গুরুদা কথা বললেই এমনটা
হয়, তা সে যে-কথাই বলুক
না কেন! আচ্ছা, আজকের
ঘটনাই যদি ধরো - কী এমন
দোষটা সে করেছিল শুনি?
না, একটা স্টেটস্ম্যান
কাগজ থেকে, কিছুটা
উত্তেজিত গলায়,
পুরুলিয়ার অযোধ্যা
পাহাড়ের একটা আশ্চর্য
ঘটনা সবাইকে শুনিয়েছিল
- এইটুকুই। তাতেই এই!
গুরুদা, যেই না পড়তে
শুরু করেছে - শুরু করেছে
মানে গড়্গড়িয়ে খানিক
পড়েই ফেলেছে, 'খবরে
প্রকাশ, গত বুধবার
সকালে শ্রীমান নটবর
মাজি এক ছাই-নীল
গ্রহান্তরের জীবকে তার
পৈতৃক শিরীষ গাছের ওপর
দিব্যি হাত পা ছড়িয়ে
বসে থাকতে দেখেন -
চেহারায় যা গিরগিটির
কাছাকাছি, যদিও চোখ
দুটি হুবহু মানুষের মতো
(এইখানে, রিপোর্টের ঠিক
এইখানে ব্র্যাকেটের
মধ্যে একটা
বিস্ময়চিহ্ণ, বোঝ তপা -
গুরুদা এক ঝলক চোখ তুলে
তপার দিকে তাকায়) তার
পিঠে আঁশের এক শক্ত
বর্ম। সেই গ্রহান্তরের
জীব নাকি করুণ মুখভঙ্গি
করে শ্রীমান নটবরকে
কিছু বোঝাতেও চেষ্টা
করে। তারপর... তারপর...' -
হাওয়ায় উলটে যাওয়া
পাতাটা সোজা করে নিতে
না নিতেই চাকদা সৎকার
সমিতির লাল রক থেকে,
যাকে বলে, প্রতিক্রিয়া
ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তপু,
অর্থাৎ তপন, মুখে মাউথ
অরগান বাজানোর ঢঙে
আধখানা হাত চাপা দিয়ে,
ছেঁকে নে, ছেঁকে নে, বলে
দেদার আওয়াজ তোলে,
শুদ্ধ ভাষায় বলতে গেলে,
দুয়ো দেয়। গুরুদা,
খবরের শোক কাটিয়ে ওঠার
আগেই এইরকম সুইং
ডেলিভারিতে রীতিমতো
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
গিয়ে বলে , আমি বানিয়ে
বলছি না কি - কী ভাবিস
তোরা, রকে গুলতানি করার
জন্য মেজ শালাকে বলেছি
বুঝি এইরকম একটা খবর
করতে! 'দি স্টেটসম্যান'
করেছে এই নিউজ, যে-সে
পেপার নয়। এক মুহূর্ত
গোটা রকও যে কিছুটা
ব্যাক-ফুটে চলে যায়না
তাও নয় - কতটা মেজাজ
হারালে হাসিখুশি আজীবন
ব্যাচেলর গুরুপদ তার
গুরুত্বপূর্ণ
শ্যালকের অফিস অব্দি
পৌঁছে যায়, সেটাই থতমত
করেছিল তাবৎ
রকোয়ানদের। সে যাই হোক,
দোলনই শেষমেশ বলে উঠতে
পারে, কাগজে লিখলেই
মেনে নিতে হবে? এইবার,
এইবার, অন্তর্ঘাতের
পালা শুরু হয়। ভজা
জিভটাকে আধহাত বের করে
বলে, ও কথা বলিস নে
দোলা। কাগজে দুমদাম
হাতিঘোড়া লিখে দেওয়া
যায়! তবে, গুরুদা মানেই
তো... কথাটার পুরো
ডেলিভারি শেষ হতে না
দিয়েই গুরুদা ঝাঁপিয়ে
পড়ে , গুরুদা মানে কী,
য়্যাঁ, গুরুদা মানে কী -
বলে ফ্যাল ? তড়িতে ভজা
তপুর দিকে আর দোলন শৈলর
দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি
করে, শেষে ফ্যাচফ্যাচ
করে হেসেও ফেলে বিস্তর,
মানে সমস্বরে আর কী -
নববর্ষের ডিসকাউন্টের
মতো বাড়াবাড়ি রকমের।
মানছি, বাড়ি থেকে
আন্দাজ শ'দুয়েক পা
দূরের পেট্রল-পাম্পে
গুরুদা তার আদ্যিকালের
লজ্ঝড়ে স্কুটারটা
হাঁটিয়েই নিয়ে যায়।
তাতে নাকি মূল্যবান এবং
ক্রমশ বিলীন ভূগর্ভের
তেলের একটু সাশ্রয়
করতেও পারে সে। এও না হয়
মানা গেল ( তপার আঁখো
দেখা হাল) যে, ধুপ
জ্বালিয়ে
প্রণাম-ট্রনামের ডেলি
রুটিন চুকিয়ে নিয়ে
গুরুদা সেটা নিভিয়ে
পরের দিনের জন্য
যথাস্থানে আবার
সংরক্ষণ করে, কিন্তু
তাই বলে ওইরকম
অভদ্রভাবে ভরা বাজারে
হেসে উঠতে হবে! এদিকে
রকের থেকে একটা
উল্লাসধ্বনিও শোনা যায়,
'সান্যালকাকা যে!' ফচকে
মিন্টু চোখ টিপে বলে
ওঠে , 'সান্যালকাকা কি
বারাণসী থেকে
রিটার্ন-স্ম্যাশে সোজা
এই সৎকার সমিতির
কোর্টে' , আর দশ গজ দূর
থেকে বাজখাই গলায়
সান্যালকাকার জানান
দিতেও দেরি হয় না , কী
