১
ছাগলটা বহুক্ষণ একভাবে
দাঁড়িয়ে । সন্দেহ হতেই
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম
। কারণ এই লকডাউনের
বাজারে সব কিছুকেই
সন্দেহের চোখে দেখতে
হবে । দেখতে হবে কারণ
এখন সোশ্যাল ডিসটেনসিং
চলছে । ছাগলের তো এই
কঠিনতম বাক্যবন্ধটি
বোঝার কথা নয় । সোশ্যাল
ডিস্টেনসিং মানে
সামাজিক দূরত্ব ।
চাড্ডিখানি ব্যাপার !
যে সমাজে প্রতিদিন খেয়ে
ঘুমিয়ে যাই হোক কিছু
কাজকম্ম কোরে
বেঁচেবর্তে আছি, সেখান
থেকেই নিজেকে দূরে
সরিয়ে রাখতে হবে ।
অর্থাৎ, ঘরের মধ্যে বসে
খাবার দাবার শেষ হয়ে
গেলেও ঘর থেকে বেরুবি
না । শুকিয়ে কাঠ হয়ে ঘরে
বসেই মর । লাশ তুলতেও
লোক পাবি না । ব্যাস্,
যে কারণে লকডাউন,
অর্থাৎ একটা উচ্চ
সংক্রমণ সম্পন্ন
ভাইরাস রোগের হাত থেকে
বাঁচার একমাত্র উপায়
লকডাউন । কাজ-ফাজ করতে
হবে না, স্কুল কলেজ আপিস
কাছারি বাস ট্রেন বিমান
গরুর গাড়ি পথ ঘাট হাট
মাঠ সব বনধ্ । সবখানে
লকডাউন, সবখানে সোশ্যাল
ডিস্টেনসিং । কি
রোম্যান্টিক
বাক্যবন্ধ, আহা ! কিন্তু
ছাগল এসব বড় বড় মানবীয়
ব্যাপার কি করে বুঝবে !
সে কি করে বুঝবে ১৩৭
কোটি মানুষের
ভারতবর্ষের ৬৮% মানুষ
অর্থাৎ প্রায় ৯৪ কোটি
লোক এসব বোঝাবুঝির
পশ্চাদে ছিটকিনি মেরে,
দুপয়সা রোজগারের
প্রয়োজনে পথজুড়ে হাট
মাঠ ভরিয়ে প্রতিদিন লড়ে
যাচ্ছে মরবার আগের
বেঁচে থাকবার তাগিদে ।
আর ছাগলের মতোই অবস্থা
নিম্নবিত্ত বা
মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর
। ঘরে বসে টিভির খবরে
কজন আক্রান্ত হলো, কজন
মরলো তার পরিসংখ্যান
মুখস্থ করছে আর
বিশেষজ্ঞের ভাষণ শুনে
শুনে পাগল হবার দরজায়
পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে ।
বাড়ির দরোজায় তালা মেরে
ঘরে ঢুকে সেঁটিয়ে বসে
দিনে ২৫ বার হাতে সাবান
মারছে আর ঘরের আনাচে
কানাচে খুঁজে বেড়াচ্ছে
সেই সংক্রমিত ভাইরাস
কোন ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকে
হামলে পড়লো কিনা তার
খাবার থালায় ! তো এইসব
দেখতে দেখতে ক্লান্ত
হয়েই হাঊজিংটা থেকে
বেড়িয়ে গলির মোড়ে এসে
দাঁড়াতেই শুনশান
রাস্তায় চোখ আটকে গেলো
ছাগলটার দিকে । পেছনের
বস্তি থেকে এসেছে হয়তো
। ভালো কোরে খেতে না
পেয়ে কেমন জীর্ণ দশা ।
কিন্তু একটা মানুষের
মতোই জন্তুতো বটে,
চারপায়ের জন্তু ।
মানুষ দুপায়ের । সে যাই
হোক, কিন্তু একভাবে মুখ
নীচু করে ওভাবে তখন
থেকে দাঁড়িয়ে আছে কেন,
কিভাবে, কোনরকম নড়াচড়া
নেই । মাঝে মাঝে
নিজেকেই সন্দেহ হচ্ছে,
আমার শরীর ঠিক আছে তো !
