দাদা একটা কথা বলব? কিছু
মাইন্ড না করলে! মানে
আপনাকে পসেনজিতের মত
দেখতে। প্লিজ দাদা কিছু
মনে করবেন না। আপনার
টেবিলে বসলাম। তাই একটু
কথা বলতে ইচ্ছে হল।
কিন্তু দাদা তোমাকে
পুরো পসেনজিত। উফ,
এককানে দুটো দুল। দাদা
কী লাগছে! ব্যাপার...
আরে এখানে তিনটে দে। আর
এস। আমার একটু কড়া
লাগে। হালকা হলে
পাঁচটা। স্যার আপনি? ও
রাম ভক্ত। বিজেপি। না
সে আপনি সিপিএম তৃণমূল
যা খুশি হতে পারেন।
কিন্তু এখন আপনি মোদী!
আচ্ছা এটা কি ওল্ড মঙ্ক?
তাহলে আপনি বামপন্থী।
আপনি আমার গুরু। একটা
ফিঙ্গার নিচ্ছি। শুনুন,
এই বরানগরের বুকে এলাকা
জুড়ে সব পালটাচ্ছে।
দেখবেন মানুষ এখন
মানুষের জন্য আলো হয়ে
আছে। কী ভালো না! দেখুন
স্যার, সে আপনাকে যতই
পসেনজিতের মতন দেখতে
হোক না কেন, আপনি কিন্তু
বামপন্থী। সে আপনাকে
দেখেই বোঝা যায়। সব
সেটিং আছে। লোকসভায়
আঠারোটা মেরে দিয়েছি।
শুনুন কোনো মাই কা
দুলাল হতো না! আমি একাই
সব সেট করেছি। এই যে
বিটি রোডের অনেক সিয়ানা
আমাকে একডাকে চেনে।
শালা পুটকি চেপে দিলাম।
হ্যাঁ, অনেক কাজ হয়েছে।
হাসপাতালগুলো সব খুব
সুন্দর চিকনা করে
দিয়েছে। এত আলো।
স্কুলের অবস্থা খুব
ভালো হয়ে গেছে। না দাদা,
এলাকা জুড়ে কাজ হয়েছে।
পরিষেবা পাচ্ছে আমার
বাবা মা। আমি কিন্তু
লাল ঝাণ্ডা। শুনুন
চৌত্রিশ বছরে যা
অন্ধকার ছিল, সেখানে
আলো জ্বলছে। বালের আলো!
কিন্তু একটা সমস্যা
আছে। আমাদের মতন
মালেদের লেবুলঙ্কা
মেরে সিল করে দিয়েছে।
স্যার, এখানে চিকেন
ফ্রাইটা খুব ভালো। এক
প্লেট বলছি। হ্যাঁ,
স্যার পুরো মারা গেছে।
কুত্তাছাগলের মতন
ক্যাল খেয়েছি। শালা
আমার দলের ছেলেই আমাকে
ক্যালিয়েছে। শালা
রাতারাতি জামা
পালটালো। হ্যাঁ, মানছি
হিসেব তুলবে। হ্যাঁ
মানছি কাজ হয়নি তাবলে
এইভাবে! এই নিন দাদা,
মিহির বিড়ি। এলাকার
সেরা বিড়ি। খুব হালকা।
শুনুন, আমাদেরও হিসেব
থাকবে। একসময় এলাকা
জুড়ে দিনরাত এক
করেছিলাম। আমরা আলোচনা
করতাম। বোঝাতাম। না
বুঝলে, তখনও বোঝাতাম।
বুঝতে তো হবেই কোথায় আর
যাবে! নর্দমার গাপ্পি
অনেক কিলবিল করে। বুঝে
তুলতে হয়। নাহলে রঙিন
লেজটা ছিঁড়ে যাবে।
দেখুন, আমরা মশার ডিম
খেয়ে নিতাম। এখন আর কেউ
খায় না! দেখছেন ডেঙ্গু
হচ্ছে। মানুষ মরছে।
তুমি মানুষ হয়ে মানুষের
পাশে দাঁড়াও। এই
বেয়াল্লিশ বছর হয়েছে আর
কম দামি মদ ভালো লাগে?
