আমি মূলত কবিতা লিখতাম।
হঠাৎ করে কী মনে হলো
একদিন কবিতা লেখা ছেড়ে
দিয়ে গল্প লেখা শুরু
করলাম। এর পর থেকে আমি
নানা জায়গায় গল্প
খুঁজতে শুরু করলাম
সচেতন ভাবে। ইতিহাসে,
খবরের কাগজে, গণিতে,
বনে-বাদাড়ে, মানুষের
আচারে আর আচরণে নানা
ক্ষেত্রে।
একদিন বর্ষাকালে
দুপুরবেলা আমি আমার
গল্প পেয়ে গেলাম। ওইদিন
থেকে আমি আমার গল্পকে
সময়ে-অসময়ে সকলের
অগোচরে অনুসরণ করতে
লাগলাম।
আমার গল্পের নাম
ফাতিমা। ফাতিমা আমার
বয়েসি একটা মেয়ে। গায়ের
রং উজ্জ্বল শ্যামলা।
তার একটা দেড়মাস বয়েসি
বাচ্চা আছে। আর একজন
স্বামীও আছে। একমাস আগে
ওরা তিনজন আমাদের বাড়ির
পশ্চিম সীমানার
পরিত্যক্ত গোয়ালঘরের
পাশে টিনের চালা দুই
রুমের ভাড়া দেওয়ার
জন্যে বানানো বাড়িটাতে
ওঠে, বারোশো টাকা
ভাড়ায়।
আমাদের বসতবাড়িটা
প্রায় দুই হাজার ফিট
একটা পাহাড়ের মাথায় বেশ
বড় বনাকীর্ণ একটা জায়গা
নিয়ে, জায়গার পরিমাণ
আশি শতাংশ। গাছ আর গাছ।
বেশিরভাগই নিমগাছ।
আমার মায়ের হাতের
লাগানো। আমার মা নিমের
ছায়া ভালোবাসেন। বলেন
নিমের ছায়ায় রোগবালাই
থাকে না।
পাহাড়ের নিচে বড়
রাস্তা। তার ওপারে একটা
প্রাইভেট ক্লিনিক আছে,
নাম জমজম হাসপাতাল।
ওখানে আয়ার কাজ করে
ফাতিমা। ডিউটির সময়
বাচ্চাটা তার সঙ্গেই
থাকে। পিঠে কাপড় দিয়ে
বেঁধে নেয়
ব্যাকপ্যাকের মতো
করে।
ফাতিমার দিকে শুরু
থেকেই আমার খানিকটা
কৌতূহল আছে। কারণ তার
কপালে বামপাশে একটা
কাটা দাগ আছে। জানি না
কেন ওই দাগটা আমাকে
আকর্ষণ করতো।
এইবার ফাতিমার মধ্যে
গল্পের বিষয় বলি। ওরা
আমাদের এইখানে আসার
পরের সপ্তাহেই ফাতিমা
আমাদের ঘরে এসে আমার
মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে
দিয়েছে। কিন্তু কারণ
বলেনি। আমি দেখেছি।
এইভাবে দিন গেছে। একদিন
আরো ঘটনা জানলাম। মা
বললো আমাকে। রাত-বিরেতে
ফাতিমার স্বামী তাকে
ধরে মারধোর করে, তার
কাছে টাকাপয়সা যা পায়
তা নিয়ে জুয়া খেলে
উড়িয়ে দেয় ইত্যাদি।
অনাথ ফাতিমা মামা
বাড়িতে থাকতো। মামারা
মেট্রিকের বছর পাড়ার
আরেক অনাথ ছেলের সঙ্গে
বিয়ে দেয়। ওই ছেলেও ওই
বাড়িতেই মানুষ হয়েছে।
ছেলে বাজেমাল মানে
মুদিদোকানে কাজ করে।
ছেলের নাম আব্দুল্লা।
বিয়ের পর তাদের একটা
বাচ্চা হয়, বাচ্চাটা আট
মাসের মাথায় মারা যায়।
ডাক্তার বলেছিলো
পুষ্টিহীনতা জনিত
