এম এন সি তে জীবনের
প্রথম ইন্টারভ্যু ।
রিটন টেস্টে সিলেক্টেড
হয়ে ডাক পেয়েছি ।
ইম্প্রেস করবার খুব
চেষ্টা । এইচ আর
রাউন্ডেও উতরে গেলাম ।
প্রায় মেরে এনেছি মনে
হচ্ছে , তখন সুন্দরী
মুচকি হেসে বললেন , ‘
ফাইন। নাউ সীমা উইল বি
মিটিং ইউ ফর দ্য ফাইনাল
রাউন্ড । প্লিজ বি
সিটেড । ’
যাক বাবা , সব কটাকে
সামলেছি, আর এই সীমা
ম্যাডামকে সামলাতে
পারব না ! চাকরিটা তাহলে
হয়েই যাবে । আহ ,
নিশ্চিন্ত । আচ্ছা ,
সীমাদেবী কি খুব বয়স্কা
হবেন ? মনে হয় না । আজকাল
মাল্টিন্যাশনালে
প্রচুর কমবয়সী
ডাইরেক্টর থাকেন ।
বিনা আয়নাতেই চুলটা
একটু জুত করে নিলাম ,
জামাটা হাত দিয়ে সমান
করে
বসলাম , রুমাল বার করে
মুখটা একবার মুছেও
নিলাম ।
কনাফারেন্স রুমের
দরজাটা স্লো মোশনে
খুলতে দেখে আমিই আগে ‘
হাই ’ বলে উঠলাম । আর তখন
ঢুকল একটা মাকুন্দের
মতো মুখ । ক্যাবলা হাসি
হেসে সেই ছাগলটা বলল , ‘
হাই, আয়্যাম সীমা ,
সীমাচলম । হাউ আর ইউ ? ’
চাকরিটা শেষপর্যন্ত
হয়নি , এবং তা নিয়ে আজ
আমার কোনও আক্ষেপও নেই
। কিন্তু মজা লেগেছিল
যে নাম , বা ডাকনাম শুনে
ভুল ভেবে ফেলেছিলাম ।
কত্ত রকমের ভুলই যে হয় !
বিশেষ করে কথা বার্তায়
।
প্রবাসী বাঙালিদের
একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল ।
তাতে একজন বিশিষ্ট
ভদ্রলোককে সংবর্দ্ধনা
দেওয়া হোল । সেই
ভদ্রলোক তাঁর
আবেগদীপ্ত বক্তৃতা শেষ
করতেই অনুষ্ঠানের
সঞ্চালক বললেন , ‘
এতক্ষণ শ্রী ... আমাদের
অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন
... ’ শুনে ভদ্রলোক তো থ !
শেষে আলাদা করে বোঝানো
হল যে ওনাকে অপমান করা
হয়নি । সে যাত্রা অনেক
কষ্টে বিড়ম্বনা
সামলানো গেছিল ।
বাঙালিদের আবার আর এক
অভ্যাস , বাংলা কথার
সাথে মাঝেমধ্যেই
হিন্দী মিশিয়ে ফেলা ।
এমনই এক মিশ্রভাষী
সঞ্চালক স্টেজে ঘোষণা
করেছিলেন , “ শ্রী ...
বাবুকে ধন্যবাদ , তিনি
আমাদের সকলের জন্যে
লুচি ভেজেছেন ! ” হ্যাঁ ,
লুচি তরকারির
প্যাকেটের ব্যবস্থা
করে সকলের নামে
পাঠিয়েছিলেন তিনিই,
হিন্দীতে ‘ ভেজে হ্যাঁয়
’ বলা যেতেই পারত ।
কিন্তু ‘ লুচি ভেজেছেন
’ বললে কি তাঁর খুশী
হওয়ার কথা ?