সেই ভাইরাস নামক যমদূতে
আক্রান্ত হলাম না তো,
চোখে সর্ষে ফুল দেখছি
না তো ইত্যাদি । মুখোশ
ঢাকা মুখ থেকে মুখোশটা
খুলে মাঝে মাঝেই চোখমুখ
মুছেটুছে নিজের
ছাগলত্ব ঘোচাতে চাইছি ।
কিন্তু আসল ছাগল
নির্বিকার । নড়ছে না,
বসছে না, ঘুরছে না-- বন্ধ
হয়ে যাওয়া ঘড়ির কাঁটার
মতো স্থির । গলির মুখ
পেরিয়ে রাস্তার ওপিঠে
যাবারও সাহস নেই । কারণ,
ভয় । ভয় দ্বিবিধ । এক,
যদি ভাইরাস ঘপ কোরে
ঘাড়ে চাপে ; দুই, পুলিশ ।
শুনেছি চকচকে লোক
দেখলেই পুলিশ হেনস্থা
করছে । এমন কি রাস্তার
মধ্যে কান ধরে ওঠাবসও
করাচ্ছে পথে বেরোনোর
উপযুক্ত কারণ দেখাতে না
পারলে । কি কেলো ! এই
বয়সে কান ধরে ওঠ-বস,
মালাই চাকি ভেঙ্গে
গুঁড়ো হয়ে যাবে ।
দু-আড়াই মাস ঘরে থাকতে
থাকতে এমনিতেই শরীরের
কলকব্জায় মরচে পড়ে গেছে
। তেতলার সিঁড়ি ভেঙ্গে
এইটুকু আসতেই কেমন
নাভিশ্বাঃস অবস্থা ।
তারপর আবার ওঠবস ।
ভাবতেই পারছি না, বরং আর
কিছুক্ষণ এখানেই
দাঁড়িয়ে ছাগলই ভাবা যাক
।
হঠাৎই রাস্তা ফুঁড়ে
উদয় দিব্যচাঁদের ।
থুড়ি তরঙ্গিনীর । কী
স্ট্যাটেস্টিকস মাইরী
। মানে শরীরের ।
মেরেকেটে ৩০ ।
ঢিলেঢালা কাপড়-ব্লাউজে
কিছুটা অপরিচ্ছন্নতা
উজ্জ্বল । অর্থাৎ
উজ্জ্বল অপরিচ্ছন্ন ।
আমাদের এই নিম্নবিত্ত
বা মধ্যবিত্ত
আধাশিক্ষিত পরিমণ্ডলে
এমত অবস্থাটি বোঝাতে
একটি ইংজিরি শব্দ
আমাদের মাথায় লটকে দিয়ে
গেছে ব্রিটিশেরা ।
কেয়ারলেস বিউটি । খাসা
। আমাদের ঘরের নতুন
প্রজন্ম, চর্চা কোরে
এখন এমন থাকবার অভ্যেস
রপ্ত করে । দিন পাঁচেক
স্নান করবে না,
জাঙ্গিয়া না কেচে তাতে
গন্ধ স্প্রে করে নেবে,
প্যান্টে ব্লিচিং করে
ছেঁড়া ফাটার ব্যবস্থা
করা, কিম্বা গুদামের
পচা ইঁদুর-চাটা বাতিল
মালের গায়ে নতুন
ফ্যাশানের স্ট্যাম্প
লটকে, কোন নায়ককে টাকা
দিয়ে একটা সিনে পরিয়ে
ছেলেপুলেদের মাথা চটকে
দেবার সফল ব্যবসায়িক
হুল্লোড়ের শিকারবাজি ।
ছেলেপুলে খেয়েও নেয় ।
তবে নায়ককে দিয়ে না
পরালে ফ্যাশন দাঁড়াবে
না । অর্থাৎ বাসি পচা
মালের রেকগনাইজার
কল্কে পাওয়া
নায়ক-নায়িকা । যাই হোক,
আপাতত ফোকাসে পথ ফুঁড়ে
উঠে আসা হেব্বি
স্ট্যাটেস্টিকসের
তরঙ্গিনী । কাপড়চোপড়ে
তেলচিটে থাকলেও চামড়া
একেবারে ট্যান করা ।
পেছন দুলছে ঘুড়ন্ত
চাকতির মতো, মানে
ইংজিরি ব্রিটিশেরা
শিখিয়েছিলো,
স্যুইঙ্গিং হিপ । কী
তরঙ্গ, আহা ! পুরো মরচে
ধরা হাড়-পাঁজরও
চিড়বিড়িয়ে উঠছে । টের
পাচ্চি ছাগলের
দৈবশক্তি । হ্যাঁ,
দৈবশক্তি, কারণ,
ছাগলটাকে ফলো না করলে
এমন ছল্লিছাপ্পার দেখা
পেতাম না ! আবির্ভাবেই
কেমন লকডাউনে কেতড়ে
থাকা কেলুরামের
কলকব্জায় গ্রীজ মেরে
দিলো । আইব্বাস্, যেমন
বুক, পোষাক আলগা হয়ে
থাকা কটিদেশও টাঙ্গির
চকচকে ফালা । নাঃ, আর
দেখা যাবে না । এভাবে
দেখার খরচা আছে, তার ওপর
আবার সোশ্যাল দূরত্বের