কারণ। আব্দুল্লা
জুয়াটুয়া খেলে দোকানের
ক্যাশ ভেঙে টাকা সরানোর
পর ফাতিমার মামাকেই সেই
ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
তারপর মামাবাড়ি থেকে
বিতাড়িত হয় যথানিয়মে
সেইসব বলে গল্পকে
ফেনায়িত করবো না।
আমি যেহেতু ফাতিমাকে
অনুসরণ করতাম ফলত
আরেকদিন সে মাকে জড়িয়ে
ধরে যখন কেঁদে ফেললো
দেখলাম একপ্রকার চেপে
ধরে তার মুখ থেকে কথা
বের করে ফেললো। সেইসব
কথা আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে
শুনে ফেললাম। মা শুনে
স্তব্ধ হয়ে গেলো।
ফাতিমা কাঁদতে কাঁদতে
আমাদের বাড়ি থেকে বের
হয়ে তার ঘরে চলে গেলো।
আর আমার বুকের ভিতর
হুহু করে একটা প্রকাণ্ড
সমু্দ্র ভেঙে পড়লো
রক্তের ক্ষতে।
ফাতিমার ব্যাপারটা
বিস্তারিত বলার ভাষা
পৃথিবীতে তৈরি হয় নাই।
তাই সংক্ষেপে গল্পের
পরিণতির স্বার্থে বলি,
নাহয় গল্পটা বাজে কথায়
ফুলের চাষ ছাড়া আর কিছু
মনে হবে না। ব্যাপারটা
এই—ফাতিমার স্বামী
আব্দুল্লা প্রতিরাতে
জুয়া খেলে এসে ফাতিমাকে
জোর করে, তার স্তনের
সমস্ত দুধ খেয়ে ফেলে,
ভোরবেলাও ঘুম ভাঙার পরও
খায়। ফলত বাচ্চার জন্যে
ফাতিমার বুকে আর কোনো
দুধ থাকে না। যেহেতু
ফাতিমার রোজগারের
বেশিরভাগ টাকাই
আব্দুল্লা নিয়ে নেয়,
বাচ্চাকে দুধের কৌটা
কিনেও খাওয়াতে পারে না।
সাগুদানা, ভাতের ফেন
এইসব খাওয়াতে হয়, যে
কারণে বাচ্চাটা এর
মধ্যে পুষ্টিহীনতায়
ভুগতে শুরু করেছে।
শ্রাবণ মাসের একদিন
ভোরবেলা ঝম ঝম বৃষ্টি
আর বজ্রপাতের শব্দ
ছাপিয়ে ফাতিমার
গগনবিদারী চিৎকারে
আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে
উঠলো ফাতিমার আড়াই
মাসের বাচ্চাটা মরে পড়ে
আছে। মুখের পাশ দিয়ে
বের হওয়া ফেনা শুকিয়ে
গেছে। দুদিন পর ফাতিমার
কান্না থামে। তাকে
স্বাভাবিক হতে দেখি।
ফাতিমাকে আমি অনুসরণ
করি। কিন্তু সে টের পায়
না। দেখি একদিন
দুপুরবেলা লাঞ্চ
আওয়ারে হাসপাতালের
ওষুধের দোকানের মেঝের
টাইল্স মুছতে গিয়ে তিন
নম্বর র্যাক থেকে ১০
মিলিগ্রামের
ফ্রিজিয়ামের দুটো
স্ট্রিপ সরিয়ে
ক্যাজুয়েলি
অ্যাপ্রোনের পকেটে
নিয়ে নিলো। হয়ত এর আগের
দিন সে দেখে রেখেছিলো।
ফাতিমাকে আমি অনুসরণ
করি। কিন্তু সে টের পায়
না। দেখি সে ঘরে রাতে
ঘরে ফিরে বিছানায় এলিয়ে
দেয় ক্লান্তির শরীর।
দেখি সে আধঘণ্টা পর
বিছানা থেকে উঠে তাক