শালা তখন বাংলা। এখন
ইংলিশ। ওরা এলে স্কচ।
অনেক কষ্ট এবার কেষ্ট
চাই। শুনুন, এই দলের যা
অবস্থা যেকোনো সময়
ভেঙ্গে পড়বে। পা
বাড়িয়ে আছে। বাম থেকে
রাম। চাম গুটিয়ে দেবো।
শালা তেড়ে চুরি করছে।
একটু দিয়ে খা।
নকুলদানাই তো চাইলাম।
দানা তো আমাদেরও ছিল।
ওই যে পাশের টেবিলে
দেখচ্ছেন, শ্যামলদা।
এখানে বিজ্ঞান মঞ্চ
মারাত। ভেঙ্গে দিয়েছি।
আমরা তো ছিলাম বোঝানোর
জন্য। আমাদেরও কিন্তু
আদর্শ আছে। কিন্তু
প্রাণে মারিনি। তাই
মালটা এখনও মাল খাচ্ছে।
বোঝাতাম। ভেঙ্গে
দিলাম। আবার বোঝাতাম।
এই বাবু চিকেনটা একটু
গরম করে দিবি? সোনাচাঁদ
আমার। যারা আসতে চাইছে,
তাদের কাছে অনেক টাকা।
লাখ লাখ টাকা দিচ্ছে।
শুনুন, এলাকায় রামের
জন্ম কিন্তু নব্বইতে।
সেটিং চলছে। আচ্ছা, আমি
বুম্মা দে। এলাকায় নতুন
থেকে পুরনো। সিঁথি থেকে
সোদপুর বোম বাঁধে নামে
চেনে। বুম্বা দে। চলি
কাকা, আমি রোজ রাতে মাল
খেয়ে গঙ্গা স্নান করে,
মায়ের পুজো দিয়ে একটা
বাংলা খাই। মন শান্ত
থাকে। এই চশমা, এই নে
টাকাটা ধর। আর পসেনজিত
স্যার খেয়াল রাখিস।
আমার লোক।
চিকেনের হাড়গুলো
বেড়ালটা আমার পায়ে
হেলান দিয়ে খেতে খেতে
কথা শুনে গেল। আমি
তিনপেগ খেলাম। ভাবছি
খাব কি না! অনেকগুলো
সিগারেট খেয়েছি।
বুম্বা দে’র কথায় শুধু
হ্যাঁ। না। ঘাড় নাড়া।
হাসি। অবাক। এছাড়া আর
কিছুই দেখাইনি। কারণ এই
গল্পটা আমি জানি। আসলে
দল নয়। নীতি নয়। শুধু
ক্ষমতা। যদিও এই
মুহূর্তে... স্যার, আর
একটা দিই। শুনুন
বুম্বার কথায় কিছু মনে
করবেন না! ওর মাথা
খারাপ। বাপের টাকা
ওড়াচ্ছে। একসময় দাপট
ছিল। এখন ফুস। আমি
হাসলাম। অনেকদিন পর এই
ঠেকে। আগে টাকা ছিল না
তাই আসতাম। যদিও আস্তে
আস্তে মায়া জন্মায়। তখন
বেড়ার ছিল। স্টিলের
গেলাসে মদ দিত। লুকিয়ে।
পুলিশ জানত। আবার হানা
দিত। ফোকোটে তিন চার
পেগ মাছ ভাজা দিয়ে
মেরেও দিত। আসলে সব
সেটিং। যেভাবে বেড়ালটা
এখানে সেটিং করে
রেখেছে। আগেও বেড়াল
ছিল। মিলনদা মনে হয়
বেড়াল ভালোবাসে।
কিন্তু আমরা কোনোদিন
মিলনদাকে দেখিনি। আজ
অনেক বছর পর মিলনে এসে
বেশ ভালো লাগছে। পুরনো
কথারা পেগে পেগে ঘুরছে।
এখানে সিগারেট চলে।
কার্ড চলে না। কাঁচা
ছোলা আর লঙ্কা ফ্রি।
ষাট সত্তর জন বসতে
পারে। পাশের শনি আর
কালী মন্দির। যতদিন
গেছে, মিলনের ঠেক আর
মন্দির পাশাপাশি
উন্নতি করেছে। কেউ কেউ
পুজো দিয়ে সোজা ঠেকে
ঠাপকি মেরে দেয়। শনিবার
নিরামিষ মদ খায়।
মঙ্গলবার কপালে গেরুয়া
তিলক দিয়ে, চানাচুর
দিয়ে মালটা খেয়ে নেয়।
মন্দিরটা বড় হচ্ছে।
হনুমান বসবে।
একে শীতকাল। মেঘলা।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ছাতা
লাগছে না। সুমনের সঙ্গে
কথা হল। তিনটে নাগাদ
মিলনে। সুমন দেশে
ফিরেছে। একসঙ্গে
পত্রিকা করতাম। নেশা।
যাপন। শব্দ। স্বপ্ন।
বিপন্ন। যৌনতা। দিল্লী
রোড। আরও অনেক পাঁচিল
টপকানোর গল্প। হ্যাঁ
রে, কেমন আছিস? এখনও
বাংলা বাজার মারাচ্ছিস?