জাম্বু ঢপ । কোথায় বলবে
শরীরের দূরত্ব বজায়
রাখুন, তা নয়, সামাজিক
দূরত্ব । মাকড়াবাজির
জায়গা পায়নি ! গরীব
মানুষও গরম সুসু ঢেলে
দিয়েছে ওসব বড় বড়
বুক্তুনিতে । যে
যেখানে যেভাবে পারছে
সাইকেলে চাপিয়ে কিম্বা
একটা ট্রলিতে কোরে আলু
পটল ঝিঙে কুমড়ো (কেবল মদ
ছাড়া) সোজা নিয়ে এসে
দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ঘরের
দরজায় । ফল শাকসব্জি
কিসের অভাব । অভাব যখন
নেই তবে তো বলতেই হবে
একটা বিরাট মেশিনারি
একইরকম ভাবে কাজ করে
চলেছে । বেশ কিছু মানুষ
এসব জোগাড় করে আমাদের
বাড়ির দরজায় বয়ে নিয়ে
আসছে । এসব মানুষগুলোর
যার যা জীবিকা ছিলো এখন
সেটা নেই । নতুন জীবিকা
এই লকডাউনেই তারা তৈরি
করে নিয়েছে । ৬৮% লোক
লকডাউনকে পাত্তাই
দিচ্ছে না । এরা
ভারতবর্ষের
সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র
মানুষ যাদের প্রতিদিন
রোজগার করতে হয়
প্রতিদিন বাঁচবার জন্য
। ওসব ভাইরাস ফাইরাসের
ভয়ে ওদের আটকে রাখা
যাবে না, ওরা মৃত্যুর
সঙ্গে নিয়ত সহবাস করে ।
ওরাই এ সভ্যতাকে পিঠে
করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে
রাত্রিদিন । ভাইরাস
ঘটিত এই ক্রান্তিকালীন
দিনগুলোতে চোখে আঙুল
দিয়ে সেটা ওরা বুঝিয়ে
দিচ্ছে, আর রাষ্ট্রনায়ক
যাদের দেশ চালানোর
দায়িত্, তারা সেজেগুজে
চমকদারী ভাষণ মারছে
টিভির পর্দা ফাটিয়ে
মাঝেমধ্যেই । তফাৎটা
অনেকেই বুঝতে পারছে,
অনেকে আবার না বুঝতে
পেরে ছাদে উঠে থালা
পেটাচ্ছে বিটকেল
কয়েদীদের মতো । দাদা
কয়েছেন তাই করে
দেখাচ্ছে । হায় আল্লা,
ঈশ্বরটাও যে লুঠ হয়ে
যাচ্ছে, সেটাও বুঝছে না
ওই গো-বেচারারা । কেউ
কেঊ আবার অতি সুবোধ,
মাথায় মোমবাতি ধরে
প্যাটাপ্যাট সেলফি
খুঁচিয়ে
ধ্যারাদ্ধ্যার
ফেবু-য়াটস অ্যাপে লিক্
করে যাচ্ছে লাইকু
খেচাতে ।
২
মানুষ অজান্তেই কখন যেন
ছাগলত্ব প্রাপ্ত হয়, সে
নিজেই জানে না । যেমন
লকডাউনের প্রথম সকাল
থেকেই বিপুল সংখ্যক
শ্রমিক যারা
দূরপ্রদেশে গেছে ভালো
রোজগারের প্রয়োজনে,
যারা এই সভ্যতার চকচকে
মুখটাকে গড়ে তুলছে
প্রতিদিন তাদের শ্রম
বিক্রী কোরে, নির্মিত
হচ্ছে আকাশে চ্যালেঞ্জ
ছুঁড়ে দেওয়া বিশাল
বিশাল ইমারত, তৈরি করছে
পথ নিজেদের ঘামে রক্তে,
তারা জেনে গেলো এই
দেশটার তারা কেউ না ।
তাদের থাকার আশ্রয় থেকে
জলহীন, বিদ্যুৎহীন কোরে
পথে নামিয়ে দেওয়া হলো ।
পথ তাদের ফিরিয়ে দিলো
যানবাহনহীনতার অভাব ।
ঘরে কিভাবে ফিরবে তাহলে
! কারও দায় নেই সে কথা
ভাবার । দেশ বিমুখ ।
হিসাবহীন এই লক্ষ লক্ষ
জ্যান্ত মানুষের
সংখ্যা জানার দায় তার
দেশের ক্ষমতাধরদের নেই
। তাই তাদের সমস্যা
নিয়েও কারও মাথাব্যাথা
নেই । তবু জীবন থামে না,
থামে না শ্রমজীবীর ঘরে
ফেরার স্বপ্ন । পা তো
রয়েছে, রয়েছে কর্মক্ষম
বুকের পাটা । শুরু হয়