থেকে একটা মধুর শিশি
বের করলো। সবটা মধু
একটা ছোট কাচের বাটিতে
ঢাললো। তারপর কুড়িটা
ফ্রিজিয়াম ট্যাবলেট
স্ট্রিপ থেকে খুলে একটা
চানাচুরের খালি
প্যাকেটের ভিতর নিয়ে
দরজার তালাটা দিয়ে চাপ
দিয়ে গুঁড়ো করলো। সেই
গুঁড়ো মধুর বাটিতে ঢেলে
আঙুল দিয়ে মেশাতে
লাগলো। ভালো করে মিশে
গেলে সেই মধু আবার
শিশিতে পুরে তাকের উপর
রেখে দিলো। এরপরে
ফাতিমা বিছানায় আবার
এলিয়ে দিলো ক্লান্তির
শরীর।
ফাতিমার দিকে আমি
তাকিয়ে থাকি। কিন্তু সে
টের পায় না। রাত দশটার
দিকে আব্দুল্লাকে ঘরে
ঢুকতে দেখি। ফাতিমা
বিছানা থেকে উঠে তাকে
ভাত খেতে দেয়।
আব্দুল্লা বড় তৃপ্তি
নিয়ে ভাত খায়। তারপর
বিছানায় গিয়ে বসে।
ফাতিমার মাথায় হাত
বুলিয়ে দেয়। বলে, ‘আবার
আমাগো বাচ্চা আসবো...
ইত্যাদি।’ কথা বলতে
বলতে সে ফাতিমার বুকে
হাত দেয়। আমার বুকের
ভিতর ধক করে ওঠে।
ফাতিমা বলে, ‘দাঁড়াও
খুলে নিই।’ বলে সে
বিছানা থেকে নামে। সে
তার ব্লাউজটা খুলে
ফেলে। তারপর তাক থেকে
মধুর শিশিটা নামায়।
শিশি থেকে মধু পুরোটাই
আগের ছোট কাচের
বাটিটাতে ঢাললো। তারপর
আঙুল ডুবিয়ে নিয়ে দুই
স্তনে মধু মাখাতে
লাগলো। আব্দুল্লা বলে,
‘কী করস!’
ফাতিমা আনমনে বলে,
‘মধুটা মাখিয়ে নিই,
তোমার চুষতে ভালো
লাগবে...।’
আমি দেখি সেই কথা শুনে
আব্দুল্লার চোখ খুশিতে
চক চক করে ওঠে। আর আমার
চোখ ফেটে জল আসতে চায়।
তারপর দেখি আব্দুল্লা
ফাতিমার দুই স্তনে
চুমুক দিচ্ছে বদলাবদলি
করে, আর চারপাশ চেটে
চেটে মধু খাচ্ছে। আর
ফাতিমার চোখ গলে জলের
স্রোত নামছে, পাহাড়ির
ঝরনার মতো আব্দুল্লার
চুল ভিজিয়ে নামছে।
কিন্তু আব্দুল্লা টের
পাচ্ছে না। আমার ভয়
লাগছে এই জলস্রোতে যদি
এইসব পাহাড়ি জনপদে ঢল
নেমে আসে! আমারও চোখ
ফেটে জল নামছে, বুকের
ভিতরকার সমুদ্র বের হয়ে
যাচ্ছে যেন। আমি
নিমগাছের তলে দাঁড়িয়ে
বৃষ্টির মধ্যে ডুবে
যাচ্ছি। আর ফাতিমার
ঘরের টিনের চালায় ঝম ঝম
বৃষ্টি নামছে।
আমি দেখি আব্দুল্লা
ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে।
আর ফাতিমা তড়িঘড়ি করে
উঠে শাড়ির আঁচলে বুকটা
ঢেকে আলনা থেকে তার
একটা সুতি শাড়ি টেনে
নেয়।শাড়ি ছিঁড়ে ফাতিমা
আব্দুল্লার হাত, পা আর
মুখ শক্ত করে বেঁধে
ফেলে।
আমি দেখি, ফাতিমা একটা
পলিথিনের খালি ব্যাগ
হাতে নেয়। তারপর বাতাস