ব্যাপার - পালে বাঘ পড়ল
নাকি! ঘটনার আপডেট নিয়ে
কিছুটা নরম চোখে
গুরুপদর দিকে তাকায়
কাকা - গুরুপদ, ভাবো,
অন্য গ্রহের লোকেরা, সে
তুমি লোকই বল আর জীবই বল
- তারা কিন্তু এসে হাজির
চোখের পলক ফেলতে না
ফেলতেই, এদিকে বারাণসী
মেল আমাকে ফেল করিয়ে
দিল পাক্কা দেড় দিন
স্রেফ ঢিকির ঢিকির
করে'। কথাটা থিতোবার
আগেই শৈল হাত তুলে দেয়,
কাগজে লেখা তো, মেনে
নেওয়া ছাড়া উপায় কী - না
কি সান্যালকাকা? ঘটনার
ঘনঘটায় গুরুপদ বেশ
হকচকিয়ে যায়, 'তবে যে
আমায় নিয়ে খিল্লি
করছিলি ' - খবরের কাগজটা
আবার মুখের ওপর উঁচিয়ে
ধরে সে। লাপু এবার
ইঙ্গিতপূর্ণ এন্ট্রি
নেয়, দেখো গিয়ে কী দেখতে
কী দেখেছে। নটবরলালের
আগের রাতের কীর্তিকলাপ
আমরা কেউ দেখতে গেছি? সে
কোথায় ছিল, কী খেয়েছিল...
সান্যালকাকার রাশভারি
গলা মাঝপথে থামিয়ে দেয়
লাপুকে, এই তোদের এক
মস্ত দোষ, কথায় কথায়
অবিশ্বাস। আচ্ছা,
সাংবাদিকরা কি সব
দুধেভাতে যে নটবরকে
যাচাই না করেই, দুম করে
একটা খবর করে দেবে!
এতক্ষণে গুরুদা কিছু
বলার সুযোগ পেয়েছে, তপু
তো আমাকে কনক্লুড করতেই
দিলনা সান্যালদা!
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন
নাগরিকদের রীতিমতো
হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে,
অন্ধকারে বেরতে হলে
যাতে তারা দল বেঁধে
বেরোয়। আরও বলেছে হাতের
কাছে লাঠিসোঁটা রাখে
যেন তারা। - হউম,
সান্যালদা
উদ্বেগজনকভাবে ঘাড়
নাড়েন, তারপর জনতার
দিকে চোখ বুলিয়ে বলেন,
কই, ব্রজকে দেখছি না যে?
দোলন জানায় ইন্টারভিউ
দিতে কলকাতা গেছে ব্রজ।
- তবে তো মুশকিল হল -
ফেরার সময় লালের দোকানে
ন-নটা রয়াল কবিরাজির
অর্ডার দিয়ে এসেছি যে -
সান্যালকাকার এ-হেন
ঘোষণায় রকের আবহাওয়ায়
তক্ষুনি সিজ্-ফায়ার
নেমে আসে। দোলন ব্রজকে
ফেরার পথে লালের দোকান
ঘুরে আসতে বলেছে কী
বলেনি,মিন্টু
সর্বসমক্ষে ডিক্লেয়ার
করে, আমি বৌদি হলে
আপনাকে এক পিস
অ্যাডাল্ট হামু খেতাম।
- য়্যাঁ, একে চুম্বন, তায়
অ্যাডাল্ট - ঘোর কলি হে !
সমবেত হুররে-র মধ্যে
ব্যারিটোনে
সান্যালকাকার ' বোঝো
কান্ড, বোঝো কান্ড'-র
হা-হুতাশ কিংবা নার্ভাস
সলিলকি শোনা যায়।
ব্যাপারটা কী, এদের
একটা নাটকের দল আছে - ৯-এ
নাটুয়া।– ভাবছিলাম
কতক্ষণে বলবেন ! আজ্ঞে
হ্যাঁ, বোঝাই যাচ্ছে এই
নামকরণের পিছনে কোন
অনুপ্রেরণা কাজ করেছে।
এরা মূলত পথনাটক করে
থাকে অবশ্য –
অ-প্রসেনিয়াম। ব্রজকে
নিয়ে মোট ন'জন এই দলের
সদস্য। রিহার্সাল বলো,
কল-শো বলো, দল বেঁধেই তো
সবার থাকা - তাই সৎকার
সমিতির রকে আড্ডা দিতে
গিয়ে বয়সের কোনো গিঁট
বাধা হয়ে দাঁড়ায় না
এদের কাছে। এখানে
পয়সাকড়ির হাল সবারই
জানা - এদের
প্রত্যেককেই তাই
রোজগারের কোনো না কোনো
উপায় খুঁজে নিতে হয়েছে।
সান্যালকাকা অবশ্য
রেলে ছিলেন। দোলন
ন্যাশানাল স্কুল অফ
ড্রামায় পড়াশোনা
করেছে। বাকিরা কেউ
প্রাইভেট কোম্পানিতে,
কেউ বা ট্যিউশন অর্থাৎ
রক্তদান করে। শৈল ফিজিও
থেরাপিস্ট। যাই হোক,
ব্রজ এসে হাজির হতেই
দোলনের ডিউটি হয়ে
দাঁড়ায় প্রপার
ডিস্ট্রিবিউশন অব
কবিরাজি কাটলেটস্।
হুসহাস শব্দ করে খেতে
খেতে মিন্টু ফুট কাটে,
আমার কী ইচ্ছা হচ্ছে
জানিস তো - পার্সেল করে
ভোপালে এক পিস
আধ্যাত্মিক কবিরাজি
সাধ্বী প্রজ্ঞার নামে
পাঠিয়ে দিই! আহ্, ভাব
একবার, প্রজ্ঞাজী
হনুমান চালিশা পাঠ
করছেন আর কুট কুট করে
কামড় দিয়ে লালের
কবিরাজি সেবন করছেন !