শোন, অনেক ভেবে দেখলাম
এইসব করে কিছুই হবে না!
দামি মদ খাব। লাগাব।
শখে লিখব। ওইসব বিপ্লব
মারিয়ে কিছুই হবে না।
মাসে দেড়লাখ পাই। কারোর
সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না!
তোর সঙ্গে রাখি। কারণ
তুই কাজটা করছিস। আমার
মনে হয়। আর তোর যোগাযোগ
আছে। হ্যাঁ বলতে পারিস
এখানেও ধান্ধা। আমি
ছাড়া আর কেই বা আছে, এই
বরানগরের বুকে।
ল্যাতিন আমেরিকায় ছয়
বছর কাটাল? খোঁজ নিয়ে
দেখ, উলুবেড়িয়া গেছে কি
না! শোন, দশ বছর আগে যা
দেখে ছিলাম, তাই বাঁড়া
আছে। এই ওকে মদ দিতে বল।
দুবার দিলেই হয়ে গেল।
দেখছিস। এই বিষয়গুলো
এখনও শিখল না! হ্যাঁ, একই
জামা পরে। একই কথা বলে।
একই ভাবেই আজও হাত পা
নাড়ে। ধারে মদ খায়।
সবটাই ধারে বেঁচে আছে।
কেন এদের সঙ্গে থাকব?
শোন, বাংলা বাজার নিয়ে
আমি আর ভাবি না! আমাদের
মধ্যে কে আছে। সব
বালের। এইসব বাঁড়া
দাদাদিদি ধরে পুরষ্কার
পাচ্ছে। শোন, কত টাকা?
পঞ্চাশ হাজার? এক লাখ?
কিনে নেব।
সুমন তুই কি খুব একা? মদ
খা। এখানে ফিঙ্গারটা
ভালো।
আসলে সুমনের একা থাকার
কথা ছিল। যেভাবে আমাদের
অনেকেরই একা থাকার কথা
ছিল। একা থাকতে হয়েছে।
একা আছি তাই, কেউ থাকলে
খুব ভালো লাগে। কিন্তু
সব সময় কেউ থাকলে কি
সত্যিই খুব ভালো লাগবে।
একা থাকা মানে কিন্তু
নিজের সঙ্গে থাকা। আমি
আর আমি। নিজেকে অনেকটা
খোঁজার চেষ্টা।
এই মিলনের ঠেকে
দীর্ঘদিন ধরেই কিছু
নির্দিষ্ট মানুষ আসে।
একই ভাবেই আসে। যায়।
চেহারাটা শুধু
পালটেছে। নেশার ছাপ
স্পষ্ট হয়। কিছু নতুন
মুখ আসে। কেউ আবার
কোনোদিন ফিরে আসেনি। এই
না ফেরার তালিকায়
দুজনের কথা মনে পড়ে।
মৈনাক আর রাজু। না, ওদের
খোঁজ নেই। আছে... নাও,
থাকতে পারে। সুমন চলে
গেছে। কার্ড নেয়নি বলে
খুব বিরক্ত। যাওয়ার সময়
বলে গেল, আমার কাছে
ক্যাশ নেই। তুই দিয়ে
দিস। দুশো টাকা রাখ।
বাকিটা পরে দিয়ে দেব।
তিনটে গেলাস সাজানো।
বুম্বা কীসব মন্ত্র
বলে, তিনবার আঙুলে করে
মদ ছিটিয়ে চুমুক দিল।
সাদা জামা। কালো
প্যান্ট। ইচ্ছে করেই ওর
টেবিলে বসলাম। বুম্বা
আমাকে দেখে, আরে
পসেনজিত যে। বোসো বোসো।
অনেকদিন পর। কেমন আছো?
আজ এত রাত করে? তিনটে
নেবে নাকি? আজ আমি
খাওয়াই। জানি না কাল কী
হবে? টার্গেট হয়ে গেছি।
মেরে দিতে পারে। শোনো
আমি মরে গেলে মা বাবাকে
দেখো। তুমি তো হিরো।
পসেনজিত। মা তোমার খুব
ভক্ত। বুঝতে পারছি না!