দিয়ে ফুলিয়ে মুখটা বন্ধ
করে এয়ারটাইট কিনা
পরীক্ষা করে। বাতাস
যাওয়ার পথ নেই নিশ্চিত
হয়ে ফাতিমা পলিথিনটা
আব্দুলার মাথা গলিয়ে
গলার কাছে আটকে দেয়, আর
দুপাশ থেকে টেনে একটা
গিঁট দিয়ে দেয়। তারপর
ফাতিমা সেই ঘর থেকে বের
হয়ে একপাশে বারন্দার
মেঝেতে বেড়ার সঙ্গে
হেলান দিয়ে বসে বাহিরের
বৃষ্টি পড়ছে দেখে। তার
চোখে কোনো অশ্রু নেই।
তার চোখ দুটো যেন সূর্য
হয়ে আছে। তার চোখ দেখে
আমার ভালো লাগে। আর আমি
এক ফাঁকে তার ঘরে ঢুকে
পড়ি। আব্দুল্লার বাঁধন
চেক করি। ঠিক আছে। দেখি
গলার কাছে পলিথিন আলগা
হয়ে গেছে, আমি সেটা টাইট
করে বাঁধি অবশিষ্ট
শাড়ির টুকরা দিয়ে।
তারপর বের হয়ে আসি।
তারপর একটা নিমগাছের
নিচে দাঁড়িয়ে ভিজে ভিজে
আমিও বৃষ্টি দেখি, গাছে
গাছে নিমফুল ফুটে আছে
জানি। সেইসব ফুলের
ঘ্রাণে আমার মনে হয়
পৃথিবীতে কোথাও ভোর
হচ্ছে।
আমি দেখি আধাঘণ্টা পর
ফাতিমা ঘরে ঢুকে
আব্দুল্লার মুখের
পলিথিনটা খুলে ফেলে।
তারপর নিশ্বাস চেক করে।
মরে গেছে নিশ্চিত হওয়ার
পর সে লাশটার পা ধরে
টেনে বিছানা থেকে
নামায়। তারপর টানতে
টানতে ঘরের পেছনের খালি
গোয়াল ঘরটায় নিয়ে যায়।
গোয়াল ঘরের এক কোনায়
টিনের একটা বড় ড্রাম
আছে পুরনো। ৫৫ গ্যালন
তেল ধরে এমন খালি
ড্রাম। আমার বাবা এটা
ভাঙারির দোকান থেকে
কিনে এনেছিলো। আমাদের
কয়েকটা গরু ছিলো
অনেকদিন আগে, এই ড্রামে
তাদের জন্যে চালের
কুঁড়া গমের ভুসি এইসব
রাখা হতো। এখন খালি।
দেখি ফাতিমা অনেক কষ্টে
লাশটাকে টেনে-হিচড়ে
ঠেলে ড্রামটার মধ্যে
ঢুকিয়ে দেয়। তারপর ঘর
থেকে আব্দুল্লার
জামাকাপড় এনে ড্রামের
মধ্যে দিয়ে দেয়। খাটের
তলা থেকে ট্রাংকটা বের
করে, তার বিয়ের জরির
শাড়ি আর কাবিননামাটা
বের এনে ড্রামের মধ্যে
ফেলে। শুকনো লাকড়ি, কাঠ,
বাঁশের টুকরো এনে ড্রাম
ভর্তি করে ফেলে। তারপর
কেরোসিনের বোতল এনে
ঢালে। আর ড্রামের
ঢাকনাটা কাত করে বসায়।
বাতাস চলাচলের জন্যে
যথেষ্ট ফাঁক আছে
নিশ্চিত হয়ে দেশলাই
জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দেয়
ড্রামের ভিতর। আগুন
জ্বলতে থাকে। আর পুড়ে
যেতে থাকে কান্না,
অপমান আর শোকের
দিনরাত্রি।
গোয়াল ঘরটার চারপাশে
কোনো বেড়া-টেরা নেই।
কেবল টিনের চালা আছে।
আর আশপাশে ঘন গাছপালা।
তার উপর অবিরল ধারায়
বৃষ্টি তো নামছেই বব
ডিলানের হার্ড রেইন গনা