হন ও নি ।
শব্দ প্রয়োগের ভুল ,
অনিচ্ছাকৃত হলেও , তার
ফল মারাত্মক হতে পারে ।
বিশেষ করে , কথা একবার
বলা হয়ে গেলে তো ডিলিট /
আনডু করাও যায় না ! তাই
কথা বলবার সময় , বিশেষ
করে জনসমক্ষে , একটু
সাবধানতা অবলম্বন করাই
উচিত ।
অনেক সময় ভুলটাকে
সংশোধন করতে গিয়ে আমরা
আরো ভুল করে ফেলি । আমার
এক সহকর্মিনী অফিস থেকে
তার স্বামীকে ফোন
করেছি্লেন , তারপর
অফিসের কাজ সংক্রান্ত
কারণে বস কে । আবার
স্বামীর সঙ্গে কথা
বলবার জন্যে ভুলে
রিডায়াল টিপে বস কে কী
বকুনি , ‘ এখনো অফিস থেকে
বেরোওনি ! একটা কাজ বললে
করতে পারো না ! ’
বস বেচারা ঘাবড়ে বললেন ,
‘ হ্যালো, আপনি কি আমায়
বলছেন ? ’
তখন ভুল বুঝতে পেরে
ভদ্রমহিলা বললেন , ‘ ওহো
আয়্যাম সো সরি ! আমি
ভাবছিলাম আপনি আমার
স্বামী ! ’
কী কাণ্ড !
অফিসে ই - মেল পাঠাতে ভুল
হলে তাও রি - কল অপশন আছে
। ভাগ্যিস ! অটো স্পেল
চেক অন থাকলে অনেক সময়
শ্রীনাথকে মেল পাঠাতে
গেলে সেটা ‘ হাই
স্পিন্যাচ ’ হয়ে যায় ।
কিন্তু চ্যাট করতে গেলে
খুব সাবধানে টাইপ করতে
হয় । কতো সময় কতো
অস্বস্তিকর
পরিস্থিতির সম্মুখীন
হতে হয়েছে আমাকেই !
ছোটরা যারা বাংলার
বাইরে মানুষ হয় , তাদের
অবস্থা তো আরোই শোচনীয়
। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে
তারা ইংরাজী বা হিন্দী
থেকে সরাসরি অনুবাদ করে
বাংলা বলে । সেদিন
একজনকে জিগ্যেস করলাম ,
“ কি রে , তুই কার সঙ্গে
এলি ? ” সে সপ্রতিভ জবাব
দিল , “ মুখার্জী আন্টি
আমাকে ফেলে দিয়ে গেলেন
। ” কী সর্বনাশ ! পরিচিত
ছেলেটিকে গাড়িতে ড্রপ
করে দিয়ে মুখার্জী
আন্টি যে কত বড় ভুল
করেছেন সেটা যদি জানতেন
!
একবার এক মহিলা নিজের
বাড়িতে কিছু
বন্ধুবান্ধবদের
উপস্থিতিতে তাঁর
ছেলেকে বললেন , ‘ যা তো ,
ভিতরের ঘর থেকে আমার
চটিটা নিয়ে আয় ’ ।
ছেলেটা নিমেষের মধ্যে
দেওয়ালে টাঙ্গানো
ভদ্রমহিলার বিনুনী
সমেত পরচুলটা নিয়ে এল ।
হিন্দীতে চোটি তো তাকেই
বলে , তার কী দোষ ! অথচ তার
মা অপ্রস্তুতের একশেষ !
এমনই একজন সহজ পাঠের ‘
কাল ছিল ডাল খালি ’
কবিতার সহজতর অর্থ
খুঁজে বার করেছিল - কাল
মেনুতে শুধু ডাল ছিল ,
সেটা খাওয়ার পর আজ সেটা
ফুলে উঠে পেট ভরে
গিয়েছে ।
ছোটদের দোষ দিই না ।
বিশেষ করে যখন তাদের
বাবা মায়েরা যখন
নিজেরাই হুঁশ রাখতে
পারেন না যে কী বলছেন ,
এবং কেন বলছেন । ক্লাবে
দুর্গাপুজো ।
মহাষ্টমীর দিন
পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে
প্রসাদ খাওয়ার ভীড়
সামলাতে সচিব স্বয়ং
চেঁচিয়ে জানাতে লাগলেন
, ‘ মহিলাদের উপরে বসবার
আলাদা ব্যবস্থা আছে ,