সান্যালদা এইবার
দুঃখিত হন,
নেম-ড্রপিংয়ে কার কোন
লাভটা হয় বল তো? লাপু
জানায়, সান্যালকাকা,
বেণীমাধব শীলের
ফুল-পঞ্জিকার মতো
মিন্টুর কথাগুলো
একশোভাগ খাঁটি। নন্দী
সঙ্গত করে, অ্যাটেনশন
মিত্রোঁ, সই ও সিল
দেখিতে ভুলিবেন না।
মিন্টুর কাছ থেকে জানতে
চায় নন্দী - প্রজ্ঞার
ব্যাপারটা কী বল তো?
মিন্টু ফচকেমি করে, তোর
কি টিউব-লাইট সিন্ড্রোম
- জানিস না ট্যুইটারে কী
লিখেছিলেন প্রজ্ঞা! -
প্রতিদিন সন্ধে ৭টা
থেকে বাড়িতে বসে পাঁচ
বার করে হনুমান চালিশা
পাঠ করতে হবে আর
অযোধ্যার মন্দিরে
প্রদীপ জ্বালিয়ে ভগবান
রামের পুজো করতে হবে -
ব্যাস্, তাহলেই দেশ
থেকে করোনা ভ্যানিশ!
দোলন হঠাৎ রসভঙ্গ করে,
ব্রজ, সেই থেকে তুই
চুপচাপ যে ! এতক্ষণে
ব্যাপারটা খেয়াল করে
সবাই। ব্রজ একটা
দায়সারাগোছের উত্তর
দেয়। সান্যালকাকা বলেন,
এই ব্রজ, খুলে বল না,
দেখবি সব ভার নেমে
যাবে। একে কী বলে জানিস
তো - চিমনি সুইপিং। দোলন
মুচকি হাসে, কমার্শিয়াল
আর্টিস্টের কাজ ব্রজর
কি পছন্দ হয়! ব্রজ
বিড়বিড় করে - ভ্যান গখ,
পল গ্যঁগা, সালভাদর
দালি, পল স্যেঁজানের
কাজ ভালোবেসে শেষে
শাড়ির পাড়ের ডিজাইন
করতে ঝুলে ঝুলে কলকাতা
যাও রোজ। দোলন ব্রজর
কাঁধে হাত রাখে - কেন,
তোর গখ্কে আঙুরথোকার
ছবি কেটে বিক্রি করতে
হয়নি! কথা ঘোরাতে
ব্রজকে জিজ্ঞেস করতে হয়
তাই, আজকের টপিক কী? যেই
না বলা, বাকি আটটা স্বর
পিংপং বলের মতো নানান
দিকে লাফিয়ে উঠে প্রাইম
টাইম শেয়ার করে – খবরে
গোবর ! তোদের দিয়ে আর যাই
হোক ভাই, কোরাস হবে না।
স্বরের হারমোনি কই, এ তো
মেছুয়াপট্টি! মিন্টু
ফোড়ন কাটে, টুয়েন্টি
ফোর ইন্টু সেভেন এই
গুরুগিরিটা চালিয়ে
যাবি ? কথাটায় ব্রজর
হঠাৎ হাসি পেয়ে যায় -
কারা কারা বিশ্বাস করিস
প্রিন্ট বা ভিস্যুয়াল
মিডিয়ায় যা-কিছু
প্রচারিত হয়, সবটাই
সত্যি? স্কুলবাচ্চাদের
মতো গুরুদা, ভজা, শৈল আর
সান্যালকাকার হাত উঠে
যায়। সান্যালকাকা যদিও
গলা খাঁকারি দিয়ে সওয়াল
করেন, বেশিরভাগই কি
সত্যি নয়? মিথ্যে খবরের
কোনো কন্সিকুয়েন্স নেই
বলছিস? ব্রজ দলের
বাকিদের দিকে তাকায় -
তার মানে, তপু, দোলা,
মিন্টু্ , লাপু - তোরা
সবাই অপসিট টেন্টে? ওরা
তক্ষুনি ওদের অবস্থান
জানায়, নিশ্চয়ই। ব্রজ
সম্ভবত আজকের
ইন্টারভিউয়ের হতাশা
কাটিয়ে উঠতে পেরেছে
এতক্ষণে , নইলে সে ফিচেল
হেসে বলবেই বা কেন, চলো,
লেটস্ প্লে। বাকিরা
স্লোগান তোলে, খেলা হবে,
খেলা হবে। ব্রজ আবারও
লিড নেয়, হ্যাঁ, খেলাই,
ধরে নাও টি টোয়েন্টি বা
র্যাপিড-ফায়ার
রাউন্ড। এটা ওয়ান টাচ
ফুটবলের মতো, দয়া করে
কেউ... ঝুলিও না - পাদপূরণ
করে বাকিরা। - দোলন,
সুতো তোর হাতে - নে, এবার
শুরু কর। দোলন দু'পা
এগিয়ে এসে পজিশন নেয়।
ওড়নাটা টান টান করে
পিছনে একটা ফাঁস বাঁধে।
তারপর সোজা অডিয়েন্স
মানে অষ্টবসুর দিকে
তাকিয়ে শুরু করে,
আপনারা জানেন কি দর্শক
,২০১৭ সালে 'fake news' শব্দটা
Collins's Dictionary-তে প্রথমবারের
মতো যোগ হয়? আপনারা
জানেন কি, 'ভারতপ্রেমী'
শ্রীমান ডোনাল্ড
ট্রাম্পের অভিষেক তথা
রাজত্বকালে ইয়েটসের
'দি সেকেন্ড কামিং'
কবিতাটি সবচেয়ে বেশি
করে আলোচনায় উঠে এসেছে ?
