পিঁপড়েরা কি গান শুনতে
ভালোবাসে? তাদের কি
সঙ্গীতকর্ন ফোটে? লাল
না কালো, কোন ধরণের
পিঁপড়েরা গান বেশি শোনে
বলে মনে হয়? রং ছাড়া লাল
আর কালো পিঁপড়ের ফারাক
বলতে কামড়ানো আর আলতো
আদরের যা ফারাক। কামড়
কি তবে আদরের অংশ নয়?
মানুষ কামড়ালে হ্যাঁ,
কিন্তু তা বলে পিঁপড়ে?
লালেরা চামড়া ফুলিয়ে
দিতে পারঙ্গম আর কালোরা
স্রেফ ত্বকের মসৃণতায়
দৌড়দৌড়ি করে খালাশ।
এই গৃহসর্বস্ব সময়ে
দাঁড়িয়ে নিরাময়ের কেন
জানি না পিঁপড়েদের নিয়ে
একটা অবসেশন তৈরী
হয়েছে। সারাদিন এদিক
ওদিক চোখ চলে যায় তার;
মেঝেতে, টেবিলে,
দেওয়ালে, কোথায় কোথায়
পিঁপড়ের দল কি ধরণের
রেখাকৃতি তৈরী করছে।
যেন এই রেখাগুলো
দেওয়ালে নয়, মেঝেতে নয়,
টেবিলে নয়, নিরাময়ের
মাথার ভেতর কেউ এসে
এঁকে দিচ্ছে।
লিখতে গেলে লেখা আসছে
না নিরাময়ের। শব্দ তৈরী
হচ্ছে না, আর হলেও
শব্দেরা কিছু তৈরী করতে
পারছে না। না লিখতে
পারার গৃহবন্দী, অলিখিত
এই দিনগুলোয় মাথার ভেতর
সুদক্ষ ময়রার হাতে কেউ
যেন পাক দিচ্ছে
পিঁপড়েদের যৌথতার নানা
শরীরাকারে। কখনো গোল,
কখনো চৌকো আবার কখনো
সহজে নাম দেওয়া যায়না
এমন সব আকার।
নিরাময়ের ব্রেইন
স্ক্যান করলে নিউরোনের
সহস্রপথে যেসব
সিগন্যালে জলকেলি করবে
তার চিন্তাগুলো, সেগুলো
মেঝে জুড়ে এঁকে দিচ্ছে
পিঁপড়ের দল। তবে সেসব
চিন্তার
পিপীলিকা-প্যাটার্নের
মধ্যে নিরাময়কে কি আদৌ
খুঁজে পাওয়া যাবে কোথাও
?
একদিন কিছুক্ষণের জন্য
বেরিয়েছিল, ফিরে এসে
দেখলো রান্নাঘরের
মেঝেতে শতসহস্র
পিঁপড়ের জনসভা।
কোভিডের বাজারে এদের
জনসমাবেশে রাষ্ট্র
পাভন্ধি তৈরী করতে
পারেনি। মেঝে জুড়ে
ক্রমপরিবর্তিত হচ্ছে
একটি অনামনীয় আকার।
কখনো ত্রিভুজ, কখনো
চতুর্ভুজ, কখনো বৃত্ত,
কখনো ট্রাপিজিয়াম, কখনো
বা রম্বস, মায়,
ডডেকাহেড্রন। এইসব
সরল-জটিল জ্যামিতিক নাম
কিছুই নয় মেঝের ওপর যে
ছক ভাঙা ছক তৈরি হচ্ছে,
তার কাছে।
লক্ষণরেখা দিয়ে সীতাকে
আটকানো যায়নি, লাল
কালোদেরও পথরুদ্ধ করা
গেলোনা। কোথায় যে রয়েছে
তাদের রহস্যখাদ্য কে
জানে? সেই অদৃশ্য
খাদ্যের চারপাশে পাক
খাচ্ছে আর তৈরী করছে
গল্পের আকার। এতদিনে
বুঝেছে নিরাময়, কেন সে
গল্প লিখতে পারছে না।
কি করে লিখবে? তার হয়ে
তার সকল গল্প যে লিখে
যাচ্ছে লাল-কালো
পিঁপড়েদের
খাদ্য-শবযাত্রা! রাতের
ঝড়ে ঘরে ঢুকে আসা পোকা,
মাছির মৃতদেহ বয়ে নিয়ে
যাচ্ছে। খাদ্য মাত্রেই
যে মৃত তা পিঁপড়েদের
বোঝাতে হয়না। তারাই হয়ত
একমাত্র শববাহক যারা
শবকে খাদ্য হিসাবে
ব্যবহার করে।
নিরাময়ের মগজের গল্প
তার বাড়ির সর্বত্র নানা
কিম্ভুত কিমাকার আকারে
লিখে চলেছে লাল কালো
পিঁপড়েদের দল--এই অব্দি
নয় তাও হচ্ছিল কিন্তু
তা বলে ফিলিপ্সের
পোর্টেবল স্পিকার?
একদিন সকালে উঠে নিরাময়
দেখল, টেবিলের ওপর রাখা
ফিলিপ্সের স্পিকারটার
ভেতর থেকে গুটি গুটি
পায়ে বেরিয়ে আসছে
পিঁপড়ের দল। দেওয়ালে
টেবিলে মেঝেতে ঠুকে
ঠুকে ঝাড়লেও আধ ঘন্টা
বাদে ফিরে এসে
স্পিকারটা নাড়াচাড়া
করতেই ম্যাজিকের মত আরও
আরও পিঁপড়ে বেরিয়ে আসতে
লাগলো নীচের সুইচের
গর্ত থেকে আর ওপরের
জালি জাতীয় অংশটার ভেতর
থেকে। নিরাময় কিছুতেই
বুঝতে পারলো না কি এমন
রহস্যখাদ্য রয়েছে
স্পিকারের মধ্যে? তবে
কি পিঁপড়েরা চায় না
নিরাময় গান শুনুক? তারা
কি শুধু নিজেরাই গান
শুনতে চায়?
অনর্গল পিঁপড়ে বর্জন
করতে করতে কয়েকদিনের
মধ্যেই ফিলিপ্স
স্পিকার দেহ রাখলো।
নিরাময় ভাবতে লাগল
পিঁপড়েদের চলনাকারের
ক্ষতিকারক দিকটার কথা।
তবে কি একদিন
পিপীলিকাসম চিন্তার
আকারপথে তার মগজেও এমন
করে ধ্বংসের অকেজো
অন্ধকার নেমে আসবে?
গল্পমাত্রেই কি তবে
আত্মবিনাশের গল্প? কেমন
হয় আত্মবিনাশের
পিপীলিকা-জ্যামিতির
আকার? নিরাময় খারাপ হয়ে
যাওয়া স্পিকারের
জালিতে কান পাতলো। যদি
একটা পিঁপড়ে এসে ঢোকে
ওর কানে! কিন্তু নাহ,
ঢুকলো না।