হাজার হাজার মাইল পথ
অতিক্রমণের লং-মার্চ ।
আর পথজুড়ে অবধারিত
ক্ষুধা, ক্লান্তি,
মৃত্যু ।
আপাতত সেসব থাকুক, বরং
দৃশ্যত সম্মুখবর্তী
নিশ্চল ছাগলের এপিসোডে
ফিরি । ছাগলটা কি
এইমাত্র ব্যাব্যা কোরে
উঠলো ! লোভ সামলে ঘুরে
ফের তাকাতেই হলো ।
আইব্বাস ! সেই
তরঙ্গিনীর কোলে চেপে,
হ্যাঁ, সেই ছাগলটাই তো
ব্যাব্যা কোরে আপ্রাণ
চেঁচাচ্ছে । চিৎকার
হাউজিং আর আশপাশের গোটা
এলাকা ফাটিয়ে দিচ্ছে ।
তবে কি তরঙ্গিনীর কোলের
গরমে ছাগলটাও গরম হয়ে
উঠলো হঠাৎ ! একেই বলে
দেহবাসনা মর্ত্যভূমির
শ্রেষ্ঠ বাসনা ।
দেবতাদেরও বীর্যপাত
ঘটে যায় এমত অবদমনের
প্যাঁচে ।
শিবচন্দ্রেরও নিজের
কন্যা ষোড়শী মেনকাকে
দেখে জন্মদণ্ডে টঙ্কার
উঠে যায় । এসব আবার ধম্ম
কিতাবেই মুদ্রিত করে
ঘরেদোরে গুছিয়ে রাখা হয়
। আমি তো কোন্ ছাড়,
বেচারা ছাগলও নিজেকে
সামলে রাখতে পারছে না ।
কি করে পারবে, মহামাতা
কুন্তিদেবীও পারেনি ।
পাঁচ পাঁচটি দেবতার মত
তাগড়া তুগড়ো জোয়ানকে
দিয়ে পাঁচ পাঁচবার পেট
বাধিয়ে ফেলার গপ্প
আমাদের ঘরে ঘরে
মা-মাসিদের পবিত্রপাঠ ।
সেখানেও থামাথামি নেই,
পেট থেকে নামা সোমত্ত
পাঁচ পাঁচটি সন্তানকে
দিয়ে আবার বিয়ে করালো
একটাই মেয়েছেলের সঙ্গে
। অর্থাৎ পালা কোরে একই
মেয়েছেলে নিয়ে
পাঁচজনের বিছানায়
শোয়ার ব্যবস্থাও
সগর্বে স্বীকৃতি দিয়ে
দিলো । খেলা জমে
একেবারে ক্ষীর ।
পাঞ্চালী একাই ট্যাকেল
করছে পঞ্চ স্বামীকে ।
সেখানেও থামছে কোথায়,
এক ষষ্ঠ ভাশুর
লুক্কায়িত তার সঙ্গ না
পাওয়াতেও শরীর মসমস করে
। তাই গোপনে তাকেও
পাবার বাসনায় উতলা সেই
নারী । সেই ষষ্ঠটি আবার
এই খ্যাতিমান
শ্বাশুড়ির আরও এক অবৈধ
সন্তান । মহামাতার
চরিত্র এমন মহা না হলে
মহাকাব্য বানানো যায় !
মানে রচনা করা যায় !
যেমন শ্বাশুড়ী তেমন
ঘরের বউ । আর আমি কোথায়
এক পথের তরঙ্গিনীর
ইয়েফিয়ে দেখে একটু
টালমাটাল হওয়াতেই
লজ্জা ! সম্ভ্রম
হাইড্রেনে ফেলে হাত
নেড়ে তরঙ্গিনীকে ডেকেই
ফেললাম । নির্দ্বিধায়
সে ছাগল কোলে কাছে এসে
দাঁড়ালো । বিশ্বাস করো,
যে সহজতায় ত্রিশের
তরুণী সামনে এসে
দাঁড়ালো, আমার বুক ধড়ফড়
করছে টের পেলাম ।
পাতাবাবার ফর্মুলা
কাজে লাগিয়ে বুকভর
বাতাস নিয়ে তাকে আটকে
রেখে ধীরে ধীরে ছাড়ার
ব্যায়ামটা বেশ কিছুদিন
চর্চা করেছিলাম, সেই
ফর্মুলা এবারেও কাজে
লাগিয়ে ভালো ফল পেলাম ।
চারপাশটায় একবার দ্রুত
চোখ বুলিয়ে দেখলাম
স্পষ্টত আমাকে কেউ
দেখছে না ।
-- জানতে চাইছি ছাগলটা
এতক্ষন নিশ্চুপ
দাঁড়িয়েছিলো, হঠাৎ
তোমার কোলে চেপেই অমন
তারস্বরে চেঁচাচ্ছে
কেন ?
-- আরে কোন্ হারামির
বাচ্চা এটার মুখে একটা
আস্ত ঠোঙা পরিয়ে
দিয়েছিলো । আর ঠোঙা
পরিয়ে দিলেই ছাগল বেকুব
। না পারে খুলতে, না
পারে চলতে । একভাবে ঠায়
দাঁড়িয়ে থাকে ।
-- এটা ছাগল, না ছাগলি ?...