ব্রজ দোলনকে মাঝপথে
থামায়, কবিতাটা একবার
শোনাবি - যদি মনে থাকে
অবশ্য। দোলন একটা চলনসই
অনুবাদ করেছিল - সেটাই
সবাইকে শোনায় । বাহ্,
খুব ভালো হল, এইটাকেই
আমরা সাব-টেক্সট্
হিসেবে নিতে পারি।
সান্যালকাকা আপত্তি
জানান , এই স্ক্রিপ্টে
লোকে কিন্তু বোর হয়ে
যাবে। - আরে, আউট অব দ্য
অর্ডিনারি একটা কিছু -
এটা না হলে অন্যটা।
আচ্ছা সান্যালকাকা,
বিজয় তেণ্ডুলকরের 'চুপ,
আদালত চলছে'-র মতো একটা
নাটক লেখা যায় কেউ
কোনোদিন ভেবেছিল? দোলা
বলে, শম্ভু মিত্রের
অনুবাদে বইয়ের শুরুতেই
লেখকের
স্বীকারোক্তিটা খেয়াল
করেছিস তো - কী
যেন...যেভাবে নাটক লিখতে
নেই ! - 'চলো' - ব্রজকে
এবার একটা পাকানো
স্প্রিংয়ের মতো মনে হয়।
দোলন আবার শুরু করে...
আমাদের আজকের নাটক, (গলা
কিছুটা তুলে ) ' লাইন
বিটুইন দ্য লাইনস্' -
বাংলায় কী বলা যায় বল তো!
দোলা অবশ্য ব্রজর
উত্তরের অপেক্ষা করে
না। বাকিরা সাধ্যমতো
হারমনি করে, ' লাইন
বিটুইন দ্য লাইনস্'।
ব্রজ এগিয়ে আসে মাঝখানে
, 'ঘুরে যায় দূর থেকে
দূরে ঘুরে যায়/ গেরোবাজ
শবরের স্বরটি হারায়;/
ভেঙে পড়ে চারিদিক; টলছে
কেন্দ্র ;/ নৈরাজ্যের
ঘেরে দুনিয়া
অন্ধ,/রক্তের ঝিম স্রোত,
তার চারিদিকে/ সহজের
উৎসব মেশে সেই স্রোতে
;/শ্রেয় যা যা বিশ্বাস
নেই তাতে কারো,/ মন্দের
ছন্দেই কামজ্বর আরও।' -
সেরেছে, এ তো পি এন বি-র
ইংরেজি ক্লাস মনে
হচ্ছে! যাঃ, এটাকে আরো
ছোটো কর - তপু পরামর্শ
দেয়। চোখের ইশারায় দোলন
এগিয়ে ব্রজর পাশে চলে
আসে। ব্রজর লিড ফলো করে
শেষ কয়েকটা লাইন বেছে
নিয়ে ওরা আবার শুরু
করে। বিশ্বাসদা এবার
চালিয়ে খেলেন : সহজের
উৎসব, আমার উৎসব। হ্যাঁ,
আমি বিশ্বাসী। আপনারা?
ব্রজ : দীর্ঘতম পালায়
অন্ধত্ব একান্ত জরুরি।
তা আপনারা আপনাদের
অন্ধত্বে খুশি তো ?
লাপু : অন্ধ নই
মিন্টু : আমি অন্ধ নই
দোলন : অন্ধ হতে চাই না।
লাপু : দেখতে চাই...
ভজা : দৃশ্য ?
তপু : ঘটনা
লাপু : আর ঘটনার বয়ান
ব্রজ : আর ঘটনার পরিণতি
সান্যালকাকা : দৃষ্টি
আছে, দর্শন নেই।
গুরুদা : শ্রুতি আছে,
সংশ্লেষ নে ই...
ভজা : নে ই, নে ই...
লাপু : কথা মানেই সত্যি?
মিন্টু : আজ্ঞে না
দোলন : লেখা মানেই
গুরুদা : সত্যি
তপু : আজ্ঞে না
ভজা : সত্যি
মিন্টু : না, না, না
ব্রজ : কাগজগুলো
গুরুদা : সত্যি লেখে ?