ফল-টাইপ বৃষ্টি। আমাদের
বাড়ির আশপাশে ঘরটরও
নেই। এই পাহাড়ি পাড়ায়
এক একটা ঘর এক একটা টিলা
আর পাহাড়ে, দূরে দূরে।
আমি দেখি ফাতিমা
আরেকবার কাঠবাঁশ আগুনে
দিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে
পড়লো। এই ফাঁকে আমি
আমাদের পাকঘর থেকে
জ্বালানি কাঠ যা ছিলো
সব নিয়ে এলাম। মনে হলো
একটা চিতার জন্যে
যথেষ্ট। আমি একটা লোহার
রড দিয়ে খুঁছিয়ে লাশের
পোড়া হাড়গোর ভেঙে
দিলাম। তারপর আবার কাঠ
দিয়ে আগুনটাকে উজিয়ে
দিলাম। ভোরের আগেই সব
শাদা ছাই হয়ে গেলো। আমি
নিম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে
দেখি ফাতিমা ছাই
পরীক্ষা করে দেখছে। সব
ছাই হলো কিনা। নিশ্চিত
হয়ে সে ঘরে ঢুকে শুয়ে
ঘুমিয়ে পড়লো। সে ঘুমিয়ে
পড়ার পর আমি তার ঘরে
ঢুকে মশারিটা টাঙিয়ে
ভালো করে খাটিয়ে দিলাম।
আর মশারিটা ফুলে উঠছিলো
সমুদ্রের পেটের মতো
বিছানা ছিঁড়ে, কোথাও
নক্ষত্রের দিকে উড়ে
যেতে চাইছিলো দেখে আমি
বাতিটা নিভিয়ে দিলাম,
আর তার ঘরটা যেন হয়ে
গেলো জীবনদাশের হাওয়ার
রাত। হাওয়ার রাত
কবিতাটার লাইন আমার
মাথামধ্যে ঘুরতে
লাগলো। আমি মনে মনে
সেইসব নাইন আওড়াতে
আওড়াতে ঘর ছেড়ে বের হয়ে
গেলাম। তারপর বৃষ্টিতে
ভিজে ভিজে যেন বা
নিমফুলের দেশে হেঁটে
বেড়ালাম। আমার খুব
শান্তি লাগছিলো বুকের
ভিতর।
ভোরবেলা সূর্যটা চোখ
মেলতে মেলতে
বৃষ্টিবাদলা নাই।
আকাশে মেঘ নাই একফোঁটা।
তবে বাতাস বইছিলো প্রায়
ঝড়ো হাওয়ার মতোই। আবার
হয়ত ঝড় আসবে। আর
এরমধ্যে আমাদের বাড়ির
সঙ্গে উঁচা পাহাড়টার
মাথায় ছোট মাঠটায় পাড়ার
শিশুরা কোথা থেকে এক
ঝুড়ি শুকনো ঝরাপাতা এনে
মুঠো মুঠো উড়াচ্ছিলো
ঝড়ো বাতাসে, আর ‘পাখি
পাখি...’ বলে হই হল্লা
করছিলো আর পাতাগুলি
পাহাড় পেরিয়ে পাখির মতো
উড়ছে দেখে আমার মাথায়
আইডিয়া এলো একটা। আমি
গোয়াল-ঘরের বড় ড্রামটা
কাত করে শাদা ছাইটা
একটা পলিব্যাগে নিয়ে
নিলাম। তারপর পাতা
উড়ানো শিশুদের দিয়ে
বললাম, ‘অনেক তো পাতা
উড়ালি, এইবার এই ছাই
উড়িয়ে দেখ কেমন লাগে।’
বলেই আমি একমুঠো ছাই
নিয়ে উড়িয়ে দেখালাম।
বললাম, ‘পাতা উড়ালে
পাখি হয়, ছাই উড়ালে মেঘ
হয়...’
শিশুরা আমার কথা শুনে
মহা উৎসাহে মুহূর্তেই
‘মেঘ মেঘ মেঘ...’ কলরবে
ব্যাগ থেকে ছাই সব মুঠো
মুঠো নিয়ে উড়িয়ে মেঘ
বানিয়ে দিলো।