আমার কথা শুনে তরঙ্গিনী
পুরো শরীর তোলপাড় কোরে
হেসে উঠলো । বুক থেকে
ছাগলটাকে নামিয়ে দিয়ে,
উথলে ওঠা বুকের কাপড়
কিঞ্চিৎ ঠিক করে নিয়ে
হাসতে হাসতেই আমাকে
বললো-- বাবু, আপনি
ছাগলদের কিছুই জানেন না
। ছাগলদের মধ্যে ছেলে
হয় কখনও দুটো একটা, সে
গুলোকে ধর্মের পাঁঠা
করে ছেড়ে দিতে হয় ।
ওগুলোর গায়ে দেখবেন খুব
গন্ধ । আর ওই দুটো একটা
ধম্মের পাঁঠাই এত সব
ছাগলকে ভালো করে পাল
দিয়ে পেট বাধিয়ে যায় ।
একবার ভালো করে পাল
খেলে ওদের পেটে
চার-পাঁচটা বাচ্চা বাধে
।
তরঙ্গিনী চোখে মুখে
এমন তির্যক ইঙ্গিত কোরে
কথাগুলো বলছে, আর বলতে
বলতে এতটা কাছ ঘেঁষে
এসে দাঁড়িয়েছে, আর কয়েক
সেন্টিমিটার এগোলেই ওর
বোঁটা এসে বিঁধবে আমার
বুকে । আমি যখন চারপাশ
একটু নজর করে দেখতে
চাইছি এ অবস্থায় আমায়
কেউ নজর রাখছে কিনা,
হঠাৎই তরঙ্গিনী প্রায়
ফিসফিস কোরে কানের কাছে
মুখ এনে বললো-- বাবু, পাল
দেয়া কাকে বলে জানেন তো !
প্রশ্নটায় প্রাথমিক
একটু থতমত খেয়ে গেলাম,
কারণ, মেয়েটার কাছ থেকে
আসা এমন দুঃসাহসি
প্রশ্ন আমার বাবাও হয়তো
ভাবতে পারত না । নিজেকে
সামলে কিছুটা সাহসি হয়ে
উঠলাম ভেতর থেকে । কারণ,
মেয়েটার প্রশ্নের
মধ্যে অশ্নীল একটা
ইঙ্গিতই শুধু আছে তা নয়,
বলা যেতে পারে, আমার
শ্রেণিগত উচ্চ
অবস্থানের জ্ঞানের
অহংকারে মেয়েটা আঘাত
করেছে । সুতরাং একে
ছেড়ে দিলে হবে না ।
প্রত্যুত্তর দিতে হবে,
প্রত্যাঘাতও । বেশ টান
হয়ে দাঁড়িয়েই বলে
ফেললাম-- ওটা তো ব'লে
বোঝানো যাবে না, পাল
দিয়ে বোঝাতে হবে । আর
মানুষ তো কোনও ছাগলকে
পাল দেবে না, তার জন্য
একটা মেয়েমানুষ লাগবে ।
ডাউনলোড কমপ্লিট ।
এবার ফর্ম্যাটিঙের
পালা । মেয়েটা যেন
এইরকম কোন উত্তরই
চাইছিলো । এক মিনিটও
দেরী না করে সপাট বলে
বসলো-- আমি তো মেয়েমানুষ
। আমাকে বোঝাবেন ! যাব
আপনের ঘরে ! একশো দিলেই
হবে ! পাল খাওয়াই আমার
কাজ । চলেন না বাবু ।
কথাটা বলে মেয়েটা কেমন
নির্লজ্জের মতো মরিয়া
হয়ে উঠলো আমার ঘরে যেতে
। রাখঢাক না রেখেই বলে
চলেছে-- লকডাউনে কেলসি
মেরে গিয়েছি, নিজেরাই
রোজ নুন সেদ্ধ দিয়ে
আলুর চোচা চেটে রেশনের
চালে দুমুঠো ভাত গুঁজছি
মুখে, ছাগলটাকে কি করে
খাওয়াবো বলেন তো ! কেমন
শুকিয়ে গিয়েছে বেচারি !
আমার অবস্থা এবার পুরো
গোবলা । এমন দিব্যচাঁদ
হাতে পেয়ে ছেড়ে দেব,
নাকি পাল খাটিয়ে কেটে
পড়ব তল্লাট থেকে, এই
দোটানায় প্রায় ভেজে
যাচ্ছি । ভেপসে উঠছি
নিঃশ্বাসের দ্রুত
ওঠানামায় । পাতাবাবার
থিওরী এক্ষেত্রে আর
কাজে আসবে না, কারণ,
সঙ্কটের উৎসে ডিসীশন
মেকিং ব্লিৎসক্রিগ ।
ঝটিতে গুঁড়িয়ে দিতে হবে
শ্ত্রু শিবির, নাহলে
দাঁত কেলিয়ে হাতের রেখা
তুলে ফেলতে হবে
স্নানঘরে ঢুকে । জয়
ড্যাশজী, এবার শক্তি
জোগাও মহালিঙ্গ বাবা,
একবার ছিলা পড়াতে
পারলেই বিরোধী শিবির
ফাঁকা হয়ে যাবে । আড়াল
থেকে ফুচি মেরে সব তখন
গাণ্ডু সেজে ঘরোয়ালী
চৌকাঠ পাহারা দেবে ।--
কি বাবু, নেবেন ! ১০০
টাকা বেশী বললাম ! ঠিক
আছে, এই অভাবের বাজারে
১০ টাকা নাহয় কম দিয়েন ।
কত দিন ভালো করে কিছু
স্বাদ-বেস্বাদ খাওয়াই
হয় না ! আজ তবে ভালো করে