ভজা : লেখে, লেখে
দোলন : লেখে, গোপনও করে
ব্রজ : দুটো লাইনের
মাঝে
লাপু : শূন্য, মস্ত
শূন্য
মিন্টু : মান ছি না, মান ব
না
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
ভজা হঠাৎ বলে ওঠে,
দুত্তোর। এ তো ভোটের
ছড়া বলে মনে হচ্ছে!-
এলাম একটু হালকা হতে।
তা নয় মৃণাল সেনের মতো
মাথায় আস্ত একটা
স্ক্রিপ্ট ঝুলিয়ে
রাখতে হবে। কথা চলতে
চলতেই এডিট করো রে,
ডেলিভারি করো রে,
অন্যের ডায়ালগের ফাঁক
খোঁজো রে - রাজ্যের
হ্যাপা। মুখটা কেমন
তেঁতো তেঁতো লাগছে!
ভজার কথায় সবাই খুক খুক
করে কেশে ওঠে। তপু
জ্ঞান দেয়, আরে এইজন্যই
তো উনি বলেছিলেন, ভাবো,
ভাবা প্র্যাকটিস করো। -
এই, য়্যাই তপা, এটা
মৃণাল সেন বলেছিলেন?
তপুকে এক হাত নিতে পেরে
মুষড়ে থাকা সিড়িঙ্গে
চেহারার গুরুদার
কলারটা আবার উঁচু হয়ে
যায়। লাপু দোলনকে বলে,
কিন্তু এর জন্য
ট্রাম্পের কাছে যেতে হল
কেন - শুনলি না, গুরুদার
স্টেটস্ম্যান কী
লিখেছে? দোলা স্বীকার
করে, ইয়েলো জার্নালিজম
সব দেশেই আছে। শৈল
সুযোগমতো ভজাকে
সেকেন্ড করে, সত্যি
বলতে কী কবিতাটা মাথার
ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল।
দোলা হেসে ওঠে, তাই বুঝি
ওই চিরকালীন সেফ
শ্লোগানটা ছাড়লি -
মানছি না, মানব না? ভজা
এবার একটু চিলি-সস্
ছড়ায় - সুযোগ পেলেই
মানছি না, মানব না বলবে
না, কথায় কথায়
মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল
নিয়ে গলা ফাটাবে না - তা
হলে আর বাঙালি কীসের!
হালকা একটা খবর থেকে
এইরকম শ্রাদ্ধবাড়ির
ভারী আবহাওয়ায় চলে
আসাটা সান্যালকাকা
মেনে নিতে পারেন নি -
দেখবি, এইবার ৯-এ
নাটুয়ার বদলে লোকে
আমাদের 'না'-এ নাটুয়া বলে
ডাকবে। খালি না, না আর
না। ভজা প্রতিধ্বনি
তোলে, না, না আর না, কুসুম
তোমার হ্যাঁ নাই! সবাই
হৈ হৈ করে এনকোর দেয়, সা
ধু, সা ধু, সা ধু।
রাস্তার এত যে হুশহুশ
গাড়ির শব্দ, মাঠের
মাঝখানে বাচ্চাগুলোর
প্যাঁ পোঁ অর্কেস্ট্রা
, এমনকী দাদা থেকে দাদুর
বয়সিদের নানান কিসিমের
হাঁটার ভঙ্গি আর
এক্সক্যাভেটারের মতো
ঘড়ঘড়ে
নিশ্বাস-প্রশ্বাসের
আওয়াজ, তাতেও কি আর হুঁশ
আছে এদের! হুঁশ হল অবশ্য,
যখন গোকুলদাদু ফেরার
সময় হাঁক মেরে জানতে
চান, কী হল রে গুরু, কার
সৎকারগাথা লেখা হচ্ছে।
ও কিছু না বিশ্বাসকাকা,
গুরুদা চাপা দেবার একটা
মহৎ চেষ্টা করে।
অন্যদের কাছে
গোকুলদাদু, তথা গুরুদার
বিশ্বাসকাকাও অবশ্য
ছাড়বার পাত্র নন, হাসতে
হাসতে ফিরতি চাল দেন, সে
তো বটেই, কিছু হলে কি আর
সবকটা মিলে বিড়ালের মতো
লোম ফুলিয়ে ঝগড়া করতে
বসিস! - কী জানো কাকা, আজ
কপালটাই মন্দ আমার। -
কেন রে, মাথায় তোর
নারকেল পড়েছে বুঝি - তবে
তো ভালো খবর!
গোকুলদাদুর খোঁচাটা
অগ্রাহ্য করেই খবরের
কাগজের কথাটা বলতে হয়
গুরুদাকে। - হুঁ, গভীর
একটা নিশ্বাস ফেলে জি
বিশ্বাস এসকোয়ার, বার
এট ল - কোন এক বিদেশি ল
ফার্মের এক সময়ের
দোর্দণ্ডপ্রতাপ
পার্টনার, হালের
গোকুলদাদু বলেন, কাগজটা
দে দেখি একবার। গুরুদা
নিরাসক্তভাবে খবরের
কাগজটা তুলে দেয়
বিশ্বাসকাকার হাতে।
স্যান্যালদা কাগজটায়
ডিঙি মেরে জানতে চান,
এইরকম কোনো জীবের ছবি
কখনো দেখেছেন নাকি
বিশ্বাসদা? - দেখিনি
বললে ভুল হবে - যেন কোনো
এগ্রিমেন্টের ওপর শেষ
মুহূর্তের চোখ
বুলচ্ছেন, এইরকম
নিবিষ্টভাবে ছবিগুলোর
দিকে তাকিয়ে অস্ফুটে
উত্তর দেন গোকুলদাদু।
গুরুদার মুখে হাসি আর
ধরে না - এইবারে একটা
হেস্তনেস্ত করতে হবে!
