ওই ঢাকি এখন ফুলঝাড়ুর
রঙিন প্লাস্টিকি পাখা
নিয়ে নাচে। ও বক, তোমার
শরীর থেকে ঝরিয়ে
দিয়েছিলে যে পালক,
কোথায় উড়ছে সে? ও পালক,
তোমায় কে উড়িয়ে
দিয়েছিলো হাওয়ায়? আর
ডাকে না আর চেনে না আর
জানে না। জানে না...কোথায়
গিয়ে উঠলে তুমি... কোন্
মাটির ওপর ভেসে গেলে...
তোমায় চিনতো ওরা? ওই যে
ছেলেগুলো মেয়েগুলো?
তোমায় দেখেই বুঝি শিখলো
ছিটছিট রক্তের দাগ গায়ে
মেখে দুলে ওঠা?
আন্দোলিত। ভুলের
মাশুল। ‘ডিগনিফায়েড’
উপ-আচার্য তিরের মুখে।
হ য ব র ল-র প্যাঁচার মতো
অনেকটা বোজা চোখ। মনটাও
তাই তেমনই। ইন্দ্রিয়ের
দ্বার জোর করে বন্ধ
করলে আর কবেই বা চৈতন্য
জানলা খুলতে পেরেছে?
এইটেই আসল ভুল, বুঝলেন?
সারকিট, বর্তনী আটকে
গেছে মাঝরাস্তায়।
মগজের তড়িৎ আর বইছেনা।
সহস্র সহস্র শৈবালদাম।
শিক্ষা ব্যাপারটাই তো
একটা বিরামহীন যাত্রা।
সেখানে কেউ যদি বলে
বসেন ‘বাস বাস ওইখেনে
দাঁড়ি দে’, তাহলেই
চিত্তির! আর কে না জানে,
দাঁড়ি দেওয়াটাই আমাদের
পলিটিক্সের দস্তুর।
আমলা মামলা হামলা নিয়ে,
চালাও পানসি! আমলা তো
সেই কোন্কাল থেকে ঢুকে
ঘাঁটি গেড়ে গিরগিটির
মতো বসে আছে। মামলা
চলছে তো চলছেই! নানারকম
এস, সি, পি নিয়ে। আর
হামলা? মনে পড়ছিলো
শরদিন্দুর ‘তুমি
সন্ধ্যার মেঘ’-এর শুরুর
গল্পটা। সেই যে অতীশ
দীপঙ্করের সাধের শান্ত
নালন্দায় দলবল নিয়ে
হুহুংকারে ঢুকে পড়েছেন
রাজা লক্ষ্মীকর্ণ। ওই
হুহুংকারটা কেন বলুন
তো? আসলে নিজেও তো
উত্তাল ভয় পেয়েছে
নয়পালের তাড়া খেয়ে!
এইটেই গোড়ার গলদ। যতো
ভয় পাবে, ততো ভয় দেখাবে,
গামলা গামলা হামলা হবে।
লাঠি, ব্যাটন, গেঞ্জি,
জাঙিয়া, বুট, হাওয়া
হাওয়াই! সর্বত্র দাঁড়ি
বসাবে, দ্বারী বসাবে,
দ্বারীর চোখে ক্যামেরা
বসাবে। ছেদ। অশিক্ষা।
তাই সেদিন রাতে পালকের
গায়ে ছিটছিট রক্ত।
আন্দোলনের প্রতি চোখ?
এই সেদিন দেখলাম
সোশ্যাল সাইটে হু হু
করে ছড়িয়ে পড়ছে ছবি,
“মেয়েরা ছেলেদের পাশে
শুয়ে কোলে শুয়ে আছে আর
ফুক ফুক করে বিড়ি
ফুঁকছে! এই কি
আন্দোলোন!!!” লেখক নিজে
যে মূর্তিমান অশিক্ষা
সে তো বানানেই
স্বপ্রকাশ! কিন্তু ধরুন
এই কোলে শোয়া আর বিড়ি
ফোঁকার ব্যাপারটা! মদ
গাঁজা এবং চরস, এরা
কিন্তু এই কুৎসিত
লেবেলগুলোর লেজুড় হয়েই
এসেছিলো। দেখুন,
আন্দোলন শুরু হয়েছিলো
এক নারীর শ্লীলতাহানির
প্রতিবাদে। আবার দেখুন,
এই সব ‘বিড়ি
ফোঁকা’-জাতীয় কাজ
‘মেয়ে’দের করাটাই
বিশেষভাবে
‘রুচি’বিগর্হিত, এই
হাস্যকর
পুরুষতান্ত্রিক
অ-যুক্তিটাও কিন্তু
স্বচ্ছন্দে করে চলেছেন
এঁরা! গুলিয়ে গেছে
বন্ধু শত্রু, গুলিয়ে
গেছে ঘর ও বাহির। কে
বন্ধু? কে বহিরাগত?
কতোদূর শ্লীল? কী
অশ্লীল? কোন্ সীমার
বাইরে থাকলে তাকে
ট্রেসপাসার বলতে পারি?
ট্রেসপাসার যদি এক মুঠো
সংহতি নিয়ে আসে, তাকে
প্রসিকিউশনের অধিকার
আছে কার? স---ব, গুলিয়ে
গেছে। তাই সেদিন রাতে
পালকের গায়ে ছিটছিট
রক্ত।
আর আন্দোলন নিজে? শরতের
বজ্রনির্ঘোষ। সত্যিই,
সব মিলিয়ে কয়েক দিনে
রাস্তায় পা মিলিয়েছে
লক্ষ লক্ষ মানুষ।
মানুষের মিছিল। ছাতাকে
অস্বীকার করা কালো কালো
ভেজা জামা। মিছিল
এগোচ্ছিলো মেয়ো রোডের
দিকে। অকুপাই ধর্মতলা।
আর সবার সঙ্গে কথা বলতে
বলতে খালি মনে হচ্ছিলো
‘রাজা’ নাটকের সেই
অদ্ভুত হিউমার, যখন
রাজার উৎসবে রাজবেশী
নকল রাজা ভীষণ আশ্বস্ত
হয়ে বলছিলেন, “ভিড়ের
লোক নিজেদের ভিড় দেখেই
মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে”!
স্পিরিট খুবই ভালো
জিনিস, তবে কিনা আসলে তো
উদ্বায়ী। এ আন্দোলনের
সততা, নৈতিকতা নিয়ে
প্রশ্ন তোলার সময় এটা
নয়। কিন্তু স্পিরিটের
স্থায়িত্ব নিয়ে একটা
‘কিন্তু’ থাকে। আর,
মোহনদাসের মুখের আড়ালে
অলরেডি কিন্তু ঢাকা
পড়তে শুরু করেছে
‘নির্যাতিতা’র মুখ।
কোনো এক অনন্য লেনদেনে
পিতৃত্ব কিন্তু তার
অবস্থা ভুলেছে।
মিছিলের আঁচে কিন্তু গা
গরম করেছে সব দলবাজ
মুখোশ-মানুষ। মিছিল এই
সব বিয়োজক অব্যয়গুলোকে
এড়িয়ে চললে আরো একটা
গভীর ভুল হবে। ইতিহাস
সাক্ষী ছিলো সেই
মিছিলের, ইতিহাস সাক্ষী
থাকবে এই ভুলেরও।
কবে যাবে বলো গিরিরাজ?
মেয়ে যে ভালো নেই।
পালকের গায়ে প্রতিদিন
রক্ত। তবু, পালক উড়ুক।
উড়ুক উড়ুক তারা... অন্তত
ওর ওড়াটুকু নির্ভুল।