শেষ সীমান্ত
আমি বেরিয়ে পড়েছি সেই
কবে। সময় তখনো স্থির
হয়ে আছে ব্রহ্মাণ্ডের
জন্ম দেবে বলে। আমার
বেরিয়ে পড়া মানে তোমার
দিকেই যাওয়া।
নিঃশ্বাসের চেয়েও তুমি
এত কাছে, তবু আমি পার হয়ে
এসেছি রক্তমাখা
কাঁটাতারের সীমান্ত,
তোমার কাছেই যাব বলে।
একের পর এক রাষ্ট্রের
সীমানা ডিঙাতে ডিঙাতে
পৃথিবীর প্রান্ত থেকে
ঝাঁপিয়ে পড়েছি
মহাশূন্যের বর্তুল
গহ্বরে। সূর্যের
হ্রেষাধ্বনিতে পুড়ে
গেছে আমার পালক, আমার
ডানা। পাক খেতে খেতে
আমি পেরিয়ে এসেছি
সৌরমণ্ডল,
ব্রহ্মাণ্ডের সর্বশেষ
রেখা। সময়কে ছুড়ে ফেলে
এসেছি পেছনে।
নক্ষত্রধুলোর
পিঁচুটিতে আমার চোখ
অন্ধ। সুপারনোভার
বিদ্যুৎঝড় ঝলসে দিয়েছে
ত্বক। তার প্রবল
ফুৎকারে সব ইন্দ্রিয়
ঝরে গেছে শীতের জীর্ণ
পাতার মতো। শনির ধারালো
বলয়ে ছিন্ন আমার দুই
হাত তলিয়ে গেছে
মহাশূন্যের নিঃসীম
অন্ধকারে।
সমস্ত সীমানা পার হয়ে
অবশেষে তোমার সামনে এসে
দাঁড়িয়েছি, নুব্জ্য।
আমার হাত নেই যে তোমাকে
জড়িয়ে ধরব। সামনে তুমি
বসে আছ রক্তমাংসে সজীব,
তবু ইন্দ্রিয়লুপ্ত
আমার কাছে তুমি নেই।
হায়, কী সাধ্য, আজ তোমার
স্পর্শ নিই!
তোমার কাছে পৌঁছাতে আর
কোন সীমান্ত পাড়ি দিতে
হবে, বলো?
এবার আমি পা রেখেছি
আমার শরীরের বাইরে,
তোমার শরীরের সীমানাও
পার হয়ে যেতে।
জন্মান্তর
শামুক, তোমার দিকে
নির্ণিমেষ দৃষ্টি মেলে
রাখি
ক্রমশ এগোও তুমি
নিরুদ্বেগ, শান্ত,
অপিপাসু
তোমার নিবিষ্ট গতি আমি
ধরে রাখি এই দেহে
ওই খোলে, রাজসিক
মুকুটের তলে
লুকিয়ে রাখছ মৃদু
চলনভঙ্গিমা, ক্ষতি,
মৃত্যু-সম্ভাবনা
নরম পায়ের নিচে ক্ষয়ে
যাচ্ছ ক্রমাগত
পলে-অনুপলে
যতেœ তুলে রাখি আমি
ক্ষয়ে যাওয়া শরীরের
কণা
ভ্রমণ সমাপ্ত হলে পড়ে
থাকো দেহমুক্ত উদাসীন
খোল
তোমার সর্বস্ব নিয়ে আমি
হয়ে উঠি দ্যাখো তোমার
জাতক
বিউটি অ্যান্ড দ্য
বিস্ট
গায়ে বিঁধছে রোদের ফলা,
দেখতে পেলাম ঝাউয়ের
তলায়
তুমি তখন চলেই যাচ্ছ
নৌকা গেছে ছেড়ে
তাকিয়েছিলে একটু ফিরে
কিন্তু তখন তোমায় ঘিরে
সূর্য ফেটে আমার চোখে
গাঁথিয়ে দিল পেরেক
ফিনকিতে উৎকণ্ঠা ছোটে,
প্রজাপতির প্রাচীন
টোটেম
উপড়ে পড়ে গর্জে ওঠা
নোনা হাওয়ার তোড়ে
তখন আমার ভূলুণ্ঠিত
স্বপ্নে আমিই
অবাঞ্ছিত
তুমি অপসৃত সে কার সবল
বাহু ধরে
অরণ্য, খাদ, ঝরনাধারার
মধ্যে আমি ছন্নছাড়া
প্রাণীর সঙ্গে পশুর মতো
ছিলাম খানিক বেঁচে
ডাইনি, দানো, বামন, পরি
আর হারানো সে সুন্দরীর
গল্পগাথার জগৎ কোথায়,
কোথায় আছে কে যে!
রাতের পরে ফিরেছে রাত,
রাতের মতো নামে প্রভাত
তোমার খবর রটিয়ে হঠাৎ
বনের শাখায় চেরি
বুকে ঘেঁষটে আবারও যাই
ততক্ষণে তুমি তো নাই
তোমায় পেতে আবার হলো এক
মুহূর্ত দেরি
আবার হামা আবার গুড়ি
মাথায় অগ্নিগিরির
পুরীষ
দিন যে গেল সময় হলো
গুহায় ফিরে যাবার
সুন্দরী ও পশুর ছলে
মুখস্থ রূপকথার তলে
আগুনে খাক এই কাহিনি
পেছনে থাক চাপা