উশখুশ করতে করতে ব্রজ
শেষে বলেই বসে, এটা কোন
দেশের জীব দাদু? - আরে,
আমাদের এই বাংলাদেশেরই
তো! নন্দী যে নন্দী, সেও
এই কথায় যেন বেবাক গুম
মেরে যায়! তপু বলে,
অফেন্স নেবেন না দাদু,
এইটা... জাস্ট... মানা গেল
না। গোকুলদাদু তখনও
হাসছেন - কেন, সুকুমার
রায়ের বকচ্ছপের ছবি
দেখিসনি, কিংবা
হাঁসজারুর? ভজার হাঁ
যেন বন্ধ হতে চায় না, সে
তো মনগড়া! গোকুলদাদু
গুরুপদর দিকে
গম্ভীরভাবে তাকান,
পকেটে তোর পয়সাকড়ি
কিছু আছে ? গুরুদাকে
অগত্যা নিষ্ফলা পকেট
হাতড়ানোর ভান করতে হয়।
সান্যালকাকা তড়িঘড়ি দশ
টাকার একটা নোট গুরুদার
হাতে গুঁজে দিয়ে
ক্রাইসিস
ম্যানেজমেন্ট করেন।
গোকুলদাদু বলেন - বেশ,
এইবার ওই টাকাটা আমার
হাতে তুলে দিয়ে আমাকে
তোর সত্যান্বেষী নিয়োগ
কর - দেখি এই রহস্যের
কিছু কিনারা হয় কি না! -
আপনি বলছেন এর মধ্যে
রহস্য আছে! গোকুলদাদু
ব্রজর দিকে গম্ভীর মুখে
ফেরেন, অবস্থা সঙ্গিন। -
কী অবস্থা দাদু - দোলন
জানতে চায়। দাদু উত্তর
না দিয়ে বলেন, গলাটা
কেমন শুকিয়ে আছে – ও হে
হরিদাস, গলা ভেজানোর
কোনো ব্যবস্থা হবে না
কি তোমার ওখানে - ও'পাড়েই
হরিদাসের চা-তেলেভাজার
দোকান। চকিতে এ-ওর
চোখের ইশারা হয়ে যায় আর
শৈলর বাড়ানো হাতে চা এর
সঙ্গে টা-এর জন্য
টুকটাক কিছু রেস্ত জড়ো
হয়। নন্দী অতি কষ্টে এক
টাকার একটা কয়েন পকেট
থেকে বের করে শৈলর হাতে
রাখে, দেখিস, বেশি রিচ
কিছু আনাস না কিন্তু।
এই বারোয়ারি
ফান্ডিংয়ের ব্যাপারটা
তারিয়ে তারিয়ে দেখার
পরে গোকুলদাদু আবার মুখ
খোলেন - দেখো, পেটের
দায়ে অনেক দেশেই তো
ঘুরতে হয়েছে! মানুষের
মুখ অথচ কুমিরের আঁশের
বর্ম-পরা পিঠ, তায় পেটের
নীচে টিকটিকির মতো নরম
মসৃণ চামড়া - এইরকম
প্রাণী তো সারা
পৃথিবীর কোথাও আছে বলে
কখনো শুনিনি। আরও কী
জানো তো, সরিসৃপের মতো
এই জীবটির চোখ দুটো
কিন্তু দু'দিকে নয়, বরং
মানুষের মতো মাঝখানে। -
হ্যাঁ, তাই তো - সবাই
ঝুঁকে আবার ছবিগুলো
দেখে। ... তবে, বলতে গেলে
এইরকমই কতগুলো জীব
একবার দেখেছিলাম বটে,
দেখে একেবারে থ হয়ে
গিয়েছিলাম। - এই যে
বললেন... নন্দী বিপজ্জনক
কিছু একটা বলতে
যাচ্ছিল, ব্রজ ইশারায়
তাকে চুপ করিয়ে দেয়।
গোকুলদাদু বলে চলেন,
ইটালিতে একবার বিচিত্র
এক কারণে স্কাল্পটর
লাইরা মাগানুকোর কাছে
যেতে হয়েছিল। এইসব
কথাবার্তা চলতে চলতেই
একগাল হেসে হরিদাস তার
বুলবুলভাজা সমেত হাজির
হয়ে যায়। সৎকার সমিতির
রকে আবার চাঞ্চল্য - কে
বলবে আস্ত একখানা করে
কবিরেজি প্রত্যেকের
পেটে ডুবসাঁতার দিচ্ছে
! গোকুলদাদু নিজে অবশ্য
শুধু চা-ই তুলে নেন।
একটু বিরতি নিয়ে আবার
শুরু করেন তারপর, কোথায়
ছিলাম যেন? তপু বলে ওঠে,
লাইরা হোসিয়া... দোলন চট
করে রেইন-চেক দেয়, লাইরা
মাগানুকো, ইতালীয়
ভাস্কর... হ্যাঁ হ্যাঁ ,
ওঁর স্টুডিয়োতে যেতে
হয়েছিল একবার।
মাগানুকো হাইপার
রিয়ালিটি নিয়ে কাজ
করেন। সিলিকন দিয়ে তৈরি
আশ্চর্য কিছু
জীবজন্তুর মূর্তি ওঁর
স্টুডিয়োতে বসানো ছিল -
অনেকটা ওই গুরুর কাগজের
ছবিগুলোর মতোই -
অনেকটাই বা বলছি কেন,
ধরে নাও পুরোটাই। এইসব
কথা বলবার সময়
গোকুলদাদুর
ইউনিভার্সাল তুই
সম্বোধন, সিম্বোলিক
'তুমি'-তে কেন যেন বদলে
যায়। একটা পিন পড়লেও
শব্দ হবে - এইরকম থমথমে
আবহাওয়া তখন। গুরুদা
হঠাৎ বেফাঁস বলে ওঠে -
কাকা, স্টেটস্ম্যানের
মতো একটা রেপুটেড কাগজে
এইরকম গুলতাপ্পির ছবি
ছাপবে! সঙ্গে রিপোর্ট
করবে ! - ডিস্ট্রিক্ট
এডমিনিস্ট্রেশন
পর্যন্ত কেঁপে গেছে...