আপনারা সেই সুযোগ নিতে
পারেন ! ’ ছি ছি , কী কাণ্ড
বলুন তো ! শেষে তাঁকে চুপ
করানো হল ।
আজকাল তো অনেকে
নিজেরাই ভুলটা ধরতে
পারেন না ! এই তো সেদিন ,
অনেকদিন পরে
ভাস্করদাকে দেখে রঘুদা
আনন্দের চোটে ঘরভর্তি
লোকেদের মধ্যেই চিৎকার
করে বললেন , “ আরে ভাস্কর
! কতোদিন পর দেখা ! কেমন
আছো ? তোমার মেয়েছেলেরা
কেমন আছে ? ” ভাস্করদা
অনেক কষ্টে হাসি আর
কাশি সামলে বললেন , “
হ্যাঁ ছেলে মেয়ে দুজনেই
ভাল আছে । ”
এমন ভুলভ্রান্তি শুধু
যে বহির্বঙ্গের
বাঙালিদেরই হয় , তেমন
ভাববার কোনও কারণ নেই
কিন্তু ! খাস
কলকাত্তাইয়া
বাঙ্গালিদের মুখে আমি
এমন কথা শুনেছি , তর্কের
খাতিরে ভুল না হলেও
যাদের ব্যবহৃত অর্থ হয়
একেবারেই আলাদা ।
পাশের বাড়ি নতুন
ভাড়াটে এসেছেন এক সদ্য
বিবাহিত দম্পতি ।
দুজনেই খুব মিশুকে ,
সহজেই এবাড়ি ওবাড়ি দাদা
বৌদি পাতিয়ে ফেললেন ।
একদিন ভদ্রলোক আমাদের
বাড়ি এসে মা কে জিগ্যেস
করলেন উল বোনার কাঁটা
আছে কি না । মা তাঁকে
দুটো কাঁটা দিয়ে জানতে
চাইল , ‘ আপনার বৌ কি
বোনে ? ’ ভদ্রলোক হাঁ করে
তাকিয়ে বললেন , ‘ বনে !
কেন , বনে যাবে কেন !
বাড়িতেই আছে , আমার
সঙ্গেই থাকে ! ’ মায়ের
লজ্জাজনক অবস্থা আর
ওনার মুখের ভাব দেখে
আমরা হেসে লুটোপুটি !
তবে সব পরিস্থিতি
আনন্দদায়কও হয় না ।
যেমন হয়েছিল বিমানদার
মেয়ের বেলায় ।
আমাদের পাড়ার
বিমানদার ছিল যাত্রা
করবার শখ । বয়স হওয়ার পর
অনেকদিন আর স্টেজে
অভিনয় করতে পারতেন না ।
তবে নাটকের কথা শুনলেই
চোখমুখ জ্বলজ্বল করে
উঠত । একবার তিনি খুব
অসুস্থ , তাঁকে দেখতে
এসেছে তাঁর প্রবাসী
মেয়ে জামাই । আমরা মানে
ওনার চ্যালা
চামুণ্ডারাও আছি ধারে
কাছে , কখন কী হয়ে যায় ।
প্রিয় বিষয় নিয়ে আলোচনা
করে বাবাকে আগের মতো
চাঙ্গা দেখবার জন্য
মেয়ে একগাল হেসে
জিগ্যেস করল , ‘ বাবা
তুমি কবে যাত্রা করবে
গো ? ’ অমনি অসুস্থ
বিমানদা খেঁকিয়ে উঠলেন
, ‘ হ্যাঁ , আমি যাত্রা
করলেই তো তোরা সবাই
হাঁফ ছেড়ে বাঁচিস , তাই
না ? যত্তসব ! ’ ওনার মেয়ে
তখন কেঁদে কুল পায় না ।
সবথেকে মজা হয়েছিল
আমার এক জাঠতুতো দিদির
বিয়েতে । বিয়ের পর
মেয়েকে বিদায় দেওয়া
হচ্ছে , ঠাকুমা খুব দরদ
ভরে নতুন জামাইকে বলছেন
, “ আমাদের মেয়ে খুব অবুঝ
, তুমি একটু দেখো ”,
জবাবে জামাই বললেন , “
চিন্তা করবেন না, আমি
ওকে দেখে নেব ! ” কে জানে ,
ফাজলামো কি না , কিন্তু
ওই কান্না কান্না ভাবের
মধ্যেও অনেকেই ,
ঠাকুমাও , ফিক করে হেসে
ফেলেছিলেন !
তাই তো বলি , কথা কিছু
কিছু বুঝে নেওয়াই ভাল ।
মুখে বলতে গেলে যদি
ভুলে ভুলে...