বাপ মাকে নিয়ে একটু
খেতে পারবো ।
৩
কথাটা শুনেই
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ
করবার ধুনকিটা মাথা
থেকে ছেতড়ে পড়ে
ধুলোবালি হয়ে গেলো ।
কেমন নিমেষে ভ্যানিশ
হয়ে গেলো কে কোথায়
আমাকে দেখছে তার
দুশ্চিন্তা । মনে
হচ্ছে এতক্ষণ কেমন
ক্লীবের মতো সিদ্ধান্ত
নেওয়ার সঙ্কটে
ভুগছিলাম । একেই বলে
ছাগলত্ব । সরাসরি
দাম্ভিক হাতদুটোয় ওর
দুকাঁধ খামচে ধরে
বললাম-- এখানে তুমি একটু
দাঁড়াও, সামনের দোতলার
ওই ফ্ল্যাটটাই আমার ।
আমি ঘরে যাব আর আসব ।
কথাটা বলেই কোনদিকে না
তাকিয়ে দ্রুত পায়ে ঘরে
ঢুকলাম, পার্সটা নিলাম,
একই গতীতে নেমে এলাম
আবার পথে । আসতে আসতেই
পার্স থেকে দুটো ১০০
টাকার নোট বার করে
নিলাম । দেখলাম
তরঙ্গিনী তখনও একই
জায়গায় দাঁড়িয়ে । শুধু
তার শাড়ী ব্লাঊজটাকে
যতটা সম্ভব টানটান কোরে
নিয়ে কেমন একটু ভদ্রস্থ
হবার চেষ্টা করেছে ।
হয়তো ভেবেছে, এসব
হাঊজিঙ-টাউজিঙে ঢুকতে
গেলে একটু ভদ্দরলোক
সাজতে হবে । কপালের
এলোমেলো চুলগুলোকেও
গুছিয়ে ইতিমধ্যেই একটা
খোঁপাও বেঁধে ফেলেছে
আয়েসে । বাঃ, বেশ স্পষ্ট
হয়ে উঠেছে শরীরের ঢেউ ।
নিজেকে সত্যিই
বেঁধেছেদে রাখা একটা
গভীর সঙ্কটের ব্যাপার ।
দেবতারা পারেনি, আমি
কোন্ ছাড় !
কাছে এসে দাঁড়িয়ে বেশ
রোম্যান্টিক গলায়
জিজ্ঞেস করলাম-- তোমার
নাম কি ? সে উত্তর দিলো--
জবা । আমি আরও কিছু নরম
হয়ে বললাম-- শোনো জবা, আজ
আমার বাড়ীতে অতিথিরা
আছে, আজ তোমায় নিতে
পারছিনা কিন্তু এই
টাকাটা তোমাকে দিয়ে
রাখছি পরে তোমায় ডেকে
নোবো । ১০০ টাকার
নোটদুটো দেখে জবার
চোখদুটো একটু
চিকচিকিয়ে উঠলো ।
কিন্তু পরমুহূর্তেই
কেমন চুপসে গেলো তার
উৎসাহ । মাথা নীচু করে
আস্তে আস্তে বললো-- কাজ
না করে পয়সা নিলে
ভিক্ষে করা হয় । সেটা
পারব না । আমি তো শরীর
বেচেই খাই । আপনি না
কিনলে টাকা নেবো কেন !
-- মনে করো, এটা দিয়ে আমি
তোমায় বুকিং করে রাখছি
। পরে সময় মতো ডেকে নিয়ে
তোমাকে পাল দিয়ে দোবো ।
-- না বাবু, গরীবের সংসার,
টাকা নিয়ে যেতেই হুশ
করে শেষ হয়ে যাবে ।
তারপর আপনি যখন ডাকবেন
আমার হাতে তখন কল্
থাকলে টাকা পাওয়ার লোভে
আমি সেখানেই চলে যাব ।
চলেন না, এখুনই
কেনাবেচা মিটিয়ে দেন !
চলেন না, বাবু !
-- কল্ থাকে মানে, কিসের
কল্ ?
-- গতর ভাঙ্গানোর কল্ ।
আমাদের এলাকার সব
হোটেলগুলোতে আমার
শরীরের খুব বাজার আছে ।
খরিদ্দারের মরজি মতো
হোটেলয়ালারা আমাকে
ডেকে নেয় । যা রোজগার
করি তা দিয়ে আমাদের
খাওয়া-পরা, অসুখবিসুখ,
শখ-আল্লাদ সবই মিটে যায়
। তারপর আছে থানার
পুলিশেরা । যখন তখন রেট
কোরে ধরে নিয়ে যাবে
হোটেল থেকে, তারপর
কয়েকদিনের রোজগারের সব
টাকা দিয়ে ছাড়ান করতে
হবে নিজেকে । খুব শয়তান
ওগুলো, আমরা গরীব মানুষ,
নিজের শরীর বেচে দুপয়সা
কামাই করি, ওদের সহ্য হয়
না । বলেন তো, আমি কি
চুরি করেছি, না ছিনতাই,
বড়বড় বাবুদের মজা করতে
সখ হয়, হোটেলে এসে
মেয়েছেলে খোঁজ করে আর
হোটেলয়ালারা তাদের
খদ্দের ধরে রাখতে
আমাকে, আমার মতো আরো সব
মেয়েছেলে আছে, তাদের
ডেকে নিয়ে যায় । আমরাও
গিয়ে ওদের পোঁদ চাটি ।
আমার কি দোষ বলেন !