গোকুলদাদু তুড়ি মেরে
উড়িয়ে দেন, ছাড় ছাড় -
রিপোর্টটা বের হয়েছে কত
পাতায়? শেষের আগের
পাতায়, খেলার পাতার আগে -
গুরুদা ঝটিতে উত্তর
দেয়। - তা, তোমরা কি ভাবো
অন্য গ্রহের কোনো জীবকে
পুরুলিয়ার কোথাও দেখা
গেলে, বা পৃথিবীর অন্য
কোথাও - সেটা শুধু
ডিস্ট্রিক্ট
এডমিনিস্ট্রেশনের
ইস্যু থাকবে, নাকি কোনো
কাগজ সেটা কভার-স্টোরি
না করে শেষের আগের
পাতায় লুকিয়ে লুকিয়ে
ছাপবে! টিভিতে খবরটা
শুনেছ কেউ ? - হয়তো শেষ
মুহূর্তের খবর, বাধ্য
হয়েছে... উঁহু, তা তো নয়
সান্যাল - দুঁদে উকিলের
মতো ঘাড় নাড়েন
গোকুলদাদু - আজ তো রবি,
খবরটা তো দেখছি গত
বুধবারের। তা,
পুরুলিয়া কি এতই দূর,
এতটাই এলিয়েন! তাছাড়া
রিপোর্টিংয়ের ভাষাটা
খেয়াল করলে না তোমরা - কত
ক্যাসুয়াল, তারপর,
মাঝখানে ওই দুম করে
একটা এক্সক্ল্যামেটরি
মার্ক - এইসব কি কোনো
খবরে দেখতে পাও ! দোলনই
এবার জিজ্ঞেস করে,
রহস্যটা তবে কী ? আজ কত
তারিখ বলো দেখি - দোলনের
দিকে ফিরে গোকুলদাদু
জানতে চান। কেন - পয়লা
এপ্রিল, অনায়াসে
বেরিয়ে আসে গুরুদার মুখ
থেকে, আর গোকুলদাদুও
তেমনি ফিরতি সার্ভে
গুরুদার দিকে মুখ
ঘুরিয়ে তাঁর গোলগাল
শরীরটা ঝাঁকিয়ে হাসতে
হাসতে বলেন, দুয়ে দুয়ে
চার - তুই এপ্রিল ফুল
হয়েছিস গুরুপদ। গুরুদা
মানতে নারাজ, কী বলছেন
বিশ্বাসকাকা, কাগজে
লিখেছে! - কাগজে লিখেছে
আর কাগজে লিখেছে, তোর
শুধু একটাই বুলি। শোন,
বিদেশে পয়লা এপ্রিলে
এইরকম সব অদ্ভূতুড়ে খবর
ছাপার রেওয়াজ আছে। তোর
স্টেটস্ম্যান সেই
হেরিডিটি ফলো করেছে
মাত্র। - আচ্ছা, এইরকম
হয় – ব্রজ অবাক হয়ে যায়!