পিছু নিচ্ছে চারটে লোক।
বাড়ি ফিরতে পারছি না!
দুদিন হল। যেখানে
যাচ্ছি সেখানেই
যাচ্ছে। শালা শান্তিতে
মুততে পারছি না!
লেবুবাগানের মোনার
কাছেও যেতে পারছি না।
কতদিন লাগাইনি। জানো,
মৃত্যুর খুব কাছ থেকে
প্রতিবার বেঁচে এসেছি।
মজা লাগে। এখন ভয়। একা।
কেউ নেই। পকেটে একটা
কাকের পালক রেখেছি।
উলটো দিকে এক বাবা
দিয়েছে। কাক আমাকে না
কি বাঁচাতে পারে। আমার
মাকে কাকা রোজ দুপুরে
লাগাত। কাকা পার্টির বড়
মাথা ছিল। বাবা বাল
ভেড়ুয়া। মায়ের প্রথম
দিকে হয়তো ভালো লাগত
না। পরে দেখতাম খুব
আনন্দ পেত। শালা
হুব্বার মতন দেখতাম।
কাক আর কাকা কিন্তু এক।
দুজনেই রক্ষা করবে।
অনেক টাকা পেয়েছি।
উড়িয়েছি। এখনও ওড়াই।
ঘুড়ি। শোনো আজ মনটা
খারাপ। বাঙালির পোঁদ
মারা যাচ্ছে। এলাকা
জুড়ে অবাঙালিদের দাপট।
বাঁড়া বাড়ির সামনে
মন্দির করেছে। ভোরবেলা
থেকে গান মারাচ্ছে।
শালা এরা চলে এলে একদম
পুটকি জ্যাম করে দেবে।
শালা মরে যাব। চলি
গঙ্গাস্নান করে পুজো
করতে হবে। অনেক কাজ।
তোমার কিছু হবে না! আমার
মাকে আর বাবাকে একটু
সামলে নিও।
বেশ কিছুদিন পর একটা
কোণের দিকে বসে আছি। আজ
তেমন কেউ নেই। খালি
বলাই চলে। কিন্তু
বুম্বা আসবে কি না! জানি
না! হয়তো মরে গেছে। কত
কিছুই তো মরে। সেখানে
দুচারটে মানুষ! গেলাস
রাখার শব্দ। আরে
পসেনজিত! আমি আর মরব না!
একটা আয়না পেয়েছি। পকেট
থেকে একটা ছোট্ট আয়না
বের করে বলে। এই আয়নাতে
শুধুমাত্র নিজেকেই
দেখা যায়। এবার বাঁড়া
বাল মারতে পারবে! শালা
আর দেখতেই তো পাবে না! এই
আয়নাটা দেখিয়ে দেব।
নিজেকেই দেখবে। আর
কাউকে দেখতে পাবে না!
শোনো কাকা, সব হিসেব
তুলে নেব। দু হাজার
একুশ। এই আয়নার সঙ্গে
সব সেটিং হয়ে গেছে।
আমাকে আর কেউ দেখতে
পাবে না! সকাল থেকে রাত
অব্দি এই আয়নার ভেতর
শুয়ে থাকি। খাওয়াদাওয়া
হাগামোতা সব বন্ধ।
বেরিয়ে স্যাট করে
খেয়েনি। শুনুন, আর কোনো
ভয় নেই। শালা বুম্বাকে
মারা এত সোজা না! এমন
কোনো রাস্তা পয়দা হয়নি,
যে বুম্বার লাশ নিতে
পারে! যাক চলি। আয়নার
ভেতর যেতে হবে। অনেক
গাঁড়মারানি কেত্তন
হয়েছে। এবার এলাকা জুড়ে
আয়না লাগিয়ে দেব...
টেবিল ফাঁকা। জনাছয়
লোক। দুপুরে যেমন হয়।
বাইরে বৃষ্টি পড়তেও
পারে! আবার নাও! কিছুটা
সময় কাটানোর ছিল।
ভাবনাগুলো যখন অবসর
নিতে চায়। তখন মাথার
মধ্যে কিছু চরিত্ররাও
চিত্রনাট্য লিখতে শুরু
করে। অতর্কিতে হামলা
চালিয়ে, ঘিলু চাটতে
থাকে সেই অক্ষরখেকো
পোকামাকড়গুলো। হয়ত,
তেমনি একটা পোকা,
বুম্বা নামক চরিত্রের
কথা বলছিল!