয়ার কলেজ
অধক্ষ্য, একজন তার কলার
ধরে আছে, আর আরেকজন
সপাটে পেট লক্ষ্য করে
ঘুঁষি। সন্দেহাতীত
তারা হীরো। কিন্তু ওই
হীরোতে আমার গা গুলিয়ে
উঠেছিল। আরো গা
গুলিয়েছিল, তার পরেরদিন
খবর কাগজে “ছোট্ট ঘটনা”
পড়ে। যাত্রাপালার
ডায়লগ হয়ে যাবে, কিন্তু
অবস্থা এরকমই, আমার
বাবার পেটে লাথি, ছোট্ট
ঘটনা???? আজ এই মিসটেক
সংখ্যায় মিসটেক চশমা
পরে ঘটনাগুলি দেখতে
গিয়ে একটা সরল কথা বলতে
ইচ্ছে করছে। হ্যাঁ,
রাজনীতি শব্দটির
অর্থ-সঙ্কোচন আমার
জন্মের আগেই ঘটেছে...
আমার জন্মের পরেও
ঘটেছে... এখনও ঘটছে। এর
জনয দায়ী আমরাই। কিন্তু
ব্যাপারটা যেন ছিল
এরকম, বস তুমিও ন্যাংটো,
আমিও ন্যাংটো। তাই বরং
পোশাক বাদ দিয়ে, লজ্জা
নিবারণ বাদ দিয়ে অন্য
প্রসঙ্গ নিয়ে এসো আমরা
হিন্দি চীনি ভাই ভাই,
একসাথে কথা কই। অন্য
বিষয় নিয়ে তুফান তুলি
ফ্যান্টম বানাই চায়ের
কাপে। কিন্তু এখন যেন
একই অবস্থা, তারওপর ও
পক্ষ সারাক্ষণ কথা
শোনাচ্ছে “ড্রেস
দ্যাখো শালার, পুজোয়
বাবা নতুন নগ্নতা কিনে
দিয়েছে!!!!”
(সংস্কৃতিমনস্ক হলে)।
একই অবস্থা, আমিও
ন্যাংটো, তুমিও
ন্যাংটো। কিন্তু তুমি
কাল্পনিক কলার তুলে
আমাকে চোখ মারবে, আ তু তু
করবে, এতটা নির্লজ্জ
নির্লজ্জিজম আগে
ঘটেনি। সাধারণ মানুষের
কাছে, অস্তিত্ব যে সদা
বহমান, এ এক অসাধারণ
ঘটনা। একে শ্রদ্ধা
করাটাই আমার জীবনরসদ।
এই জীবনরসদ কেড়ে নেওয়ার
অধিকার তোমাকে কেউ
দেয়নি। আমাকে মুরগী
করবে? মুরগী বানাবে?
বানাও। যুগ যুগ ধরে তাই
হচ্ছে বোদা বাংলা
ভাষায়। কিন্তু তা বলে
আমাকে জবাই করে ১৩০
টাকা কিলো দরে বেচার
অধিকার তোমাকে আমি
দিনি। এইসব ক্ষোভের
অনেক-অমনিবাস আচমকা
আছড়ে পড়েছে যাদবপুরের
পরে। তাই আমাদেরও খুব
জোর যাদবপুর পেয়েছে।
প্রচণ্ড যাদবপুর হয়েছে
আমাদের। এতে ক্ষতি কি
আছে?? কেন? তোমাদের দারুণ
বরানগর হয়না??? কাশীপুর
হয়না??? তার বেলা??????।
মিসটেক কোথায়??? স্কুলে
ফ্যান ভেঙে ফেলেছি,
ইনচার্জ মিসের বেত খেতে
একশোবার রাজি আছি।
কিন্তু স্কুলে ফ্যান
ভেঙে ফেলেছি বলে বা
স্কুলে পড়া পারিনি বলে
ও পাড়ার পাঁচু কাকু এসে
ক্যালাবে আর তা সহ্য
করে যাবার মতো নির্জীব
পোকা নই আমরা। আমরা কোন
মাকড় নই যে আমাদের দমন
করতে স্প্রে করা
প্রয়োজন, বাড়িতে খোলা
পাত্রে জল রাখতে বারন
করা প্রয়োজন!!!
মিসটেক হলো, বিষয়টা
পুলিশ নয়। বিষয়টা
“পুলিশ ব্যবহার” নামক
একটি অভ্যেস ও উলটোপথে
“ব্যবহৃত পুলিশ” নামক
একটি পরিচয়ের খেলা।
প্রশাসন একটি
শাসনব্যবস্থা ঠিকই,
কিন্তু সেটি আমার বাবার
শাসনব্যবস্থা যা অঙ্কে
কম পেলে প্রযোজ্য ছিল,
তার বিকল্প কোনদিনই নয়।
সোজা কথা।
শেষ কথা দোলনা যেমন
গাছের কাছে ঋণী থাকে
কিন্তু তরুলতা ছাড়িয়ে
ছাপিয়ে চারুলতা অবধি
তার বিস্তার ঘটায়। একই
কথা প্রযোজ্য
আন্দোলনের ক্ষেত্রেও।
সঠিক চারুলতার বেঠিক
ভূপতিদের ছাড়িয়ে
ছাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার
কলরব কিন্তু শোনা
যাচ্ছে।