দাদু বলেন, ১৯৮০-৮১
নাগাদ একবার গার্ডিয়ান
কাগজ ৭ কলমের একটা খবর
বের করে দাবি করে বৃটিশ
প্রতিরক্ষা দপ্তর নাকি
এমন এক গুপ্ত ফর্মুলা
তৈরি করেছে যাতে যেকোনো
জায়গার আবহাওয়ায়
ইচ্ছেমতো রাশ টানা
যাবে - স্বয়ং
প্রধানমন্ত্রী
মার্গারেট থ্যাচারও
নাকি এর মধ্যে আছেন ! আর
একবার বের হল, কাগজ বা
পোর্টালের নামটা মনে
আসছে না ঠিক, বোধহয়
ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক -
এবার থেকে নাকি বিনা
পোশাকে কোনো জীবজন্তুর
ছবি ছাপাই যাবে না।
ডেইলি মিরর আবার খবর
করেছিল,অমুক মিউজিক
কোম্পানির মুখপাত্র
তমুক শ্রীমতী এভ্রিল
ফোয়েল (নামটা খেয়াল কর
ব্রজ, গোকুলদাদু
হাসিমুখে ব্রজর দিকে
একঝলক তাকান) শ্রীমতী
এভ্রিল ফোয়েল
জানিয়েছেন ঘোড়াদের গান
শোনার জন্য দারুণ এক
হেডফোন নাকি বানিয়েছে
তাদের কোম্পানি - মজার
কথা কী জানিস, সবকটা
জায়গাতেই কিন্তু জুতসই
ছবি ছেপেছিল কাগজগুলো -
এমনকী তালিম নেওয়া
সিন্ধুঘোটকদের দৌড়
প্রতিযোগিতা অবধি বাদ
যায়নি সেখান থেকে।
ডেইলি এক্সপ্রেস আবার
এককাঠি সরেস - তারা খবর
করে, কোন একটা পিৎজা
কোম্পানি নাকি এমন একটা
লেটার-বক্স বানিয়েছে,
যার মধ্যে তাদের পিৎজা
পাক্কা বারো ঘণ্টা গরম
থাকবে। - গোকুলদাদু
বলেন - আর কটা শুনতে চাস
তোরা ? সবাই তো স্ট্যাচু
! দাদুই নীরবতা ভাঙেন,
কালকের
স্টেটস্ম্যানটা একটু
খেয়াল করিস তো গুরু?-
আমাদের প্রতিটি দিনই তো
প্যারডি, বাড়তি কোনো
মজার খবরের দরকার আছে! -
কী জানিস ব্রজ, সেন্স অফ
হিউমার না থাকলে মানুষ
একটা থান ইট ছাড়া কিছু
নয় - বড়ো একটা শ্বাস ফেলে
এবার দোলনের দিকে ঘোরেন
দাদু, তোদের ওই
ইম্প্রম্পচু নাটকখানা
কিন্তু বেশ জমেছিল, আমি
জাজ হলে এক শো-য় দেড়শো
দিতাম। গ্রেড ওয়ান
এপ্রিল ফুল হয়ে গুরুদা
যেন খানিকটা চুপ মেরে
গিয়েছিল, এখন সামাল
দিয়ে বলে ওঠে , আমি না হয়
বোকা বনে গেলাম
বিশ্বাসকাকা, কিন্তু
ভাবুন, কত কত মানুষ একই
ভাবে আজকের নিউজটা
বিশ্বাস করবে!- আর সব
পরিণাম যে একইরকম মধুর
হবে না, তা তো বলাই যায় -
এবার কথাটা আসে দোলনের
দিক থেকে। মিন্টুর
অবস্থা যাকে বলে
ডাম্বফাউন্ডেড -
এতক্ষণে সে আবার নিজ
মূর্তি ধারণ করে, আমার
একটা প্রস্তাব ছিল।তপু
আঁতকে ওঠে, আজ আর গুগলি
নয় মিন্টে। মিন্টু
পাত্তা দেয় না, আমি বলি
কী, গোকুলদাদু যখন
আছেনই, এইবেলা একটা
এপিঠ-ওপিঠ সেরে ফেলা
যাক। সান্যালদা শুধরে
দেন, এফিডেবিট বল। ওই
একই হল - মিন্টু নাকের
ওপর মাছি তাড়াবার
ভঙ্গি করে - ভাইসকল, আমি
বলছিলাম কী, মিডিয়ার
নাম বদলে আমরা বরং...
সবাই হইহই করে ওঠে, আমরা
বরং? আমরা কী! মিন্টুর
চোখদুটো চকচক করে ওঠে,
আমরা বরং 'বিশ্বাসকাকা'
করে দিই, আর
বিশ্বাসদাদুর পদবীটা...
কথাটা শেষ করতে না
করতেই লাফিয়ে ওঠেন
গোকুলদাদু, অবজেকশন মি
লর্ড, লর্ডস রাদার -
জন্মেছি খুলনায়। দেশ
ছেড়েছি, ভাষা ছেড়েছি -
এখন যদি পিতৃদত্ত
পদবীটাও ছাড়তে হয়
আজ্ঞে... গোকুলদাদুর
মুখটা যেন কালো হয়ে
গেছে ! সৎকার সমিতির রক
থেকে রেকর্ড তৎপরতায়
রায় ঘোষণা করা হয়,
অবজেকশন সাসটেইন্ড -
আমাদের ৯-য়ে নাটুয়ার
প্রধানতম সমর্থক, শ্রী
গোকুল বিশ্বাস, ওরফে
গোকুলদাদুর পদবীহরণ
এতদ্বারা যারপরনাই
অগ্রাহ্য করা হল - নো
চেঞ্জ দেয়ারইন
হোয়াটসোএভার। মিন্টু
আর তপা কোরাস করে, নো
চেঞ্জ, নো চেঞ্জ। দোলন
এগিয়ে এসে, যেন সে
দর্শককে বলছে এইভাবে
গলা তুলে বলে, সুধী
দর্শকমণ্ডলী - আজকের
নাটকের শিরোনামে একটি
আপদকালীন সংশোধনী আছে -
আজকের নাটক,
'বিশ্বাসকাকা
জিন্দাবাদ'। মিন্টু চোখ
টিপে যোগ করে, ভেজাল
হইতে সাবধান।