হাওয়ায় ভাসে টিমটিমে
হারিকেন
গলির মোড়ে শেষ বাড়িটা
বারান্দায় ভাসে
ছাতিমের ঘ্রাণ
গিয়ে দাঁড়াই প্রতি
সন্ধ্যায়
কেউ থাকে না
এলোকেশী ছাড়া।
আলো আঁধারি ঢেউয়ের
ভাঁজে
যেমন ছলকে ওঠে মাছের
মোচড়
তেমন আহ্লাদে
মেঘকালো চুলের ভেতর
অবাক আনন্দফুল ঝরে
যেন আয়োজন, চাঁদের
শহর।
সেই সন্ধ্যায়
টিমটিমে হারিকেন জ্বলা
ঝুলবারান্দায়
ছাতিমের ঘ্রাণে মূর্ছা
যায় সুমনের হিয়া
এতো কাছে
তবুও ছুঁতে পারি না
অধরামৃত।
কখনো স্মৃতিতে ফিরে
দেখে আসি দূরের মাহফিল
সেখানে আমি নেই
আমার পোশাক গায়ে গলে
মজলিশী আসর মাতায়
বাবুবংশের নেশাখোর
ছেলে।
সরণির কাদাজলে কার
পদছাপ?
বাপরে বাপ! হাসে অযোগ্য
লোক
এখন বদলে গেছে ঋতুচক্র
শীতেও বৃষ্টি হয়
গ্রীষ্মেও জমে কুয়াশা
কুহক।
অযোগ্য যজ্ঞ করে
পরনে তার ধর্মলেবাস
নিরীহ শামুক আত্মাহুতি
দেয়
আপন সমুদ্রে।
লেগেছে চন্দ্রগ্রহণ
পাড়াজুড়ে পাখির মাতম
এই শোকে নদী মরে
ধুধু বালুচর
অভিমানে বসুমাতা
নেমেছে কহর।
হায় মানুষ!
চিন্তাজর্জর করোনার
কালে
হাত পেতে বসে সাবানজলে
এই বুঝি প্রার্থিত
গন্তব্য তবে!
কোথাও বিজন ঘরে
করোনায় মানুষ মরে
কোথাও আর্তস্বরে
নিকটজন যায় সরে।
শামুকের মতো নিরীহ
মানুষ
অন্তরীণ থেকে
আত্মাহুতি দেয়
আপন সমুদ্রে।
মুখোশের আড়ালে মুখ
মুখরতা নেই
কেবল ভয়ভরা চোখে
ভাসে সফেদ কফিন।
নায়ের তলপেটে আছড়ে পড়ে
কামকাতর ঢেউ
ফেনাইত অজস্র জলজ চোখ
সলাজে উন্মুক্ত করে
বুকের বাঁধন।
আমার ঋণ, প্রেম
প্রতিদিন
এখনো বাজে, গোপন
আহ্লাদে
কোলজোড়া ডাকাতিয়া
নদে।
শান্তির বাজার
খেয়াঘাট
পারাপারে জলের ছাট
মনেপড়ে--
ঘাটের আহেদ আলী
গাঢ় দুধ-চায়ের নিপুণ
শিল্পী
আমাকে দেখেই হাত নাড়ে-
'আসেন, আসেন কবি
আপনি তো জলের ছেলে।'
হ্যাঁ, ভুলি কি করে!
আমি যে জলবংশের ছেলে
জলের হরফে লেখা
জলেই ভেসে থাকা
জলোত্থিত আবেগের ফুলে
কবি হয়ে জন্মেছি ভুলে।
'বলেন কী! করোনার কালে
জলই তো জীবাণুনাশক।'
আহেদ আলী মন্দ বলেনি
ডুবে যাই পুনরায়
দুধ-চায়ের উষ্ণ সরোবরে
ভেতরে বিরহপোড়া
ধোঁয়া ওড়ে
ডাকাতিয়া-জ্বরে।
হাসিমুখের আড়ালে
স্রোতে ভাসে
বেদনার নীল বালিহাঁস
কে রাখে খোঁজ?
চলে নিরিবিলি ভোজ।
অদৃষ্ট-তির বুঝি
বরাবরই বিদ্ধ করে
মায়াবতী হরিণমন
করোনার কবলে পড়ে
দরজার ওপারে প্রিয়জন।