থানাবাবুরা সবাই আমাকে
চেনে, ওরাও তো আমাকে
নিয়ে গিয়ে যখন তখন
ঠাপিয়ে দেয়, তবুও
আমাদের সাথে এমন করবে ।
ওদের পয়সার দরকার হলেই
আমাদের কাছ থেকে কাড়বে
।... বাপ-মা জানে আমি
হোটেলে ঝিয়ের কাজ করি ।
শুধু রাত-বিরেতে একটু
বাধা দিতে চায়, কিন্তু
হোটেলের গাড়ি এসে যখম
আমাকে তুলে নিয়ে যায়
তখন ওদের একটু
গব্ব-টব্বই হয় ।...
কিন্তু এই লকডাউনের
বাজারে হোটেলগুলোই
বন্ধ, আমি আর কাজ পাবো
কোত থেকে ! যা জমানো
ছিলো মাসখানেকেই শেষ
হয়ে গেলো । বাপ-মার
চিকিচ্ছাই করাতে পারছি
না। ওষুধ কিনতে পারিনা,
হাসপাতালগুলোও ফিরিয়ে
দেয় । বলে, করানা না হলে
তারা দেখবেও না ।
মাঝেমাঝে ভাবি, করানা
হলেও ভালো হতো, ওদের তাও
হাসপাতালে দিয়ে আসতে
পারতাম ! ওরা খুব কষ্ট
পায় জানেন বাবু, কত রকম
রোগের কথা বলে
ডাক্তারবাবুরা, শুনে
আমার ভাল্লাগে না ।
একটানে কথাগুলো বলতে
বলতে জবার চোখে কেমন জল
এসে গেলো । আমার আবার ওর
কথা শুনতে শুনতে অবচেতন
মনে ঘন্টা বাজতে শুরু
করেছে, বুঝতে পারি ।
কারণ, ওর কথা শুনে বুঝতে
পারি, আমি ছাড়া এ এলাকার
অনেক মানুষই ওকে চেনে ।
এমন কি থানার পুলিশেরাও
। এখন যদি টহল দিতে
বেরিয়ে কোন থানার গাড়ি
এই লকডাউনের সোশ্যাল
ডিস্টেন্সিং
গ্যাঁড়াকলে এতটা
ঘনিষ্ঠ দাঁড়িয়ে ওর সাথে
কথা বলতে দেখে, তবে
বেশ্যাসঙ্গ করার
অপরাধে আমাকেও তুলে
নিয়ে যাবে । আমি কিছুটা
ভয়েই কুঁকড়ে যাই ।
সম্মানহানির আগাম ভয়ে
কেমন জবুথবু মেরে গিয়ে
জবার হাতদুটো খপাৎ করে
ধরে দুটো একশ টাকার নোট
তার হাতে গুঁজে দিয়ে
বলি, আমার খুব হাগু
পেয়েছে আমি ঘরে যাচ্ছি,
পরে দেখা হবে । জবা তবু
মরিয়া হয়ে বলে-- একমিনিট
দাঁড়ান বাবু । ফোনটা
বার করেন, আমার নম্বরটা
দিয়ে দেই । সময় হলে
আমাকে ডেকেন ।
কথাগুলো বলেই জবা
গড়্গড় করে তার ফোন
নম্বরটা আমাকে বলে গেলো
। আমি প্রায় কাঁপা হাতে
সেটাকে আমার ফোনে
তুলেই, একরকম ওর কাছ
থেকে ছিটকে বেরিয়ে
ছুটন্ত পায়ে হাউজিঙের
ভেতর ঢুকে গেলাম ।
নিরাপদ দূরত্ব থেকে
নিজেকে একটু আড়াল করে
পেছন ঘুরে দেখলাম জবা
একদৃষ্টে তখনও আমার
দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে
আছে । এরপর সিঁড়ি বেয়ে
ওপরে ওঠার ফাঁকে
চৌতালার ঝাঁঝরির ফাঁক
দিয়ে তাকাতে গিয়েই অবাক
। কোথাও কিছু নেই ।
এপাশে ওপাশে যেদিকেই
তাকাই ধূধূ করা রাস্তা
শুধু । ভাবলাম এখান
থেকে ভালো দেখা যাচ্ছে
না, নিশ্চয়ই আমার
ব্যালকনি থেকে ওকে
অবশ্যই দেখতে পাবো ।
তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
তন্নতন্ন কোরে যতদূর
চোখ যায় তরঙ্গিনীর কোনও
ছায়াটুকুও কোথাও পেলাম
না । এই গলিটা ছাড়া
আশেপাশে আর কোনও গলিও
তো নেই, তবে ! যেভাবে
মাটি ফুঁড়েই একসময়
আবির্ভূত হয়েছিল সে,
সেভাবেই যেন অদৃশ্যও
হয়ে গেলো ।
৪
এই দিনটার দিন পনেরো পর,
লকডাউন সবে যখন কিছুটা
শিথীল হয়েছে, একদিন
সন্ধ্যের দিকে একটু
সাহস সঞ্চয় করেই ভাবলাম
জবার দেয়া ফোন
নাম্বারটা একবার
বাজিয়ে দেখিতো ফোনটা
আদৌ বাজে কি না ! এক
টেপাতেই টকাস্ কোরে
বেজে উঠলো ফোন । একটু
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই
ভাবলাম লাইনটা কেটে দিই
। কিন্তু তৎক্ষণাৎ
ওপিঠ থেকে আওয়াজ এলো, কে
বলছেন ? ঘটনার
আকস্মিকতায় কিছুটা গলা
খাঁকাড়ি দিয়ে বললাম--
সেই যে সেদিন বিকেলে
তোমার ছাগল নিয়ে কথা
বলছিলাম না, সেই আমি !
