১)
সমস্ত বর্ষা একটা ব্যাঙ
কাটা ঘরের জানলার সামনে
এসে
বললো আমাদের ব্যাঙ
ফেরত দাও
সেইসব ব্যাঙ
যাদের তোমরা
পুকুর ঘাটের থেকে, এই
গর্ত সেই গর্ত থেকে
পুকুরের বিজবিজে সদ্য
ডিমের পাশ থেকে
তুলে নিয়ে গেছো-
দাও!
অদ্ভুত ক্লোরোফর্মে
ওরা সব ঘুমিয়ে রয়েছে
ওরা আর আমার মেয়েদের
রাত্তিরে ডাকতে পারবে
না
তাদের শরীরে আর তয়ের
হবে না
থকথকে আশ্চর্য তরল
ওদের ছিঁড়েছো আর অবাক
হৃৎপিণ্ড যত ধুকুপুকু
করতে দেখেছো
চারটে পেরেকে এঁটে সহজে
কেটেছো যত তরুণাস্থির
হাড়গুলো
বর্ষার জলরঙ ছবিতে এপার
থেকে ওইপার করা
ওদের পুকুর লাফ দেখেছো
কখনো?
পোকার উড়ন্তকে লহমায়
ধরে ফেলা আশ্চর্য জিভ?
এই সময়ে ক্রুশবিদ্ধ
একটা ব্যাঙ মহা
যন্ত্রণায়
ক্লোরোফর্ম থেকে জেগে
উঠেই ডাকলো ঘোরে - 'মা!
যে মেয়েটি তাকে
অন্যমনস্ক হয়ে
কাটছিলো,
ছিটকে উঠলো
ওরা সবাই ক্লাস কে
ক্লাস একটা প্রকট
যন্ত্রণাকে ভয় পেলো
ক্রুশবিদ্ধ ব্যাঙ
ডাকলো - মা! মা! মা!
তার মা কবেই এক ভরা
পুকুরের পাশে পিতার
আশ্রয়ে রেখে তাকে ছেড়ে
গেছে
তার পিতা আত্মবিস্মৃত
তবু আমাদের পাড়ার ভরাট
গলার পাগলি
বর্ষায় আপাদমাথা ভিজতে
ভিজতে
তার স্লেট রঙের ছড়ানো
আঁচল মেয়ে স্কুলের
জানলায় রেখে
মগ্ন স্নেহে ডাকলো - আয়
আয় আয়
হে রাধা মাধব তুমি
জীবের যন্ত্রণায় কই?
এমন তীব্র ছেদে
ক্লোরোফর্মের এই গন্ধ
ভরা ঘরে
হে নীলকণ্ঠ তুমি এসো
স্কুলের দারোয়ানের
ছেলের বেশে এসো
ওর মুখে আবার সেই
রুমালটি চেপে ধরো
আর অমায়িক হেসে
পাগলির কোলের কাছে
উপুড় ক'রে দাও
মরা ব্যাঙ ভরা
বালতিটা
২)
লোকটা জুঁইফুলের গন্ধও
পিষে বার করে
আর বাড়ির সব তালা পরখ
ক'রে বউএর চাবি হাতড়ায়
লোকটা শপিং মলের সবকটা
ডিসকাউণ্ট জানে
আর অফিসের ছোট মুশকিল
বাড়তে দিয়ে ক্যানসার
হলে
শল্য চিকিৎসক হয়ে নাম
কেনে
লোকটা মাখনের জায়গায়
মাখন দেয়
আর উসুল করে নেয় ভ্যালে
পার্কিংএর ড্রাইভারের
উপর চেঁচিয়ে
লোকটা সফল
লোকটা সরল
লোকটা শিশুর মতো
স্বার্থে চোখের
চামড়াহীন
ও তার ভাইএর থেকে সব
খেলনা হাতিয়ে নিয়েও
আশৈশব নিশ্চিন্তে
ঘুমায়
লোকটা মারে না
লোকটা খারাপ কথা বলে
না
লোকটা নিজের বালিশের
মতো মেয়েটাকে
ভালোবাসে
লোকটা বালিশের ওয়াড়
বদলানোর মতো
মেয়েটাকে ফিমাসেই শাড়ি
কিনে দেয়
এমনকি সাঁতার পোশাকও
তবুও ও যখন বাড়ির সব
তালা পরখ ক'রে
বউএর চাবি খুঁজতে আসে
মেয়েটা বিছানায় একটু
একটু ক'রে পিছোয়
কোথা অব্দি?
কত দূর?
যত দূর খাটের মাথা বা
ঘুমের ওষুধের শিশি
হাতে না ঠেকছে
৩)
এত দুঃখ দাও আমি ঠিক
বুঝি নিজেরই ভেবেছো
কানাকড়ি না দিয়ে যে
আমার রক্তচুনী চাও
যদি দূরে যাই, এসে না
পেয়ে আরও যে দূরে যাও
আমি বেহিসেবে বুঝি তুমি
এই ধূসর শহরে
কোনদিন বাস ধ'রে আধখানা
পথ এসে ফের
বাসের টিকেট ছিঁড়ে
মাঝপথে নেমে ফিরে গেছো
একটা দুপুর ছিল, যে
দুপুর মাকে খেয়েছিল
টেলিফোন তারেদের সেদিন
কি উচ্চ সংলাপ
যেন মাথা ঠা ঠা করে, যে
শহর মাকে পুরেছিলো
কুমীরের মতো তার নুড়ি
ভরা পেটের ভিতরে
তুমি জানো সে তোমায় কোন
ক্রীতদাসী ফিরে দেবে
তুমি যার জাত কুল
কিচ্ছুই জানোনি কখনো
শুধু সেই রুদালীকে
মৃত্যুর স্মৃতিঘরে
রাখো
শুধু তাকে ফিরে নাও
মাঝে মাঝে রুঢ়
অত্যাচারে
এমন দিয়েছো দাগ, দিয়ে
বেমালুম ভুলে গেছো
আমি জানি আমি মানি যেন
ঠিক নিজেরই ভেবেছো