একাকিত্বের
প্রহার
আজকাল জড়বস্তুর ভেতর
প্রাণের সঞ্চার দেখি।
আঁতকে উঠি তাৎক্ষণিক ।
এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।
মানুষের দিকে তাকিয়ে
থেকে যে প্রাণ দেখতে
পাই না সে প্রাণ এখন ভর
করছে আমার চারদিকের
আসবাবপত্রের ভেতর।
ভাবি, ওরা কি আমার সঙ্গী
হতে চায়? বলতে চায় কিছু
কথা! ওরা তো আমার
নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে
আছে। সব সময়ই আমাকে
দেখছে, দেখছে তাদের
অভ্যস্ত চোখে। তাহলে
হঠাৎ এমন নড়েচড়ে উঠছে
কেন? এই তো এখন, পায়ের
কাছে পত্রিকাটা কেমন
খসখস করে উঠলো ! টেবিলের
উপর জলের গ্লাসটা হেঁটে
গেলো এপাশ থেকে ওপাশে।
তাকিয়ে আছি এক
দৃষ্টিতে। এ আমার চোখ
নাকি মন! কি বলতে চায়
আমাকে? বুঝিয়ে দিতে
চাচ্ছে কি, এই তো আমরা
আছি তোমার চারপাশে।
আমাদের সাথে কথা বলো।
দেখবে, কিভাবে প্রাণ
থেকে প্রাণের সঞ্চার
হচ্ছে ! মানুষ নই আমরা,
তবুও আগলে রাখি তোমাকে
প্রতিদিন
প্রতিমুহূর্ত।
নিত্যদিনের
আসবাবপত্রের মতো এই তো
আমার জীবন !!
মৃত্যুর মিছিলে
নিরব স্লোগান
মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ
থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে
ধনী গরীব কেউ জানেনা কে
দাঁড়াবে
মিছিলের কাতারে।
মানুষের হাতেই পৃথিবী
ঘুরছিল
ঘুরছিল রাজনীতি,
সমাজনীতি
আর অর্থের চাকা।
বিজ্ঞানও আজ হিমসিম
খায়। ভাবে,
কোথা থেকে এলো এই
প্রাণহারী সংহার!
মৃত্যুর মিছিলে নিরব
স্লোগান
কেউ জানেনা,কেউ বোঝেনা
চোখেমুখে ফোটে শুধু
বিস্ময়!
পুরো পৃথিবী আজ এক
ঘরানায়
একই ভয়, একই অনুভূতি
নিয়ে
চার দেয়ালের মাঝে সময়
কাটায়
এতো বিভেদ, এতো বিভাজন
কোথা গেলো সব এক
ফুৎকারে
করোনা এসে টনক নাড়ে।
বলে,
দাঁড়াও সবাই এককাতারে।
এই মিছিলের ভাষা বুঝে
সবাই
সাবধান হয়, সচেতন হয়
দূরত্ব বজায় থাকে।
বোঝেনা শুধু মৃত্যু
মিছিলের ভাষা
বোঝেনা, মৃত্যু মিছিলের
স্লোগান!
ঘুমহীন করোনা রাত
এখন মধ্যরাত। সিলিংয়ের
দিকে তাকিয়ে
থাকতে থাকতে বিছানা
থেকে নেমে পড়ি।
আজকাল ঘুম আসে
না,একেবারেই আসে না।
রাতভর পায়চারি করি।
কখনো জানালার
কাছে দাঁড়াই। বাইরে
নিয়োন আলো দেখি।
গাছগুলো বাতাসে
আলোছায়ায় দুলছে।
তাকিয়ে থাকি...তাকিয়েই
থাকি পলকহীন।
ঘুম নেই চোখে। পায়চারি
করি...
চলে আসি ব্যালকনিতে।
নির্জীব মন নিয়ে
পৃথিবীর ছাদের নীচে
দাঁড়াই। ঠাণ্ডা
বাতাসের ছোঁয়া পাই।
দূর থেকে একটি
ছায়া...হ্যাঁ, মানুষের
ছায়া,হেঁটে চলে যায়...
ওরাও কি আমার মতো!
নিশাচর! ঘুম নেই!
ঘুম কেন আসে না! আরো দুটো
মানুষ হেঁটে যায়...
করোনা কি ঘুমটাও কেড়ে
নিলো?
ঘুমহীন সময় আর কতদিন
কাটাবো?
হে করোনা...
করোনাকাল!
কষ্টকাল!
সবকিছু এলোমেলো।
ছিন্নভিন্ন।
অনুভূতিগুলো ছেড়া
কাগজের মতো। সৌহার্দ্য,
সম্প্রীতিও কাষ্টকাতর
প্রপঞ্চিত। ইচ্ছে হলেই
কারো কাছে যাওয়ার যো
নেই। দুঃখ প্রকাশের
মানসিকতা নেই। শোকে
পাথর হওয়ার উপায় নেই।
অবস্থা এখন শাঁখের
করাত। শূন্যে ভাসমান
অব্যক্ত প্রত্যয়।
একসময় ছিল, শোকে দুঃখে
সবাই সবার কাছের মানুষ।
কিছু না করলেও কিছুক্ষণ
পাশে বসে, মাথায় হাত
বুলিয়ে, বুকে জড়িয়ে
স্বান্তনার বাণী বলি আর
না বলি, দীর্ঘশ্বাসটা
ভাগাভাগি করে নিয়ে আসি।
এখন এমন এক কঠিন সময়ের
আবর্তে পড়ে নিজের
নিঃশ্বাস হাতের মুঠোয়
ধরে চেপে বসে আছি।
একজন মারা গেলে
সমবয়সীরা কেঁপে ওঠে।
সিড়ি ভাঙ্গনের শব্দ
শুনে। ভেঙ্গে পড়ে।
ন্যুব্জ হয়ে আসে তারা।
বলার ভাষা নেই।
ফ্যালফ্যাল করে দেখে।
স্তব্ধতা ভর করে ।
সময়টাই যে এমন, শুধু
রচনা করে নিষিদ্ধ
ইশতেহার! এ যে এক করোনা
কষ্টকাল!
করোনাকথা
আমাদের এখন আর কথা নেই
কথা সব ফুরিয়ে গেছে
কথার উপর ভর করেছে
করোনা
করোনা ভাইরাসে
আক্রান্ত
আমাদের কথাগুলো
জড়তা এসে নির্জীব করে
দিচ্ছে
কথার অনুষঙ্গ যত।
তবুও কথারা তড়পায়
কথার পৃষ্ঠে কথা
সাজিয়ে
করে করোনাকে আলিঙ্গন
বেঁচেবর্তে জীবন
আমাদের
করোনাকে যাবে নাকো
উৎখাত
সয়ে যাবে সব একদিন
তখন কথার মাঝে করোনা
এসে নিরবে ঘুমিয়ে রবে।
তারপর কথাকে তীর্যক
ভঙ্গিতে
ছুড়ে দেয়া হবে বিশেষ
গতিতে
তখন কথাও নিজ অর্থের
চেয়ে
ছড়াবে আপন মহিমা।
কারণ ততদিনে জেনে যাবো,
আর
কথা নয়,কাজই হোক কথার
প্রমাণ।