-- ও, হাউজিঙের সেই বাবু ।
কথাটা বলেই জবা কেমন
ডুকরে কেঁদে উঠলো ।
তারপর কিছুটা সামলে
নিয়ে বললো, বাবু, আমার
বাপটা আজ মারা গেলো ।
মা-টাও কেমন গোঙাচ্ছে ।
বাবু, আপনের টাকাটা এনে
ওদের দুদিন ভালো করে
খাইয়েছি, ওষুধও এনে
দিলাম দু-একটা, কিন্তু
বাবাটা বাঁচলো না ।
মা-টাও বোধহয় চলে যাবে
বাবু !
কিছুটা ঢোঁক গিলেই
বললাম, খুবই খারাপ
সংবাদ দিলে । যাই হোক,
তোমার যদি আরও কিছু
টাকার দরকার হয়, গলিটার
মুখে এসে আমাকে ফোন করো,
আমি দিয়ে দোবো । ফেরত
দিতে হবে না । বাবাকে
আগে পোড়াবার ব্যবস্থা
করো ।-- কথাটা বলতে বলতে
আমার হঠাৎ কেমন যেন মনে
হতে লাগলো আমি আমার কোন
খুব পরিচিত আত্মীয় বা
বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি
। কখন যেন ভুলেই গেছি
মেয়েটি একটি গণিকা ।
যার সঙ্গে আমার পরিচয়
কয়েক মুহূর্তের ।
জীবনটা বোধহয় এমনই কিছু
অনিশ্চয়তার সংযোজন
বিয়োজন ।
-- আমার এখন টাকা লাগবে
না, বাবু ।
হোটেলয়ালাদের ফোন
করেছিলাম, তারাই অল্প
অল্প করে পাঠিয়ে দিয়েছে
। আমার সব কাজ ভালো
ভাবেই মিটে যাবে । বাবু,
আমাকে ক্ষমা কোরেন,
আপনার ওখানে আজ আমি
যেতে পারলাম না । বাবার
কাজটা মিটে যাক, পরে
একদিন ডেকেন, আপনার ঘরে
গিয়ে আমি কাজ করিয়ে আসব
। কিছু মনে করেন না বাবু
।-- কথাটা বলেই আবারও
কাঁদতে কাঁদতে বললো--
মা-টাও যদি মরে যায় আমি
কার কাছে থাকব বাবু,
আমাকে সবাই টেনে হিঁচড়ে
খেয়ে নেবে !
ওর কথাগুলো শুনে, আমার
উত্তর দেবার
মানসিকতাটাই নষ্ট হয়ে
গেলো । জবা ধরেই নিয়েছে,
ফোনটা ওকে করেছিলাম ওকে
ডেকে আনবার জন্য ।
ফোনটা ঝপ কোরে কেটে
দিলাম । কিন্তু কানে
এখনও বেজে যাচ্ছে জবার
শেষ কথাগুলো, "মা-টাও
যদি মরে যায় আমি কার
কাছে থাকব বাবু, আমাকে
সবাই টেনে হিঁচড়ে খেয়ে
নেবে !" এই প্রশ্নের
উত্তর দেবার মতো
পুরুষাকার তো আমার নেই !
জবা কি কখনও স্বপ্ন
দেখেনি, এমন মুহূর্তে
কেউ একজন তার সামনে এসে
দাঁড়িয়ে বলবে, তোমার
কোনও চিন্তা নেই জবা,
আমি তো আছি ! মানুষের
সভ্যতার কাছে এইটুকু
প্রত্যাশা কি মানুষের
থাকা উচিৎ নয়... ! সভ্যতা
নিরুত্তর । নিরুত্তর
রাষ্ট্র । আর এভাবেই
জবাও একসময় জেনে যায় বা
তাকে জেনে যেতে হবে, এই
পৃথিবীতে দু-রকম ভাবে
বাঁচা যায়-- শিকার হয়ে
বা শিকার কোরে । তাকে
বেছে নিতে হবে তার
পছন্দের পথ !