অন্ধকারগুচ্ছ
১
কবিতা উচ্চস্বরে পড়ুন, মাঝরাতে
যখন চাঁদ ও তারা
জেগে থাকবে
আর মানুষ গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখবে
ক্ষুধার্ত শিশুগুলো অ, আ, ক, খ পড়ছে—
আরও উচ্চস্বরে
২
ভুয়ো স্বপ্ন— যা মানুষ রাতে দেখে
এই স্বপ্ন দেখেই মানুষ কাটিয়ে দেয়—
বছরের পর বছর
তারপর একদিন বৃদ্ধ হয়ে ভাবতে থাকে—
তার স্বপ্নের গায়ে যে গুটি গুটি দাগ ছিল—
তা বসন্ত না বিবাহের!
৩
সিদ্ধান্ত নিন— গাছ লাগানোর পূর্বে—
আপনি স্নান করবেন
পরবেন নতুন কাচা জামা
আর খেয়াল রাখবেন—
গোপনেও যেন এই দৃশ্য কেউ না দেখে
৪
অন্ধকারে পড়ে থাকা নখ—
আরও বেশি চকচক করে আলোয়
এখন চাঁদ উঠবে বলে— আঙুলের দিকে তাকিয়ে থাকা আঙুল
কীসের গল্প করে?
৫
ঘুমের ভিতর কাঁদবেন না
চোখের জল ফেলতে হলে ফেলুন—
মাছের কানকোয়
পুকুরে পুকুরে যে কোলাহল
শ্যাওলার দিকে জাগিয়ে রেখেছে আমাদের
তা দিয়ে কীভাবে চোখ হবে—
শান্ত ও মরুভূমিপ্রবণ!
৬
নিঃসঙ্গতার সামনে আয়না বসানো হলে
দেখবে— তুমি আরও রুগ্ন
তোমাকে ঘিরে রয়েছে— শীতের দাঁত
আসলে তুমি, আমি, নিঃসঙ্গতা কেউ একা নয়
সবাই সবার মতো
৭
ছোটো ছোটো ঢেউগুলি বড়ো বড়ো ধাক্কা নিয়ে আসে
সমুদ্র এতটাই কাছে—
জল দিয়ে মোছা যায় না কোনো বালি, পাথর…
৮
খুনিকে কাছ থেকে দেখবেন না
প্রেমিককে দূর থেকে দেখবেন না
নিজেকে কাছ থেকে বা দূর থেকে কোনোভাবেই দেখবেন না
আপনি আপনার চোখকে লাল রঙের কোনো গামছায় বেঁধে
এতদূর এগিয়ে যান, যেখানে টিউবওয়েল থেকে—
বিনা চাপেই ক্রমাগত পড়ছে জল…
৯
সব সত্যি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে চায়
সব মিথ্যা সেজেগুজে অনর্গল মিথ্যা বলতে চায়
সত্যি আর মিথ্যে দু-জনই একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ালে
তুমি মিথ্যাকেই ভোট দেবে
আমিও মিথ্যাকে ভোট দেব
শুধু সত্য দেখবে— সত্যি, আত্মহত্যার আগে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে!
১০
লিখতে বসলে খিদে পাই
লিখতে বসলে কান্না পাই
কান্না ও খিদে মিশিয়ে গান শুনি
একই কণ্ঠ একাধিকবার রক্তাক্ত… আলো নিভিয়ে
আলো জ্বালায়
শাদা মোম গলে পড়ে; সাদা ধুতরোর মতো
বারবার, বারবার, বারবার…