এক
সুখপাঠ্য ভাঙ্গার সময়
কিরকম চৌচির শব্দ হয়
দেখেছো ?জল ও কুমীরের এই
যে পারস্পরিক সহবাস,
বোতল গড়িয়ে যাওয়া
দুপুরের বিজ্ঞাপন,ছোট
হতে হতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে
বড়ো দেখানোর এই যে
যাতায়াত, মাঝামাঝির এই
মেরুকরণের মাপদণ্ডে
রক্তশূন্য কিছু ঘাস,
পাল্টি খাওয়া
রাস্তাঘাটের আদলে রাখা
ফুস্ফুস,বিক্রীর জন্য
তৈরি থাকে সবসময়।সহমত ও
অসহমত আমার
প্রতিদ্বন্দী নয়।
চোখের ভেজা অংশে কড়কড়
করে বালি ও
দোনলাবন্দুক। ছুঁয়ে
দিলেই ছাপ এঁটে যাবে, এই
ভয়ে সকাল বন্ধ করি
না।এক দখলদারের
ভূমিকায় নিজেকে রাখি
প্রতিটি বৃক্ষের
সমতলে।বৃত্ত ঘুরে
অপরাধবোধ ছাপিয়ে উঠে
কানায় কানায়।স্মৃতি
মোচড়াতে মোচড়াতে শুনতে
পাওয়া যায় ক্লান্ত এক
ঘোড়ার নিক্বণ। আর কলমে
যখন বোবা ভাষারা নোঙর
ফেলে,এক ধারালো
মীমাংসার দিকে হেঁটে
যাওয়ার অপেক্ষায়
নিজেকে খুলতে খুলতে
শূন্য হয়ে উঠি।
দুই
বিশ্বাসবাবু আমার
প্রতিবেশী
ছিলেন।বিচিত্র লোক।
বিচিত্র জীবিকা
তার।প্রথম জীবনে
ধর্মের ব্যবসা শুরু
করেছিলেন।গেরুয়া
পোশাক পরে থাকতেন
সবসময়।সাদাও
কালেভদ্রে। সেই ব্যবসা
এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছিল
যে এখনও পাড়ার লোক শুধু
নয় সারা শহরের লোক তাঁর
দোকানের গুণগান গেয়ে
থাকে।কিছু নিন্দুক
যদিও বলত যে ব্যবসায় জল
মিশিয়ে বিশ্বাসদা
জনগণের কোটি কোটি টাকা
হাতিয়ে
নিয়েছেন।কিন্তু পাড়ার
লোকজন তখন এমন
প্যাঁদানি দিয়েছিল যে
সেই নিন্দুকেরা যেন
কিভাবে কিছুদিনের
মধ্যেই হাওয়া হয়ে
জায়,অথবা মিনমিনে হয়ে
পড়ে থাকে।
যাই হোক, এবার
বিশ্বাসবাবুর ইচ্ছে
হলো,পন্যসামগ্রীর
ব্যবসা করবেন।চাল,ডাল,
বেশভূষা থেকে মেয়েদের
প্রসাধনী
পর্য্যন্ত।কোম্পানীও
গড়া হলো জথারিতি।দেশে
তখন টিভি এসে গেছে।টিভি
খুললেই বিশ্বাসবাবুর
কোম্পানীর বিভিন্ন
পণ্যের
বিজ্ঞাপন,সুন্দরী মডেল,
খবরের কাগজ জোড়া
বিশ্বাস বাবুর মুখ।
ধর্ম ব্যবসা তো ছিলই।
সেই সঙ্গে পণ্যের
ব্যবসাতেও
অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে
উঠলেন
বিশ্বাসবাবু।তাঁর
মুনাফাও চরম সীমায়
পৌঁছে গেল।যদিও এবারও
কিছু ফড়ে নিন্দুকরা
বলাবলি শুরু
করল,ক্ষমতাসীন
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে
আর্থিক লেনদেন ও দহরম
মহরম থাকার কারণেই নাকি
বিশ্বাসবাবুর এতো
বাড়বাড়ন্ত। তা ছাড়া
তাঁর পণ্যের কোয়ালিটিও
নাকি খুব
নিম্নমানের।অভিযোগ
বাড়তে বাড়তে এমনকি
আদালত পর্যন্ত
গড়াল।তবে যা হয় আর
কি,আদালতের আশীর্বাদে
বিশ্বাস বাবুর
ক্লিনচিট পেতে কোনও
অসুবিধা হল না।
তিন
প্রচুর বিত্ত ও
সম্মানের অধিকারী হয়ে
বিশ্বাসবাবুর নিজের
প্রতি বিশ্বাস আরও বেড়ে
গেল।ভাবলেন,এবার
রাজনীতির ব্যবসায় নেমে
পড়লে কেমন হয়?
ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে
তাঁর উঠবস তো
আছেই।তাদের দিয়ে নিজের
সপক্ষে একের পর এক বিল
পাশ করিয়ে নিচ্ছেন।আর
জনগণ তো ভেড়ার পাল।তবে
নিজেই ক্ষমতায় বসা যাক
না কেন?নির্বাচনে জয়
নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ
নেই।জেতা স্রেফ সময়ের
অপেক্ষা। যেই ভাবা সেই
কাজ।বিশ্বাসবাবু
প্রস্তুতি শুরু
করলেন।
নির্বাচনের আর মাত্র
এক মাস
বাকী।বিশ্বাসবাবুর
ভোটের প্রচারও চলছে
জোরকদমে। ইতিমধ্যেই
দশখানা সভা করে
ফেলেছেন। এমন সময় খবর
এলো,কোথাকার কোন এক
সত্য বলে ছোকরা লোকজনের
কাছে তাঁর নামে আজেবাজে
কথা রটিয়ে
বেড়াচ্ছে।তার সঙ্গী
হয়েছে প্রমাণ মানের আর
এক ফচকে ছোঁড়া। এই দুজন
লোকজনকে তাঁর সব গোপন
কেলেঙ্কারি ফাঁস করে
দিচ্ছে।আর কী আশ্চর্য!
এতদিনের বাধ্য লোকজন
বিশ্বাসও করছে এদের
কথা। বিভিন্ন জায়গায়
জনগণ বিশ্বাসবাবুর
বিরুদ্ধে স্লোগান
দিচ্ছে, প্ল্যাকার্ড
নিয়ে রাস্তায় নেমে
পড়েছে। বিশ্বাসবাবু
রেগে আগুন হয়ে
যান।নির্বাচন
সামনে।তাঁর বিরুদ্ধে
কথা বলার সাহস,রুখে
দাঁড়ানোর সাহস এরা পায়
কি করে?পয়সার জোরে
সরকার,মিডিয়া,
বিচারব্যবস্থা সবার
মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন
এবার জিতলে এইসব
দেশবিরোধীদের মুখ
কিভাবে চিরতরে বন্ধ করে
দিতে হয় তা তাঁর জানা
আছে।সমস্যা হলো, দেশে
এখনও সংবিধান আছে বলে
এই দুই ছোকরা ও তাদের
সাঙ্গোপাঙ্গোদের
পুলিশ বা তাঁর পোষা
গুণ্ডাদের দিয়ে পৃথিবী
থেকে সরিয়েও দিতে
পারছেন না।
চার
বিশ্বাসবাবুর কপালে
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে
ওঠে।জনমত আস্তে আস্তে
তাঁর বিরুদ্ধে চলে
যাচ্ছে বুঝতে
পারেন।বুঝতে পারেন,
বিশ্বাসযোগ্যতা
হারিয়ে ফেলছেন
ক্রমশ।পুঁজির এই অন্ধ
রাস্তায় দৌড়োতে দৌড়োতে
নিজের শরীরের কথা মনে
হয়নি এতদিন।এখন আয়নায়
নিজেকে লক্ষ্য করে
আঁতকে ওঠেন। মনে হল,
ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে
যেন একটা ধ্বংসাবশেষ
দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখের
নীচে কালি ঝুলি,মেদবহুল
ভুঁড়ি, চেহারায়
ক্লান্তি আর অবসাদের
চিহ্ন স্পষ্ট।বুঝলেন
জরা এসে গ্রাস করেছে
শরীরকে।মনে হলো,যদি আরও
একবার প্রথম থেকে শুরু
করা যেত।মনে হলো,যদি
জীবন সুযোগ দিত
আরেকবার।কিন্তু সামনে
নির্বাচন।যদি হেরে
যান,হেরে যাবেন
?বিশ্বাসবাবুর বিশ্বাস
হয় না কিছুতেই।
বিশ্বাস হারাতে হারাতে
একদিন টপ করে মরে যান
বিশ্বাসবাবু।